নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ তার সাথে দেখা হবে কবে (৩য় পর্ব)

০২ রা জুন, ২০২৫ রাত ১১:০৮



তিতিরের সামনে একটা গাঢ়ো সবুজ গাছ। গাছের অদূরে ঝরঝর করে ঝর্নার পানি ঝরছে, একটা সাদা ঘোড়া নিশ্চিতে সেখানে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে, এক যুবক পিঠ ঘুরিয়ে ঝর্নার দিকে ফিরে বসে আছে পরনে সাদা জুব্বা, মাথায় পাগড়ি জাতীয় কিছু, প্রচন্ড বাতাস বইছে হঠাৎ হঠাৎ, ঝর্না থেকে একটা ছোট্ট ৩/৪ বছরের মেয়ে মাথা ভর্তি লম্বা কালো চুল, হাতে বিশাল সাইজের সবুজ একটা পাতা, সে তিতিরের দিকে মিষ্টি করে হেসে তাকিয়ে থাকতে থাকতে উঠে আসতে শুরু করলো, তার পরনে সবুজ পাতার মতন তার পোশাক সে ধীরে ধীরে তিতিরের কাছে এসে দুহাত দিয়ে সজোরে ঝাঁকাতে লাগলো তিতিরকে, আর একটা অপরিচিত ভাষায় কিচিরমিচির করে কি জানি বলতে লাগলো।
থর থর করে কেঁপে তিতির জেগে ওঠে, যদিও অতো ভয়ের স্বপ্ন না তারপরও ওর বুক ধরফর করছে বলে আবার শুয়ে পড়লো, শুয়ে কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পর বুঝলো যে স্বপ্ন দেখছিলো ও।

গতকাল ভার্সিটিতে এক্সাম শেষে, আরো একটা ক্লাস করে বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল, খেয়ে দেয়ে ঘুমোতে ঘুমোতে রাত ১২টা, তাই এত সকালে ঘুম ভাঙতেই চাইছিলো না।

তিতির চোখ আধখোলা করে দেখে ঘরের মধ্যে আলো ঢুকছে জানালা দিয়ে, আর সেই আলোর মধ্যে দাঁড়িয়ে তিনটা ছোট্ট মুখ সামিরা, সিয়াম আর রনি, পাতা হাতে পাতার পোশাক পড়ে ঝর্না থেকে উঠে আসা মেয়েটা ওর ছাত্রী সামিরা, সে একইরকম ভাবে ওকে ঝাঁকিয়ে যাচ্ছে আর বলছে ও ম্যাডাম ওঠেন আমাদের পড়াবেন না?

আজকে শুক্রবার, শুক্রবার হলেও ভার্সিটিতে যেতে হবে, ক্লাস ফ্রাই'ডে তে সব থেকে বেশি থাকে, তিনটা থেকে শুরু করে রাত আটটা পর্যন্ত। ছুটির দিনটাই মাটি হয়ে যায়।

সামিরা, লম্বা চুলে দুটো বেণি করে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে ছোট্ট একটা গ্রীন কালারের ব্যাগ ওটাকেই স্বপ্নে মনে হয়েছিল সবুজ পাতা। ওর পাশেই সিয়াম দাঁড়িয়ে, ওরা নার্সারিতে পড়ে, আর একটু দূরে রনি বসে আছে শান্ত ভাবে, রনি ক্লাস টু-তে পড়ে।
ওদের গার্ডিয়ানরা জোর করে তাদের বাচ্চাদেরকে তিতিরের কাছে পড়ায়, তাদের ধারণা তিতিরের কাছে পড়লে তাদের বাচ্চাদের ভালো হবে। ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে বাচ্চাদের সময় দেয় ও, এর বিনিময়ে কোন টাকা পয়সা নেয় না, তবে ওর ছাত্র-ছাত্রীদের গার্ডিয়ানরা আম,কাঁঠাল, ছাদে লাগানো নানা রকম সবজি, রান্না করা তরকারি বিরিয়ানি এগুলো মাঝে মাঝে তিতিরকে পাঠিয়ে দেয় কৃতজ্ঞতা স্বরূপ।
আসলে ও রেগুলার পড়াতেও পারেনা, একই বিল্ডিংয়ে থাকে ওরা; যখনই টের পায় তিতির বাসায় আছে টুপ করে চলে আসে পড়তে। প্রথম প্রথম শুধু সামিরা পড়তে আসতো, তারপর এলো সিয়াম শেষে যোগ হলো রনি। ওদের তিনজনের মধ্যে রনি সব থেকে শান্ত বাচ্চা পড়ালেখায় তুলনামূলক কাঁচা। রনি ধীরে ধীরে সামনে এসে বই খুলে তিতিরের পাশে বসে পড়লো।
"রনি, গুড মর্নিং," তিতির বললো হাই তুলতে তুলতে।

রনি তার শান্ত চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়লো।
"আচ্ছা, দেখি কাল যা পড়েছিলাম সেটা মনে আছে? বলে তিতির রনিকে বাংলা বইয়ের একটা পাতা পড়তে দিল।

রনি পড়তে শুরু করলো, আমাদের ছোট নদী লিখেছেন -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমাদের ছোট নদী চলে চলে চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তা আর আ আ র তা আর; পরের বাক্যে সে আটকে গেল।

সামিরা আর সিয়াম পাশ থেকে বলে উঠলো, হাঁটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি।

তিতির সামিরাকে একবার কড়া চোখে দেখে হাসলো। তোমরা চুপ করে বসো।
সামিরা হেসে বলে
- ম্যাডাম আপনি তো বলেছিলেন, কেউ ঘুমালে তাকে আদর করে জাগাতে হয়। তাই আমি আদর করে জাগাচ্ছিলাম।
- এটা বুঝি আদর করে জাগানো আমি তো ভাবলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। ওর কথা শুনে সবাই হাহাহিহি করে হেসে
ওঠে।

তিতির ও হাসে
- তোমাদের মতো স্টুডেন্ট থাকলে ঘুমানোই উচিৎ না, হাত মুখ ধুয়ে আসি, সেই পর্যন্ত যার যার হোম ওয়ার্ক বের করে বসে থাকো আমি এসেই দেখবো।

তিতিরের মা কিচেন থেকে ডাক দিলেন,
- তিতির, মা! নাস্তা রেডি, নাস্তা খেয়ে তারপর ওদের পড়াতে বস।

তিতিরের বাবা কিচেনে এসে তিতিরের মাকে ঠেলে ঠুলে ভেতরে ঢুকে বললো দেখি একটু জায়গা দাও তো এক কাপ চা বানাবো,
তিতিরের মা পাশ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো
- আবার শুরু করলে! কিচেনে আসো কেনো তুমি? বললে কি তোমাকে আমি চা বানিয়ে দেই না?
- এত রাগ করো কেন! সারাদিন তুমি কত কাজ কর তাই একটু হেল্প করতে আসি,
- সকাল সকাল আর হেল্প করতে হবে না, দয়া করে তুমি রুমে গিয়ে বসো আমি চা নিয়ে আসছি।
তিতির তখন মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলো ওয়াশ রুম থেকে, নিজের রুমে যেতে যেতে বলল মা আমাকেও এক কাপ চা দিও।

তিতিরের বাবা নিজের ফার্মেসিতে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রিটায়ার্ড আর্মি উনি এখন একটা ছোট ফার্মেসি চালান পাড়ার মোড়ে। তিতির আর ওর বাবা মা ভাই ভাবী নিয়ে সংসার, বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে চার বছর আগে তাদের একটা পরীর মতো মেয়ে নিয়ে সুখী সংসার। তিতিরকে দেখেই ওর বাবা বললো
– তোমার মা এখনো চা বানাতে শেখেনি, তোমার চা আমি বানিয়ে দিচ্ছি,
বাবা মায়ের প্রতিদিন টুকিটাকি এই ধরনের ঝগড়া দেখে অভ্যস্ত সেদিকে মনোযোগ দিল না ওর বড় বোনের ভিডিও কলে,
– তিতির, তোর ভাগ্নী তোর সাথে কথা বলবে
তিতির চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে হেসে বলে
– দাও
- হ্যালো খালামণি তোমার স্টুডেন্টরা কি এসেছে? সামিরা এসেছে? আমি একটু সামিরা কে হাই বলবো। সামিরার সাথে খুব ভাব হয়ে গিয়েছে তুশি মনির, সামিরার সাথে হাই-হ্যালো করিয়ে খানিক কথা বলিয়ে কেটে দিল ফোন।
বাচ্চাদের হোম ওয়ার্ক দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ও।

***
ভার্সিটিতে ঢুকেই তিতির লিফটের আয়নায় নিজেকে আরেকটু ঠিক করে নেয়, অফিস টাইমটা ড্রেস কোড ফলো করে গুছিয়ে পার করলেও ভার্সিটি কিংবা বাসায় একটু অগোছালোই থাকে, ক্লাসে পৌঁছে ব্যাগটা ডেস্কে নামিয়ে চেয়ারে বসতেই
তানিম এসে ঢোকে ক্লাসে,
- কিরে তানিম, কী খবর?
তানিম খানিকটা উদাস গলায় বলে
- আমার আজ সকালেই একটা মেয়ের সঙ্গে আই কন্টাক্ট হইছে!
- তোর জীবনে একটা না একটা কিছু হতেই থাকে হতেই থাকে, আই কন্টাক্ট হয়েছে কোন জায়গায়?
- আমগো নিকেতনে, বাজার করতে বাইর হইছিলাম হঠাৎ দেখি একটা মেয়ে।
- বাজারে?
- হ বাজারে, এমনভাবে তাকাইছে দোস্ত যেন দুইজন দুইজনরে অনেক বছর আগে থেকে চিনি, বিশ্বাস কর এত্ত সুন্দর মেয়েটা,
- আহা, সিনেমার সিন যেন! তারপর?
- মনে হইল এক্স্যাক্টলি শ্লো মোশনে তাকাইলো, যেন ঝড়ের মাঝখানে দাঁড়াইয়া আছি দুইজন, চারপাশে কিচ্ছু নাই, শুধু আমি আর ও। আমি একটা লাল টমেটো হাতে ধরে তাকায়া আছি, আর ও পুদিনা পাতা হাতে।

তিতির হাহাহা করে হেসে ওঠে
- হায়রে নাটক
তানিম গম্ভীর গলায় বলল
- তুই বুঝবি না, এইটাকে বলে 'লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট উইথ পুদিনা লিফ অ্যান্ড টমেটো।
ওদের কথাবার্তার মাঝখানেই স্যার ক্লাসে ঢোকেন, তিনি ইসলামিক স্টাডিজ পড়ান, সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি, আর থুতনিতে গুটিকয়েক অগোছালো দাড়ি। স্যার বয়স্ক মানুষ,চেহারায় কৌতুক ভাব প্রবল। তিনি লেকচার শুরু করলেন এথিক্স অ্যান্ড ইসলামিক প্রিন্সিপলস ইন বিজনেস নিয়ে।
লেকচার শেষে বললেন
- ইনশাআল্লাহ আগামী সপ্তাহে আপনাদের মিডটার্ম পরীক্ষা নেয়া হবে। প্রস্তুত থাকবেন সবাই। গত সপ্তাহে আমি ক্লাস টেস্ট নিয়েছিলাম আপনাদের মধ্যে থেকে মাত্র সাতজন উপস্থিত ছিলেন, এটা ঠিক করেন নাই আপনারা,
এই স্যার ক্লাসের সব স্টুডেন্টদের কে আপনি করে সম্বোধন করেন।
- স্যার ঐদিন অনেক বৃষ্টি ছিল তাই আসতে পারেনি অনেকে সৃজন দাঁড়িয়ে বললো
- সেটা আমার দেখার বিষয় না, তবে যারা বিবাহিত, তাদের জন্য ক্লাস টেস্টের অর্ধেক ১০ নম্বর আমি ফ্রি দিয়ে দেব! কারণ সংসারে ঝামেলা থাকতেই পারে, তাছাড়া বিয়ে হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও বারাকাহ। আচ্ছা কে কে বিবাহিত দাঁড়ান দেখি।
সুমি , লিজা, নুপুর, শিউলি, আফজাল ভাই আর মাহমুদ ভাই উঠে দাঁড়ালেন। আঙ্গুল তুলে গুনে গুনে স্যার বললেন ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ মাত্র ৬ জন! এর ভেতর ঝট করে উঠে দাঁড়ায় তানিম , স্যার ওর দিকে তাকিয়ে বললেন আপনি বিবাহিত?
- স্যার আমি বিয়ে করি নাই তবে করব? উদগ্রীব হয়ে বলে তানিম
স্যার অদ্ভুত কৌতুক ভরে ওর দিকে তাকালেন, জিজ্ঞেস করলেন
- মিড টার্মের আগেই বিয়ে করবেন নাকি মিড টার্মের পরে?
- জি স্যার, অবশ্যই স্যার, করব স্যার মিড টার্মের আগেই করব স্যার
- পাত্রী ঠিক ?
- ঠিক হয় নাই স্যার, তবে ঠিক হয়ে যাবে, আপনার দোয়ায় আজকে সকালেই স্যার আই কন্টাক্ট হইছে স্যার,
- আই কন্টাক্ট কি? স্যার হা করে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালেন পুরো ক্লাসের সবার দিকে
আপেল দাড়িয়ে বলল
- স্যার আই কন্টাক্ট মানে চোখাচোখি। তানিমের এক মেয়ের সাথে চোখাচোখি হয়েছে স্যার।
স্যার বোকা বোকা হাসি দিয়ে তানিমকে বললেন, আপনাদের ব্যাচের সবাই অনেক দুষ্টু আছেন দেখছি, তারপর তানিমকে বললেন
- আপনি এদিকে আসেন এতক্ষণ যা যা লেকচার দিয়েছি সেটা নিয়ে আলোচনা করেন। আর আই কন্টাক্ট ওয়ালির সাথে যদি আপনার বিয়ে না হয় তাইলে কিন্তু আপনার বিশ মার্ক মাইনাস হবে মনে রাইখেন।
তানিম মোটেও দমে যাওয়ার ছেলে নয়। সে স্যারের পাশে দাঁড়িয়ে লেকচার দিতে শুরু করলো, ইসলামে ব্যবসা trade or commerce শুধুই লাভের জন্য নয়, বরং এটি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবনযাপনের একটি পবিত্র মাধ্যম। ব্যবসায়িক নৈতিকতা business ethics ইসলামিক অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক...... ( চলবে)

ছবিঃ নেট

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০২৫ রাত ১১:১৯

আধুনিক চিন্তাবিদ বলেছেন: আমার এইভাবে খন্ড খন্ড অংশ পড়তে ভালো লাগে না। সিরিজটি আগে শেষ হোক, তারপরে সবগুলো একসাথে পড়বো।

০২ রা জুন, ২০২৫ রাত ১১:২২

সামিয়া বলেছেন: সে ও ভালো।

২| ০৩ রা জুন, ২০২৫ রাত ১:৫৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: লেখা শেষ করে উধাও হবেন।

০৩ রা জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:৫০

সামিয়া বলেছেন: উধাও ও তো হই না, সুযোগ পেলেই ব্লগে আসি, আপনার কাছে যদি মনে হয় দেরি হয়ে যাচ্ছে কমেন্টে রিমাইন্ড দিবেন প্লিজ।

৩| ০৩ রা জুন, ২০২৫ রাত ২:২২

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: ভালোই হয়েছে ।

০৩ রা জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:৫০

সামিয়া বলেছেন: থ্যাঙ্ক ইউ

৪| ০৩ রা জুন, ২০২৫ সকাল ৯:২২

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
ভালো।

০৩ রা জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:৫০

সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ০৩ রা জুন, ২০২৫ সকাল ১০:৪১

কু-ক-রা বলেছেন: গল্পের নাম এইরুপ হইলে আরও ভাল হইত: "উহার সহিত উহার দেখা হইবে কবে?"

০৩ রা জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:৫১

সামিয়া বলেছেন: হুম হুম ঠিক:)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.