![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দিনটা বেজায় গরম ছিল, মেজাজ মর্জিও ছিল চড়া একেকজনের। চারপাশে শুধু মানুষ আর মানুষ, গরমে হাঁসফাঁস করছে সবাই কেউ এসি-র বাতাসে দাঁড়িয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে চাইছে কিন্তু লাভ খুব একটা হচ্ছে না, কেউ আবার হাত ভর্তি জামা নিয়ে ট্রায়াল রুমের সামনে অপেক্ষা করছে ভেতরের জন কখন বের হবে।
সেইখানে তাদের একজন হয়ে মুন ও দাঁড়িয়ে আছে। পিংক সিটির ইয়োলোর দোকানে ৫০% ডিসকাউন্ট অফারে উপচে পড়া ভিড় সব বারের মতন অতিরিক্ত বেশি। মুন হাতে তিনটা তিন কালারের লন নিয়ে দাঁড়িয়ে, মিন্ট গ্রিন, নেভি ব্লু আর অফ হোয়াইট কালারের ড্রেস তিনটার ভেতরে মিন্ট গ্রিন কালারের ড্রেসটা বেশি ভালো লেগেছে তার।
যখনই মুন একলা থাকে, সব নিরবতা যেন ওর নিজের হয়ে যায়... তখন চারপাশের কোলাহলও একধরনের অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। অথচ সেই নীরবতার ভেতরেই তার ক্ষীণ ইচ্ছেগুলো মাথা তুলে দাঁড়ায় অহরহ। আজ যেরকম ভাবে বারবার প্রবল ইচ্ছা করছে হাতে ধরে রাখা মিন্ট গ্রিন কালারের ড্রেসটাই নিবে।
তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মেয়ের হাতেও তিনটা ড্রেস তিনটাই ওয়ান পিস। দুজন একসাথে দাঁড়িয়ে, কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা করতে করতে নীরবতা যেন তাদের মাঝে সেতুবন্ধন গড়ে তুলেছে।
সিরিয়াল এল একসাথে। মুন বলল, তুমি চাইলে আমার সাথে ঢুকে যেতে পারো, তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।
মেয়েটি একটু খুশি হয়ে তাকিয়ে বললো আচ্ছা।
ট্রায়াল রুমে ঢুকে দুজনেই কোনরকম পরনের ড্রেসের উপরেই যার যার ট্রায়ালের ড্রেসগুলো পড়তে শুরু করল।
মুন ওর পছন্দের মিন্ট গ্রিন ড্রেসটা আগে ট্রায়াল করলো আর নিজেকে নিজেই দেখে খুশি হয়ে গেল; কি দারুন লাগছে দেখতে।
মেয়েটা ও পরপর দুটি জামা ট্রায়াল করলো, সেকেন্ড ট্রায়াল করা জামাটায় তাকে ভীষণ মানিয়েছে, মুন সে কথা বলল মেয়েটিকে, মেয়েটি তার শ্যামলা মিষ্টি বিষন্ন মুখ তুলে মুনকে জানালো যে এসব ট্রায়ালে কিছু হবে না কোন লাভ নেই। ওর বড় আপা যেটা বলবে, সেটাই ওকে নিতে হবে। নিজের পছন্দে আজ পর্যন্ত একটা জামাও পড়তে পারেনি, বলতে বলতে পুরাতন ক্ষোভে চোখ দিয়ে টপাটপ জল গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো তার।
মুন আয়নার দিকে ফিরে নিজের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল। ভেতরে কোথাও যেন খুব চেনা একটা কষ্ট নড়ে উঠল। বললো
- আমারও তো একই অবস্থা। আমার হাসবেন্ড যদি বলে মানায় না, নেয়ার দরকার নেই আমি সেটা নিই না। নিজের পছন্দ হলেও, ও যেটা বলবে সেটাই মানতে হয়।
চার থেকে পাঁচ মিনিটের ভেতর ড্রেস গুলো ট্রায়াল শেষে বেরিয়ে আসে মুন আর ঐ মেয়েটা, ট্রায়াল রুমের সামনে লম্বা লাইনের জন্যই ওরা দ্রুত বেরিয়েছে। মুনের হাতে মিন্ট গ্রিন ড্রেসটা। খুব পছন্দ হয়েছে ওটার রঙ, ছাঁট, নরম কাপড় সবই।
ওর হাজবেন্ড জামাটার দিকে একবার তাকিয়ে সব সময়ের মতন বলল, এই রঙটা তোমার গায়ে ভালো লাগবে না। অফ হোয়াইট কালারেরটা নাও।
মুন কিছু বলল না। শুধু জামাটা চুপচাপ ফেরত দেয়ার জন্য র্যাকের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে দেখলো পাশের কাউন্টারে সেই মেয়েটি সবুজ ড্রেস হাতে নিয়ে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। পাশ থেকে তার বড় বোন বলল, এটা তোমার পরার মতো না, কালো মেয়ে তুমি সব রঙ তোমার জন্য না ওই লালটা নাও ওইটা তোমায় মানাবে।
মেয়েটির ঠোঁট একটু কাঁপল, তারপরও মাথা নিচু করে সবুজ জামাটা আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো একভাবে।
এই শহরে প্রতিদিন হাজার হাজার মেয়ে তাদের পছন্দের জিনিসগুলো হারিয়ে ফেলে এভাবেই, কারও না কারও কথায়, মা, বড় ভাই-বোন, স্বামী, পরিবার, সবাই মিলে ঠিক করে দেয় কী করবে, কী পরবে, কী মানায়, কীভাবে হাঁটতে হয়, বসতে হয়, কথা বলতে হয়, কী তার জীবনে ভালো।
আর মেয়েরা সমাজ সংসার পরিবারের চাপে ভুল সিদ্ধান্ত হোক কিংবা সঠিক সিদ্ধান্ত যেটাই হোক না কেন মেনে নিতে বাধ্য হয়।
মুন মেয়েটির বড় বোনের দিকে তাকিয়ে বলল আপু ওতো লাল জামাটা পড়তেই পারেনি, এত টাইট কাঁধের কাছে, সবুজ জামাটা ওর গায়ে ঠিক মত লেগেছে ওটাই নিয়ে নিন, ওকে দারুন মানিয়েছে, আমি ছিলাম ওর সাথে ট্রায়াল রুমে আমি দেখেছি।
- তাহলে লাল জামাটার সাইজ দিতে বলি, বলেই সেলস ম্যানের কাছে সাইজের কথা জানাতেই সেলসম্যান জানালো যে ডিসকাউন্ট প্রোডাক্টে কোন সাইজ অ্যাভেলেবেল নেই যা আছে ডিসপ্লেতেই আছে, বাধ্য হয়ে মেয়েটির বড় বোন সবুজ জামাটাই মেয়েটাকে কিনে দিল অবশেষে।
মুনের দিকে তাকালো মেয়েটি, মুখ ভর্তি কৃতজ্ঞতার হাসি।
এবার একই সূত্র নিজের ড্রেসের বেলায়ও এপ্লাই করলো মুন। এবং ওর পছন্দের ড্রেসটাই কেনা হলো বিয়ের এত বছর পর এই প্রথমবারের মতন।
মুন আর ওর হাসব্যান্ড শপিংমল থেকে বেরিয়ে এল। মুনের মনে সেই মেয়েটার মুখটাই ভাসতে থাকলো শ্যামলা, মলিন বিষণ্ণতায় ভরা আশ্চর্যরকম সুন্দর এক মুখ।
ওর নিজের ব্যাগে রাখা মিন্ট গ্রিন ড্রেসটার ওপর হাত বুলিয়ে নিল একবার। খুব অদ্ভুত এক শান্তি কাজ করলো ভিতরে।
হাসবেন্ড ফোনে কথা বলতে বলতে একটু দূরে সরে গিয়েছেন। মুন হেঁটে শপিং মলের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়াতেই থমকে তাকালো সে।
- এই তুমি?
- আপু! সেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে ওর সামনে,
- তুমি তো এখনো আছো!
- হ্যাঁ। আপুর একটু ফার্মেসিতে কাজ ছিল। তারপর বললো আজকে আপনি না থাকলে আমার পছন্দের জামাটা হয়তো নেয়াই হতো না। ধন্যবাদ আপনাকে।
- ওয়েল কাম, আমিও তো মিন্ট গ্রিনটাই নিয়েছি।
মেয়েটা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল
- সত্যি! কি করে সম্ভব হলো? ওটা আপনাকে দারুন মানাবে।
- বলেছি অফ হোয়াইট কালারের ড্রেসটায় কাঁধের কাছে এত টাইট যে পরতেই পারিনি।
দুজনেই হেসে উঠল।
ওদের এই ছোট্ট আনন্দের মাঝে, শহরের গরম, ভিড়, ক্লান্তি, সব কেমন ফিকে হয়ে গেল। ( সমাপ্ত)
ছবিঃ আমার তোলা
২৮ শে জুন, ২০২৫ রাত ১০:২৫
সামিয়া বলেছেন: একদম
২| ২৮ শে জুন, ২০২৫ রাত ১০:৫২
কামাল১৮ বলেছেন: সুন্দর বর্ণনার সাথ্ সুন্দর গল্প।
২৮ শে জুন, ২০২৫ রাত ১১:১১
সামিয়া বলেছেন: থ্যাঙ্ক ইউ
৩| ২৮ শে জুন, ২০২৫ রাত ১১:১৮
অপু তানভীর বলেছেন: এই শহরে আসলে কত মেয়েদের নিজেদের ইচ্ছের গলা টিপে মেরে ফেলতে হয়!
গল্পটা পড়ার সময় আমার মনে হল যে মুন যদি তার স্বামীকে বলতো যে আমি এটাই নেব, এটাই পছন্দ তাহলে কী হত? এই কথাটা বলাটা কি খুব কঠিন ছিল? বিশেষ করে জামার রং পছন্দের ব্যাপারে তো জোর খাটানোই যায়, নাকি?
ছোট গল্পের শেষে দুজনই যে পছন্দের জিনিস পেয়েছে সেটা আনন্দের ব্যাপার।
(মিন্ট গ্রিন রংটা গুগলে লিখে সার্চ দিয়ে দেখলাম। এটাকে যে মিন্ট গ্রিন বলে সেটা জানতাম না। এই রং আমার মোটেই পছন্দ না। যদি বউ থাকতো, আমিও আমার বউকে বলতাম এটা নিও না। )
২৯ শে জুন, ২০২৫ রাত ১২:১০
সামিয়া বলেছেন: এইযে মিন্ট গ্রিন কালার এটা পছন্দ হলোনা কেন শুনি? মুনওরা স্বামীদের প্রতিবাদ কি শুরুর দিকে করেনা ভেবেছেন? প্রতিবাদে কিছু হয় না আসলে ঠাট্টা আর তিরস্কার ছাড়া ফলে সয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না ওদের। আর এখানে কালারের রং টা প্রধান নয় প্রধান হচ্ছে দূর্বলের উপর ক্ষমতা প্রয়োগের নমুনা।
মন্তব্যের ছবিটা গুগল থেকে নিয়েছি।ধন্যবাদ রইলো
৪| ২৯ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১০:৪১
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আমার ইচ্ছেকে আমি মূল্য দিই সব সময়। পরে ভালো না লাগলে পরি না। মন যেটা চায় সেটাই করা উচিত। মনকে কষ্ট দিতে নেই
সুন্দর গল্প
২৯ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:০৮
সামিয়া বলেছেন: সবার সিচুয়েশন তো একরকম না। সেটা নিয়েই গল্প। ড্রেসের কালার পছন্দ থিমটা শুধু মাত্র ড্রেসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এইভাবে আমাদের দেশের মেয়েদের অগণিত সেক্রিফাইস করতে হয়, একবার আপনার এরকম একটা স্ট্যাটাস দেখেছিলাম যে মেয়েদের নিজের বাবা মা অসুস্থ হলে সেখানে যেতে অনুমতি লাগে অথচ স্বামীর বাবা মা অসুস্থ হলে তাদেরকে সেবা যত্ন করতে হয় বা এরকম কিছু আমার ঠিক মনে নাই আপনি কি লিখেছিলেন বাট এই টাইপের কিছু লিখেছিলেন। এসব অর্থই বুঝিয়েছি আসলে ঘটনাটা। আমিও আমার নিজের পছন্দেই কিনি পরি, সে তো মেয়েদের ফ্যাশন সম্পর্কে কিছু বোঝেই না, আমাকে নিষেধ করবে কি। ধন্যবাদ
৫| ২৯ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:২৩
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: হ্যাঁ আপু গল্প মূলধারা বুঝেছি।
০১ লা জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:২১
সামিয়া বলেছেন: আচ্ছা
৬| ৩০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১০:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর গল্প।
০১ লা জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:২১
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জুন, ২০২৫ রাত ১০:২১
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
পিন্ক সিটি থেকে মুন তার স্বামীর জন্য একটি লাল শার্ট/ লাল টাই/ লাল ফুল পেন্ট কিনে দিলে কাজ হয়ে যেতো।