![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাতটা তমালের ভাবনায় ডুবে ডুবে কেটেছে তিতিরের। বিছানায় শুয়ে বারবার মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েছে। তমালের শেষ মেসেজটা বারবার পড়েছে।
জীবনে প্রথমবারের মতো নির্ঘুম একটা রাত কাটিয়ে সকালে কাস্টমার কেয়ারে পৌঁছে দেখলো ফ্লোর ঝাড়ু দেওয়া হচ্ছে, কাস্টমার কেয়ারের ডেস্কের এক কোণে স্যানিটাইজার স্প্রে করছে রুপম, নুরিয়া আর তিতিরের অফটাইমে রুপম ব্যাক আপ দেয় কাস্টমারদের।
ডেস্কে বসে তিতির কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে পেইন্টিং কনটেস্টের রিপোর্ট টাইপ করছিল, এমন সময় ওর মোবাইলে মেসেজ টোনে শব্দ করে উঠলো। তমালের ম্যাসেজ
- শুভ সকাল তিতির পাখি দিনটি ভালো কাটুক, মুচকি হেসে তিতির রিপ্লাই দিলো
- দিনটি দুজনেরই ভালো কাটুক
- তিতির পাখিকে দেখলাম
- কোথায়?
- তোমার ঘরে হয়তো
- স্বপ্ন?
- হুম,একটা মিষ্টি স্বপ্ন
- কি দেখলেন
- গল্প করছিলাম
- হলি ড্রিম
কতগুলো হাসির ইমোজি
-গতকাল শুধু তোমার কথা ভেবেছি তিতির
- কি ভেবেছেন
- সব কথা কি বলা যায়?
- তাহলে এমন কিছু ভাবা উচিৎ না যা মুখে বলা যায় না।
- মন কি আর সেই যুক্তি মানে
- মন কে বোঝাতে হবে
তিতির ফোন থেকে মুখ তুলে সামনে তাকায় ,ওর সামনে দাঁড়ানো কেক শপের ছেলেটা কখন এসে দাঁড়িয়েছে টেরই পায়নি ও।
- তিতির আপু, কাল যারা পেন্টিং প্রতিযোগিতায় জিতেছে তাদের জন্য কেক প্রস্তুত রাখা হয়েছে, বাচ্চাদের নাম লিস্টে আছে।
তিতির বললো,
- খুব ভালো, অনুষ্ঠানে এই কেক থাকলে ওরা খুব খুশি হবে। একটু পরে সবাই এলে মাইক্রোফোনে এনাউন্স করবো।
তিতির আবার নিজের মোবাইলে ফিরলো। কিছু একটা লিখবে ভাবলো তমালকে, লেখা হলো না, তমালের সেখানে একটা ম্যাসেজ শো করছে, ওপেন করেছে পড়ার জন্য তখনই পাশ থেকে বুলবুল ভাই এসে বললেন,
- তিতিরমনির মন আজকাল কোথায় থাকে, তিতিরমনির মন যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন, তারপর বললেন আজ স্যার আসবেন, নতুন কিছু অফিসার সাথে নিয়ে হেড অফিস থেকে। পেইন্টিং কনটেস্টে তুমি হোস্ট করেছো ভালো রিভিউ গেছে ওদের কাছে। তুমি আজকের রেজাল্টের প্রোগ্রামের জন্য আরেকটু এলার্ট থেকো।
তিতির হেসে সায় দিল।
ঠিক তখনই ল্যান্ড ফোন বেজে উঠলো,
সি ও স্যার কল দিয়েছেন
- তিতির
- জি স্যার
- একটু আসো তো
অজানা আশংকায় চোখ মুখ শুকিয়ে গেলো ওর, সিও স্যার সাধারনত ওকে ডাকেনা।
তিতিরের বুক ধকধক করতে লাগলো
রুমে ঢুকতেই সিও স্যারের কড়া গলা,
- তোমরা হাউজ হোল্ডের ইনভেনটরি ঠিকমতো মনিটর করো না?"
তিতির অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সামনে ফাইলে কিছু ছবি ও তালিকা রাখা চুরি যাওয়া জিনিস ওগুলো!
সিও স্যার আবার বলে উঠলো
- রাতুল নামের ছেলেটাকে তো চেনো? বয়স তেইশ-চব্বিশের মধ্যে হবে, অনেকদিন ধরেই তো সে সেলস বয়ের কাজ করছে, মাঝে মাঝে হাউজহোল্ডেরর কাজে তেল, চাল, ডাল, হিটার, ছাতা, ইলেকট্রিক কেটলি এইসব সামগ্রী বহন বা গুছানোর জন্য ও কাজ করতো সে চুরি করে যাচ্ছে গত কয়দিন ধরে!
- জি স্যার ?
- হ্যাঁ স্যার চুরি যাওয়া জিনিসগুলোর তালিকা দেখ
তিতির দেখলো
তিনটা রাইস কুকার, দুইটা ননস্টিক ফ্রাইং প্যান, একটা মাল্টিপারপাস কুকিং সেট, একটা ইলেকট্রিক কেটলি,
ছয়টা ছোট হটপ্লেট।
- এইসব জিনিসগুলো ধাপে ধাপে গায়েব হয়েছে। কেউ বুঝতেই পারেনি, কারণ রাতুল এগুলোকে ধোয়ার জন্য বা মেরামতের অজুহাতে হাউজ হোল্ডের স্টোর রুম থেকে বের করতো।
তিতির চুপচাপ দাঁড়িয়ে, ভাবছে স্যার কেন ওকে এগুলো বলছে এগুলো তো ফ্লোর ম্যানেজার অথবা এক্সিকিউটিভদের বলতে পারতো। তাদেরই তো দায়িত্ব।
সিও স্যার গম্ভীর গলায় বললেন,
- তিতির, তোমাদের ইউনিটেই এজন্সি কন্ট্রোল ছিল, তুমি কাল একটা রিপোর্ট তৈরি করো। এটার জবাবদিহিতা তোমার কাছেই চাই।
তিতির মাথা নিচু করে বললো,
- জি স্যার।
সিও স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে তিতির হাঁটতে হাঁটতে ওদের কাস্টমার কেয়ারের ডেস্কের দিকে গেল। চোখ-মুখ থমথমে। নুরিয়া তখন চা খাচ্ছিল, তিতিরের মুখ দেখে জানতে চাইলো
- কি হয়েছে? মুখটা এমন কালো করে আছো কেন?
তিতির চুপচাপ বসে পড়ল ওর পাশে। তারপর চাপা গলায় বলল,
- রাতুল হাউজ হোল্ড থেকে চুরি করেছে। রাইস কুকার, ফ্রাইপ্যান, হটপ্লেট, কেটলি, সব গায়েব।
নুরিয়া বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে বলল,
- কি বলো এত কিছু চুরি করে ফেললো তুমি কিছু টের পেলেনা।
তিতির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
- আপু এসব কি আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, আমার তো শুধু কাস্টমার কেয়ারের দায়িত্ব, সিও স্যার আমাকে কেন বলেছে তাই তো বুঝতে পারছি না। তাছাড়া আপনি ও তো আমার সাথে কাজ করেন, আপনি টের পেয়েছেন?
নুরিয়া একটু থেমে বলল,
- এটা কি রকম কথা! তোমার কাছে সিও স্যার রিপোর্ট চেয়েছে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে! এর ভিতরে তুমি আমাকে জড়াচ্ছো কেন? আর রাতুল তো সবসময় বিনয়ী, শান্ত। ও স্টোর থেকে মাল আনা-নেওয়া করতো স্টাফদের দিয়ে দিত। এখন কার ইশারায় এমন করেছে কে জানে।
তিতির নুরিয়ার খোঁচাটা ঠিক ঠিক টের পেয়ে প্রথমবারের মতন ঘটনার ভয়াবহতা বুঝতে পারলো, কোনভাবে সিও স্যারের সন্দেহ তিতিরের দিকে কেউ দিয়েছে, ও হতাশ গলায় বলল,
- লগ বুক, চেকলিস্ট, সিসি ক্যামেরা এসব দিয়ে সব প্রমাণ করা যাবে।
নুরিয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
- লগ বই আছে, কিন্তু কে কখন স্টোর থেকে কি নিচ্ছে, তা কি সব তুমি দেখেছ, তুমি কি ২৪ ঘন্টা অফিসে থাকো? আর সিসি ক্যামেরার রেকর্ড কি চাইলেই তোমাকে দিবে?
তিতির হালকা গলায় একটা তির্যক হাসি দিয়ে বলল,
- এ সব কিছু কি আমার একার দেখার দায়িত্ব? কি বলতে চান আপু আমিই এসব করিয়েছি রাতুল কে দিয়ে?
- এখন কেউ সন্দেহের বাইরে না চেহারা দেখে তো মানুষ চেনা যায় না।
তিতিরের মাথা ভন ভন করতে লাগলো নুরিয়ার উত্তর শুনে,এসব কি বলছে নুরিয়া আপু, আল্লাহ এ কি বিপদ, সিও স্যার তারমানে কোন ভাবে ওকেই সন্দেহ করছে।
তিতির মাথা ঠান্ডা রেখে ভাবছে রিপোর্টে কি কি লিখতে হবে
ইনভেন্টরি সিস্টেম কিভাবে পরিচালিত হয়।
রাতে হাউজ হোল্ডে কে কে কী কাজ করেছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বল দিকগুলো।
ভবিষ্যতে কী কী সতর্কতা নেয়া উচিত।
রাতুলের স্বীকারোক্তির জন্য সিসি ক্যামেরার রেকর্ড সহ প্রমাণ।
তিতির তমালকে ভুলে, ভার্সিটির ক্লাস ভুলে, বাসার কথা ভুলে এমনকি বাচ্চাদের কনটেস্টের হোস্টের কাজের কথা ভুলে রিপোর্ট তৈরি করতে শুরু করলো সিও স্যারকে যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট পাঠাতে হবে। এত নোংরা সন্দেহ কিছুতেই বাড়তে দেয়া যাবে না।
নুরিয়া পাশ থেকে হালকা হাসল, বললো
- তাহলে বাচ্চাদের কনটেস্ট প্রতিযোগিতার ফলাফল হোস্ট আমিই করে দিই? তুমি তো অনেক ব্যস্ত।
তিতির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আচ্ছা বলে রিপোর্ট তৈরিতে মনোযোগ দিল।
৭ম পর্ব
তিতিরের মনে তখন অস্থিরতা। রিপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে তার আঙুলগুলোও যেন কাঁপছে, মনের ভেতর একটাই কথা নিজেকে প্রমাণ করতে হবে, সিও স্যারের সন্দেহ কাটাতে হবে। চোখে মুখে ভয়, দুঃখ হতাশা আর ক্লান্তি নিয়ে তিতির বসে বসে একের পর এক পয়েন্ট লিখে যাচ্ছে,
হাউজ হোল্ড ইনভেন্টরির নিয়ম-কানুন
স্টোর রুমে যাতায়াতকারী স্টাফদের নাম
লগ বুকের অনিয়ম ইত্যাদি
হঠাৎ ওর পাশে এসে হাসনাত ভাই কণ্ঠে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললেন
– আরে! এতক্ষণ ধরে খুঁজছি, তুমি বসে বসে কি করছো? অনুষ্ঠান তো শুরু হয়ে গিয়েছে! মঞ্চে নুরিয়া আপা কি করছে, তাকে তুমি বলেছিলে হোস্টিং করতে? তুমি যে কি না, নিজের ভালো বোঝো না।
তিতির তাকালো, মুখে ক্লান্তি আর চিন্তা নিয় ঠোঁটে ম্লান এক হাসি এনে বললো
- নুরিয়া আপুই বললেন উনিই হোস্ট করবেন...
- আরে! তা হয় নাকি আমি বলছি তুমি করবে ব্যাস, স্যার ও বলেছে তুমি করবা। এত সুন্দরভাবে তুমি আয়োজন করেছো, অফিসের সবাই বলেছে তুমি না হলে এই আয়োজনই জমবে না!
হাসনাত আর দেরি করলো না, মঞ্চে উঠে মাইক্রোফোন হাতে নিলো নুরিয়ার কাছ থেকে
- ধন্যবাদ আপু, এবার মঞ্চে ডাকি আমাদের প্রাণপ্রিয় তিতির আপুকে...
নুরিয়া মুখে হাসি রাখলেও চোখে আগুন। মঞ্চ থেকে নামতে নামতে সে চোখে চোখ রেখে তিতিরকে বলল
- গুড লাক। দেখি কতদূর উড়তে পারো।
টেনশনে বেখেয়াল তিতির সেদিকে লক্ষ্য না করে মঞ্চে উঠে দাঁড়ালো। আলোর ঝলক, বাচ্চাদের হাততালি, সহকর্মীদের চিৎকার, কেকের সুবাস, আর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা হেড অফিস থেকে আগত সিনিয়র স্যার ও ডিরেক্টর স্যার সিও স্যারের নিরীক্ষণ সব মিলিয়ে এক উত্তেজনাময় মুহূর্ত।
তিতির মিষ্টি কণ্ঠে ঘোষণা করলো
- পেইন্টিং কনটেস্টে বিজয়ী ছোট্ট শিল্পীদের হাতে আজ তুলে দেয়া হবে পুরস্কার! আমাদের সবার পক্ষ থেকে একরাশ ভালোবাসা তাদের জন্য!
মঞ্চে একে একে বাচ্চারা উঠে এলো, কারো হাতে পুরস্কার, কারো হাতে চকলেট, কেক কাটা হলো সবাই মিলে মুহূর্তটা ছিল সত্যিই হৃদয়গ্রাহী।
সিও স্যার একটু দূর থেকে হাসলেন, হেড অফিসের প্রতিনিধিরা প্রশংসাসূচক চোখে তিতিরের দিকে তাকালেন। পরে অফিসের ভেতরেই ছোট্ট একটা আনুষ্ঠানিকতা
- মিস তিতির, আপনার এই অসাধারণ ব্যবস্থাপনার জন্য হেড অফিস থেকে আপনাকে ছোট্ট একটা শুভেচ্ছা উপহার দিচ্ছি।
তিতির অবাক হয়ে ছোট্ট প্যাকেটটা খুললো।
ভেতরে ছিল একটি লেটার:
উৎকৃষ্ট পারফর্ম্যান্স অ্যাওয়ার্ড – ১ লক্ষ টাকার ইনসেন্টিভ।
তিতির চোখে জল চলে এলো এত চাপে, এত সন্দেহের মধ্যে দিয়ে যাওয়া এক সকালে এমন সম্মান, সে কল্পনাও করেনি।
অফিসের করিডোরে নুরিয়া দাঁড়িয়ে ছিল দূরে। মুখে তেতো হাসি, চোখে ঈর্ষা সেও বুঝতে পারলো, একশ বার ঘুঁষি মেরে যাকে নামাতে চেয়েছিল, সে আজ ফুল হয়ে ফুটেছে মঞ্চের আলোয়।
তিতিরের মোবাইলে তখনই তমালের আরেকটা ম্যাসেজ
- স্বপ্নে দেখলাম তোমাকে… একদম যেন আলোয় মোড়া তিতির পাখি।
তিতির মুচকি হাসে…
আজকের দিনটা, এত কষ্টের ভেতর থেকেও, জিতে যাওয়ার দিন। (চলবে)
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:২২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: তারপর ...।