![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রহমান সাহেবের চোখে ক্লান্ত; দৃষ্টির গভীরে জমে আছে দীর্ঘশ্বাস আর শূন্যতা। পাপড়ি খসে পড়া চোখগুলো কোনো স্বপ্ন দেখে না আর, যা দেখে কেবল তা অভ্যাসের তাড়না। একসময় মানুষ যতই সংগ্রাম করুক, জীবনের শেষ প্রান্তে থেকে যায় শুধু মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা। বুকের ভেতর ধুকপুক করা হৃদপিণ্ডটা যেন এক যান্ত্রিক মেশিন; চলার জন্য চলছে; বাঁচার জন্য নয়।
বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি ভাবেন, বিজ্ঞানীরা এত আবিষ্কার করলেন, অথচ মানুষের হৃদয়ের যন্ত্রণা কমানোর কোনো ইনজেকশন কি আবিষ্কার করতে পেরেছেন? বুকের ভেতর যে যন্ত্রটি নিরন্তর ধ্বনি তোলে কষ্টের, সেই যন্ত্রের বেদনা মাপার কোনো উপায় কি আবিষ্কার করেছেন তারা?
লাইন সামনে এগোয় না, অথচ পিছনের মানুষগুলো ক্রমেই বিরক্ত হয়ে উঠছে। মাত্র দুই টাকার ভাংতি নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়লেন রহমান সাহেবের সাথে কাউন্টারের লোকটা। লোকটি কড়া গলায় ধমক দিচ্ছেন তাকে, বৃদ্ধ একজন মানুষকে তারুণ্যের ক্ষমতায় ধমক দিতেই পারেন।
পেছনের লাইনের মানুষ চাপ সৃষ্টি করছে হতভাগ্য বৃদ্ধ বুঝলেন, এই দুই টাকা তার অমোঘ নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বার বার মিনতি করলেন বাবা, দুই টাকা তো ভাংতি নেই এই দশ টাকা আপনার কাছে রাখেন, আমারে যেতে দেন। কিন্তু লোকটি আরও রুক্ষ স্বরে বললো, না ঠিক মতো দেন, বাড়তি টাকা আমি নেবো না।
ঠিক সেই সংকটমুহূর্তে এক তরুণী এগিয়ে এসে ব্যাগ থেকে দুই টাকার একটি চকচকে কয়েন হাতে তুলে দিলেন। রহমান সাহেব অস্ফুট কণ্ঠে বললেন মাগো, কৃতজ্ঞতা তোমার কাছে। মেয়েটি সে কথা কিছু শোনেনি, হেডফোনে ডুবে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে সে।
দুপুর গড়িয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনি। সারা দেহে তৃষ্ণা, মাথায় ক্লান্তির ভার রহমান সাহেবের। গেট খুলতেই ছেলে তাড়া দিলো
এত দেরি কেন বাবা? বাজার তো করা হলো না! এক্ষুনি বের হন, দুপুর পেরিয়ে যাচ্ছে। গরমে না খেয়ে বসে থাকবো নাকি? এই নেন টাকা।
টাকাটা কাঁপা হাতে নিতে নিতে বলল বৌমাকে একটু যদি পানি দিতে বলতি খুব পিপাশা লেগেছে পরক্ষনেই
ছেলের বিরক্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে বললেন,
- থাক লাগবে না,রহমান সাহেব আবার বের হলেন। বাজারের পথে হাঁটতে হাঁটতে বারবার ভেসে উঠলো মৃত স্ত্রীর চোখ; টলটলে শীতল কালো জলের মতো, যেখানে একসময়ে তিনি শান্তি খুঁজে পেতেন।
তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
মনের ভেতর কষ্ট চেপে ধরে বললেন ওরা ভুলে যায়, ওরাও একদিন বৃদ্ধ একাকী অসহায় বাবা হবে।
বাজার করে ফিরে এসে গেটের সামনে বাজারের ব্যাগ হাতে হঠাৎই লুটিয়ে পড়লেন রহমান সাহেব। মাটিতে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগের ভেতর থেকে সবজি আর ফল একে একে গড়িয়ে পড়লো। বুকের ভেতরকার হৃদপিণ্ডটি থেমে যেতে চাইছে বারবার, নিশ্বাসের শব্দ যেন ভাঙা বাঁশির মতো হেঁচকি দিয়ে উঠছে।
ঠিক সেই মুহূর্তে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল সুমনা আর তার স্বামী। দীর্ঘদিনের স্বপ্নে গড়া তাদের বানানো বৃদ্ধাশ্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠান আজ। গাড়ির জানালার ফাঁক দিয়ে সুমনার চোখে ধরা পড়লো রাস্তায় অচেতন এক বৃদ্ধ পড়ে আছে। বিস্ময় আর আতঙ্কে সে চিৎকার করে বলে উঠলো,
- গাড়ি থামাও
দু’জনে তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থামিয়ে রহমান সাহেবকে তুলে নিলো। নিস্তেজ দেহটা যেন মুঠো থেকে ফসকে যাওয়া বালির মতো অসহায়। গাড়ি ছুটলো নিকটতম হাসপাতালে।
ডাক্তাররা পরীক্ষা শেষে বললেন,
- হিট স্ট্রোক হয়েছে। তবে এবারের মতো বেঁচে গেছেন।
ওরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো, রহমান সাহেবের চোখে মুখে ক্লান্তি, ওদের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি দেয়ার চেষ্টা করলেন কৃতজ্ঞতায়। ডাক্তার ছাড়পত্র দিলে, সুমনা আর ওর স্বামী তাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলতেই; তিনি ধীর কণ্ঠে বললেন,
- আমি আর আমার বাড়ি ফিরতে চাই না। ওটা এখন আমার ছেলের ঘর, এখন সে ঐ বাড়ির মালিক আর আমি বৃদ্ধ সব কাজে ভুল করা চাকর, ঐ বাড়ি আমায় আর টানে না।
রহমান সাহেবের কথা শুনে সুমনা আর ওর স্বামীর ভেতরটা কেঁপে উঠলো, কতটা কষ্টে একটা মানুষ এভাবে বলতে পারে, নিরবে তাকিয়ে রইল দু’জনের চোখেই একই সিদ্ধান্ত ভেসে উঠলো।
গাড়ি এবার যেতে লাগলো বৃদ্ধাশ্রমের দিকে। জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা গেলো রঙিন ফিতা আর উজ্জ্বল ব্যানারে লেখা 'স্বপ্নপূরণ বৃদ্ধাশ্রম'।
এদিকে বাড়ির ভেতরে এসির বাতাসে বসে থাকা রহমান সাহেবের ছেলে আর ছেলের বউয়ের গরমে দম বন্ধ ফিলিং লাগায় এসির পাশাপাশি ফ্যান ছেড়ে আরাম করে বসে মোবাইল নিয়ে। ফুড পান্ডায় খাবার অর্ডার করতে করতে; বাবাকে মনে মনে কয়েকটা গালি দিতে দিতে ভাবে এখনো ফিরলো না বাজার নিয়ে! চুলোয় যাক বুড়ো টা।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৬
সামিয়া বলেছেন: সবাই তো বিকাশ থেকে পে করে না, হয়তো বাবাকে খাঁটিয়ে তার পরিতৃপ্তি, চাল ডাল অর্ডার কনফার্ম করলেও সব সবজি তারা ডেলিভারী দিতে পারেনা এসে দুঃখিত জানায়, কজন চাল ডাল থেকে শাকসবজি কেনে, অনেকে লজ্জায় প্রকাশ করতে পারেনা ফ্যামিলি ট্রাজেডি, কত মানুষ রুপী শয়তান ছেলেমেয়ে আছে আমাদের সমাজে, আপনি সেটা জানেন না। গল্পে এই বৃদ্ধ কে বাঁচিয়ে দিলেও বাস্তবে কত বৃদ্ধ এমন অবহেলায় মরে যায়।
২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৭
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ভিকটিম* না আসামী হবে সেটা ।
৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৪
সাইফুলসাইফসাই বলেছেন: সুন্দর গল্প
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৩
সামিয়া বলেছেন: থ্যাঙ্কস
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৩
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বিকাশ থেকে বিল দেয়া যায় । সব সময় ছেলে মেয়েদের ভিকটিম বানানো গলপে সঠিক নয় বলে মনে করি । বাজার চাল ডাল ডট.কম/সুপার শপ থেকে নেয়া যায় । আরেকটু আধুনিক গলপো লিখিয়েন ।