![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘটনার সময় মেয়েটির বয়স ছয় কিংবা কাছাকাছি।
তার মা থাকতো এক বস্তিতে, টিনের চাল আর ছেঁড়া চটের বেড়ার আড়ালে বসবাস করত সে, অভাব তার নিত্যসঙ্গী হলেও, মেয়েটির মার চোখে ছিল স্বপ্ন। কিছুদিন পর তার অনাগত আরো সন্তানেরা আসার প্রতিক্ষায় ছিল সে। মেয়েটির বাবা ছিলো না তাদের ফেলে চলে গিয়েছে কয়েক মাস আগে এবং তার মা তাকে তখন অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়েই এক বাসায় কাজে দিয়েছিল, ওর বাবা আরেকটি বিয়ে করেছে এবং সে সেখানেই থাকে।
একদিন মেয়েটির মা রেশমার জমজ দুই সন্তানের প্রসবের সময় ঘনিয়ে এল,
প্রসব বেদনা যখন অসহনীয় হলো, রেশমার আর্তনাদ শুনেও কেউ এগিয়ে আসেনাই। বস্তিতে সাধারণত যা হয় আরকি, সবাই নিজের দু'বেলা খাবার জোটানোর চিন্তায় মগ্ন।
সেই রাতে, রেশমা জন্ম দিল দুটি ফুটফুটে মেয়ে, তাদের নামকরণ করা হলো না, এই নতুন প্রাণের আগমনী বার্তা কেউ জানতেও পারল না। ছয় বছরের মেয়েটিও পাশে ছিল না, তাকে তো আগেই এক বাসায় কাজে দিয়েছে, থাকা খাওয়া ফ্রি; যখন তখন বাসা থেকে বের হওয়া নিষেধ।
প্রথম দিন তীব্র রক্তক্ষরণ আর অনাহারে রেশমার শরীর ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে এল। দুটি অবোধ শিশু নিস্তব্ধভাবে মায়ের পাশে পড়ে রইল। তাদের কাছে মায়ের স্থির হয়ে আসা দেহ ছিল এক নতুন উষ্ণতা, এক অভ্যস্ত নির্ভরতা। রেশমা ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাদের দেখলো, তার চোখে তখন মমতা আর এক অসহায় আকুতি কে দেখবে এদের? এভাবেই ঐদিনটা কেটে গেল।
দ্বিতীয় দিন ভোর হতে না হতেই রেশমার নিঃশ্বাস থেমে গেল। বস্তির জীবনে এক শোকের নীরবতা বিরাজ করলো, যা শুধু সেই ক্ষুদ্র কক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইল। কেউ আসেনি, কেউ জানলা দিয়ে উঁকিও দেয়নি।
সদ্যোজাত শিশু দুটি ক্ষুধা আর তৃষ্ণায় চিৎকার করতে শুরু করল শেষবারের মতো, তাদের ক্ষীণ কান্না বাতাসেরও কানে পৌঁছাল না, বা হয়তো পৌঁছালেও কিন্তু কেউ কান দিল না। মায়ের ঠান্ডা শরীর ঘেঁষে তারা তখনও উষ্ণতা খুঁজছিল।
তৃতীয় দিন সূর্য মাথার ওপর থেকে পশ্চিমে হেলে পড়ল। এই দিনটি ছিল সবচেয়ে করুণ, তীব্র জলশূন্যতা আর অনাহার সইতে না পেরে, ছোট্ট মেয়ে দুটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল, কেউ আসেনি, একফোঁটা জলও তাদের মুখে দেওয়ার জন্য কেউ সেই ঘরে পা রাখেনি।
সন্ধ্যায় সেই ছোট্ট ঘরে যখন আলো-ছায়ার খেলা চলল, তখন সেখানে তিনটি দেহ পড়ে রইল এক কোণে স্থির, তাদের বাঁচার আকুতি আর যন্ত্রণা তখন শান্ত।
দু'দিকে তার দুই সদ্যোজাত মেয়ে, যাদের জীবন মাত্র তিন দিনের। তিনটি অসমাপ্ত জীবনের শেষ ঠিকানা হলো সেই অন্ধকার, নিস্তব্ধ বস্তির মেঝে।
বাইরে জীবনের স্বাভাবিক কোলাহল চলছিল, অথচ সেই ছোট ঘরের নীরবতা ছিল আরও বেশি ভারী, আরও বেশি শীতল। তিনটি মৃত্যু যেন ছিল চরম দারিদ্র্য আর মানবিক অবহেলার এক নিদারুণ সাক্ষ্য।
ছয় বছরের মেয়েটি যখন প্রথম বেতন ও দুই ঘন্টার ছুটি পেয়ে মায়ের কাছে ছুটে এ
গেলো, বস্তির লোকজন ঘটনা টের পেয়ে দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য হোক কিংবা মানবিক কারনেই হোক ততদিনে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছে লাশ তিনটির। খুব স্বাভাবিক ভাবেই একটা ছয় বছরের মেয়েকে তার মায়ের মৃত্যুর বর্ননা বলে তার চোখের বড় বড় জলের ফোঁটার দিকে চেয়ে ভিন্ন কিছু বিনোদন নিল।
পনেরো বছরের আগের ঘটনা অর্থাৎ মেয়েটির মায়ের আর তার দুই বোনের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে অনায়াসে বলে স্তব্ধ করে দিল; একটি সুন্দর ঝলমলে সকাল। (সমাপ্ত) ছবিঃ জিমিনি
২| ১১ ই অক্টোবর, ২০২৫ ভোর ৫:৪২
মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্ বলেছেন: ভাষা নেই! এটা কি আপনি কোন বাস্তব ঘটনার আলোয় লিখেছেন? খুব দুঃখ জনক!
৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৮:১০
সামছুল আলম কচি বলেছেন: !!!!!!!!!
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই অক্টোবর, ২০২৫ ভোর ৫:১৩
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: খুব দুঃখের !!