নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথেঘাটে-২

২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:৫২


এইটাই সত্যি।
আসলেই এমন বিরক্তি নিয়া ভ্রু কুঁচকালে কোনো লাভ নাই।
এই পৃথিবীর কিছু অভিজ্ঞতা আছে যেগুলা খুব সাধারণ ছোট খাটো বলার মত তেমন কিছুই না যেগুলা নিয়া লিখবার ও কিছু নাই। তবু লিখতে ইচ্ছে করলো।
একদিন আমি হঠাৎ এক ১১/১২ বছর বয়সের ছেলের দেখা পেয়েছিলাম,
যে আমারে কারন ছাড়াই একেবারে নিঃশব্দ অথচ অস্থির মাত্রার টেনশন দিয়েছিল কিছুদিন নিজের অজান্তে।

মাগরিবের আজান চলছিল,
আমি সুপার শপ থেকে বের হয়ে বাসার দিকে হাঁটছিলাম।
মসজিদের সামনে পৌঁছাতেই দেখি
একটা ১১-১২ বছরের ছেলে, নীল খসখসে পাঞ্জাবি পড়নে, মাথায় সাদা টুপি,
স্টিলের বড় গামলায় পেয়ারা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি ওকে ক্রস করে যেতে যেতেই জিজ্ঞেস করলাম
-কেজি কত?
ছেলেটা হেসে বলল,
-৭০ টাকা।
আমার নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু ছেলেটা বলল
পেয়ারা মিষ্টি, খেতে ভালো লাগবে, নিয়ে যান।

ওর মুখের আন্তরিকতা দেখার পর ও না নেয়ার ইচ্ছা করতে করতে ৫০ টাকার পেয়ারা দিতে বললাম বাকি ৫০ টাকার লাল শাক কিনব ঠিক করেছি ছেলেটিকে জানালাম, আসলে ততক্ষণে বাজার টাজার করে টাকা সব শেষের পর্যায়ে, আছেই আমার কাছে তখন কেবল ১০০ টাকা।
কিন্তু ও একরকম জোর করেই ১০০ টাকার পেয়ারাই আমার হাতে দিয়ে বলল,
-ভালো পেয়ারা, রাখেন, আমি না করতে করতে আমার হাতে ধরিয়ে দিল পেয়ারা ভর্তি পলিথিন ব্যাগ, বলল ওর নাম ইয়াসিন সবসময় এইখানেই মসজিদের সামনেই ফল বিক্রি করে, আপাতত ৫০ দেন বাকি ৫০ টাকা পরে দিলেই হবে।

আমি কিছু মুহূর্ত না না করে সবশেষে বাধ্য হয়ে আচ্ছা, ঠিক আছে বলে ৫০ টাকা বাকীতে পেয়ারা নিলাম। এবং
পরের দিনই ছুটতে ছুটতে গেলাম পেয়ারার বাকি দাম দিতে, ঐদিন মসজিদের সামনে ওকে খুঁজে পেলাম না।
পরের সপ্তাহেও না। এইভাবে আরো কতগুলো দিন চলে গেলো।

তারপর একদিন বৃষ্টি হচ্ছিল, শুয়ে শুয়ে ভাবছি ইয়াসিন নামের ছেলেটির টাকা পরিশোধ হয়নি, কি করা যায়, এই টাকাটা কি আমি দান করে দেবো! তারপর আবার ভাবি সেটা উচিত হবে না, যার পাওনা তাকেই তো শোধ করা দরকার।
কি করি কি করি! আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারলাম না শুয়ে, বৃষ্টির মধ্যেই হেঁটে হেঁটে পৌঁছে গেলাম মসজিদের সামনে বাসা থেকে এক মিনিটের পথ; ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। ইয়াসিন সহ কোন ভাসমান বিক্রেতাই সেদিন রাস্তায় নেই বৃষ্টির কারনে।

তারপর একদিন একটা রিকশা নিয়ে উত্তরার অলিগলি ঘুরতে থাকলাম, এইখানে এই গলিতে নেই হয়তো অন্য গলিতে আছে, কিন্তু না ইয়াসিনের দেখা আমি পেলাম না, ভেতরে ভেতরে এই ব্যাপারটা নিয়ে ভীষণ হতাশ লাগতে শুরু করলো, খোঁজাখুঁজি শেষে বাসার গেটের সামনে ভাড়া নিতে নিতে রিকসাওয়ালা বলল,
- আজানের সময় মসজিদের সামনে যেসব বাচ্চা দেখা যায়, অনেক সময় ওগুলো মানুষ হয় না, জীন হয়।

ইতিমধ্যে ২ মাস সতেরো দিন পার হয়ে গিয়েছে , আমি ছেলেটির চেহারা পুরোপুরি ভুলে গিয়েছি মনে হচ্ছে, অবচেতন মনে ভাবতে বসেছি হতেও পারে সে একটা জীন মীন। পেয়ারা তো আসলেই অনেক ভালো ছিল মিষ্টি ছিল বাসায় গেস্ট সহ অনেককে খাওয়াবার পর ও শেষই যেন হচ্ছিল না।

৫০ টাকা বাকির ব্যাপারটা আমার পরিবারের লোকজন থেকে শুরু করে ঐ রাস্তার কম বেশি ভাসমান বিক্রেতা দোকানদার সবাইকে জিজ্ঞেস করে করে ক্লান্ত আমি। কেউ হয়তো ব্যাপারটা সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছিল না, হয়তো তাদের কাছে ৫০ টাকা কি একটা টাকা? কিন্তু আমি কি করে বোঝাই এই কটা টাকাই আমাকে মাত্রাতিরিক্ত টেনশন দিচ্ছে।
কেউ কি ইয়াসিন নামে কাউকে আসলেই চেনে না! একটা ১১-১২ বছর বয়সের ছেলে সে, নীল খসখসে পাঞ্জাবি পড়ে, মাথায় সাদা টুপি,
স্টিলের বড় গামলায় পেয়ারা সাজিয়ে বিক্রি করে।
কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারে না।

তিন মাসের মাথায় একদিন দেখি এক তরুণ ছেলে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে ডাব বিক্রি করছে যেখানে ইয়াসিন দাঁড়িয়ে পেয়ারা বিক্রি করছিল। আমি তাকে বললাম আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে ডাব বিক্রি করছেন তিন মাস আগে ঠিক এই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে একটা ছেলে পেয়ারা বিক্রি করেছিল, আপনি কি ওকে চেনেন।
প্রশ্ন করতে যতক্ষণ লাগলো তার থেকেও দ্রুত উত্তর এলো, -চিনি তো,
উত্তর শুনে অপ্রত্যাশিত খুশিতে আমি আকাশ থেকে পড়তে পড়তে আনন্দে দিশাহারা হয়ে অবাক হয়ে জানতে চাইলাম
- কই? কোথায়? আমি ওকে খুঁজে পাচ্ছি না, ও আমার কাছে পঞ্চাশ টাকা পায়।
সে আশেপাশে তাকিয়ে বললো আশেপাশেই আছে,
ততক্ষণে ডাবওয়ালার ক্রেতারা তাকে ঘিরে ধরেছে আমি কিছুক্ষন ওয়েটিং এ থেকে আশেপাশে চারদিকে ইয়াসিনকে খুঁজে খুঁজে প্রতিবারের মতনই না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে বাসায় ফিরে এলাম। ( বাকিটুকু কাল লিখবো)
ছবিঃ ফেইসবুক

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:০৮

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:




পড়তে পড়তে আমি ভেবেছিলাম আপনি শেষের দিকে লিখবেন যে, ইয়াসিনকে পেয়ে গিয়েছেন! তাও আজানের সময়ে! :)

২| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:১৯

নতুন নকিব বলেছেন:



শেষমেষ পেয়েছিলেন ছেলেটাকে? ৫০ টাকা দিতে পেরেছেন?

৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২৪

শায়মা বলেছেন: বাপরে!! সে তো মনে হয় আসলেই জ্বীন!!!! #:-S

৪| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৩৪

হুমায়রা হারুন বলেছেন: শায়মা, আমারো তাই মনে হচ্ছে। জ্বীন হবে হয়তো।

৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ইয়াসিন ফিরে আসুক ৫০ টাকার জন্য । ্ি্ে িএই কামনা করি

৬| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:১৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: সাসপেন্সটুকু ধরে রেখে আপনার বাকি টেনশনটুকুও পাঠকের মাঝে কিছুটা হলেও ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন।
সুলিখিত। +

৭| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব ঘটনা??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.