| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |

আগের ঘটনার লিংক
এরপর আরও কয়েকদিন কেটে গেল। দিন যায় রাত আসে নানান কাজ কর্ম বিপদ আপদের মধ্যেও ইয়াসিনের কথা মনে আসে, এখন তো ঐ নামটাই শুধু মনে আছে চেহারা টেহারা তো সব ভুলে বসে আছি।
একদিন মন খারাপ করে সব কাজের সেরা আমার বাসার অলরাউন্ডার হেল্পিং হ্যান্ড যাকে আমার হাসবেন্ড আমার বান্ধবী ও বিবিসির সাংবাদিক বলে থাকে; ওকে বললাম, ইয়ে মানে রুমা; আমি একটা বিপদে পড়েছি, একটা ছেলে আমার কাছে পঞ্চাশ টাকা পাবে , জোর করে একদিন পেয়ারা দিয়েছিল, ওকে আমি এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না, তিন মাসের বেশি হয়ে গিয়েছে, ওর নাম ইয়াসিন , তুমি তো আমাকে চেনো বুঝতেই পারছো আমার মানসিক অবস্থা।
বিশিষ্ট অলরাউন্ডার আমাকে আশ্বাস দিল যে দুদিনের ভেতর ইয়াসিনকে খুঁজে বের করবে, এরপর আঁধা ঘন্টা পর খবর নিয়ে এলো ইয়াসিনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, এখানে কাছেই কোথাও ভাড়া থাকে।
আমি ওকে ১০০ টাকা দিয়ে বললাম ওর বাসা খুঁজে বের করে টাকাটা দিয়ে আসো।
এরপর টানা দুইদিন বৃষ্টি থাকার পরও আমার কথা বিবেচনা করে রুমা ইয়াসিনের বাসার খোঁজে গেল।
আমি আশায় বুক বেঁধে আছি এরকম সময় ও ফিরে এসে জানালো যে, ও যে বাসায় গিয়েছিল সেটা একটা অন্ধকার দুই তলা বাসা, উপরে স্কুল নীচে ওরা ভাড়া থাকতো, একটা গ্যারেজ সম্ভবত ওটা, সেজন্যই ওটা অনেক অন্ধকার কোন জানালা নাই, বাসায় এক মহিলা ছিল সে জানালো যে ইয়াসিন ওরা আগে এখানে ভাড়া থাকতো এখন অন্য বাড়ি ভাড়া চলে গিয়েছে, কোন বাড়ি মহিলা বলতে পারে না।
কথাগুলো বলতে বলতে রুমা ইয়াসিনকে দেয়ার জন্য একশো টাকা বের করে দিলো আমাকে। সেই টাকা আমার ফিরিয়ে নেয়ার মন মানসিকতা হলো না, বললাম ফেরত দিতে হবে না তুমি নিয়ে নাও। ও বললো ইয়াসিনের টাকা আমি নেবনা। টাকা সোফায় পড়ে রইল। ধ্যুর!!
তারপর একদিন দুপুরে নিচে গিয়েছিলাম কিছু কাজে।
ফিরে আসার পথে দেখি একটা ঢালু জায়গায় ফল ভর্তি ভ্যানগাড়ি প্রায় উল্টে যাচ্ছে আর অল্প বয়সী একটা নীল পাঞ্জাবি আর সাদা টুপি পরা ছেলে ভ্যানগাড়িটা প্রানপন সামলানোর চেষ্টা করছে।
মুহূর্তেই আমার মনে হলো এটা সেই ইয়াসিন কিনা!
আমি এগিয়ে গেলাম, ততক্ষণে সে ভ্যান সামলে নিয়েছে।
চেহারা পুরোপুরি মনে করতে পারছিলাম না, বললাম
- তুমি ইয়াসিন?
বলল,
- হ্যাঁ।
বললাম তুমি আমার কাছে পঞ্চাশ টাকা পাও একদিন জোর করে পেয়ারা দিয়েছিলে, একশো টাকার পেয়ারা, আমি পঞ্চাশ দিয়েছিলাম আর পঞ্চাশ বাকি ছিল।
ওর চোখে খুশির ঝলকানি তখন হেসে বলল
- ঐ যে মসজিদের সামনে স্টিলের গামলায় পেয়ারা বেঁচতেছিলাম,
- হ্যাঁ তারপর তুমি গায়েব হয়ে গেলে আর খুঁজে পেলাম না, তোমার এই পঞ্চাশ টাকার জন্য কত খুঁজেছি তোমাকে জানো?
সে বড় মানুষের মত আমাকে শান্তনা দেয়ার ভঙ্গিতে বলল - আরে আপনি আমাকে খুঁজে পাবেন কিভাবে আমি তো এখন আর সেক্টরের ভেতর ফল বেঁচি না, আমি এখন বটতলা বাজারের ঐখানে ফল বিক্রি করি ভালই লাভ হয়, দেখেন না এখন ভ্যান গাড়ি নিয়েছি, ভ্যান গাড়িতে করে এখন ফল বিক্রি করি, এখন আর গামলায় করে ফল বেঁচতে হয় না, আর আপনারে তো আমি চিনি আপনি আমার টাকা তো দেবেনই আমার জানা আছে, সেজন্যই আমি টাকা নিয়ে চিন্তা করি নাই, একদিন না একদিন তো দিতেনই। সেটা আমার বিশ্বাস ছিল।
যাইহোক ফাইনালি ওর টাকা পরিশোধ করতে পারলাম। পঞ্চাশ টাকাই দিলাম। ফিরে আসার পথে পেছন থেকে ইয়াসিন ডাক দিলো, ফল ভর্তি পলিথিন নিয়ে এসেছে দৌড়াতে দৌড়াতে, তাতে দেশি মাল্টা আর আমড়া। টাকা দিতে চাইলাম পিচ্চির বায়না এইটা ওর তরফ থেকে গিফট, এটার টাকা সে নেবেই না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম! আবার!!!
ছবিঃ কিছুক্ষণ আগের তোলা
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৪১
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ এই পথেঘাটে সিরিজে পথেঘাটে আমার সাথে ঘটা সত্যি ঘটনা নিয়ে লিখে থাকি আপু।
২|
২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:২২
রাজীব নুর বলেছেন: গ্রেট।
২৬ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৫২
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৩৫
করুণাধারা বলেছেন: চমৎকার সমাপ্তি।