নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্পঃ আলো

১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩১


শুধু মাত্র গায়ের রঙ কালো বলে এত অপমানে ভরা সমস্ত জিন্দেগী, সত্যিই, তার নিজেরই ছিল! অবাক হয়ে ভাবে আলো।
ঘরের দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে আসা বিকেলের সেই নরম সোনালি আলোটা; আয়নার কাঁচে ঝুলে থাকা পুরানো দিনের দুঃখগুলো; আলোর চোখের ভিতর প্রথম ইশারায় কেঁপে ওঠা বিশ্বাসের ক্ষুদ্র ঢেউ। ঘর জোড়া নীরবতা, জানালা দিয়ে আসা বাতাসের শব্দ, আর দূর মসজিদের মাইকে ভেসে আসা আজানের সুর সব যেন তার কাছেই ধরা দিয়ে জানায় তার অপরাধহীন ব্যর্থতা।

টিলার উপ্রে চাদর মুড়ায়ে শুয়ে থাকা রাখাল যেমন দূর থেকেও গরুগুলার চিন্তা করে, আলো ঠিক তেমনই নিজের ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতো। না রাগে, না কষ্টে, শুধু অভিযোগহীন শান্ত দৃষ্টিতে।

মা পাশে দাঁড়িয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ে,
আজ ফোন করছিল ওরা, বলছিল ছবিটা পাঠিয়ে দেন। পাঠিয়ে দিয়েছি। তারপর আর কোনো সাড়া নেই। কিছুই জানালো না, ভালো বা মন্দ কিছুই না।
কথাটা এমন নরম ভঙ্গিতে বললো যে মনে হয় মা-র বুকের ভিতরের সব চিন্তাগুলো আলোর গায়ের রঙের সাথে মিশে যাচ্ছে রোদের সোনালী আলোয়।

আলো মৃদু হাসে।
হাসিটা এমন, যে দেখে মনে হয় অন্য কারো দুঃখকে সান্ত্বনা দিচ্ছে সে নিজেই।
- আম্মা, আল্লাহ নিশ্চয়ই আমার জন্য ভালো কিছু রেখেছেন।

বিকেলের আলোটা তখন একটু গাঢ় হয়, যেন ঘরের ভিতরকার কথাগুলো শুনে আনন্দিত হয়ে যায়। ঠিক তখনই রুবিনা খালা ভেতরে আসে।
- এই আলো, তুই একটু ক্রিম মাখতে পারিস না ফর্সা হওয়ার? রঙটা একটু ফর্সা হলে মানুষজনের চোখে একটু ভালো লাগতো। তোর বয়সও কম হলো না। আল্লাহ তোকে রূপ দিল না, গুণ দিল না, গায়ের রঙও ভালো না। এভাবে কেমনে হবে বিয়ে?

আলো কিছু বলে না। কথার ভিতরের খোঁচাটা তার গায়ে লাগে না। বরং পাশ কাটিয়ে হাসিমুখে বসতে বলে ওর খালাকে।
তারপর রান্নাঘরে চা নাস্তা বানাতে বসে, ওর চোখে তখন দূর পাহাড়ের রঙ, গাঢ়, দৃঢ়, স্থির।

মনে মনে বলে,
- আমার গায়ের রঙ লুকিয়ে রাখার কিছু নেই। এটাই আমার সৌন্দর্য, এটাই আমার পরিচয়।

রাতে সিজদায় পড়ে যখন কান্না গড়িয়ে গলায় নামে,
আলো তার দোয়াগুলো আকাশে উড়িয়ে বলে
- হে আল্লাহ, আমাকে এমন একজন জীবনসঙ্গী দাও
যে আমার গায়ের রঙের জন্য ঘৃনা নয় বরং আমাকে চিনবে, জানবে, সম্মান করবে।
সমস্ত জিন্দেগী, সত্যিই, তার শুধু এই দোয়াগুলোই ছিল।
সে কান্নাগুলো জমিয়ে রাখতো,
আবার নিজের কল্পনায় এক নতুন দুনিয়া বানাতো যেখানে রঙ, চেহারা, শারীরিক আকার, অর্থ, বিত্ত কোনোটারই প্রাধান্য নেই।

কয়েক মাস পরে, একদিন এক পাত্র আসে ওকে দেখতে। ছেলেটা কোনো রাজা না, সরকারি চাকরি করে, চেহারায় সাধারণ ভদ্রতা।

আলোর সামনে বসে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে
- আপনি অনেক আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে।

আলো হাসে।
এই হাসিতে অহংকার নাই, দুঃখও না।
- আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে যেমন বানিয়েছেন, তাই নিয়ে আমি খুশি। আমি আল্লাহর উপরই ভরসা রাখি সবসময়।

ছেলেটা মাথা নেড়ে বলে
- আমিও তাই করি। আমি চেহারা কিংবা ফর্সা রঙ এসব দেখি না। বিশ্বাস করি, মানুষ যদি পবিত্র হয়, তার রঙ নিজেই আলো হয়ে ওঠে।

কথাটার ভেতর এমন সত্য ছিল যেন কুয়াশার ভেতর প্রথম সূর্যের কিরণ। আলোর চোখে জল এসে যায়। এই প্রথম কেউ তার গায়ের রঙ নিয়ে কটূক্তি করলো না।

বিয়ের রাতে লাল কারুকাজ করা ওড়নাটা মাথায় দিয়ে
আয়নার সামনে দাঁড়ায় আলো।
তার শ্যামলা মুখ, নিখুঁত, তার চোখদুটো শান্ত, ঠোঁটের কোমলতা সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত, অবিশ্বাস্য সুন্দরতা যা শুধুই বাহ্যিক নয়, অন্তরেও গভীর আলো ছড়াচ্ছে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৪

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



আমি অনেক শ্যামলা মুখের পবিত্র মানুষ দেখেছি।
আমার সাথে অনেক ফর্সা মুখের কদর্য মনেরও পরিচয় হয়েছে।

১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১০

সামিয়া বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৩৬

কামাল১৮ বলেছেন: গায়ের রং না,মনের রংগেই আসল পরিচয়।

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: আজকাল কেউ গায়ের রঙ নিয়ে মাথা ঘামায় না।
মানুষের গুন, যোগ্যতা আর দক্ষতা আসল। নেলসন মেন্ডেলার কথা ভাবুন।

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৫২

শায়মা বলেছেন: অনেক সুন্দর!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.