নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সামস সুমন(LBB)

সামস সুমন(LBB) › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবন্ধঃ অনুপ্রেরণা.... একটি সুন্দর পৃথিবীর জন্য

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:২৬

Let’s Do It
সামস সুমন
০৫.১০.১৫

[কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা/২০১৫ তে ‘এভারগ্রীন (একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন)’ এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার উপস্থিত বক্তব্যের সার সংক্ষেপ।]

তুমি একজন মহান নেতা, তোমার স্তুতি গেয়ে লোকেরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে আকাশ-বাতাস। তোমার আদেশে বাঘে- মহিষে এক ঘাটে পানি খায়। তোমার উপস্থতিতে তোমার আজ্ঞাবাহ কর্মচারীদের ঘাম ছুটে যায়। কিন্তু লাভটা সাময়ীক। তোমার অনুপস্থিতিতে আবার সব আগের মতোই। সামনে থাকা অবস্থায় তোমার পায়ে পরে সালাম দেয়, কিন্তু অগচরে পারলে মুখে থু থু নিক্ষেপ করে। বিষয়টা এরকম হলে বলবো তোমার নেতৃত্তের ষোল আনাই বৃথা। যদি পারো এরকম হও যাতে তোমার প্রতি ভালোবাসাটা হৃদয় থেকে আসে, কোন ভয় থেকে নয়। তোমায় দেয়া সালাম টা শ্রোদ্ধা থেকে আসে, ঘৃনা থেকে নয়।
সমাজ সেবক, জন দরদি, নিপীরিত জনগনের বন্ধু, আর্তমানবতার সেবক ইত্যাদি টাইটেল এখন টাকা থাকলেই পাওয়া যায়। এদের টাকার পাহাড়ের চাপে আর জনসেবার নামে বিভিন্ন সভা সেমিনারের মাইকের প্যানপ্যানানীতে জনজীবন রীতিমতো হাপিয়ে উঠে। তাই ইদানিং এই সব টাইটেলধারীদের দেখলেই নিজের প্রতি ঘৃণা জন্মায় আমার। যদি জনসেবা করতেই হয় তাহলে হও স্বেচ্ছা সেবক।যেখানে তোমার টাকার ঝনঝনানীতে জনজীবন বিপন্ন হবেনা, তোমার মানুষিকতায় হবে ধন্য। নির্বাচন আসলেই কারী কারী টাকা ঢেলে সমাজ সেবক নামটা ক্রয় করার দরকার নেই, তোমার জীবন পথে প্রতিটা মানুষকে ভালোবাসো, পাশে দাড়াও, সাহায্য করো। তুমি ভাবছো- সেটা হতে পারে অন্ধকে পথ দেখানো, অভুক্ত কে খাদ্য দান? আজকাল সেখানেও টাকার ঝনঝনানী আর মিডিয়ার প্যাঁচাল। সেবা নেয়ার জন্য দুস্থ আসার আগেই মিডিয়ার ক্যামেরা গিয়ে হাজির। বিষয়টা কেমন হয়ে গেলো না? লোক দেখানো সমাজ সেবা কতোজনই তো করে, অন্তরের অন্তস্থল থেকে প্রকৃত ভালোবাসাটা পায় কয়জন?

সেদিন বাসে দীর্ঘ ভ্রমণে তোমার সীটের পাশেই দাঁড়িয়ে অতিশয় বৃদ্ধ মহিলা, অসুস্থতায় পুরো বাস জুরে বমি করে একাকার। তোমার চোখে বমিটা উৎপাত মনে হলো কিন্তু ওনাকে দাঁড়িয়ে রাখাটা অমানবিক মনে হলোনা। তুমি ওনার সীট না কেটে বাসে ওঠাটাকে কৃপনতা ধরে নিলা, কিন্তু ওনার দারিদ্রতাটা ভেবেও দেখলানা। তাহলে বলবো তোমার এই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের দরকার নাই। যে শিক্ষা তোমাকে মানবিকতা, মুল্যবোধ, নৈতিকতার শিক্ষা দেয়না, সে শিক্ষা তোমার জন্য লজ্জার, অপমানের।

তুমি প্রতিদিন কলা খেয়ে ছোলাটা রাস্তায় ফেলো। তোমার দেখে শিখে নেয় ছোট্ট শিশু। অসাভাবিক একটা অভ্যাস হয়ে উঠছে সাভাবিক।মানুষকে উপদেশ দেয়ার দরকার নেই- নিজেই ছোলা টা ফেলোনা রাস্তায়, দুরের ডাস্টবিনে অথবা নিরাপদ জায়গায় রেখে দাও। তোমার দেখে অন্যরা এটার প্রাক্টিস শুরু করে দেবে।

গ্রামের রাস্তা চলার অযোগ্য, দুই ধার ভেঙ্গে গেছে বর্ষায়। কারো মাথা ব্যথা নেই সেটার সংস্কারে। জনপ্রতিনিধি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। অন্যরা ব্যস্ত তাদের আর প্রশাসনের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধারে। তুমিই শুরু করো, দেখবে অন্যরা এসে তোমার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুরু করে দিবে সংস্কার কাজ। লজ্জা পাবে জনপ্রতিনিধি, টনক নরবে প্রশাসনের। তুমি পাবে আত্ম তৃপ্তি। তোমার এই স্বেচ্ছাসেবাই হয়ে উঠবে জনসেবা। কি দরকার মাইক বাজিয়ে জোড়ে জোড়ে চিৎকার করার? তোমার কর্ম দেখেই অনুপ্রাণীত হবে অন্যরা।

আজ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছো, এলাকা জুড়ে তোমার স্তুতি। বিদেশে গিয়ে সেটেল হচ্ছো, দেশ আর দেশের দুঃখী মানুষ গুলোর কথা একটুও মনে রাখলানা, যাদের কষ্টার্জিত টাকায় সরকার ট্যাক্স বসিয়ে তোমার উচ্চ শিক্ষার খরচ জোগাতো। সবাই তোমাকে মেধাবী বললেও আমি তোমাকে চিনবো সেই মীর জাফর হিসেবেই। তুমি এদেশের সন্তান, এদেশের প্রতি তোমার দায় বদ্ধতা আছে, অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তোমার কিছু করার আছে। তুমি যদি সেটা ভুলে যাও তাহলে বলবো তুমি শিক্ষিত নামের কলঙ্ক, আর জাতি ব্যর্থ হয়েছে তোমাকে সুশিক্ষা দানে।

তোমার গ্রামের ভূমি অফিসে প্রয়োজনীয় ফাইলটি আটকে আছে বিগত দুইটি মাস। কর্মকর্তারা ঘুষের টাকা ছাড়া ফাইলে সাইন করতে নারাজ। তুমিও সুবোধ বালোক, পকেটে টাকার গরম। সময় বাঁচাতে অথবা আর দশটা ফাইলের আগেই তোমার ফাইলটা পাড় করাতে কর্তাকে সেধে দিয়ে আসলা ৫০০ টাকার একটা নতুন নোট। কর্মকর্তা টাকাটা পেয়ে এটাকেই অবৈধ টাকা কামানোর রাস্তা হিসেবে ধরে নিলো। অযাচিতভাবেই ফাইল টেবিলে ফেল রেখে তোমাকে টাকা দিতে বাধ্য করতে লাগলো। তুমি সেই ঘুষ দিয়ে এসে সরকারকেই সাপসাপান্ত করতে শুরু করলা। বিষয়টা কি দাড়ালো? তুমি যে অন্যয়টার প্রশ্রয় দিলা সেটা আজ একটা রীতি হয়ে দাড়ালো, আর দোষ হলো সরকারের। তোমার অধিকার তুমি আদায় করে নিতে ব্যার্থ। সরকার কি রাজধানী থেকে সেটার সমাধান করবে? আগে নিজে সচেতন হও, অধিকার টা বুঝতে শেখ, অন্যয় প্রাক্টিস থেকে বিরত হও। তাহলেই বুঝবো তুমি একজন সুশিক্ষিত ব্যাক্তি।

এমন জীবন যাপন করো যেটার অস্তিত্ত্ব মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিলীন হয়না, বেঁচে থাকে যুগের পর যুগ। তোমার আদর্শ হোক এমন যেন সেটা শুধু বক্তব্য, টিভি ক্যামেরা, আলোচনা অনুষ্ঠান, সভা সেমিনারেই সীমাবদ্ধ না থেকে ছড়িয়ে পরে প্রাণ থেকে প্রাণে, টিকে থাকে সময় থেকে সময়ে। তোমার উপদেশে যেন কেউ বিরক্ত না হয় বরং তোমার কর্ম দেখেই যেন অনুপ্রানীত হয় হাজার প্রাণ, তুমি বেঁচে থাকো তাদের কর্মের মধ্যেই।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে প্রাণে বিশ্বাস করি উপদেশ দিয়ে কোন কাজ হয়না, যদি কিছু করতে চাও, তাহলে সেটা অন্যজনকে করার পরামর্শ না দিয়ে নিজেই কাজটা শুরু করো। যদি কিছু হয় সেটা হবে তোমাকে দেখে অন্য কেউ অনুপ্রানিত হওয়ার মধ্য দিয়ে, তোমার প্যানপ্যানানি শুনে নয়। কোন একজনকে ভালো কাজ করতে দেখলে বাকি সবাই সেই কাজটা করতে অনুপ্রাণিত হয়।সেখানে বলার প্রয়োজন হয় না, অথবা দরকার হয়না কোন আদেশের।

তাই আজ থেকেই শুরু হোক মূল্যবোধের চর্চা, নৈতকতার শিক্ষা থেকে শুরু হোক ন্যায়ের পথে সংগ্রাম, আর মানবিকতার হাত ধরেই উদিত হোক স্বেচ্ছাসেবার নতুন সূর্য্য যার আলোয় উদ্ভাসিত হবে মানবসেবার নতুন দিগন্ত। কথা নয়, কাজেই হোক তার প্রমাণ, সৃষ্টি হোক নতুন উদাহারণ। পরিবর্তনের অঙ্গিকার আর কতো, শুরু হোক পরিবর্তন। সেটা অন্যকে উপদেশ দিয়ে নয়, নিজে করার মধ্য দিয়ে।

তাই আজ থেকেই বলি- Lets Do It.

সামস সুমন

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
লেট'স বিল্ড বাংলাদেশ
(একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন)

প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক
বাট্টারফ্লাই ফিল্ম প্রোডাকশন

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.