নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সামস সুমন(LBB)

সামস সুমন(LBB) › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার লেখা প্রথম প্রহসন, পড়ে দেখুন, ভালো লাগতে বাধ্য...

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:৩৯

দূর্নীতির দুষ্টুচক্র
সামস সুমন
০৩.০৯.১৫


প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র জেলে কানাই ঘোষ মাছ ধরে ক্লান্ত শরীরে বাড়ির উঠনে ফিরলেই স্কুল ফেরত তার ছোট ছেলে আবদারের সুরে বলে ওঠে-
- বাজান, এবার পরীক্ষার ফি কিন্তু ১৮০ টাকা।
- ক্যারে বাপ, গত বার না ১২০ ট্যাহা আছিলো?
-হেড স্যার কইছে সব কিছুর নাকি দাম বাড়ছে, তাই পরীক্ষার ফিও বাড়ছে।
- হ, ঠিকই কইছোস। যা, আজ হাটত তোন ফিইরা আইসা দিমু নে, পড়তে বস যা…
গত কাল ছেলে বলেছিল পরীক্ষার ফি লাগবে। দরিদ্র জেলে পিতা বরাবরের মতো এবারও ১২০ টাকাই ধরে রেখে গতকালের খরচের থেকে কোন রকমে বাচিয়ে রেখেছে। ছেলের পরীক্ষার অতিরিক্ত ফি জোটাতে হিমশিম কানাই ঘোষ। এদিকে বড় ছেলেটার এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিল-আপ শুরু হয় হয় অবস্থা, এতো টাকা কই পাবে সে?

ভাবনার সাগরে ডুবন্ত কানাই ঘোষ পড়ন্ত বিকালে মাছ নিয়ে হাটে যায়। একচালা পুঁটি মাছ সাজিয়ে দাম হাকে-
-এ ১০০ ট্যাহা…, ১০০ ট্যাহা…
- কি মিয়া, গত কালেই না এই এত্তগুলান পুঁটিমাছ ৫০ টাকা বেচলা? প্রশ্ন করেন স্কুলের হেড মাষ্টার রফিক সাহেব।
- হ, স্যার… সব কিছুর দাম বাড়ছে তো… তাই।
কি আর করা, অগত্যা ৫০ টাকার মাছ ১০০ টাকায় কিনে বাড়ির পথে হাটা দেন রফিক সাহেব। ছেলে পুলে নিয়ে একটু ভালোমন্দ খাওয়ার দিন বুঝি ফুরলো।

পরের দিন স্কুলে পরীক্ষা চলছে। পকেট এ টাকার বিশাল টান, ছেলেকে দেখতে হাসপাতালে যেতে হবে।স্কুল করে তারপরেই রওনা দেবেন তিনি। টাকা পকেটে না থাকলে মেজাজ ঠিক থাকেনা কারোরি। এর মধ্যেই সহকারী শিক্ষক আজাদ সাহেব এসে বললেন-
-স্যার, আজও কেউ কেউ পরীক্ষার ফি আনেনি। কি করবো স্যার?
- কান ধরে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দিন। এটা কি মগের মুল্লুক নাকি?
- জ্বি স্যার। আর স্যার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিল-আপ এর ফি কত ধার্য করবো স্যার?
-গত বার কত ছিলো?
- জ্বি স্যার, ১২০০ টাকা।
- যান, এবার ১৮০০ টাকা ধার্য করে দিন। সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। এবার ১৮০০ টাকার কমে হবে না।
-জ্বি স্যার।

রাগারাগি করে হাসপাতালের দিকে ছোটেন রফিক সাহেব। ছোট ছেলেটা প্রাইভেট একটা ক্লিনিকে ভর্তি আছে গত একটা মাস। গাছ থেকে পরে গিয়ে পা ভেঙ্গে ফেলেছে বান্দরটা।
হাসপাতালে পৌঁছেই ডাক্তার এমদাদুল হক এর চেম্বারে যান রফিক সাহেব-
-স্যার আমার ছেলেটার যে অপারেশন করার কথা।
-হ্যা রফিক সাহেব, আমরা তো রেডি, কাউন্টারে ১৮০০০ টাকা জমা দিন।
-স্যার, গতবার না ১২০০০ লাগলো?
-গত দুবারের চেয়ে এবারের ড্রেসিং খরচটা একটু বেশি, সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে কিনা।
কি আর করা, ভাগ্য ভালো যে ছাত্রদের অতিরিক্ত বেতন থেকে অর্জিত স্কুলের ক্যাশটা সাথে করে এনেছিলেন। কাউন্টারে ১৮০০০ টাকা জমা দিয়ে রফিক সাহেব ছেলেটার কাছে যান। সাথে বয়ে নিয়ে আসা টিফিন বক্সটা খুলে ছেলেকে নিজ হাতে খাওয়ান তিনি।পুটি মাছ রান্না করে দিয়েছেন রফিক সাহেবের স্ত্রী।

ডাক্তার এমদাদুল হক অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, এমন সময় টেলিফোন আসে-
-হ্যালো, ড. এমদাদুল হক সাহেব বলছেন?
-হ্যা, বলুন।
-আপনার ক্লিনিক সম্পর্কে আমাদের কাছে একজন লিখিত অভিযোগ করেছেন। এখানে নাকি চিকিৎসা সেবার নামে এক প্রকার ডাকাতি হয়?
- আপনি কে বলুনতো?
-আমি এসপি রাহাত আনাম খান বলছি।
- সরি স্যার, বুঝতে পারিনি…আসলে স্যার… সব কিছুর দাম একটু বেড়ে গেছে , তাই আমরা একটু ফি টা বেশি রাখি আরকি?
-তাহলে অভিযোগ সত্য? এটাতো অন্যায়…
-না না স্যার, কি বলেন এসব?
-আমি ঠিকই বলছি। আমার টিম আজই আপনার ক্লিনিকে রেইড করবে।
-না, স্যার এটা করবেন না। তার থেকে আপনি আমি পার্সনালি কোথাও বসি, একটা সমাধান হবে।
-আপনি কি আমাকে টোপ দিচ্ছেন?
-না না স্যার, টোপ কেন হবে? আপনি আমি ভাই ভাই… এখানে পুলিশ পাঠালে আমার ক্লিনিকের রেপুটেশন একেবারে গোল্লায় যাবে স্যার, দয়া করে এমনটি করবেন না। আমি আপনার ওখানে আসছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে, জলদি করবেন। না হলে কিন্তু-
-একদম ভাববেন না স্যার। আমি হাতের অপারেশন টা সেরেই চলে আসছি।
ফোনটা খোস মেজাজে রেখে দেন এসপি রাহাত আনাম খান। বলদ টাকে কাবু করা গেছে। আসলে অসৎ মানুষদের একটু খোচা দিলেই নুয়ে পরে। এই ডক্টর শালার কাছ থেকে মোটা অংকের একটা টাকা হাতিয়ে নিতে হবে।

এমন সময় ফোন আসে। ফোনের ওই প্রান্তে এমপি সাহেবের মোটা কর্কশ গলা শোনা যায় -
-এইযে এসপি শালা, খুব তো আড়ামে আ্ছিস। প্রমোশন যে করালাম, আমার বকশিশটা কে দেবে?
-জি স্যার, হ্যা স্যার, আমি আজি আপনার সাথে দেখা করবো বলে মনস্থির করেছি।
-আচ্ছা, তাড়াতাড়ি আইসো কিন্তু কইলাম, নইলে ট্রান্সফার কইরা দিমু এক্কেরে বান্দরবন…
-না না না স্যার, একদম চিন্তা করবেন না। আমি আসছি-
-আচ্ছা, এবার কিন্তু আগের টা আনলে হবেনা, তখন তো এএসপি ছিলা, এখন এসপি, কামাই রোজগার ও বেশি। তাই আমার ভাগটাও বেশি- গতবারের দিগুন আনবা কিন্তু কইয়া দিলাম। তাছাড়া সব কিছুর দামও যে ভাবে বেড়েছে, এসব দিয়া আর পোশায় না। ভাবছি বিদেশ চলে যাবো।
-জি স্যার, উত্তম চিন্তা।
-তাই না? আমি বিদেশ চলে যাই, আর তুই আড়ামে ঘুষ খেয়ে পেট ফুলায়ে কলা গাছ কর। তা হবে না। আমি এ দেশেই থাকবো।
-জি স্যার।

ফোন রেখে রাগে গজ গজ করতে থাকে এসপি রাহাত আনাম সাহেব।–
“একটু ঘুষ খেয়েও মজা নাই। শালা এমপির বাচ্চা ঘারের উপর জোঁকের মতো বসে আছে। বলে কিনা এদেশ ছেড়ে চলে যাবে? শালা, বিদেশে যেয়ে খাবি কি? বিদেশে তোকে এভাবে ঘুষ দেবে কেউ? না খেয়ে মরবি শালা…”

এদিকে এমপির বড় ছেলে এসে বায়না ধরেছে-
-আব্বু, এবার আমার কিন্তু বিএমডাব্লিউ চাইই চাই…
-ক্যারে বাপ, প্রাডো টা থাকতে আবার বিএমডাব্লিউ ক্যা্ন?
- অতশত বুঝিনা, আমি যেটা বলেছি, সেটা চাই- না হলে কিন্তু…
-আইচ্ছা ঠিক আছে। না হলে কি হয় আমি বুইজ্জা গেছি। যাও এবার, অনেক সাধের প্লাজমা টিভি আমার…। আর ভাংতে হবে না। যাও বাপ, কই জানি যাবা, (ইউনিভর্সিটি নাকি কি সব বাল সাল, একগাদা টাকা ন্যায় খালি…) যাও।

এমন সময় ব্যাক্তিগত পিএস এসে দুসংবাদের ঝাপি খুলে বসে-
-স্যার, উপরের মহলের নির্দেশ, এবারের ইলেকশনে আপনাকে নমিনেশন দেয়া হবে না।
-কেন, কেন দেয়া হবেনা?
-আপনি নাকি প্রচুর দুর্নীতি করেছেন বলে উপর মহলে খবর আছে।
-তাই? হাহাহাহাহা……
-স্যার, হাসছেন যে?
- আরেহ, এসব কিছু না, নমিশনের আগে আগে এরকম একটু আধটু নাটক ফাটক করে আরকি। পার্টিতে ডোনেশন গতবার ৫ কোটি দিয়েছিলাম, এবার সেটাতে হবেনা, বুঝলা? ডোনেশন বাড়ানোর ফন্দি আর কি। এবার নাহয় ১০ কোটি দেবো, কোন সমস্যা? তারপরেও নমিনেশন আমার চাইই চাই।
-কিন্তু স্যার আপনার তো ফিল্ড খারাপ, ক্যমনে কি? সবাই তো জানে আপনি একটা দুর্নীতিবাজ।
-আরেহ বেপার না, আমি কি একাই খারাপ? এই বাংলার প্রতিটা মানুষ খারাপ, দুর্নীতিবাজ। আমি না হয় একটু বেশিই খাই, কেউ কি কম নাকি?
-তাহলে স্যার উপায়?
-উপায় কিছুই নাই, ভোটের আগে এবার একটু বেশি করে টাকা দিয়ে ভোট কিনতে হবে। সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে কিনা!!!
-স্যার, এবার তো তাহলে দ্বিগুন খরচ, নির্বাচিত হলে আগামী পাঁচ বছরে তুলতে পারবেন তো?
- আরেহ উঠবো উঠবো। আবার একটা চাল চালবো, সব কিছুর দাম আর একধাপ বাড়ায় দিলেই হবে।
-স্যার, এর থেকে বেড়িয়ে আসা যায় না?
-নাহ রে বোকা, এগুলো সব চক্র। এই চক্র থেকে বেড় হতে পারেনি কেউ, পারবেও না। তবে হ্যা, বেড় হওয়ার উপায় যে একদমই নাই, তা কিন্তু নয়। একটা উপায় আছে। আর তা হলো- নিজ নিজ জায়গা থেকে সৎ হওয়া। আর সেটার শুরু যদি উপর মহল থেকেই হয়।
-কিন্তু স্যার উপর মহল তো নিজেই দুর্নীতিগ্রস্থ?
- আরে বোকা, এই উপর মহল সেই উপর মহল না। এই উপর মহল বলতে যারা এই সরকার গঠন করতে ভোট দেয়…তারাই ।সবার উপরে তারাই, আর তারাই হলো সব থেকে বড়।সকল ক্ষমতার উৎস।
-মানে জনগন? কিন্তু জনগন কি করবে, তার দোষ কোথায়?
-হুম, এই শালা জনগনই তো বড় দুর্নীতিবাজ। তারা যদি টাকার বিনিময়ে, হুজুগে মেতে, স্বজন প্রিতির মায়ায় পরে অযোগ্য ব্যাক্তিকে ভোট দিয়ে সরকার না বানাতো, তাহলে এই দূর্নীতি করার চান্স কি আমি পেতাম? দ্রব্য মুল্যের দামও বাড়তো না, কিছুই হতো না। আমার মতো দূর্নীতিবাজ নেতারাই আবার সরকার গঠন করে, তো তারা দুর্নীতি করে নমিনেশন দেবে নাকি পীর সাজবে? একটা কথা শোন – ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।

এমন সময় কাঁদতে কাঁদতে কানাই ঘোষের আগমন-
-স্যার, আপনার দয়া স্যার… দয়া করুন……
-কি হয়েছে রে তোর? এই মোখলেছ, কে এডা?
- স্যার আপনার জনগন, সকল ক্ষমতার উৎস।
- ও আচ্ছা, কি হয়েছে, কাঁদছে কেন ও?
- স্যার, ওর বড় ছেলেটা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। গতবারের ফি ১২০০ টাকা ছিলো, এবার হেডমাস্টার ১৮০০ টাকা করেছে।
-তো বাড়াবে নাতো কি? সব কিছুর দাম যে ভাবে বেড়েছে…
-আপনার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছে।
- ও আচ্ছা। কাকা, কাঁদবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে। এই মোখলেছ, ক্যাশিয়ার কে বলে দিস তো – এই বিষয় টা যেন একটু দেখে। কাকা, উঠুন, আমার পিএস কে বলে দিয়েছি- ও দেখে নেবে এখন।
- আপনার দয়া স্যার, ভগবান আপনার ভালো করুক।

পিএস কে পাশে ডেকে-
-ওকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিদেয় করে দিস।এর বেশি দিস না, এখন হাত খুলে দিয়ে লাভ নেই।কিচ্ছু মনে রাখবেনা এই ছোট লোকের দল। সামনে ইলেকশন, ভোটের আগে হাতে কিছু পরলেই সব ভুলে যাবে। আর, চারদিকে যে ভাবে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে… নিজেরি চলা দায়।

সামস সুমন

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.