নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি প্রচলিত অর্থে কোন লেখক নই তবে লেখালেখিটাকে অন্তর থেকে ভালোবাসি। তাই ভালোবাসার টানেই মাঝে মাঝে সমাজ, সংস্কৃতি এবং প্রযু্ক্তি নিয়ে দু’এক লাইন লেখার চেষ্টা করি।

সানিম মাহবীর ফাহাদ

নিজেকে এখনও ঠিক মতো জানতে পারিনি।

সানিম মাহবীর ফাহাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

খ্যাতির বিড়ম্বনা ও এইচএসসি ফলাফল

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:২১

মাধ্যমিকে রবীঠাকুরের খ্যাতির বিড়ম্বনা নামে একটা রম্যরচনা ছিলো। ৯০ দশকের পোলাপান বা তার আগের যারা আছেন তারা পড়েছেন নিশ্চয়? পড়ে না থাকলেও একটু মনে করিয়ে দিচ্ছি। দুকড়িবাবু নামের একজন ব্যক্তির কাছে এক কাঙ্গালি গানোন্নতিবিধায়িনী-নাম্নী এক সভার জন্য চাঁদা চাইতে আসলে সে চাঁদা না দিয়ে কাঙ্গালিকে তাড়িয়ে দেন। বেচারা কাঙ্গালি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে দুকড়িকে জব্দ করার ফন্দি করে। এটা নিয়েই ঘটনা।

পরদিন কাঙ্গালিচরণ বাংলা ইংরেজি সব পত্রিকায় সংবাদ প্রচার করে যে, দুকড়িবাবু তাদের সভার জন্য ৫ হাজার (সেই সময়ের হিসাবে অনেক টাকা) টাকা চাঁদা দিয়েছেন। এই খবর পড়ে দুকড়ি তো মহা খুশি। সে ভাবছে তার কতো সুনামই না হলো। কিন্তু পরক্ষণেই তার ভুল ভেঙ্গে গেলো, যখন সে দেখলো প্রচুর লোকজন তার কাছে আসা শুরু করেছে চাঁদার জন্য। যেহেতু সে পাঁচ হাজার টাকা দান করেছে তার মানে লোকজন ভাবছে সে বিশাল দানবীর। শেষমেশ লোকজন দুকড়ি বাবুকে চাঁদার জন্য এমনভাবে পাকড়াও করে যে তার জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়। অপ্রত্যাশিত খ্যাতি কীধরনের বিড়ম্বনা সৃষ্টি করতে পারে এটাই ছিলো গল্পের মূল বিষয়।

যাহোক, এতদিন পরে এই গল্প আপনাদের মনে করিয়ে দেওয়ার পেছনের কারণটা বলি এবার। আপনারা জানেন, গতকাল এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে এবং বলতে গেলে প্রায় জিপিএ-৫ এর বন্যা বয়ে গেছে। ছেলে মেয়েরা কতোটা পড়ালেখা করে বা কতোটা না করে জিপিএ-৫ পেয়েছে এই বিষয়ে যাবো না। মূল কথাটা হলো, জিপিএ-৫ হলো বাংলাদেশের পড়াশোনার সর্বোচ্চ রেজাল্ট। যাদের ছেলেমেয়ে বা পাড়া প্রতিবেশী জিপিএ-৫ পেয়েছে তারা নিশ্চয় এই সব ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনেক উচ্চাশা পোষণ করছেন।

এর পরবর্তী পদক্ষেপে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে এরা যে চান্স পাবেই এই আশা করাটা নিশ্চয় অভিভাবকদের কাছে অতিরিক্ত মনে হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো যতোগুলো পোলাপান এই সর্বোচ্চ রেজাল্ট করেছে তার ধারেকাছেও কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন নেই। এমনকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও ভালো সাবজেক্টে ভর্তি হতে গেলে এই রেজাল্ট নিয়েও সম্ভব হবে বলে মনে করি না। এমতাবস্থায় যখন দেখা যাবে, এতো ভালো রেজাল্ট কিন্তু কোথাও বলার মতো জায়গায় ভর্তি হতে পারেনি তখন অবস্থাটা দুকড়ি বাবুর চেয়েও কোন অংশে কম খারাপ হবে না।

এই যে আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার বারোটা বেজে যাচ্ছে, এ ব্যাপারে কখনও কাউকে কথা বলতে দেখি না। বাংলাদেশই এমন দেশ মনে হয় যেখানে নার্সারি থেকে শুরু করে একবারে মাস্টার্সে গিয়ে পড়া শেষ। মাস্টার্স পর্যন্ত যারা মোটামুটি পড়ালেখা করে তারা আবার সেই এসএসসি ইন্টার-পাশ চাকরীর জন্য দৌড়াতে থাকে। তাহলে এই পড়াশোনার লাভটা কোথায়? ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের যোগ্যতা বাড়ানোর পরিবর্তে এই দৌড়ে দৌড়চ্ছে। ফলাফল যা হচ্ছে, দিনদিন একটা কামলা জাতিতে পরিণত হচ্ছি আমরা।

এখনই সময়, নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত পড়াশোনা করে কাজে লেগে পড়া। না হলে যে শিক্ষিত ও বেকার জাতি দিনের পর দিন তৈরি হচ্ছে তাদের কাছে সার্টিফিকেট এবং ভালো রেজাল্টগুলো খ্যাতির বিড়ম্বনা ছাড়া আর কিছুই হবে না। কারণ তারা না পারবে ছোট কোন চাকরী করতে না পারবে তাদের সার্টিফিকেট অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করতে। অদূর ভবিষ্যৎ না, বর্তমান যুগেও অনেকে এই অবস্থায় আছে। এবং একমাত্র তারাই জানে, সার্টিফিকেট থাকা আর না থাকার মাঝে আসলে খুব বেশি পার্থক্য নেই।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৩৪

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: যে দেশে পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে একজন ছাত্র ট্যালেন্ট নাকি ট্যালেন্ট না তা বিবেচনা করা হয় সে দেশে জিপিএ ফসিভ পাওয়ার প্রতিযোগিতা তো চলবেই। এতগুলো জিপিএ ফাইভ দিয়ে এই ঝাতী কি করবে?

২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:৪৪

মৌরি হক দোলা বলেছেন: পোলাপাইন পাবলিকে চান্স না পাইলে আমার মনে হয় তা ভার্সিটির ব্যর্থতা। কারণ তাদের সিট কম :P

৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:০৩

বিটপি বলেছেন: @দোলা, ভার্সিটিতে সিট কম নয়। আমি ঢাবিতে পড়েছি। বিশাল হলরূমে ক্লাস হলেও সব স্টুডেন্টের স্থান সংকুলান হতনা। ঢাকা ভার্সিটিতে প্রতি বছর ৭/৮ হাজার ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হয়। এতেও যদি যথেষ্ট না হয়, তাহলে আমি বলব, এত মানুষের উচ্চশিক্ষার কন প্রয়োজন নেই।

৪| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:২১

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশে জিপিএ ৫ পেলেও ফলাফল শূণ্য। এই প্রজন্ম আসলে মূর্খ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.