নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাওর

আমার চুল আেছ

সাওর

আিম আম খাই

সাওর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাযহাব সংক্রান্ত কতিপয় সংশয়মূলক প্রশ্নের উত্তর

১৮ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:১৩



প্রশ্ন (১) ঃ

মাযহাবী আলিমগণ বলেন যে, আমরা মাযহাবকে ধর্ম অর্থে ব্যবহার করি না বরং মতামত অর্থে ব্যবহার করে থাকি। যেমন উযুর বিষয়ে ইমাম আবু হানিফার মত অর্থাৎ মাযহাব হচ্ছে উযুর ফরজ চারটি।



উত্তর ঃ



যদি মাযহাবকে মতামত অর্থে ব্যবহার করা হয় তাহলে মাযহাব চারটির মধ্যে সীমাবদ্ধ কেন? পূর্ববর্তী ইমাম কি চারজন? না, অনেক ইমাম রয়েছেন। যেমন- (১) ইমাম আওযায়ী (২) ইমাম মালেক (৩) ইমাম শাফেয়ী (৪) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (৫) ইমাম বুখারী (৬) ইমাম মুসলিম (৭) ইমাম তিরমিযী (৮) ইমাম নাসায়ী (৯) ইমাম বায়হাকী (১০) ইমাম ইবনে হাজর (১১) ইমাম যুহুরী (১২) ইমাম আযযাহাবী (১৩) ইমাম ইবনে তাইমিয়া (১৪) ইমাম ইবনুল কাইয়ুম (১৫) ইমাম ইবনে কাসীর (১৬) ইমাম কুরতুবী (১৭) ইমাম হাকেম (১৮) ইমাম ইবনে জারীর (১৯) ইমাম শওকানী প্রমূখ। এই সকল ইমামগণ ইসলামের বিভিন্ন হুকুমের ক্ষেত্রে একেক জন একেক মতামত দিয়েছেন। তাই মাযহাবকে মতামত অর্থে ব্যবহার করলে একথাও স্বীকার করতে হবে যে, শতাধিক মাযহাব (মতামত) রয়েছে।



এক্ষেত্রে আমি বলতে চাই যে, নিঃসন্দেহে মাযহাবী আলেমগণ জনসাধারণকে ধোঁকা দেয়ার জন্যই মাযহাবের অর্থ মতামত করেছে। মোটেই তারা মাযহাবকে মতামত অর্থে ব্যবহার করে না। যদি তাই হত তাহলে তারা বলত না মাযহাব চারটির মধ্যে সীমাবদ্ধ। যে কোন এক মাযহাবের অনুসরণ ওয়াজীব।



এই সকল মাযহাবীগণ মাযহাবকে চারটির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে অবশিষ্ট সকল ইমামগণের মাযহাবকে অস্বীকার করেছে।



প্রশ্ন (২) ঃ



ইমাম বুখারী, নাসাঈ, মুসলিম, তিরমিযি, আওযায়ী, যুহরী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ্ প্রমূখ ইমামগণ সকলেই চার মাযহাবের কোন এক মাযহাবে ছিলেন। এসকল ইমামগণের পক্ষে চার মাযহাবের বাইরে গিয়ে কোন ফাতওয়া দেয়া সম্ভব ছিলো না।



উত্তর ঃ



একথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। কারণ, উপমহা ভারত বর্ষের হানাফী আলেমগণের শিরোমনী শাহ্ ওয়ালিওল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহ্লভী তাঁর কিতাব হুজ্জাতুল লিল্লাহিল বালিগাহ্’তে উল্লেখ করেছেন ৪০০ হিজরীর আগে এই চার মাযহাব চালু হয়নি। আর এ সকল ইমামগণ ৪০০হিজরীর আগেই মারা গিয়েছেন। তাহলে কিভাবে সম্ভব তাদের এই চার মাযহাবের অনুসরণ করা ?



প্রশ্ন (৩) ঃ



যেহেতু আবু হানিফা, শাফেয়ী, মালেক, হাম্বল ইসলামের প্রত্যেকটি বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন আর কোন ইমাম দেন নাই। সে জন্য মাযহাব চারটি সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।





উত্তর ঃ


এই কথাটি মোটেই সঠিক নয়। ইসলামে অনেক মাসআলার ক্ষেত্রে এই চার ইমাম কোন কথাই বলেননি। যেমন-

(ক) ইমাম আবু হানিফা ঃ

তার স্বলিখিত কোন কিতাব পৃথিবীতে নেই। নেই তার ছাত্র আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মদের। হেদায়া কিতাবে ইমাম আবু হানিফার নামে যে সকল মাসআলা রয়েছে তা সত্যিই আবু হানিফা বলেছে কিনা তা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। কারণ আবু হানিফা ৮০ হিজরিতে জন্ম গ্রহণ করেছে এবং ১৫০ হিজরিতে মৃত্যু বরণ করেছে। আর হিদায়া লেখা হয়েছে ৫৭০ হিজরিতে। এত বছর অর্থাৎ প্রায় ৪২০ বছর পর আবু হানিফার ফাতওয়াগুলি হেদায়ার লেখক কিভাবে জানলো তার কোন প্রমাণ নেই।



তাই যারা বলে আবু হানিফা ইসলামের প্রত্যেকটি বিষয়ের মাসআলা দিয়েছে তাদের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।



(খ) ইমাম মালেক ও (গ) ইমাম শাফেয়ী ঃ



সলাতুত তাসবীহ নামাজ বলতে কিছু আছে কিনা তা এই দুই ইমাম জানতেন না এবং বর্তমানে যে সকল সমস্যার সম্মুখীন আমরা হচ্ছি তারও কোন সমাধানের ইঙ্গিত তারা দিয়ে যাননি। যেমন-

উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরুতে ছয় মাস দিন এবং ছয় মাস রাত থাকে। এই রকম পরিস্থিতিতে সলাত এবং সিয়ামের মাসআলা কি হবে তা পূর্বের ইমামগণ বলেন নাই। কারণ তারা জানতেনই না যে এমন কোন জায়গা পৃথিবীতে রয়েছে।



টেস্ট টিউবের মাধ্যমে এখন যে বাচ্চা ভুমিষ্ট হচ্ছে তা কি জায়েয না হারাম এই ইমামগণের থেকে কোন মাসআলা জানা যাবে না। কারণ তখন এই সমস্যার সৃষ্টি হয়নি ইত্যাদি আরও অনেক সমস্যা রয়েছে।



(ঘ) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল ঃ



উনার ক্ষেত্রেও একই কথা। বর্তমান যুগের যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার কোন মাসআলা উনার থেকে এখন পাওয়া যাবে না। উদাহরণস্বরূপ-

জিহাদের ময়দানে আত্মঘাতী হামলা কি জায়েয না হারাম ইত্যাদি।

তাই যারা বলে এই চার ইমাম ইসলামের প্রত্যেকটা বিষয়ে ফাতওয়া দিয়েছেন তারা ভুল বলেছে নয়তো মিথ্যা বলেছে।





প্রশ (৪) ঃ



কোন কোন মাযহাবী আলিমগণ বলে যে, অনেকগুলো মাযহাব হয়ে যাওয়াতে শেষ পর্যন্ত চারটি মাযহাবে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।



উত্তর ঃ

এতগুলো মাযহাবকে কাটছাঁট করে কে সীমাবদ্ধ করেছেন? আল্লাহ না তাঁর রসূল (দ.)। নতুন করে কি মাযহাবীদের কাছে অহী আসে নাকি? অহীর দরজা তো রসূল (দ.) এর মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে গেছে। তবে হ্যাঁ, কিয়ামত পর্যন্ত একটি অহীর দরজা খোলা থাকবে। আল্লাহ বলেন-



“নিশ্চয় শয়তানরা তার আওলীয়ার কাছে অহী করে”। (সূরা আন-আনআম ৬ ঃ ১২১)

অতএব কেউ যদি এখন বলে যে, ইসলামের মধ্যে মাযহাব রয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত চারটি সীমাবদ্ধ করা হয়েছে তাহলে বুঝতে হবে সে শয়তানের অহীর অনুসারী।





প্রশ্ন (৫) ঃ


যদি মাযহাবকে সীমাবদ্ধ না করা হয় তাহলে এত মাযহাবের মধ্যে জনসাধারণ কার মাযহাব মানবে?



উত্তর ঃ

যেহেতু ধর্মীয় ব্যাপারে একেক ইমাম একেক মাযহাব অর্থাৎ মতামত দিয়েছেন তাই ধর্ম মেনে চলা কষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আল্লাহ বলেন-



“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং তাঁর রসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর (আমির বা আলিম) আছে তাদের আনুগত্য কর। যদি তোমাদের মাঝে (অর্থাৎ আলিম ও সাধারণ মুসলিম) মতবিরোধ করে তবে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের দিকে ফিরে আস। যদি তোমরা ঈমান এনে থাক আল্লাহ আর আখিরাত দিনে। ইহাই উত্তম, সুন্দরতম মর্মকথা।” (সূরা নিসা ৪ ঃ ৫৯)



এই আয়াত অনুযায়ী যে ইমামের মাযহাব অর্থাৎ মতামত আল্লাহ এবং তাঁর রসূল (দ.)-এর সাথে মিলবে তার মতামত আমরা মানব। আর যার মাযহাব অর্থাৎ মতামত আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের (দ.) সাথে মিলবে না তার মতামত মানব না।



প্রশ্ন (৬) ঃ



মাযহাবী আলিমগণ বলে, ‘কুরআন এবং হাদিসে সকল বিষয়ের সমাধান পাওয়া যায় না; সমাধান দিয়েছে মাযহাব; তাই মাযহাব মানা ফরজ।’



উত্তর ঃ



এই কথাটি একটি কুফরি কথা। মহান আল্লাহ বলেন-



“আমি তোমার উপর কিতাব (কুরআন) নাযিল করেছি যাতে সকল বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।” (সূরা আন-নাহল ১৬ ঃ ৮৯)



“অবশ্যই মানুষের জন্য এই কুরআনে সকল বিষয় বর্ণনা করেছি।” (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭ ঃ ৮৯)



“আমি মানুষের (বোঝার) জন্যে এই কুরআনে সব ধরনের উপমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি, কিন্তু মানুষেরা অধিকাংশ বিষয় নিয়েই তর্ক করে। (সূরা কাহাফ ১৮ ঃ ৫৪)



তাই যারা বলে যে, কুরআন এবং হাদিসে সকল বিষয়ের সমাধান নেই তারা কুরআনের এই আয়াতগুলিকে বিশ্বাস করে না। আর যারা কুরআনের আয়াতকে অবিশ্বাস করে তারা স্পষ্ট কাফির। যারা বলে, কুরআন এবং হাদিসে সকল বিষয়ের সমাধান নেই সমাধান রয়েছে মাযহাবের কিতাবের মধ্যে। তার মানে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (দ.) এর কথা মানুষকে সকল বিষয়ের সমাধান দিতে পারে নাই? পেরেছে মাযহাবের ইমামগণ! এসব কথা বলে যারা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলকে ছোট করেছে তাদের বড় কাফির বলা ছাড়া কোন পথ নেই।



প্রশ (৭) ঃ



মাযহাবী আলিমগণ বলে যে, কুরআনে মাযহাব অনুসরণ করার জন্য বলা হয়েছে। তাদের দলিল হচ্ছে, আল্লাহ বলেন,



হে ঈমানদারগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর (আমির বা আলিম) রয়েছেন তাদের আনুগত্য কর।” (সুরা নিসা ৪ ঃ ৫৯) আলিমদের আনুগত্য কর, আল্লাহর এই কথা থেকে বুঝা যায় ইসলামে মাযহাব রয়েছে।





উত্তর ঃ



কুরআনের এই আয়াত থেকে যদি মাযহাব তৈরির কথা বলা হয়ে থাকে, তাহলে রসূল (দ.) এর সাহাবাগণ (রা.) কেন মাযহাব তৈরি করেননি? রসূল (দ.) এর সাহাবাগণ (রা) কুরআনের আয়াতটি পালন না করে কি গুনাহ করেছেন! নাউযুবিল্লাহ।



সম্পূর্ণ আয়াতটি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন,

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর (আমির বা আলিম) রয়েছেন তাদের আনুগত্য কর। যদি তোমাদের মাঝে (আলিম বা সাধারণ মুসলিম) মতবিরোধ হয় তাহলে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের দিকে ফিরে আস যদি তোমরা আল্লাহ এবং আখিরাতে বিশ্বাসী হও। এটাই উত্তম সুন্দরতম মর্মকথা।” (সূরা নিসা ৪ ঃ ৫৯)



আয়াতটিতে আলিমদের আনুগত্য করার কথা বলা হয়েছে, তার সাথে একথাও বলা হয়েছে যে, যদি আলিমগণ কোন বিষয়ে মতবিরোধ করে তখন (আলিমদের কথা বাদ দিয়ে) আল্লাহ এবং তাঁর রসূল (দ.)-এর কথা মেনে নিতে হবে।

আজ পৃথিবীতে যেসব মাযহাব রয়েছে তাতে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। তাই কুরআনের আয়াতটি অনুযায়ী সমস্ত মাযহাবের মতবিরোধ বাদ দিয়ে আল্লাহ এবং তাঁর রসূল (দ.)-এর কথা গ্রহণ করতে হবে।



তাহলে এই আয়াতটি মাযহাব তৈরি করার কথা বলা হয়নি বরং মাযহাব তৈরি না করার কথাই বলা হয়েছে।



প্রশ্ন (৮) ঃ



মহান আল্লাহ বলেন,



“তাদের (সাধারণ জনগণের) কাছে শান্তি ও ভয় সংক্রান্ত কোনো খবর এসে পৌঁছলে তারা তার প্রচারে লেগে যায়। অথচ বিষয়টি তারা যদি রসূল ও উলিল আমরগণের (নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বা আলিমগণ) কাছে পেশ করতো তাহলে তারা তার রহস্য উদঘাটন করতে পারতো। (সূরা নিসা, ৪ ঃ ৮৩)



এ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যখনি কোনো শান্তি ও ভয়ের খবর আসবে তখন তার প্রচার না করে রসূল এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের বা আলিমগণের কাছে তা সোপর্দ করার জন্য। আয়াতটি যদিও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে অবতীর্ণ হয়েছে তথাপি “শান্তি ও ভয়” শব্দ দু’টি আমভাবে ব্যবহার হয়েছে। তাছাড়া শান্তি ও ভয়ের পরিস্থিতি যুদ্ধকালীন অবস্থায়ও হতে পারে আবার ধর্মীয় মাস’আলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রেও হতে পারে। যেমন- কেউ যদি বলে অমুক দিন ক্বিয়ামাত হবে তাহলে নিশ্চয়ই জনগণের মাঝে একটি ভয় বিরাজ করবে। ঐ পরিস্থিতিতে এ আয়াতের শিক্ষানুযায়ী ঐ খবর প্রচার না করে আলেমগণের কাছে তা সোপর্দ করে সঠিক উত্তর নিতে হবে।



অতএব, এ আয়াতে শারীয়াহ্’র মাস’আলা আলিমগণের কাছে সোপর্দ করার কথা দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, ইসলামে মাযহাব রয়েছে।



উত্তর ঃ



উক্ত আয়াতটি যদিও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে এসেছে। তথাপি “শান্তি ও ভয়” শব্দ দু’টি আমভাবে ব্যবহার হওয়ায় আয়াতটি শারীয়াহ’র যাবতীয় আহকাম ও বিধানও উদ্দেশ্য। তারপরও আয়াতটি দ্বারা মাযহাব প্রমাণিত হয় না। কারণ, আয়াতটি যদি মাযহাব প্রমাণে দলিল হত তাহলে সাহাবাগণ মাযহাব তৈরী করতেন। কিন্তু সাহাবাগণ মাযহাব তৈরী করেন নি।



আয়াতটিতে বুঝানো হয়েছে যে, সাধারণ জনগণ যেহেতু ধর্মীয় ব্যপারে জ্ঞান কম রাখে তাই যখনি কোনো শান্তি ও ভয়ের খবর পাবে তখনি তা প্রচার না করে আলিমগণের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে শারীয়াহ্’র মাঝে এমন কোনো কথা রয়েছে কি’না। কোন আলিমের কাছে ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করা আর মাযহাব তৈরী এক বিষয় নয়। কারণ, সাহাবীদের কাছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাস’আলা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আর সাহাবীগণও তার উত্তর দিয়েছিলেন। তাই বলে কি সাহাবীগণের নামে মাযহাব চালু হয়েছিল ? অবশ্যই হয়নি। তাহলে পরবর্তী ইমামগণের ফায়সালার উপর ভিত্তি করে কেন তাদের নামে মাযহাব তৈরী করা হলো ? এর কোনো উত্তর মাযহাবের অনুসারী কোনো আলিম ক্বিয়ামাত পর্যন্ত দিতে পারবে না ইনশা....আল্লাহ।বিষয়টি ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করুন। যদি এই আয়াতে মাযহাব হওয়া বুঝাতো তাহলে ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল তারা সকলেই মাযহাব তৈরী করে যেতেন। কিন্তু তারা মাযহাব তৈরী করে যান নি। তারা উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা মাযহাব তৈরী করা বুঝেন নি।



যারা মাযহাবের অনুসারী তারা সকলেই স্বীকার করেন যে, এই চার ইমাম তাদের থেকে জ্ঞানী। আশ্চর্যের বিষয় হলো যাদের নামে মাযহাব তৈরী করা হলো তারা কেউ কুরআন ও হাদিসে মাযহাব তৈরী করার দলিল পান নি। কিন্তু তাদের অনুসারীগণ পেয়ে গেলেন ! সত্যি হাস্যকর।



অতএব, এ আয়াতটি মাযহাব তৈরীরর ক্ষেত্রে কোনো দলিল নয়।



প্রশ্ন (৯) ঃ



মহান আল্লাহ সূরা নিসার ৪ ঃ ৫৯নং আয়াতে বলেন,



“হে ইমানদারগণ; তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ্’র এবং আনুগত্য কর রসূলের এবং তোমাদের মাঝে যারা উলিল আমর রয়েছে তাদের” আয়াতের এই অংশটুকু সাধারণ মুসলিমদের জন্য আর বাকী অংশটুকু অর্থাৎ “যদি তোমাদের মাঝে কোনো বিষয়ে মতভেদ হয় তাহলে তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের দিকে ফিরে আসো”



এই অংশটুকু আলেমদের জন্য প্রযোজ্য।



তাই, যদি পুরো আয়াতটি সাধারণ মুসলিমদের উদ্দেশ্যে যদি হতো তাহলে “মাযহাব” বৈধ হতো না। কিন্তু আয়াতটি ২য় অংশ আলেমগণের মতভেদ বুঝানো হয়েছে এবং আলেমগণকেই আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের দিকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। সাধারণ মুসলিমদেরকে নয়। তাই এই আয়াত থেকে বুঝা যায় ইসলামে মাযহাব বৈধ রয়েছে।



উত্তর ঃ

এই ব্যাখ্যাটি একেবারেই মনগড়া। কারণ, আয়াতের শুরুতেই আল্লাহ “হে ইমানদারগণ” সম্বোধন বাক্যটি উল্লেখ করে পুরো কথাটিই সমস্ত ইমানদারগণকেই বলেছেন। তাহলে ইমানদার কি শুধু আলেমগণই হন না’কি সাধারণ মুসলিমগণও ? নিশ্চয়ই সাধারণ মুসলিম এবং আলেম সকলেই ইমানদার হতে পারে। আল্লাহ্ এ আয়াতে সাধারণ ইমানদার এবং আলেম ইমানদার বলে আলাদা করে ভাগ-ভাগ করেন নি। বরং আল্লাহ্ এ আয়াতে “ইমানদার” শব্দটি আমভাবে ব্যবহার করেছেন।



মহান আল্লাহ বলেন,



“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছি।” -সূরা মায়েদাহ্ ৫ ঃ ৩



এ আয়াতে কী আল্লাহ্ “তোমাদের” শব্দটি দ্বারা শুধুমাত্র আলেমগণকেই বুঝিয়েছেন না’কি সকল মুসলিমকে বুঝিয়েছেন ? নিশ্চয়ই সকল মুসলিমকে বুঝিয়েছেন। তাহলে, আয়াতের সূরা নিসার, ৪ ঃ ৫৯নং আয়াতে তোমাদের মাঝে যদি কোন একটি বিষয়েও মতভেদ হয় তাহলে তা আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও” এই বাক্যটিতে “তোমাদের” শব্দটি দ্বারা আল্লাহকি শুধু আলেমগণকেই বুঝিয়েছেন ? না’কি সমস্ত মুসলিমদেরকে বুঝিয়েছেন? নিঃসন্দেহে সকল মুসলিমদেরকেই বুঝিয়েছেন। যেমনভাবে সূরা মায়েদাহ্’র ৫ ঃ ৩নং আয়াতে “তোমাদের” শব্দটি দ্বারা সকল মুসলিমকেই বুঝিয়েছেন।



অতএব, আয়াতের দ্বিতীয় অংশ যে শুধুমাত্র আলেমদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে এই বুঝটির পক্ষে কী কোন দলিল রয়েছে ? ক্বেয়ামাত পর্যন্ত কোন দলিল দিতে পারবে না ইনশা....আল্লাহ।



রাসূলুল্লাহ (দ.) জাতিগত পরিচয় হিসেবে কি নাম ব্যবহার করেছেন ‘আহলে হাদীস’ না ‘মুসলিম’? অবশ্যই মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন । তাই আমাদেরও জাতিগত পরিচয় হবে ‘মুসলিম’ ‘আহলে হাদীস’ নয়।



প্রশ্ন (১০) ঃ



“মু’আয (রা.) এর সঙ্গীগণ হতে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ (দ.) মু’আযকে (রা.) ইয়েমেনে পাঠান। তিনি (দ.) প্রশ্ন করেন তুমি কিভাবে বিচার করবে ? তিনি (মু’আয (রা.) বললেন, আমি আল্লাহ’র কিতাব অনুযায়ী বিচার করবো। তিনি (দ.) বললেন, যদি আল্লাহ’র কিতাবে না পাওয়া যায় ? তিনি (মু’আয (রা.) বললেন, তাহলে রসূলুল্লাহ (দ.) এর সুন্নাহ (হাদিস) অনুযায়ী বিচার করবো। তিনি (দ.) বললেন, রসূলুল্লাহ (দ.) এর সুন্নাতেও না পাও ? তিনি (মু’আয (রা.) বললেন, আমার জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে ইজতিহাদ (গবেষণা) করবো। তিনি (দ.) বললেন, সকল প্রসংশা সেই আল্লাহ’র যিনি আল্লাহ’র রসূলের প্রতিনিধিকে এরূপ যোগ্যতা দান করেছেন। (তিরমিযি, অধ্যায় ঃ বিচার কিভাবে ফায়সালা করবে, হা. নং ১০২৭)



এই হাদিস অনুযায়ী বুঝা যায় যে, কুরআন এবং হাদিসে কিছু-কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না। সেই পরিস্থিতিতে নিজস্ব বিবেক দিয়ে ফায়সালা করতে হবে। অর্থাৎ যুগের প্রয়োজনানুযায়ী ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে বিবেক দিয়ে ফায়সালা দিতে হবে। এজন্যই ফক্বীহগণ যুগের প্রয়োজনানুযায়ী মাযহাব প্রতিষ্ঠা করেছে।



উত্তর ঃ



এ ব্যাখ্যাটি সঠিক নয়। কারণ, হাদিসটি যঈফ (দূর্বল)। হাদিসটি তিনটি কারণে যঈফ (দূর্বল)। (১) এটি মুরসাল, (২) বর্ণনাকারী মু’আয (রা.) এর সাথীগণ মাজহুল, (৩) হারেস ইবনুল আমর “মাজহুল” (অপরিচিত)। এ হাদিস সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেন, হাদিসটি সহিহ নয়। ইবনু হাযম বলেন, এ হাদিসটি বাতিল, এর কোনো ভিত্তি নেই (আত-তালখীস, পৃষ্ঠা ঃ ৪০১)। তাই হাদিসটি দলিলের জন্য অযোগ্য। তাছাড়া হাদিসটি কুরআনের আয়াতেরও বিরোধী। আল্লাহ্ বলেন,



“আমি তোমার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছি যা'তে সকল বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। (সূরা নাহল, ১৬ ঃ ৮৯)



আয়াতটি বলছে আল্লাহ’র কিতাবে সকল বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। আর হাদিসটি বলছে। আল্লাহ’র কিতাবে যদি না পাওয়া যায়। যা কি’না আল্লাহ্’র কিতাবের এই আয়াতের বিরোধী।



এ হাদিসটি কুরআনের আরো একটি আয়াতের বিরোধী। আল্লাহ বলেন,



“আমার রসূল নিজের মন থেকে কিছু বলেন না। বরং তাঁর কাছে যা ওয়াহী হয় সে তারই অনুরসণ করে।” (সূরা নাজম, ৫৩ ঃ ২-৩)



এ আয়াতটি বলছে, মুহাম্মাদ (দ.) নিজের বিবেক দিয়ে কোনো ফায়সালা দিতেন না। সেখানে তিনি (দ.) কিভাবে তার সাহাবিকে বিবেক দিয়ে ফায়সালা করার অনুমতি দিতে পারেন ? আসল কথা হলো, হাদিসটি যঈফ (দূর্বল)। কুরআনের আয়াতেরও বিরোধী। তাই, হাদিসটি দলিলের দিক থেকে একেবারেই অযোগ্য।



অতএব, কেউ যদি নিজস্ব বিবেক দিয়ে ফায়সালা দেন তাহলে আল্লাহ্’র সাথে চরম বেয়াদবী হবে। কারণ, আল্লাহ-ই একমাত্র বিধান দাতা। মহান আল্লাহ বলেন,



“সৃষ্টি যাঁর বিধানও তাঁর” (সূরা আ’রাফ, ৭ ঃ ৫৪)





প্রশ্ন (১১) ঃ




এই চার মাযহাব থাকার কারণে, পৃথিবীতে সকল হাদিসের উপরে আ’মাল একই সাথে হচ্ছে। তাই মাযহাব আল্লাহ’র একটি রহমত যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।



উত্তর ঃ



এই কথাটি একেবারেই অযৌক্তিক। কারণ, পৃথিবীতে মাযহাব আসার পূর্বেই সাহাবাদের উত্তম যুগ অতিবাহীত হয়েছে। এই বিষয়ে মাযহাবীদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই রসূলুল্লাহ (দ.) এর পরেই সাহাবাদের যুগ সর্বোত্তম। তাই এই কথা বিশ্বাস করা ঈমানের একটি দাবী যে, সাহাবাগণ এই উম্মাতের মধ্যে সবচেয়ে আ’মালদার অর্থাৎ তাঁরা কুরআন ও হাদিসের বেশি অনুসারী। তাহলে কি সাহাবাদের যুগে সকল হাদিসের উপর আ’মাল হয়নি ? যে এ কথা দাবী করবে, তার ঈমান কোথায় গিয়েছে !



অতএব, যারা বলে থাকে যে, “এই চার মাযহাব থাকার কারণে, পৃথিবীতে সকল হাদিসের উপরে আ’মাল একই সাথে হচ্ছে” অর্থাৎ চার মাযহাব না আসলে একই সাথে সকল হাদিসের উপরে আ’মাল করা হতো না। এই দাবীটা কি এ কথাই প্রমাণ করে না যে, মাযহাবীদের যুগটাই সর্বোত্তম। যেহেতু তাদের যুগেই সকল হাদিসের উপর আ’মাল হচ্ছে।



এ ধরণের কথা সাহাবীদের যুগকে খাট করা সমতুল্য। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাযত করুন।



প্রশ (১২) ঃ



আহলে হাদীসগণ তাদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন- প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রা.) কোন মুসলিম যুবককে দেখলে খুশি হয়ে বলতেন-



“রাসূলুল্লাহ (দ.)-এর অছিয়ত অনুযায়ী আমি তোমাকে ‘মারহাবা’ জানাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ্ (দ.) আমাদেরকে তোমাদের জন্য মজলিস্ প্রশস্ত করার ও তোমাদেরকে হাদীস বুঝবার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। কেননা তোমরাই আমাদের পরবর্তী বংশধর ও পরবর্তী ‘আহলে হাদীস’। (মুস্তাদরাকে হাকিম, সহীহ, ২৯৮)” তাই রাসূলুল্লাহ (দ.)-এর কথা অনুযায়ী আমাদের পরিচয় ‘আহলে হাদীস’ বলা যাবে। এই ব্যাখ্যাটি কি সঠিক?



উত্তর ঃ



না ব্যাখ্যাটি সঠিক নয়। কারণ; রাসূলুল্লাহ্ (দ.) জাতিগত পরিচয় হিসেবে ‘আহলে হাদীস’ বলেননি। বরং তিনি যুবকদেরকে হাদীসের অনুসারী হবে বলে ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন। কারণ আহলে হাদীস শব্দের অর্থ হাদীসের অনুসারী। যদি রাসূলুল্লাহ্ (দ.) জাতিগত পরিচয় হিসেবে ‘আহলে হাদীস’ বলতেন তাহলে রাসূলুল্লাহ্ (দ.) এবং সাহাবীগণ (রা.) সকলেই নিজেদের ‘আহলে হাদীস’ বলে পরিচয় দিতেন, কিন্তু তাঁরা দেননি। মহান আল্লাহ্ এ সম্পর্কে বলেন-



“তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করোনা”। -সূরা আলি ইমরান ৩ ঃ ১০২।



এখানে আল্লাহ্ মু’মিনদেরকে বলেছেন মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করোনা। কিন্তু ‘আহলে হাদীস’ না হয়ে মৃত্যুবরণ করোনা একথা বলেননি। তাহলে বুঝা গেল আমরা হাদীসের অনুসারী হবো কিন্তু জাতিগত পরিচয় হবে “মুসলিম”।

মহান আল্লাহ্ আরো বলেন-



তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম, তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন “মুসলিম” পূর্বেও এবং ইহাতেও (অর্থাৎ কুরআনেও)। সূরা হাজ্জ, ২২ ঃ ৭৮।



এই আয়াত অনুযায়ী বুঝা যায় আমাদের জাতিগত পরিচয়ের নাম ইবরাহীম (আ.) “মুসলিম” রেখেছেন এবং আল্লাহও তাতে অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু আহলে হাদীস নাম জাতিগত পরিচয় হিসেবে কুরআন ও হাদীসে কোত্থাও পাওয়া যায় না।



মহান আল্লাহ্ আরো বলেন-



তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ্ (দ.)-এর জীবনেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। সূরা আহযাব, ৩৩ ঃ ২১

অতএব, রসূলুল্লাহ্ (দ.) এর আদর্শানুযায়ী আমাদের জাতিগত পরিচয় হবে “মুসলিম” অন্যকিছু নয়।



প্রশ্ন (১৩) ঃ



কোন কোন মুসলিম ভাই রাসূলুল্লাহ (দ.) এর হাদীসের বরাত দিয়ে বলেন- “রাসূলুল্লাহ (দ.)-এর কন্যা ফাতেমা (রা.) কে উল্লেখ করে বলেছিলেন-



“আমি তোমার উত্তম সালফ্” (সহিহ মুসলিম, আহলে হাদীস লাইব্রেরী হা/৬২০৭) যেহেতু রাসূলুল্লাহ্ (দ.) নিজেকে ‘সালফ্’ পরিচয় দিয়েছেন তাই আমরাও নিজেদেরকে ‘সালফ্’ অর্থাৎ সালাফী পরিচয় দিতে পারবো।





উত্তর ঃ



এই ব্যাখ্যাটি সঠিক নয়। কারণ, ‘সালফ্’ শব্দের অর্থ পূর্ব পুরুষ। রাসূলুল্লাহ্ (দ.) একজন বাবা হিসেবে তাঁর সন্তান ফাতেমা (রা.)-কে অবশ্যই বলতে পারেন আমি তোমার জন্য উত্তম পূর্ব পুরুষ। কিন্তু সকল বাবা কি রাসূলুল্লাহ্ (দ.)-এর মত উত্তম পূর্ব পুরুষ হতে পারবেন ? কখনই নয়। বাবাতো সন্তানদের পূর্ব পুরুষ হবেন-ই। তাই এখানে রাসূলুল্লাহ্ (দ.) জাতিগতভাবে ‘সালফ্’ শব্দটি ব্যবহার করেননি বরং পূর্ব পুরুষ অর্থেই ব্যবহার করেছেন। এ জন্যেই আমাদের জাতিগত পরিচয় ‘সালাফি’ হতে পারে না। বরং আমাদের জাতিগত পরিচয় হবে ‘মুসলিম’।



মহান আল্লাহ বলেন-



অবশ্যই ইবরাহীম ও তাঁর অনুসারীদের মাঝে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। সূরা মুমতাহিনা, ৬০ ঃ ৪



ইবরাহীম (আ.) এবং তাঁর অনুসারীগণ নিজেদের জাতিগত পরিচয় দিয়েছিলেন ‘মুসলিম’। যেহেতু ইবরাহীম (আ.) এবং তাঁর অনুসারীগণ আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। তাই তাদের অনুসরণ অনুযায়ী আমাদের পরিচয় হবে ‘মুসলিম’। ‘সালাফি, আহলে হাদীস, হানাফী, মালেকী, হাম্বলী, শাফেয়ী, শীয়া, আহলে কুরআন ইত্যাদি নয়।





প্রশ্ন (১৪) ঃ



বর্তমান বিশ্বে আজ মুসলিমগণ আক্বিদাহ্গতভাবে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। তাই সহীহ্ আক্বিদাহ্’র মুসলিমদের পরিচয়ের জন্য একটি নাম ব্যবহার করা সময়ের দাবীও বটে। সেই নামটি হচ্ছে “সালাফি” বা “আহলে হাদিস”।



উত্তর ঃ



বুঝটি সঠিক নয়। কারণ, সাহাবাদের (রা.) যুগেই খারেজী, জাহমিয়া ইত্যাদি বাতিল ফেরক্বার আবির্ভাব হয়েছিল। তখন কি সাহাবিগণ (রা.) বা সহীহ আক্বিদাহ’র মুসলিমগণ নিজেদের পরিচয়ের জন্য নতুন নাম ব্যবহার করেছিলেন ? না, এমনটি ককনো হয় নি। বরং তাঁরা সর্বাবস্থায় নিজেদেরকে মুসলিম বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।



তাছাড়া বার্তমানে যারা “সালাফি” বা “আহলে হাদিস” রয়েছে তাদের মাঝেও আক্বিদাহ্গত পার্থক্য রয়েছে। যেমন- তারা কেউ কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবিজ ব্যবহার করাকে বৈধ বলেছেন আবার কেউ শিরক বলেছেন। এরকম তাদের মাঝেও আক্বিদাহগত আরো অনেক পার্থক্য রয়েছে। তাই আমাদেরকে এসব নতুন নাম ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা, এসব নতুন নাম সমূহ ব্যবহার করা বিদ’আহ্ হবে।অতএব, কুরআন-হাদিস এবং সাহাবাদের (রা.) আদর্শানুযায়ী আমাদের জাতিগত পরিচয় “মুসলিম” হবে।





প্রশ্ন (১৫) ঃ




রসূলুল্লাহ (দ.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আলেমগণ হলেন নাবীদের ওয়ারিস। নাবীগণ কোন দিনার বা দিরহাম ওয়ারিসরূপে রেখে যান না। শুধু তাঁরা (আ.) ওয়ারিস সূত্রে রেখে যান ইলম। সুতরাং যে ইলম অর্জন করেছে সে পূর্ণ (ওয়ারিস) অংশ গ্রহণ করেছে। -আবু দাউদ, সহীহ, হু.মা. হা. ৩৬৪১এই হাদিস অনুযায়ী আলেমগণ নিজ থেকে শারীয়াহ’র বিধান দিতে পারেন। যেহেতু আলেমগণ নাবী (আ.) গণের ওয়ারিস। অতএব, এ হাদিসটি থেকেই বুঝা যায় যে, জ্ঞানী আলিমদের নিয়ে মাযহাব করা বৈধ।





উত্তর ঃ




ব্যাখ্যাটি সম্পর্ণই ভুল। কারণ, নাবী-রসূলগণ শারীয়াহ’র কোনো কথাই নিজ থেকে বলতে পারতেন না। বরং তাঁদের (আ.) কাছে যে ওয়াহী করা হতো শুধু তাই অনুসরণ করতেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,



কোনো রসূলেরই এই অধিকার ছিলো না যে, তাঁরা আল্লাহ’র অনুমতি ছাড়া (শারীয়াহ’র) কোনো বিধান নিয়ে আসবে। -সূরা আর-রা’দ, ১৩/৩৮



নাবী-রসূলগণ যেহেতু নিজ থেকে শারীয়াহ’র কোনো কথা বলতে পারবেতন না। সেখানে একজন আলেম কিভাবে নিজ থেকে শারীয়াহ’র কথা বলবেন ? হাদিসটি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন, রসূলুল্লাহ (দ.) বলেছেন, নাবীগণ (আ.) ওয়ারিস হিসেবে রেখে যান ইলম (জ্ঞান)। আলেমগণ যদি নিজ থেকে শারীয়াহ’র কোনো কথা বলতে পারতেন তাহলেতো নাবীগণের ইলম (জ্ঞান) রেখে যাওয়ার কোনই প্রয়োজন ছিলো না। বরং নাবীগণ (আা.) যে ইলম (জ্ঞান) রেখে গিয়েছেন তা বুঝাবার দায়িত্ব দিয়েগেছেন আলেমগণকে। তাই হাদিসটিতে আলেমগণকে শারীয়াহ’র মাঝে নিজ ইচ্ছামত বিধান দেয়ার অধিকার দেয়া হয়নি। বরং নাবী-রসূলগণ (আ.) ওয়াহী ছাড়া কিছুই বলতে পারতেন না। ঠিক নাবী-রাসূলগণের ওয়ারিসগণ তারাই যারা নাবী-রসূলগণের (আ.) রেখে যাওয়া ওয়াহীর ইলম অনুযায়ী ফায়সালা দেন। আর যারা নাবী-রসূলগণের (আ.) রেখে যাওয়া ইলম ব্যতীত ফায়সালা দেয় তারা নাবী-রসূলগণের ওয়ারিস নয়।



অতএব, এই হাদিসটি কোনোভাবেই মাযহাবকে প্রতিষ্ঠার দলিল হতে পারে না।





প্রশ্ন (১৬) ঃ




মহান আল্লাহ বলেন,



“.....তোমরা মুশরিক হয়ে যেওনা যারা দ্বীনকে বিভক্ত হয়েছে এবং দলে-দলে ভাগ হয়েছে এবং প্রত্যেকটি দল নিজদেরকে নিয়ে সন্তুষ্ট।” -সূরা রূম, ৩০/৩১-৩২এই আয়াতে চার মাযহাবের অনুসারীদেরকে আল্লাহ মুশরিক বলেননি। যদি বলা হয় আলী (রা.) এবং মুআবিয়া (রা.) এই দুইজন মহান সাহাবী নিজেদের মাঝে বিবাদ করে ভাগ হয়ে গিয়েছিলেন এই জন্য কি আপনারা তাদেরকে মুশরিক বলবেন (নাউযুবিল্লাহ) ? নিশ্চয়ই না ? তাহলে বুঝা গেল, এই আয়াতটি দিয়ে মাযহাবের অনুসারীদেরকে বুঝানো হয়নি।



উত্তর ঃ



এই ব্যাখ্যাটি চরম আপত্তিকর। কারণ, আলী (রা.) এবং মুআবিয়া (রা.) তাঁরা উভয়ে দ্বীনকে বিভক্ত করেননি। দুই মুসলিম নিজেদের মাঝে বিবাদ করা আর দ্বীনকে বিভক্ত এক বিষয় নয়। যেমন ধরুন, মিজান এবং খালেদ যদি নিজেদের মাঝে ঝগড়া করে আলাদা হয়ে যায়, তাহলে কি দ্বীনকে বিভক্ত করা হবে ? নিশ্চয়ই এই রকম জাহেলের মত কথা বলবেন না !



আলী (রা.) এবং মুআবিয়া (রা.) কখনই দ্বীকে বিভক্ত করেননি। আপনারাতো ইসলামকে চারভাগে ভাগ করেছেন (হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী)। এই কারণে সূরা রূমের ৩০/৩১-৩২ নং আয়াত দু’টি মাযহাবীদের ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে বুঝতে হবে।আয়াত দু’টি আবারো লক্ষ্য করুন,



“....তোমরা মুশরিক হয়ে যেওনা যারা দ্বীনকে বিভক্ত হয়েছে এবং দলে-দলে ভাগ হয়েছে এবং প্রত্যেকটি দল নিজদেরকে নিয়ে সন্তুষ্ট।” -সূরা রূম, ৩০/৩১-৩২প্রশ্ন (১৭) ঃ



যদি কেহ তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামানুসারে মাদানী, আযহারী, নদভী, দেওবন্দী ইত্যাদি পরিচয় দিতে পারে তাহলে কেন হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী, পরিচয় দেয়া যাবে না ?



উত্তর ঃ



ভাই মাদানী, আযহারী, নদভী, দেওবন্দী ইত্যাদি পরিচয়গুলো কোনো সা¤প্রদায়িক পরিচয় নয় বরং গুণগত পরিচয়ের নাম। কিন্তু হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী সা¤প্রদায়িক পরিচয়ের নাম। কোনো গুণগত পরিচয়ের নাম নয়। যে কারণে, এই ধরণের সা¤প্রদায়িক পরিচয়গুলো কুরআন-হাদিস মোতাবেক বৈধ নয়। কুরআন এবং হাদিসে আমাদের সা¤প্রদায়িক পরিচয় দেয়া হয়েছে “মুসলিম”। এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,



“তিনি (আল্লাহ) তোমাদের নাম রেখেছেন “মুসলিম” পূর্বেও এবং ইহাতেও (কুরআনে).....” -সূরা হাজ্জ, ২২/৭৮প্রশ্ন (১৮) ঃ



মহান আল্লাহ বলেন,“যাঁরা প্রথম শ্রেণীর মুহাজির এবং আনসার....” -সূরা তাওবাহ, ৯/১০০এই আয়াতে আল্লাহ মুহাজির এবং আনসার কত সুন্দর দু’টি নাম ব্যবহার করেছেন। এ থেকেই বুঝা যায় আমাদের শুধু মুসলিম নামেই আল্লাহ অভিহিত করেননি বরং আরো বেশকিছু সুন্দর নামও দিয়েছেন। এথেকেই বুঝা যায় মুসলিম হওয়ার পাশা-পাশি যদি আমরা মুহাজির এবং আনসার হতে পারি তাহলে মুসলিম হওয়ার পাশা-পাশি আমরা হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী ও মালেকীও হতে পারি।





উত্তর ঃ




মুহাজির এবং আনসার এই নাম দু’টি গুণবাচক নাম। কিন্তু হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী ও মালেকী কি গুণবাচক নাম ? নিশ্চয়ই এই ধরণের মূর্খের মতো কথা আপনারা বলবেন না ! আর আপনারাইতো বললেন মুহাজির এবং আনসার নাম দু’টি কত সুন্দর, তাহলে সুন্দর নামগুলো বাদ দিয়ে হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী ও মালেকী নাম ধারণের জন্য এত আগ্রহী হলেন কেন ? সত্যিই আপনাদের ব্যাখ্যাগুলো হাস্যকর। সাহাবীগণ (রা.) মুহাম্মাদ (দ.) থেকে শারী’আহ’র ব্যাখ্যা গ্রহণ করার কারণে কি নিজেদেরকে মুহাম্মাদী নামে পরিচয় দিয়েছিলেন ? আপনারা কি আবু বাকার মুহাম্মাদী, ওমার মুহাম্মাদী, উসমান মুহাম্মাদী, আলী মুহাম্মাদী বলে তাদের পরিচয় উল্লেখ করেন? নিশ্চয়ই না। অতএব, এই ধরণের মনগড়া ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে কুরআন এবং হাদিস আমাদের যে নাম দিয়েছে তা গ্রহণ করে মুসলিম উম্মাহ'কে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করুন। এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,



“তিনি (আল্লাহ) তোমাদের নাম রেখেছেন “মুসলিম” পূর্বেও এবং ইহাতেও (কুরআনে).....” -সূরা হাজ্জ, ২২/৭৮



প্রশ্ন (১৯) ঃ



আমাদের প্রধান কিতাব চারটি যাবুর, তাওরাত,ইঞ্জিল এবং কুরআন। প্রধান মালাইকাহ (ফেরেশতা) চারজন জিবরীল, মীকাইল, ইস্রাফিল, মালাকুল মাঊত। প্রধান খলীফাহ চারজন আবু বাকার (রা.), ওমার (রা.) উসমান (রা.) ও আলী (রা.) এবং আমাদের ক্বিবলা কা’বাঘরটিও চারকোণ বিশিষ্ট। এজন্যই বুঝে নিতে হবে যে, ইসলামেও চারটি মাযহাব রয়েছে।



উত্তর ঃ



এই ধরণের মূর্খের মতো ব্যাখ্যা শুনে সত্যিই আমরা হতবাক ! এই ধরণের ব্যাখ্যা রসূলুল্লাহ (দ.) তাঁর সাহাবীগণ (রা.) এবং আপনারা যে চার ইমামের তাক্বলীদ (অন্ধ অনুসরণ) করেন তারাও বুঝেননি। মনে হয়, আপনি এঁদের থেকেও বেশী জ্ঞান রাখেন ! আপনাকেই মাযহাবের ইমাম বানানোর প্রয়োজন ছিল ! যাই হোক আপনি যেভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঐ অনুযায়ীতো ইসলামের খুঁটিও চারটি হওয়ার প্রয়োজন ছিল কিন্তু ইসলামের খুঁটি পাঁচটি। এই সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (দ.) বলেছেন,



“ইসলামের খুঁটি পাঁচটি (১) আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (দ.) আল্লাহ’র রসূল এই কথার স্বাক্ষ্য দেয়া, (২) সলাত ক্বায়েম করা, (৩) যাকাত আয়াদ করা, (৪) হাজ্ব সম্পাদন করা, (৫) রমজানে সিয়াম পালন করা।” -বুখারী, অধ্যায় ঃ ২, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদ ঃ ২, তোমাদের দু’আ অর্থাৎ তোমাদের ঈমান, হাদিস # আরবী মিশর ৮, তা.পা. ৮, ই.ফা.বা. ৭, আ.প্র. ৭তাই এভাবে চার চার মিলিয়ে ইসলামের ব্যাখ্যা দেয়া সঠিক নয়। যদি সঠিক হতো তাহলে ইসলামের খুঁটিও চারটি হতো পাঁচটি নয়।



অতএব, এই ধরনের মনগড়া ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে কুরআন এবং হাদিস অনুসরণ করুন। এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,



“তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে তোমরা তা মেনে চলো আর তাছাড়া (অবতীর্ণ বিষয় ছাড়া) অন্যকোনো আউলিয়ার অনুসরণ করোনা।” -সূরা আ’রাফ, ৭/৩

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.