নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাঈদ শিহাব

সাঈদ শিহাব › বিস্তারিত পোস্টঃ

খুশি

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:১৫

পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে সোহানাকে নিয়ে রুবিনা গাড়ি চালিয়ে আগোরা সুপার শপে যাচ্ছিলো। এমন সময় রাস্তার পাশে পুরানো জিনিস বিক্রয়ের দোকান দেখে সে গাড়ি থামালো।

'এখানে এত পুতুল কেন?' রুবিনা জিজ্ঞেস করলো।

দোকানের মহিলাটি হাসলো। 'কারণ আমার বোনের কাছে মূল্যবান জিনিস বলতে এসবই ছিল। ব্যাংক, শেয়ার কিংবা........ জীবনবীমা- এসবে সে বিশ্বাস করতো না।'

তখনই রুবিনা ব্যাপারটা ধরতে পারলো। কয়েক দিন আগে পত্রিকায় একটা ভয়ংকর খবর এসেছিল। খবরটা ছিল একটা ছোট মেয়ে আর তার দত্তক মা-বাবার খুন-আত্মহত্যা নিয়ে। পুলিস জানিয়েছে, বাচ্চা মেয়েটাকে গলা টিপে মারা হয়েছিল। তারপর লোকটা তার স্ত্রীর বুকে ছুরি চালায় আর শেষে নিজের গলা কেটে দেয়। পুতুলগুলো ওই অসহায় মহিলাটিরই হবে। কয়েকটা হয়তো ছোট মেয়েটার।

রুবিনার গা কেঁপে উঠলো। কেন যে এখানে আসতে গেলাম? ভাবে সে। কিন্তু এখন আর সেটা ভেবে লাভ নেই।

প্রত্যেকটা পুতুলই খুব দামি। সোহানা দুইশ টাকা দাম লেখা কিছু পুতুলের বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রুবিনা সেখানে চলে এলো। বেশির ভাগ পুতুলেরই হাত-পা নেই।

'দেখ আম্মু আমি কি পেয়েছি।' সোহানা বলল, ওর হাতে একটা পুরানো হাতে-সেলাই করা পুতুল। রঙ্গীন মার্কার দিয়ে পুতুলটার গায়ের সাদা কাপড় গোলাপি করা হয়েছে আর মুখে হাসি এঁকে দেয়া হয়েছে।

'রেখে দাও এটা। কি ময়লা হয়ে আছে!'

'না! আমি এটা নিব।'

রুবিনা পুতুলটা হাতে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। তার কল্পনায় পুতুলটা হাতে নিয়ে উঁচু চেয়ারে বসে থাকা বসে থাকা একটা ছোট মেয়ের ছবি ভেসে উঠলো। সে মেয়েটার নেতিয়ে পড়া হাত দেখতে পেল যেন ও মারা গিয়েছে।

'না, এটা আমি তোমাকে কিনে দিব না। আমার এটাকে পছন্দ হয় নি।'

'প্লিজ আম্মু।'

অন্তত পুতুলটার গায়ে কোন রক্ত লেগে নেই। রুবিনা ভাবলো। মনে হয় তখন এটা রুমে ছিল না।

সে পুতুলটা সোহানার হাতে দিয়ে দিল। 'চলো, বিক্রেতা মহিলাটির সাথে কথা বলি।'

তারা মহিলাটির কাছে ফেরত আসলো।

'এটার দাম দুইশ টাকা?'

সোহানা হাতের পুতুলটা দেখাল।

মহিলাটি পুতুলটার দিকে তাকানোর সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে নিল। 'পুতুলটা ভুলে দুইশ টাকার পুতুলগুলোর বক্সে রেখেছিলাম।'

সোহানার মুখ থেকে হাসি মুছে গেল। সে পুতুলটার মুখের দিকে তাকালো। পুতুলটার মুখের হাসিও যেন চলে গিয়েছে। এটাকে সোহানার মতোই দু:খি দেখালো।

'তা এটার জন্য কত দিতে হবে?'

'কিছুই দিতে হবে না। আমি এটা এমনিই দিয়ে দিলাম।' মহিলাটি মুখ না ঘুরিয়েই বললো। 'শুধু এটাকে নিয়ে যাও।'

পুতুলটার মুখে হাসি ফেরত এলো আর সোহানা তার নতুন বন্ধুকে জড়িয়ে ধরলো।

'খুশিকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে আম্মু।' গাড়িতে বসে সোহানা ওর মাকে জানালো।

'নামটা তো ভালোই মানিয়েছে ওর চেহারার সাথে।'

'হুমম।' সোহানা সায় দিল। 'ও কিন্তু একটা মেয়ে পুতুল।'

পুতুলটা কেমন অদ্ভুত। রুবিনা ভাবলো। কিন্তু চিন্তার কিছু নেই। কয়েক দিন পরই মিস খুশি সোহানার খেলনার বক্সের নিচে চাপা পড়ে যাবে।

**********

সাতাশ বছর বয়সী তরুণী তমা আগোরা থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো। তখন ও ওর বয়সী একজন মহিলাকে একটা বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে ঢুকতে দেখলো। মহিলাকে ওর চেনা চেনা মনে হলো। হঠাৎ করেই ওর মনে পড়লো: মহিলাটাকে ও পত্রিকায় দেখেছে, এক ধনী বুড়ো ভামকে বিয়ে করে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল।

একেই আমি চাই,ও ভাবলো- এক ধনী পিতা। রায়হানকে দিয়ে কিছুই হবে না। কলেজে পড়ার সময়ই বলদটাকে ত্যাগ করা উচিত ছিল।



************

'আমার একটা নতুন ড্রয়িং খাতা লাগবে আম্মু।'

'গত সপ্তাহে না একটা কিনে দিলাম তোমাকে?'

'হ্যা কিন্তু এখন আমার অন্য রকম একটা লাগবে।'

সোহানা মুখটা এমন ভাবে করুণ করে রাখলো যাতে ওর মা 'না' করতে না পারে।

'ঠিক আছে।' রুবিনা মেয়ের কাঁধ চাপড়ে দিল। 'তুমি এখান থেকে একটা খাতা বেছে নাও। আমি ওদিকে যাচ্ছি। একটা ব্যাগ কিনবো।'

'আচ্ছা।' সোহানা সায় দিল।

'কিন্তু আমাকে কথা দিতে হবে যে আমি না আসা পর্যন্ত তুমি কোথাও যাবে না।'

'আচ্ছা, যাব না।'

' ওকে।' রুবিনা ওর গালে ছোট্ট একটা আদর দিল। 'আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।'

সোহানা আর খুশি অনেকগুলো ড্রয়িং খাতার মধ্যে থেকে বাছাবাছি করতে লাগলো। এমন সময় তমা সেখানে হাজির হলো।

'এই যে মিষ্টি মেয়ে, তোমার নাম কি?'

'আমার নাম সোহানা।'

'তাহলে তোমাকেই খুঁজছি আমি। তোমার মা পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। উনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।'

'না, আমার মা ওই দিকে আছেন।' সোহানা আঙ্গুল তুলে ব্যাগগুলোর তাকের দিকে দেখালো। কিন্তু ও সেখানে ওর মাকে দেখতে পেল না।

'না বাবু, তোমার মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর উনি আমাকে বলেছেন আমি যেন তোমাকে সেখানে নিয়ে যাই।' তমা ওর হাত ধরলো। 'চলো।'

সোহানা কাঁদতে শুরু করলো। 'আমি আম্মুর কাছে যাব।'

'ঠিক আছে বাবু। আমি তোমাকে নিয়ে যাব।'



**********

'আমরা ডাক্তারের কাছে যাবো না?'

'তোমার আম্মু এখানে আমার বাসায় এসে তোমাকে নিয়ে যাবেন বলেছেন।' তমা গাড়ি থামিয়ে বললো। ' তুমি আইসক্রিম পছন্দ করো? চলো আমি তোমাকে আইসক্রিম দিচ্ছি।'

সোহানা আবার কাঁদতে শুরু করলো।

'কান্না করে না। তোমার মা এখনই চলে আসবে।'

তমা সোহানাকে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেল।

ওর প্রেমিক রায়হান সোফায় শুয়ে টিভি দেখছিল। 'এ কে?'

' ও সোহানা। ওর মা সুপার শপে পায়ে ব্যাথা পেয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন। আমি বলেছি আমি এই সময়টায় সোহানাকে দেখে রাখবো।'

'এখানে আসো সোহানা। এই যে টেবিলে বসো। আমি তোমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসছি।'

সোহানা যখন আইসক্রিম খাচ্ছিলো, তমা রায়হানের দিকে এগিয়ে গেল।

রায়হান টিভির আওয়াজটা কমিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বললো, 'কি করতে চাচ্ছ তুমি?'

'আমি ধনী হতে চাচ্ছি।'

রায়হান সোহানার দিকে তাকালো। তারপর আবার তমার দিকে তাকালো। 'বুঝলাম না। খুলে বলো।'

'ওকে চিনতে পারছো না?'

রায়হান আরেক বার সোহানার দিকে তাকালো। 'না।'

'ওই মহিলার কথা মনে আছে যে এক বড় লোককে বিয়ে করেছিল? লোকটার নামও তো মনে পড়ছে না। আরে, একটা বয়স্ক লোক। কয়েক সপ্তাহ আগে পত্রিকায় এসেছিল।'

'তুমি তাদের মেয়েকে নিয়ে এসেছ?'

তমা হাসলো। 'হ্যা, আর মেয়েটাকে ফেরত পেতে হলে ওদের বেশ বড়সড় অঙ্কের টাকা গুণতে হবে।'

'বোকার মত কি করলে! এই মেয়েটা তো আমাদের দেখে ফেলেছে।'

'সমস্যা নেই। আমরা দেশের বাইরে চলে যাব। ভারতে।'

'তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। পুরোপুরি পাগল হয়ে গিয়েছো।'

'হ্যা আমি পাগল হয়ে গিয়েছি আর এই পাগলামীই আমাদের ধনী বানিয়ে দিবে।'

রায়হানের মধ্যে লোভ জাগলো। 'আমাদের আর কখনই কাজ করতে হবে না।'

'শুয়ে বসে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো।'

এমন সময় একটা মাইকিং ওদের কল্পনায় বাঁধা দিল।

'ওই যে দেখ- মেয়েটার হারিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। জানালাটা ভালো করে বন্ধ করো, মেয়েটা যাতে না শুনে।'

দরজায় কান লাগিয়ে ওরা পুরো ঘোষণাটা শুনলো।

আর সেটা শুনেই ওরা ওদের ভুলটা বুঝতে পারলো। সোহানার বাবা-মা মোটেই ধনী কেউ না। তমা এক মধ্যবিত্ত দম্পতির মেয়েকে অপহরণ করে এনেছে।

'অসাধারণ!' রায়হান বললো। 'এখন আমরা কি করবো? ভারতে তো আর যাওয়া হচ্ছে না। জেল থেকেই ঘুরে আসতে হবে।'

'কিছুই হবে না। আমি পুলিসকে বলবো আমি বাচ্চা মেয়েটাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। বলবো যে আমি ওকে রাস্তার পাশে কান্না করতে দেখে নিয়ে আসি।'

'আর তুমি যে মেয়েটাকে মিথ্যা বললে? সেটার কি হবে? তুমি ওকে বলেছ ওর মা ডাক্তারের কাছে। ও পুলিসকে সব বলে দিবে।'

' বাইরে গিয়ে একটা সিগারেট টেনে আসো।' তমা বললো। 'আমি এদিকটা সামলে নিব।'

'করবে টা কি শুনি।'

'যাও তো।'

রায়হান ওর সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটারটা নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসলো।

তমা সোহানার দিকে এগিয়ে গেল। 'আইসক্রিমটা কেমন লেগেছে?'

'ভাল।'

তমা স্টিলের বেসিনের সামনে গিয়ে ট্যাপ ছেড়ে দিল। ঝনঝন শব্দ করে পানি পড়তে লাগলো। ভাল করে ও দরজা-জানালাগুলো লাগিয়ে দিল। এরপর ও বেশ বড় একটা ডীপ ফ্রীজের উপর রাখা ড্রয়ার খুলে লম্বা আর ধারালো একটা চাকু বের করলো।

ও সোহানার দিকে ফিরে বললো, 'আমার মনে হচ্ছে তোমার আম্মু আসবে না।'

'কেন?'

তমা চাকুটা নিয়ে সোহানার দিকে এগিয়ে আসলো। ভয়ে সোহানার হাত থেকে চামচ পড়ে গেল। ও খুশিকে তুলে নিয়ে পুতুলটার মুখের দিকে তাকালো। 'আমার ভয় লাগছে খুশি।'

খুশির চোখ রাগে কুঁচকে গেল।

সোহানা উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে খুশিকে তমার সামনে তুলে ধরলো। তমা তখন চাকটাু তুলে ধরে সোহানার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

তমা পুতুলটার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। পুতুলটার মুখে আঁকা হাসিটা মুছে গিয়ে এখন সেখানে ক্রোধ ফুটে উঠেছে। কিন্তু একটা সামান্য পুতুল ওকে রুখতে পারবেনা। মেয়েটা কুচি কুচি করে কেটে আপাতত ফ্রীজে লুকিয়ে ফেলতে হবে। পরে রাতে টুকরোগুলো কোন এক জায়গায় ফেলে আসলেই হবে।

হঠাৎ তমা টের পেল ওর শরীরটা পিছনের বেসিনের দিকে সরে যাচ্ছে। বেসিনের কোণায় ও এত জোরে ধাক্কা খেল যে তার হাত থেকে চাকুটা পড়ে গেল। ও নিচু হয়ে চাকুটা তুলে নিতে চাইলো কিন্তু নিজের শরীরটাকে ও বাঁকাতে পারলো না। ও নড়তেই পারছে না। ওর মাথা ওর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করছে না।

খুশির মাথাটা হঠাৎ ফুলে গিয়ে দানবীয় কিছুতে রুপ নিল। পুতুলটার ভয়ঙ্কর মুখ দেখে তমা এমন ভয় পেল যেরকম ও আগে কখনোই পায় নি। ওর বুকের ধুকধুকানি আচমকা বেড়ে গেল।

চাকুটা বাতাসে ভেসে সোজাসুজি তমার মুখের সামনে এসে থামলো।

'সোহানা? এটা কি করছো তুমি? প্লীজ আমাকে মেরো না।'

সোহানা তমার দিকে ফিরেও তাকালো না। খুশি ওকে কথা বলতে নিষেধ করেছে।

চাকুটা একবার সামনে এগিয়ে আবার পিছাতে লাগলো-এতই দ্রুত যে এটার উপর চোখ রাখতে কষ্ট হচ্ছিল তমার।

আমাকে কি আঘাত করা হয়েছে? তমা ভাবলো। চাকুটা থেকে কিছু গড়িয়ে পড়তে দেখার আগে ও কিছুই টের পেল না।

ও ওর বাম হাতে একটা খোঁচা অনুভব করলো। এর পরপরই তীব্র ব্যাথা ওর পুরো হাতে ছড়িয়ে পড়লো। ওর বাম হাত দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ওর হাতটা কাঁধ থেকে ছুটে গেল। মাংস ছেঁড়ার শব্দ হল। সদ্য কাটা গরুর মাংসের মত ওর হাতটা মেঝেতে পড়ে গেল।

ও চিৎকার করলো। 'বাঁচাও। কেউ আমাকে সাহায্য করো।'

চাকুটা ঝলসে উঠলো। ওর বাম হাতও ছিটকে পড়লো। খুশির মাথাটা আরো বড় হয়ে গেল। পুতুলটার মাথা পুরো রুমটাকে দখল করতে লাগলো। খুশির মুখটা থেকে তমার মাথাটা আর দুই ইঞ্চি দূরে।

তমা কেঁপে উঠলো। 'না, প্লীজ। দয়া করো।'

ও ডীপ ফ্রিজটার কথা ভুলেই গিয়েছিল। ফ্রিজের ঢাকনা খুলে যাওয়ার শব্দ শুনে ও সেদিকে দিকে তাকালো।

ফ্রিজটার ভিতরে ও নিজের একটা হাতকে হারিয়ে যেতে দেখলো। ওর আঙ্গুলগুলো যেন হাত নাড়িয়ে ওকে শেষবারের মত বিদায় দিচ্ছিলো। ফ্রীজের ভিতর ঢুকে যাওয়ার আগে ও ওর নানীর বিয়ের আঙটিটা এক নজর দেখতে পেল।

তমার মনে হলো খুশির মুখ যেন মুখ বড় হয়ে গেছে আর ফ্রিজের ভেতর ওর দ্বিতীয় হাতটাও ঢুকে গেল। ওর পা দুটো দুই দিকে টান খেলো আর ও হাঁটু গেড়ে নিচে পড়ে গেল। ওর পা দুটো লাফাতে লাগলো যতক্ষণ না ও পা দুটো সামনে ছড়িয়ে দিল। আর তখনই ওর পা দুটো কাটা পড়লো।

পা দুটো ফ্রীজে ঢুকে যাওয়ার পর ও টের পেল ওর পুরো শরীরটা ভাসতে শুরু করেছে। খুশি ওকে পুতুল নাচের মত নাচাচ্ছে। ফ্রীজটার মুখ আরো বড় হয়ে গিয়েছে। ওর শরীরের অবশিষ্টাংশ ভাসতে ভাসতে বেসিনের দিকে গেল। ট্যাপ থেকে পানি পড়ার চেয়েও দ্রুত গতিতে ওর শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যাচ্ছে।

প্রথমে ওর মাথাটা ঠাণ্ডা বরফের স্পর্শ পেল। ঘাড় পর্যন্ত ওর মাথাটা ভিতরে ঢুকে যেতেই ফ্রীজটার মুখ আরো প্রসারিত হয়ে গেল আর তমার পুরো শরীরটাই সেখান দিয়ে ঢুকে গেল।

অবশেষে ফ্রীজটার মুখ বন্ধ হয়ে গেল আর পানি পড়া থেমে গেল।

খুশি ওর আগের রুপে ফিরে আসলো। সোহানা পুতুলটার দিকে ফিরলো আর ওটাকে জড়িয়ে ধরলো। ও কিছুই দেখতে পায় নি, শুনেও নি।



************

'এখন কেমন লাগছে, মা? তুমি চাইলে আজ রাতে আমাদের সাথে ঘুমাতে পারো।' রুবিনা বললো।

সোহানা আজকে নিশ্চিতভাবে দু:স্বপ্ন দেখবে। পুলিস জানিয়েছে, ছেলেটা ওর প্রেমিকাকে চাকু দিয়ে কেটে কেটে খুন করে ফ্রীজে ঢুকিয়ে রাখে। এরপর সে নিজে দশটা জ্বলন্ত সিগারেট গিলে ফেলে। শ্বাস রোধে মারা যায় সে। অদ্ভুত ব্যাপার! ঘটনাটার সাথে কয়েক দিন আগে ঘটে যাওয়া এক পরিবারের মৃত্যুর প্রচুর মিল পাওয়া যায়। দুটো ঘটনাতেই পুরুষটি মহিলাকে খুন করে। পার্থক্য শুধু- এবার বাচ্চাটি বেঁচে গিয়েছে।

সোহানা বলেছে ও কিছুই দেখেনি। তাহলে কি ও পুরো ব্যাপারটা চেপে যেতে চাইছে? ভুলে যেতে চাচ্ছে ঘটনাটা? কিন্তু সব কিছু যদি ওর আবার মনে আসে তখন ও করবে?

'সোহানা,আমার মনে হচ্ছে তোমার আজকের রাতটা আমাদের সাথে ঘুমানো উচিত।'

'খুশি আর আমি আমার রুমে ঘুমাতে চাই। এটা ওর জন্য আমাদের বাসায় প্রথম রাত।'

'আচ্ছা, ঠিক আছে। কিন্তু যদি কোন কারণে তুমি আর খুশি ভয় পাও, তাহলে সাথে সাথে এখানে চলে আসবে। কেমন?'

'ঠিক আছে আম্মু। কিন্তু আমরা ভয় পাব না।'

রুবিনা ওকে একটা আদর দিল।

'খুশিকেও একটা আদর দাও।'

'আচ্ছা।' রুবিনা পুতুলটাকেও একটা চুমো দিল। 'শুভ রাত্রি।'

'গুড নাইট, আম্মু।'

রুবিনা লাইট নিভিয়ে রুমের বাইরে এসে দরজাটা একটু টেনে দিল। সোহানা ডিম লাইটের আলোয় খুশিকে দেখতে পাচ্ছিলো।

ক্লান্ত দিন শেষে শান্তি মতো ঘুমানোর আগে ও পুতুলটাকে জড়িয়ে ধরলো।

'তুমি খুব ভালো খুশি।'

খুশির হাসিটা চওড়া হয়ে গেল।

(বিদেশি গল্প অবলম্বনে)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:১০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বীভৎস গল্প

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.