নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাঈদ শিহাব

সাঈদ শিহাব › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপেক্ষা

২৭ শে মে, ২০১৫ সকাল ১০:৩৫

১.
এত আগে কেন চলে আসলো এটা ভেবে এখন মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে সৈকতের। অবশ্য কিছু করার ছিল না। ঢাকা শহরে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌছতে হলে হাতে বেশ সময় নিয়ে বের হতে হয়। এই শহরের যানজটকে বিশ্বাস করা যায় না। প্রয়োজনের সময় গাড়ি এগোতেই চায় না। আর যখন কোন তাড়াহুড়ো নেই তখন একেকটা গাড়ি যেন প্লেন হয়ে যায়।
বাইরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে সৈকত কাউন্টারে ফিরে আসলো। ধুলাবালিতে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে এই এসি রুমে বসে থাকা ভাল মনে হলো ওর কাছে। ফরহাদ এখনো এসে পৌছায় নি। গাড়ি ছাড়তে অবশ্য আরো এক ঘণ্টা দেরি আছে। অপেক্ষা করা ছাড়া সৈকতের আপাতত আর কিছুই করার নেই। অপেক্ষা করাটা সৈকতের কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর মনে হয়। কি অদ্ভুত ব্যাপার! ওর জানা আছে যে আরো এক ঘণ্টার আগে বাস ছাড়বে না, এমনকি আরো দেরিও হতে পারে। কিন্তু এই সময়টুকু ওকে চুপচাপ বসে থাকতে হবে, কিছুই করতে পারবে না। কেউ ওকে এরকম অপেক্ষায় রাখলে সৈকত খুব রেগে যায়। একবার ওর বন্ধুরা সব ঘুরতে যাবে বলে দশটার দিকে টিএসসিতে মিলিত হওয়ার কথা ছিল। সৈকত ঠিকই দশটায় এসে হাজির হয়। কিন্তু এসে দেখে তখনো কেউই আসে নি। এগারোটা পার হয়ে যায় তবুও কারো দেখা নাই। সৈকত তো রেগে বোম হয়ে আছে। সাড়ে এগারোটার দিকে একজন একজন করে আসতে শুরু করে। সবাই এসে যাওয়া মাত্রই সৈকত ফেটে পড়ে। কুৎসিত কিছু কথা শুনিয়ে সেদিন ও চলে আসে। এরপরের একটা মাস ও কারো সাথে কথা বলে নি।
কিন্তু আজকে ও কারো উপর রাগ ঝাড়তে পারছে না। আজকের এই অপেক্ষার জন্য ও নিজেই দোষী। মোবাইলটা বের একটা বইয়ে মনোযোগ দিল ও। একটু পরেই মোবাইলটা কেঁপে উঠলো। ফরহাদ কল দিয়েছে।
‘কি রে, তুই কখন আসবি?’
‘দোস্ত, একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছে। আমি আজকে যেতে পারবো না।’
‘মানে কি? বাস ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে বলেছিস যেতে পারবি না। ফাজলামি করিস? এত টাকা দিয়ে এসি বাসে টিকিট কাটলাম।’
‘দোস্ত, আমার দুলাভাই এক্সিডেন্ট করছে।’
সৈকত চুপ হয়ে গেল। কি বলবে বুঝতে পারছে না।
‘তুই কি তাহলে একদমই যাবি না?’
‘বুঝতে পারছি না।’ ফরহাদের গলাটা অনিশ্চিত শোনালো। ‘তুই চলে যা, আমি দেখি রাতের বাসে যেতে পারি কিনা। আর টিকেটটা ফেরত দিতে পারিস কিনা দেখ।’
‘আচ্ছা।’ সৈকত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ‘রাখি।’
মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে ও কাউন্টারের দিকে গেল।
‘একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছে।’ সৈকত কাউন্টারে বসে থাকা মধ্যবয়স্ক লোকটাকে বললো। ‘আমি এগারোটার বাসের দুইটা টিকেট কিনেছিলাম। কিন্তু আমার বন্ধু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ও যেতে পারবে না। টিকেটটা কি ফেরত দেয়া যাবে?’
‘ঝামেলায় ফেলে দিলেন।’ লোকটা মুখ চুলকাতে চুলকাতে বললো। ‘বাস ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে আমি এসি বাসের টিকেট কার কাছে বিক্রি করবো, বলেন দেখি? গতকাল ফোনে বলে দিলেও চেষ্টা করে দেখতাম। এসি বাসের টিকেট সবাই এক-দুই দিন আগে কিনে রাখে।’
‘একটু চেষ্টা করে দেখুন না অন্য কোন কাউন্টারে লাগবে কিনা।’
‘আচ্ছা, আমি দেখছি।’
এমন সময় সৈকতের পাশ থেকে একটা হন্তদন্ত কণ্ঠ বলে উঠলো, ‘এগারোটার এসি বাসের টিকেট পাওয়া যাবে? খুব আর্জেন্ট।’
*****
সাদিয়ার স্বভাবটাই যেন কেমন। ওর কাছের বন্ধুরাও ওকে বুঝতে পারে কিনা সন্দেহ আছে। বেশিরভাগ সময়ই মেয়েটা চুপচাপ থকে, কিন্তু একবার কথা বলা শুরু করলে আর থামে না। ওর কিছু কিছু ব্যবহার দেখলে কেউ বলবেই না যে ও এখন একটা ভার্সিটিতে পড়ে। একেবারেই শিশুসুলভ। মাঝে মাঝে ওর মনখোলা হাসি দেখলে সবাই ভাববে ওর মতো সুখী আর কেউই নাই। কিন্তু ওর গোমড়া মুখ দেখলেই বোঝা যায় ও নিজেকে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে। এই অদ্ভুত চরিত্রের মেয়েটা হুট-হাট একদিন ঢাকায় ওর খালার বাসায় চলে এলো। খালাতো বোনটাকে নাকি খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো ওর। কয়েকটা দিন ভালোই চলছিলো। কিন্তু এরপরই ঢাকায় ওর দম যেন বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।
‘খালা আমি কাল সকালেই চলে যাব। অনেক দিন আম্মুকে দেখি না।’
‘সে কি রে? এসেছিস মাত্র ক দিন হলো। এখনই চলে যাবি? আর কয়েকটা দিন থেকে যা।’
‘না খালা। আমি চলে যাব।’
সাদিয়ার বাসার প্রতি টান খুব বেশি। ওর আব্বু বুঝতে পেরেছিলেন মেয়ে মাকে ছাড়া বেশি দিন কোথাও থাকতে পারবে না। সেজন্য ওকে চট্টগ্রামেই রেখে দেন।
পরদিন ঘুম থেকে উঠেই সাদিয়া ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে পড়লো। ওর খালু ওর সাথে বাস কাউন্টার পর্যন্ত আসতে চাইলেন। কিন্তু সাদিয়া নিষেধ করে দিলো। ও একাই টিকেট কাটতে পারবে। কিন্তু কাউন্টারে কাউন্টারে ঘুরে ও সকালের এসি বাসের টিকেট পেল না। দুপুরের আগে ছাড়বে এমন কোন বাসেরই টিকেট নাই। আবার খালার বাসায় ফিরে যেতে হবে ভাবতেই ওর মেজাজ খারাপ হচ্ছিলো। তখনই যেন ভাগ্য ওর উপর মুখ তুলে তআআকালো। একটা কাউন্টারে এসে ও স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
‘একদম ঠিক সময়ে এসেছেন।’ টিকেট বিক্রেতা বললো। ‘এই মাত্র একজন যাত্রী একটা টিকেট ফিরিয়ে দিয়েছেন।’
সাদিয়া কাউন্টারের সামনে দাঁড়ানো যাত্রীটির দিকে তাকালো। একটা ছেলে, ওর সমবয়সীই মনে হলো সাদিয়ার। নীল জিনস আর কালো শার্ট পরা ছেলেটা দেখতে খুব সুন্দর। ছেলেদের এত সুন্দর হওয়া মানায় না। কিন্তু এই ছেলেটাকে কিভাবে যেন মানিয়ে গিয়েছে। জোর করে ও ছেলেটা থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। এরপর টিকেটটা কিনে নিয়ে একটা চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লো। এখন শুধু বাস আসার অপেক্ষা।
২.
সৈকত নিজের জন্য জানালার পাশের সিটটা রেখেছিলো। লম্বা জার্নিটায় পুরোটা সময় বসে থাকতে থাকতে একঘেয়ে লেগে উঠে। রাস্তার দুপাশের দৃশ্যগুলো দেখতে তখন খারাপ না। কিন্তু মেয়েটা যখন ওই সিটটাতে বসতে চাইলো, সৈকত না করলো না। ও আসলে না করতে পারলো না।
কাউন্টারে মেয়েটাকে যখন ও প্রথম দেখলো, তখনই ওর মাথাটা কেমন যেন ফাঁকা হয়ে যায়। মেয়েদের দেখে নাকি বয়স বোঝা যায় না, কিন্তু সৈকত নিশ্চিত মেয়েটা ওর বয়সী। হা করে মেয়েটার দিকে তখন ও তাকিয়ে ছিল। আর এখন সেটা মনে পড়তেই ওর নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করলো।
অবশ্য তাকিয়ে থাকাটা অমূলক ছিল না। এমন নয় যে মেয়েটা খুব সুন্দরী। বরং মেয়েটাকে ফর্সা বলা যাবে না, শ্যামলা। কিন্তু ওই চেহারাটাতে সৈকত যে মায়া দেখতে পেয়েছে তা এখনো ওর চোখে লেগে আছে। ওর টানাটানা চোখগুলো হয়তো হরিণীর চোখের মত মনকাড়া না, কিন্তু চোখদুটো লেকের পানির মতো টলটলে। সেই চোখে সৈকত তখনই ডুবে গিয়েছে। প্রকৃতি হয়তো এমনই। কাউকে কিছু একটা কম দিলে অন্য দিক দিয়ে সেটা পূরণ করে দেয়। মেয়েটা যখন ওর সামনে দিয়ে গিয়ে ওর পাশের সিটটাতে বসে, একটা কোমল সুঘ্রাণ ওর নাকে এসে লাগে। কোথায় জানি ও শুনেছিল, প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব গন্ধ থাকে। এই মেয়েটার গন্ধটা খুব মিষ্টি মনে হলো সৈকতের । গন্ধটা ওকে আচ্ছন্ন করে। মেয়েটাকে সৈকতের খুব চেনা মনে হতে থাকে।
‘ধন্যবাদ।’ পাশের সিট থেকে মেয়েটার কথা শুনে সৈকতের ঘোর কাটলো।
‘কেন?’ সৈকত জানতে চাইলো।
‘এই যে, আপনার জন্য টিকেট পেয়ে গেলাম। জানালার পাশের সিটটাও ছেড়ে দিলেন।’
‘ওহ, ব্যাপার না। আপনার ভাগ্য ভালো যে আমার বন্ধু যেতে পারছে না। ধন্যবাদটা ওর প্রাপ্য।’
‘আপনিই না হয় আমার হয়ে উনাকে ধন্যবাদটা দিয়ে দিবেন।’ হেসে হেসে বললো মেয়েটা। হাসার সময় মেয়েটার পাতলা ঠোঁট-দুটো আলতো করে দুই পাশে সরে গিয়ে দুগালে দুটো টোল তৈরি করলো। সৈকতের কাছে মনে হলো ও এরচেয়ে সুন্দরভাবে কাউকে হাসতে দেখে নি। এই হাসিকেই কি মুক্তোঝরা হাসি বলে?
‘আমি সাদিয়া।’
‘সৈকত।’
‘চট্টগ্রামে কি বেড়াতে যাচ্ছেন নাকি থাকেনই ওখানে?’
‘আমার বাসা চট্টগ্রামে। ঢাকায় ভার্সিটিতে পড়ি। কিন্তু এবার ঠিক বাসায় যাচ্ছি না।’
‘অদ্ভুত তো। কোথায় যাচ্ছেন তাহলে?’
‘কলেজের রি-ইউনিয়নে।’
‘ও আচ্ছা।’
‘আপনি?’
‘আমি চট্টগ্রামেই থাকি। ঢাকায় খালার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম।’
এমন সময় বাসের টিভিটা চালু হওয়ায় দুজনের মাঝে নীরবতা নেমে আসে।
সৈকত মনে মনে টিভিটাকে গালি দেয়। কি দরকার ছিল এটা চালানোর?
*****
হঠাৎ করেই ওর এমন অদ্ভুত অনুভূতি হওয়ার কারণ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না সাদিয়া। ছেলেটাকে ও চেনেই না। এমনকি বাসে উঠার পরও তেমন একটা কথা হয় নি। তবুও ওর কেন জানি খুব ইচ্ছে করছে সৈকতের সাথে কথা বলতে। কিন্তু সৈকত টিভি দেখছে ভেবে ও নিজের ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখলো। গায়ে পড়ে কথা বলতে গেলে ছেলেটা আবার কি মনে করবে কে জানে।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো ও। বাস যত দ্রুত গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক ততটাই দ্রুততার সাথে রাস্তার পাশের গাছগুলো পিছনে পড়ে যাচ্ছে। সাদিয়ার কাছে জীবনটাও একটা বাস জার্নির মত মনে হলো। যত সামনে এগিয়ে যাবে, ততই সুন্দর মূহুর্তগুলো অতীতে হারিয়ে যাবে। ঠিক যেমন আর কয়েক ঘণ্টা পরেই যাত্রা শেষে ওর আর সৈকতের পথ আলাদা হয়ে যাবে। আর কোন দিনই হয়তো দেখা হবে না। সময়ের সাথে সাথে এই তুচ্ছ ঘটনাটাও হারিয়ে যাবে। কিন্তু সাদিয়া জানে ওর মনে আজ যে আকুলতা জেগেছে তা ওকে অনেক দিন ভোগাবে। ওর কেন যেন ছেলেটার হাত ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব।
আড়চোখে ও সৈকতের দিকে তাকালো। চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে আছে।
ঘুমিয়ে গেল নাকি? সাদিয়া ভাবলো। বাসের এরকম ঝাঁকুনিতে মানুষ কিভাবে ঘুমাতে পারে ভেবে অবাক হয় সাদিয়া। আজ পর্যন্ত কোন বাস জার্নিতে ও ঘুমাতে পারে নি, যতই ক্লান্ত হোক না কেন।
আচ্ছা, ছেলেটা যদি এখন ঘুমাতে ঘুমাতে ওর কাঁধে ঢলে পড়ে তাহলে ও কি করবে? মাথাটা সরিয়ে দিবে নাকি ওর কাঁধেই ঘুমাতে দিবে?
মূহুর্তেই এরকম কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাবনার জন্য লজ্জায় কুঁকড়ে যায় সাদিয়া। হেড-ফোনটা কানে দিয়ে আশেপাশের সবকিছু ভুলে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকে ও।
৩.
আচমকা বাসটা থেমে যাওয়ায় সৈকতের ঘুম ভেঙে গেল। সাথে সাথে ওর মনে পড়ে গেল ও এখন বাসে আছে। পাশে ফিরতেই দেখে সাদিয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
‘বেশ লম্বা একটা ঘুম দিলেন। এবার আমাকে নামার জন্য জায়গা দিন।’
সৈকত হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ওর ব্যতিব্যস্ত-ভাবদেখে সাদিয়া হেসে দিল। এরপর ও বাসের দরজার দিকে এগিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর সৈকতও বাস থেকে নেমে গেল।
ফ্রেশ হয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকে সৈকত কোথাও সাদিয়াকে দেখতে পেল না। খাওয়া শেষ করে বাসে এসে দেখে সাদিয়া বসে আছে।
‘আপনি কিছু খেলেন না?’ সিটে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো সৈকত।
‘খাবার নিয়ে বাস চলে এসেছি। এত মানুষের ভিড়ে ওখানে বসে থাকতে ইচ্ছে করছিলো না।’
বাস চলতে শুরু করে তার আপন গতিতে, নির্দিষ্ট গন্তব্যে। আর সদ্য কৈশোর পেরোনো দুই অপরিচিত যুবক-যুবতী আড্ডায় মেতে উঠে।
*****
‘সম্মানিত যাত্রীবৃন্দ, অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বন্দর নগরী চট্টগ্রামে প্রবেশ করবো। যাত্রাপথে যে কোন.........’
উচ্চকণ্ঠের ঘোষণা শুনে সাদিয়ার হুশ হলো যে ও চট্টগ্রামে চলে এসেছে। সৈকতের সাথে কথা বলতে বলতে ও টেরই পায় নি কিভাবে তিনটা ঘণ্টা কেটে গেছে। হঠাৎ করেই ওর মনটা কেমন শূন্যতায় ভরে গেল।
একটু পরেই ওর আর সৈকতের পথ আলাদা হয়ে যাবে। ওর মনটা কেমন হাহাকার করে উঠলো। এটা অন্যরকম একটা অনুভূতি। এই অনুভূতির সাথে ও পরিচিত না।
‘আমি প্রথম স্টপেজেই নেমে যাব।’ সৈকত জানালো।
ওর দিকে তাকালো সাদিয়া। সৈকতের চোখগুলো কি বিষণ্ণ নাকি পুরোটাই ওর কল্পনা?
কিছুক্ষণ ইতস্তত করে সৈকত, যেন কিছু বলতে চায়। কিন্তু ওর মুখ দিয়ে কোন শব্দ ভেসে আসে না। এক অদ্ভুত নীরবতা নামে দুজনের মাঝে।
‘আমাকে কি তোমার মোবাইল নাম্বারটা দেয়া যাবে?’ হঠাৎ বলে উঠে সৈকত।
এই প্রথম ওকে তুমি করে বললো সৈকত, খেয়াল করলো সাদিয়া। কিন্তু ও এত কিছু ভাবতে চাইলো না। অন্যরকম এক আনন্দে ওর মনটা ভরে গেল।
‘তোমার নাম্বারটা বলো।’ সাদিয়া বলতে বলতে ওর মোবাইলটা বের করলো। কিন্তু পর-মুহূর্তেই ওর মুখটা কালো হয়ে গেল।
‘ চার্জ শেষ।’
সাদিয়া ওর মোবাইল নাম্বার দিতে সংকোচ বোধ করছে বুঝতে পারলো সৈকত।
এটাই যেন স্বাভাবিক মনে হলো সৈকতের। ও দ্রুত ওর ব্যাগ থেকে একটা খাতা বের করে এক টুকরো কাগজ ছিঁড়ে নিলো। এরপর নিজের নাম্বারটা লিখে কাগজটা সাদিয়ার হাতে ধরিয়ে দিল। বাস এরই মধ্যে থেমে গেছে।
‘আমি কলের জন্য অপেক্ষা করবো।’ বলেই ও বাস থেকে নেমে যায়। একবারের জন্যও ও পিছে তাকায় না। তাকালে হয়তো দেখতে পেত দুটো ডাগর ডাগর চোখ ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
৪.
‘আপা, ভাংতি দেন।’ রিকশাওয়ালা বলে।
‘ভাংতি আছে কিনা কে জানে।’
সাদিয়া ওর পুরো ব্যাগের মধ্যে ভাংতি টাকা খুঁজতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে ও রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটালো। বাসায় আসার আনন্দে ও দিশেহারা। কোনমতে ব্যাগের চেইনটা লাগিয়ে ও দ্রুত পায়ে বাসার গেইটের দিকে হাঁটতে শুরু করে।
সাদিয়া যদি একটু পিছনে তাকাতো, তাহলে ও দেখতে পেত একটু আগে ও যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে এক টুকরো কাগজ পড়ে আছে। মৃদু বাতাসে কাগজটা উড়ে যায়। সে বাতাসে সাদিয়ার শরীরটা কেমন শিরশির করে উঠে।
*****
প্রতিদিন বিকেলে ছাদের প্রান্তে দুইপা ঝুলিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায় সৈকত। হাতে শক্ত করে মোবাইলটা চেপে রাখে ও। এখনো ও আশা করে আছে সাদিয়া কোন একদিন হয়তো ওকে কল দিবে।
হয়তো দিবে না। একটা অচেনা ছেলেকে ফোন করাটা হয়তো ওর কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়হয় নি। কিন্তু সৈকতের অপেক্ষা শেষ হয় না। যদিও অপেক্ষা করতে ওর খুব বিরক্ত লাগে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০

কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমৎকার গল্প । আহারে কাগজটা হারিয়ে গেলো । সাথে সাদিয়াও, ছেলেটাও ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.