নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাঈদ শিহাব

সাঈদ শিহাব › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন শখের গোয়েন্দা

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৯

'বের হচ্ছি আমি,' দরজা থেকে বলল ফারিয়া।
কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে মুখ তুলল সাকিব। 'এখন আবার কোথায় যাচ্ছ? তাও আবার এত সেজেগুঁজে?'
'তুমি যে কী!' গলায় পেঁচানো ওড়নাটা ঠিক করে নিতে নিতে বলল ফারিয়া। 'এরি মধ্যে ভুলে গেছ? গতকাল না বললাম, আমার এক বান্ধবীর বাসায় যাব আজ।'
'ও, হ্যাঁ, মনে পড়েছে,' আবার স্ক্রিনে মনযোগ দিল সাকিব। 'ঠিক আছে, ঘুরে এসো।'
'তুমি কী করছ? গেমস খেলছ নাকি?'
'আরে না, একটু রিসার্চ করছিলাম।'
'গোয়েন্দাগিরির ভূতটা এখনও নামেনি দেখছি।'
'গোয়েন্দার মাথা থেকে গোয়েন্দাগিরি নামবে কী করে?'
'তুমি? গোয়েন্দা?'
'অবশ্যই।' দেয়ালে ঝুলানো সার্টিফিকেটের দিকে ইঙ্গিত করল সাকিব।
‘বিশ্বাস হয় না। জাল মনে হয়।'
'মোটেই না। এটা আসল সার্টিফিকেট।'
'বললেই হলো? অনলাইনের কী সব ছাইপাঁশ স্কুল একটা সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিলেই গোয়েন্দা হয়ে যাওয়া যায় নাকি? সরকার থেকে অনুমতি লাগে না? আর তাছাড়া তোমাকে ভাড়া করবেই বা কে?'
'সরকার থেকেও লাইসেন্স নিয়ে নেব।'
'যাই করো না কেনা, চাকুরীটা ছেড়ো না।' সুন্দরী স্ত্রীর দিকে আবার তাকাল সাকিব। 'আর আমার জন্য বসে থেকো না। আজ নাও ফিরতে পারি।'
'বাই বাই।'
ফারিয়ার কথাই হয়তো ঠিক। সরকার থেকে নাহয় অনুমোদন নিলো। তা সত্ত্বেও কেউ কি ভাড়া করবে ওকে? এখন যে চাকুরীটা করছে, তা মন্দ নয়। টাকার পরিমাণটাও কম না। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। সাকিব রহস্য প্রিয়। আর ঘন্টার পর ঘন্টা ডেস্কে বসে থাকার মধ্যে কোনো রোমাঞ্চ নেই।
দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেল ও। একজন মহিলা এসে দাঁড়াল ওর অফিসের দরজায়। দেখতে বেশ আকর্ষণীয়, পরনে নীলচে শাড়ি। 'আপনিই কি গোয়েন্দা? নাকি ভুল ঠিকানায় চলে এলাম?' বলল পার্স থেকে একটা পত্রিকা বের করতে করতে বলল।
চমৎকৃত হলো সাকিব। অবশেষে কপাল খুলেছে তাহলে! কাজে দিয়েছে কাগজে দেয়া বিজ্ঞাপন। 'আপনি ঠিক জায়গাতেই এসেছেন।' চেয়ার থেকে প্রায় লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল ও। 'আমিই গোয়েন্দা সাকিব রহমান। বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি?'
'যাক। আমি রিমি। রিমি খান।'
'প্লিজ, বসুন মিস খান।' বসে পড়ল দুজনেই।
'আমি মিস নই, মিসেস। তবে আপনি আমাকে রিমি বলেই ডাকতে পারেন।' একটু দ্বিধা খেলে গেল রিমির চেহারায়। 'ড্রাইভওয়েতে একটা পিকআপ দেখলাম। আপনার?'
'জী, আমারই।'
'তারমানে আপনি একজন শিকারী।'
'পিক-আপ চালালেই কি কেউ শিকারী হয়ে যায়?'
'আপনার ট্রাকে একটা বন্দুক দেখেছি।'
'ও।'
'আমার ধারণা, রাইফেলে আপনার নিশানা ভালো।'
'সেটা ওই প্রাণিটাই ভালো বলতে পারবে।' দেয়াকে ঝুলানো হরিণের মাথাটার দিকে ইঙ্গিত করল সাকিব।
'চলবে। জানতে চেয়েছি, কেননা আপনাকে আমি যে কাজটা দেব, তা খুব বিপজ্জনক। আমি চাই, আপনি আমার স্বামীর পিছু নিন। ওর নাম সারাফ।'
'আপনার ধারণা, তিনি আপনার সাথে প্রতারণা করছেন?'
'হ্যাঁ।'
'বুঝলাম। তো আপনি চান যে আমি যেন তাকে হাতেনাতে ধরি আর ছবি তুলে রাখি।'
'আমার স্বামী বেশ ধনী, মি.রহমান। আমি চাই, তার সম্পত্তির অর্ধেকটা যেন আমার হাতে আসে।'
'ঠিক আছে, মিসেস খান-মানে রিমি।'
পার্স থেকে একটা খাম আর একটা ছবি বের করে আনল রিমি। দুটোই এগিয়ে দিল সাকিবের দিকে। 'তো আপনি কি কেসটা নেবেন?'
সাকিব ছবিটা দেখল কিছুক্ষণ। তারপর খামটা খুলল। বেরিয়ে এল পঞ্চাশ হাজার টাকার একটা চেক। আরেকটু হলেই চেয়ার থেকে পড়ে যেত ও।
'কেসটা আপনি কি নেবেন?'
'নেব না মানে?' প্রায়ই চিৎকার করে বসেছিল সাকিব। শেষ মূহুর্তে কথাটা ওর গলার কাছে এসে থেমে গেল। এভাবে বলাটা ঠিক পেশাদারিত্বের সাথে যায় না। 'জী, নেব। কখন থেকে শুরু করব?'
'আজ রাতেই। আপনার বন্দুকটা সাথে নিতে ভুলবেন না যেন। আপনাকে স্পাইগিরি করতে দেখলে সারাফ কী করে বসবে বলা যায় না।' পুরো বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে লাগল রিমি। আড়িপেতে তার স্বামীকে এক মহিলার সাথে কথা বলতে শুনেছে। আজ সন্ধ্যায় একটা বিখ্যাত রেস্টুরেন্টে তাদের দেখা করার কথা। রিমির সাথে প্রেমের দিনগুলোতে রিমিকেও সেই রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিল তার স্বামী সারাফ। একারণে পরবর্তীতে কী ঘটবে রিমির ভালো করেই জানা আছে। রেস্টুরেন্টে জম্পেশ একটা ডিনার, রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়া, কাছের উদ্যানে বসে একটা চুমু, তারপর একটা হোটেলের রুমে রাত কাটানো। সাকিবকে জানিয়ে দিল ছবি তোলার অনেক সুযোগ পাবে ও।
***
উদ্যানের বাইরে ফুটপাতে গাড়িটা পার্ক করল সাকিব। ক্যামেরা আর টর্চটা হাতে তুলে নিল। রাইফেলটাও সাথে নিয়ে এসেছে। কিন্তু সেটা নিয়ে উদ্যানে ঢুকবে কিনা বুঝতে পারছে না। কেউ দেখে ফেললে ঝামেলা হতে পারে। শেষমেশ না নেয়ারই সিদ্ধান্ত নিলো। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলল কাঙ্ক্ষিত স্থানে। অনেকক্ষণ ধরে উদ্যানের একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে সাকিব। আশেপাশে কোনো আলোর উৎস না থাকায় জায়গাটা অন্ধকারে ঢেকে আছে। কিছু দূরেই একটা বেঞ্চ। তার পাশেই একটা ছোট কৃত্রিম লেক। সেখানেই এসে বসার কথা সারাফ আর তার প্রেমিকার। কিন্তু এতক্ষণ হয়ে গেল, অথচ কারও দেখা নেই। ফাজলামো নাকি? রিমি কি মজা করেছে ওর সাথে? কিন্তু তাও বা কী করে হয়? পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক দিয়ে গেল যে! আচ্ছা, চেকটা কি আসল? আগামীকাল সকালে ব্যাঙ্কে না যাওয়া পর্যন্ত বোঝা সম্ভব নয়। বিরক্ত হয়ে গেল সাকিব। নিভিয়ে দিল হাতে ধরে রাখা টর্চটা। সিদ্ধান্ত নিলো ফিরে যাওয়ার। উল্টো ঘুরে চলে যাবে, এমন সময় একটা কন্ঠ শুনতে পেল যেন। দ্রুত লুকিয়ে পড়ল গাছের আড়ালে। তারপর উঁকি দিল। দুটো অবয়ব এগিয়ে আসছে ওর উল্টো দিক থেকে। অন্ধকারে মানুষ দুজনের চেহারা দেখা যাচ্ছে না। টর্চটাও জ্বালানো সম্ভব নয়। লেকের পাড়ে ঘাসের উপর এসে বসে পড়ল তারা।
গাছের আড়ালে আঁধারে দাঁড়িয়ে সব দেখতে লাগল সাকিব। ছবি তুলতে হবে ওকে। কিন্তু অন্ধকারে ভালো ছবি উঠবে না। এজন্য ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু হঠাৎ ফ্ল্যাশ জ্বলে উঠতে দেখে সারাফ যদি সাকিবের দিকে দৌড়ে আসে? সাকিব খুব ভালো দৌড়াতে পারে না আবার। ওর কল্পনায় ধরা পড়ার পরবর্তী মূহুর্তগুলো ভেসে উঠল। সারাফ ওর মুখে ঘুষি মারছে, রক্ত গড়িয়ে পড়ছে মুখ বেয়ে, ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে ক্যামেরা। কিন্তু অন্য কোনো উপায়ও তো নেই।
সাহস রাখো ভিতুর ডিম, মনে মনে নিজেকে বলল সাকিব। এমনটাই তো তুমি চেয়েছিলে, তাই না? বিপদের মুখোমুখি হতে? তবে এখন কেন পালাতে চাইছ?
সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলল সাকিব। বেশি কিছু তো নয়, মাত্র একটা ছবি। তারপর দেবে খিঁচে দৌড়। যদিও সারাফ আর তার প্রেমিকার চেহারা দেখতে পাচ্ছে না, কিন্তু তাতে সমস্যা নেই। তাদের অবস্থান অনুমান করে ক্যামেরা তুলল সাকিব। টিপে দিল বাটন। মূহুর্তের জন্য আলোকিত হয়ে উঠল চারপাশ। তারপর আবারও আঁধার। প্রেমে মত্ত যুগল চমকে উঠে সাকিবের দিকে ফিরল।
'কে ওখানে?' চিৎকার করে উঠল সারাফ।
দৌড় দেয়ার প্রস্তুতি নিতে গিয়েও থেমে গেল সাকিব। ক্যামেরার ফ্ল্যাশের আলোতে দেখে ফেলেছে অবয়ব দুটোর চেহারা। 'ফারিয়া?' কয়েক সেকেন্ডের নিস্তব্ধতা।
'সাকিব? তুমি এখানে কী করছ?'
আড়াল থেকে বেরিয়ে এল সাকিব। ও এখন আর ভীত নয়। 'এই তোমার বান্ধবীর বাসার দাওয়াত?'
'মুখ সামলে কথা বলো।'
'আমি মুখ সামলাবো? তুমি তো নিজেকেই সামলাতে পারোনি।'
আচমকা একটা গর্জন শোনা গেল। মাটিতে লুটিয়ে পড়ল সাকিব। গুলির শব্দ চিনতে ভুল করেনি ও। সেই সাথে কানে এল পানিতে ভারী কিছু পড়ার শব্দ। ফারিয়ার ভয়ার্ত কন্ঠস্বর শুনিতে পেল ও। 'সারাফ!'
আবারও গুলির শব্দ। আছড়ে পড়ল ফারিয়াও। মাটিতে পড়েই রইল সাকিব। উঠার সাহস পাচ্ছে না। কাঁপছে ঠক ঠক করে। ছুটন্ত পায়ের শব্দ কানে এল ওর। তারপর মিলিয়ে গেল দূরে। সাকিব উঠে দাঁড়াল অনেকক্ষণ পর।
'ফারিয়া?' উত্তর দিল না কেউ। পকেটের থেকে বের করে টর্চ জ্বালালো সাকিব। আলো ফেলল জলাশয়ের পানিতে। সে আলোয় যা দেখল, তাতে শিউরে উঠল। মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ফারিয়া আর সারাফ। দুজনের একজনেরও ঘাড়ে মাথা বলে কিছু নেই। হলদে রঙের কিছু থকথকে বস্তু ভেসে আছে পানিতে। লাল হয়ে উঠছে জলাশয়ের পানি। খুনি আশেপাশের কোনো ঝোপেই লুকিয়ে ছিল। পেশাদার স্নাইপার না হলে এভাবে গুলি করা সম্ভব নয়।
কিন্তু কে করল এই কাজ? আর কেন? রিমি খান? নাকি তার ভাড়াটে খুনি? প্রথম কেসেই এক উন্মাদ ক্লয়েন্টের পাল্লায় পড়েছে সাকিব। ফারিয়াকে হারিয়ে ভিজে উঠল সাকিবের চোখের কোণটা। ওকে ছেড়ে হয়তো চলে যেতো ফারিয়া। ওদের দাম্পত্যজীবনে হয়তো ছেদ টানতে হতো। কিন্তু এভাবে কখনোই ওকে হারাতে চায়নি সাকিব। কিন্তু ওকে কেন ভাড়া করল রিমি খান? কেন ওকে জড়াল? রাস্তায় পার্ক করা নিজের গাড়িতে ফিরে এল সাকিব। পুলিশকে ফোন করা দরকার। কিন্তু তার আগেই সাইরেন শুনতে পেল। দুটো জিপ এসে থামল ওর সামনে। তিনজন পুলিশ সদস্যকে এগিয়ে আসতে দেখল সাকিব। স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলল। যাক, ঝামেলা কমলো। একটা টর্চ জ্বলে উঠল। চোখের উপর আলো পড়লে মূহুর্তের জন্য অন্ধ হয়ে গেল সাকিব।
'এখান থেকে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে বলে রিপোর্ট আছে পুলিশের কাছে।' সাকিব কিছু বলার আগেই আরেকজন পুলিশ সদস্য ওর গাড়ির ভেতর আলো ফেলল। 'এই রাইফেলটা কি আপনার, স্যার?'
'অ্যাঁ... হ্যাঁ।'
'এটা দিয়ে কি একটু আগে গুলি করেছেন?'
'না।' নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে এটা সাথে করে এনেছে সাকিব। রিমি বলেছিল, তার স্বামী বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে।
পুলিশ সদস্যটি গাড়ির দরজা খুলে রাইফেলটা হাতে নিলো। 'এখনও গরম হয়ে আছে।'
'আপনি কিসের উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়েছেন, স্যার?'
'আমি কোনো গুলিই করিনি।' সাকিবকে ভালো করে পরখ করতে লাগল একজন। আরেকজন ওর হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিল। ওর প্রতারক স্ত্রী আর তার প্রেমিক খুন হয়েছে, ওরই রাইফেল দিয়ে। আশেপাশে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। গুলিগুলো যেই করে থাকুক না কেন, নিশ্চিতভাবেই হাতে গ্লোভস পরে ছিল। এমনকি, রিমি খানের সাথে দেখা হওয়ারও কোনও প্রমাণ নেই সাকিবের কাছে।
সাকিব রহিমান। একজন শখের গোয়েন্দা। গৎবাঁধা চাকুরীতে সন্তুষ্ট থাকতে না পেরে এক রাতের ভেতরেই একজন শখের গোয়েন্দা থেকে পরিণত হলো... এক ভাড়াটে খুনিতে।
(বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৫৩

কালীদাস বলেছেন: লেখাটা অসম্পূর্ণ মনে হল। সাসপেন্সটা যখন কেবলমাত্র খালি জমে উঠেছিল, তখন ছোটগল্পের মত থামিয়ে দিলেন কেন? X(

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:৪২

সাঈদ শিহাব বলেছেন: আমি বিদেশি একটা কাহিনি অনুকরণ করেছি মাত্র।

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩২

বর্ষন হোমস বলেছেন:
সাকিবের গোয়েন্দা হওয়ার কোন যোগ্যতাই আসলে নেই।তার স্বভাবের সাথে কোন গোয়েন্দার স্বভাবের মিল খুজে পাওয়া যায়না।তারপর রাইফেল জিনিস টা একটু বেশি হয়ে গেছে।একজন গোয়েন্দা হিসেবে একটা সর্টগান বা হ্যান্ডগান থাকা উচিৎ।রাইফেল নিয়ে কোথাও ঘুরাঘুড়ি সম্ভব নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.