নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাঈদ শিহাব

সাঈদ শিহাব › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ হাজার চুরাশির মা

০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:৪২

হাজার চুরাশির মা
মহাশ্বেতা দেবী

কিছু কিছু বই পড়ার থমকে যেতে হয়। এক অদ্ভুত ভাল লাগায় আচ্ছন্ন হয় মন। চাইলেও তা পরিপূর্ণ ভাবে প্রকাশ করা যায় না, অনুভব করা যায় শুধু। মহাশ্বেতা দেবীর হাজার চুরাশির মা তেমনই একটা বই।
সময়কালটা ১৯৬৭ সালের ২৫শে মে। ভূস্বামীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাদের উৎখাত করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি ছোটগ্রাম নকশালবাড়ির কৃষকেরা। সূচনাটা ঘটে তখনই, পরবর্তীতে যা রুপ নেয় এক সাম্যবাদী আন্দোলনে-নকশাল আন্দোলন। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে মধ্যপ্রদেশ আর অন্ধ্রপ্রদেশে। টনক নড়ে ভারত সরকারের। কঠোর হস্তে আন্দোলন দমনের ঘোষণা দেয়া হয়। পুলিশকে দেয়া হয় মানবতা বিরোধী ক্ষমতা-নির্বিচারে হত্যা এবং বন্দি করার। লক-আপ হত্যা, জেলবন্দি হত্যা আর ভুয়ো সংঘর্ষ দ্বারা পুলিশ বিভিন্ন সময়ে নকশালপন্থিদের হত্যা করেছিল। একমাসের মাঝেই স্তিমিত হয় এই আন্দোলনের শিখা।
কলকাতার ছাত্র সংগঠনগুলো এবং শিক্ষিত সমাজের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল এই আন্দোলন। ছাত্র-ছাত্রীদের একটা বড়ো অংশ পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে নেমে গিয়েছিল এই বিপ্লবে। ষাটের দশকে পুরো পৃথিবীতেই একটা অস্থির সময়কাল চলছিল। নিয়মভাঙ্গার জয়গানে মুখর ছিল ছাত্রসমাজ। তার ছোঁয়া লেগেছিল ভারতবর্ষেও। ব্রতী ছিল তাদেরই একজন যাকে হত্যা করা হয় তার আদর্শের জন্য। ব্রতী শ্রেণিশত্রুদের বিরুদ্ধে গিয়েছিল, যার ফলে তার ঠাঁই হয় লাশকাটা ঘরে, লাশের নম্বর ছিল ১০৮৪।
হাজার চুরাশির মা বইয়ে মহাশ্বেতা দেবী আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন ব্রতীর জননী সুজানার এমন একদিনের সাথে, যেদিনটা তার ছেলের মৃত্যুবার্ষিকী। ছেলেকে নিয়ে সুজাতার স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে ব্রতীর সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে। সেই সাথে এক কলুষিত সমাজেরও, যেখানে নির্বিবাদে তরুণদের হত্যার কোনও প্রতিবাদ হয় না। বরং মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয় সেসব তরুণদের স্মৃতি, যেন তাদের অস্তিত্বই ছিল না কখনও।
কিন্তু মা কিভাবে ভুলবেন তার নাড়ী ছেড়া ধনকে? সুজাতাও পারেন না। তাই তো দু বছর পেরোলেও জল জমেনি তার চোখে। বরঞ্চ চেষ্টা করেছেন তার মৃত ছেলেকে বুঝতে, তার বিপ্লবী মানসিকতার স্বরুপ উদ্ঘাটন করতে। অবাক হয়ে সুজাতা আবিষ্কার করেন, সারা জীবনেও তিনি যা পারেননি, ব্রতী তাই করে গেছে। পারেননি তিনি স্বামীর লাম্পট্যের প্রতিবাদ করতে, কিংবা নিজের মেয়ের নষ্টামির বিরুদ্ধে কথা বলতে। সবসময় কর্তব্য পালন করে গেছেন সবকিছু সহ্য করে। অথচ ব্রতী? শেকলভাঙার গান গেয়েছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলেছে, প্রাণ দিয়েছে বীরের মতো।
অথচ সেই ব্রতীই কিনা চরম উপেক্ষিত। তার মৃত্যুর পর তার বাবা আর ভাইয়ের একমাত্র চিন্তা থাকে সমাজে মুখ দেখাবেন কী করে। চেষ্টা থাকে শুধু পত্রিকায় যেন ব্রতীর নাম না আসে। বাড়ি থেকে সরিয়ে ফেলা হয় তার চিহ্ন, যেন অমন কেউই ছিল না এই বাড়িতে। এমনকি তার মৃত্যুবার্ষিকীতে কেউ তাকে স্মরণ করে না, শোক প্রকাশ করে না। বরং ছোট মেয়ের এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে সুরা হাতে।

বামপন্থী লেখক মহাশ্বেতা দেবীর লেখনী অনবদ্য, ভাষা শক্তিশালী। এক ধরণের কাব্যিক ভাব রয়েছে তার লেখায়। কয়েকটা উদাহরণ দিলেই তা স্পষ্ট হবেঃ
এরা এখন সকলের মতী হতে চায়, শুধু নিজের মত হতে চায় না। এর নামই ফ্যাশন।
এরা সবাই বিবেচক, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলে, সৎ নাগরিক। এরা সুজাতাকে তেমন কোন অবস্থায় ফেলবে না, জ্যোতির বাবাকে বাধ্য করবে না ছুটোছুটি করতে। সত্যি বলতে কি, তার ছেলে এমন কলঙ্কিতভাবে মরেছে, এই খবরটা ঢাকবার জন্য জ্যোতির বাবা দড়ি টানাটানি করে বেড়াচ্ছিলেন।
সময় চলে যায় নির্মম, ঘাতক, নিয়তিসমান সময়। সময় জাহ্নবী, শোক বেলাভূমি। সময়ের স্রোতে শোকের উপর পলিমাটি চাপা পড়ে। তারপরর একদিন সেই পলিমাটি ফুড়ে নতুন নতুন অঙ্কুরের আঙুল বেরোয়। আঙুলগুলো আকাশপানে আবার উঠতে চায়। আশার, বেদনার, সুখের, আনন্দের অঙ্কুরের আঙুল।
হাজার চুরাশির মা বাংলা সাহিত্যে এক অসামান্য কীর্তি। বাংলার যুবসমাজের অশান্ত রাজনৈতিক অ্যাডভেঞ্চারের মানবিক চিত্র এই উপন্যাস, যে চিত্রে চিত্রিত হয়েছিল রুমি, আজাদেরা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ সুন্দর রিভিউ'র জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.