নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উল্টো পথিক

সয়ূজ

আমি কী তাই যা আমি হতে চেয়েছি? আমি কী তাই যা আমি হতে পেরেছি?

সয়ূজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গরীবের খেলনা

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩৪

বাবার এক বন্ধু আছেন। বাড়াবাড়ি রকমের ধনী টাইপ। ছোটবেলায় মা’র সাথে তাদের বাসায় বেড়াতে গেলেই অদ্ভুত বিষণ্নতা নিয়ে ফিরতাম।

ধন-সম্পদ প্রদর্শনের ব্যাপারে বেশিরভাগ ধনীরই আগ্রহ প্রবল। আর তা করার জন্য প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু মজার পদ্ধতি রয়েছে।

বেড়াতে যাবার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আমারই সমবয়সী বাবার বন্ধুকন্যা তার বাহারি খেলনার ঝুড়ি ‍নিয়ে হাজির। আর সেগুলো নিয়ে খেলার নিয়মটাও বড়ই অদ্ভুত।

কোনটাই ‘ধরা যাবেনা কিংবা ছোঁয়া যাবেনা’। পুতুলের মত মেয়েটি খেলনাগুলোর বিশেষত্ব বর্ণনা শেষে সেগুলো নিয়ে খেলবে আর আমাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে হবে। খেলা শেষ হলে সে বলবে, মজা না?

আমি কোন মজাই পেতাম না। তবুও খেলার এ অংশে মুখে হাসির ভান করে হাততালি দিতে হোত যেন এই মজা পাবার জন্যই আমি তাদের বাসায় এসেছি। হাততালি শেষ হবার আগেই প্রতিবার তার মা এসে হাজির হোত।

-আল্লাহ, কি করছো সোনা? সব খেলনা বের করেছো কেন? যাও সব গুছিয়ে রাখো।

বাধ্য মেয়ের মত বাবার বন্ধুকন্যা খেলনা গোছাতে চলে যেত আর আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যেতাম।

একবার তার খেলনার বহরে যুক্ত হলো রিমোটকন্ট্রোল হেলিকপ্টার। প্রায় আধহাত বড় হেলিকপ্টার রিমোটকন্ট্রোলের নির্দেশে উড়ে যেত ঘরের ছাদ পর্যন্ত। এই যন্ত্রটি আমার মনে ভয়ানক প্রভাব ফেলে। স্বপ্নেও আমি লোভ করতাম এরকমের একটি খেলনার মালিক হবার। মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারতামনা শুধু।

ইচ্ছাপূরণের সুযোগ যখন এলো তখন আমার বয়স পেরিয়ে গেছে। ছোট ভাইটারও কথা মাথায় এলো। ক্লাশ নাইনের ছেলের বয়সও বোধহয় হেলিকপ্টার উড়ানোর অনুকূলে নয়।
আর এই ছেলে এক আজব প্রাণী। কখনও মুখ ফুটে সে কিছুই চাইবেনা। ওর আড়াই কি তিন বছর বয়স তখন। ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।

-দাদা, রোবট নিয়ে খেলতে কি অনেক মজা?

-কেন?

-রোবটের কি অনেক দাম?

-তোর খেলতে ইচ্ছা করে?

ও উত্তর দেয়না। আমি বলি- আমাদের যখন অনেক টাকা হবে তোকে রোবট কিনে দেব, ঠিক আছে?

হাসি দিয়ে ও পাশ ফিরে শোয়।

খেলনা রোবটের দাম তখন প্রায় দু’হাজার। আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য অনেক টাকা।

এর মাস তিনেক বাদে বাবা ওর জন্য একটা রোবট কিনে আনে। রোবট হাতেও ওর মাঝে কোন উচ্ছ্বাস নেই। ছলছল চোখে ও আমার কাছে এসে বলে- দাদা, আমরা এখন গরীব হয়ে যাবো না?

অবাক হয়ে বলি- কেন?

– বাবা যে এত টাকা দিয়ে রোবট কিনে আনলো। আমি খেলবোনা দাদা, এটা আমরা ফেরত দিয়ে দেই।

আমিও কেঁদে ফেলি। অনেক বোঝানোর পর সে রোবট নিয়ে খেলতে রাজি হয়।

পরদিন দেখি আশেপাশের বাড়ির সব বাচ্চাদের সাথে সে রোবট নিয়ে খেলছে। রোবট প্রদর্শনীর খেলা নয়। সবগুলো পিচ্চির ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখার খেলা। আমাদের গরীবদের হয়তো ধনীদের মত অত হারানোর ভয় নেই।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪৬

কালের সময় বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপন । ভালো লাগল ।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৪

সয়ূজ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:১০

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: আমাদের গরীবদের হয়তো ধনীদের মত অত হারানোর ভয় নেই। :(

ভাল বলেছেন।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৫

সয়ূজ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:২৩

শাহাদাত হোসেন বলেছেন: খুব ভালো লাগলো।গরীবের সবকিছুতে থাকে মনের আনন্দ আর ধনীরা সব করে লোক দেখানোর জন্য ।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৫

সয়ূজ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৮

টয়ময় বলেছেন: খেলনা বিষয়ে জানতে এবং সাহায্যের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.