নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উল্টো পথিক

সয়ূজ

আমি কী তাই যা আমি হতে চেয়েছি? আমি কী তাই যা আমি হতে পেরেছি?

সয়ূজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃষ্টি দিনের গল্প

১৪ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:৩১

গত ক’দিন ধরেই আমার স্বপ্নে মৃত মানুষদের ভিড়। নানুভাই আর বড়খালা ডাকছেন প্রাতঃভ্রমণ এর জন্য। আড়মোড়া ভেঙ্গে আলসে ভঙ্গিতে জুতো পায়ে গলাতেই তাদের আবছা মুখগুলো হারিয়ে যায়। ঘুম ভাঙ্গা শরীরটা বেশ কিছুক্ষণ মশগুল হয়ে থাকে প্রিয় মুখগুলোর স্মৃতির খোঁজে।
নানুভাই বেড়াতে এলেই আমরা সকালে হাঁটতে বেরুতাম আমার কাঞ্চন(পূণর্ভবা) নদীর ধারে। নিয়মকরে প্রতি ভোরে নামাজের পর নানুর সঙ্গী টু ব্যান্ডের রেডিও। বিবিসি, রেডিও তেহরান হয়ে কখনও সখনও বাংলাদেশ বেতার। মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে চোখে লেগে থাকা ঘুম তাড়িয়ে বলতেন -উঠে পড়ো ভাইজান, সকাল হয়েছে।
এই মানুষটির মৃত্যু সংবাদ আমায় কাঁদায়নি। বরং অন্যের কান্নায় ভেঙ্গে পড়া মুখগুলো দেখতে হবে বলে আমি গুমড়ে পড়ে থাকি ঢাকায়।
নানুর মৃত্যুর কয়েকমাস বাদে বড় খালার বেলায় আর পালাতে পারিনি। মৃতবাড়ির গুমোট বাতাসে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। লাশের কাছে যাবার ভান করে পায়ে পায়ে একসময় পালিয়ে আসি সবার অলক্ষ্যে।
শুক্রবার এলেই খালার ফোন-‘আজ দুপুরে এখানে খাবি, চলে আয়।’ আমি অম্লানবদনে মিথ্যে বলে স্বভাবসুলভ ভাবে এড়িয়ে যেতাম। আর কোনদিন খালার ফোন আসবেনা ভেবে সেদিনও আমার কান্না পায়নি।
আমার চোখে সেদিনও পানি আসেনি যখন পত্রিকার পাতায় ৯ জন শান্তিরক্ষীর ছবি দেখে বাবা আঁতকে উঠেছিলেন। মা’র শরীরের কাঁপুনি দেখে বুঝলাম ভয়ঙ্কর কিছুর আভাস। কঙ্গোতে নিহত সেই ৯ জনের একজন ছিলেন আমার মামা। প্রেষণে দিনাজপুর বিডিআর এ পোস্টেড ছিলেন দুবছর। বছর ঘুরতেই মিশনের ডাক। যাবার আগে বলে গেলেন ফিরলেই বিয়ে করবেন।
ক্যাপ্টেন সাহেবের বিশাল শরীরটা নাকি গুলিতে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আমার চোখে পানির বদলে তার ঘর কাঁপানো হাসির দমক।
বড় ফুপি প্রায়ই আমাকে দেখতে চাইতেন। এবছর বাবা-মা জোর করে নিয়ে গেলেন আমায়। কঙ্কালসার বুড়ো মহিলার স্মৃতিবিভ্রম নৈমত্তিক হলেও আমার নাম বলে যে জয়ীর হাসি দিলেন তার রেশ লেগে আছে আমার চোখে। চোখের জল সেটা ছুঁয়ে দিতে পারেনি।
বুকের কাছের মৃত মানুষ বলতে এঁরাই। প্রতিদিন গোটাকয়েক মৃতের সংবাদে চোখ বুলিয়ে আমাকে তার ক্রম তালিকা করতে হয়। গুরূত্ব বিচারে কোনটি পাঠকের দৃষ্টির সীমায় আর কোনটি চোখের কোণায়। গাড়ি চাপা কিংবা গলা কেটে খুন, আত্মহত্যা কিংবা সাধারণ মৃত্যু সব খবরেই আমি নির্বিকার।
শুধু বৃষ্টি এলেই সব ওলট-পালট হয়ে যায়। কান্নাটা কেন জানি আর চেপে রাখা যায়না। বৃষ্টির পানি আর চোখের জল দুটোই তখন মিশে একাকার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.