নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Tareq Imtiaz

Tareq Imtiaz › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুরা দুখানে বর্ণিত আয়াতের অপব্যাখ্যাই লাইলাতুল বরাত পালন নিয়ে বিভ্রান্তির অন্যতম মূল কারণ।

০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৮

লাইলাতুল বরাত নিয়ে বিভ্রান্তির একটা অন্যতম বড় কারণ হলো যে লাইলাতুল বরাত সম্পর্কে আল্লাহ্‌ পবিত্র কোরআনে যে আয়াত নাজিল করেছেন তার অর্থ বুঝতে না পারা। লাইলতুল বরাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্‌ বলেন, “আমিতো ইহা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে। আমিতো সতর্ককারী। এই রজনীতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।(সুরা দুখানঃ ৩-৪)
আমরা সবাই জানি যে আল্লাহ্‌ পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন ২৭সে রমজান অর্থাৎ কদরের রাত্রিতে। এই বিষয়ে আল্লাহ্‌ কোরআনে বলেন, “নিশ্চয় আমি একে নাজিল করেছি মহামান্বিত কদরের রজনীতে। আর মহামান্বিত রজনী সম্পর্কে তুমি কি জান? মহামান্বিত রজনী হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।”(সুরা কদরঃ ১-৩) ওদিকে আবার সুরা দুখানে “আমিতো ইহা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে।” এই আয়াত দেখে অনেকে মনে করেন যে এই বরকতময় রজনী আর মহামান্বিত রজনী একই রজনী। আর এইখানেই বিষয়টা গভির ভাবে অনুধাবন করার দাবী রাখে।
আভিধানিক ভাবে বরকতময় রজনী আর মহামান্বিত রজনী একই অর্থ বহন করেনা। আবার সুরা দুখানের ৪ নং আয়াতে এটাও উল্লেখ আছে যে এই রাত্রে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অসংখ্য হাদিস আছে যেখানে বর্ণিত হয়েছে যে সাবান মাসের মধ্য রজনী অর্থাৎ ১৪ই সাবান দিবাগত রাতে একটা মানুষের আগামী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ হয়। আর এই কারণেই এই রাতকে ভাগ্য রজনীও বলা হয়। উল্লেখ্য (লাইলাতুল মুবারাকাহ্) অর্থ বরকতময় রজনী, কল্যাণময় রজনী, মঙ্গলময় ও প্রাচুর্যময় রজনী ।"তাফসীরে জালালাইনের" ৪১০ পৃষ্ঠার তাফসীরে সা'বীর সূত্রে এ রাতের ৪টি নাম উল্লেখ করা হয়েছে ।
1.(আল লাইলাতুল মুবারাকাহ) বরকতময় রজনী
2.( লাইলাতুল বারাহ) মুক্তির রজনী
3.(লাইলাতুল রহমাহ) দয়া-প্রাপ্তির রজনী
4.(লাইলাতুল সাক) বণ্টনের রজনী
এখন প্রশ্ন হল যে লাইলাতুল কদর আমরা পালন করি ২৭সে রমজান। কিন্তু হাদিসে ১৪ই সাবান দিবাগত রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে যে কথাবার্তা গুলো এসেছে তাহলে সেই ১৪ই সাবান দিবাগত রাত এটা কোন রাত? এই রাতকেতো অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
রাসুল (সাঃ) ফরমান, “শরীয়ত আমার কথা,তরিকত আমার কাজ, হাকিকত আমার অবস্থা, মারেফত আমার নিগুর রহস্য।” আসলে কোরআনকে বুঝতে হলে এই চারটি বিদ্যায় বিদ্বান হতে হয়। হাদিস শরিফে আছে যে প্রত্যেক বিষয়ের জাহের এবং বাতেন আছে। তেমনি ভাবে এই কোরানেরও জাহের ও বাতেন আছে। কোরআনের জাহের এল্মে শরীয়ত দিয়ে বোঝা সম্ভব হলেও এর বাতেন বোঝার জন্য এল্মে মারেফত এর জ্ঞান অর্জন আবশ্যক। আর সুরা দুখানের সেই আয়াত বোঝার জন্য সেই এল্মে মারেফতের জ্ঞান আবশ্যক।
এ রাতে 'লাওহে মাহফুজ' সংরক্ষিত কুরআন ৭ম আকাশ হতে দুনিয়ার আকাশে অর্থাৎ প্রথম আসমানে একত্রে নাজিল করা হয় । এ মর্মে হযরত ইকরামা (রাঃ) বলেন,
"অর্ধ-শাবান বা শবে-বরাতের রজনীতে আল্লাহ্ এ কুরআন 'লাওহে মাহফুজ' তথা সপ্তম আকাশ হতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে নাজিল করেন ।" (তাফসীরে জালালাইনের, পৃষ্ঠা ৪১০) ।
শবে-বরাত ও শবে কদরের মুল পার্থক্য এখানেই। যেহেতু লাইলাতুল বরাতের রজনীতে পরবর্তী এক বছরের বাজেট পেশ হয় তাই যে বছরের ২৭সে রমজান থেকে কোরআন নাজিল শুরু হয়েছিলো তার প্রায় দেড় মাস আগে সেই লাইলাতুল বরাতের রজনীতে রাসুল (সাঃ) এর প্রতি এই পবিত্র কোরআন নাজিলের সেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিলো এবং আল্লাহ্‌ রাসুল (সাঃ) এর কাল্বের সপ্তম স্তর থেকে প্রথম স্তরে সেই পূর্ণ কোরআন নাজিল করেছিলেন। আর পরবরতিতে তার প্রায় দেড় মাস পরে অর্থাৎ ২৭সে রমজানের রাতে রাসুল (সাঃ) এর কাছে সুরা আলাক এর ১ম পাঁচটি আয়াত নাজিলের মাধ্যমে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার যাত্রা শুরু হয়। এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে ২৭ সে রমজান এর রজনীতে কিন্তু একই সাথে ৩০ পারা কোরআন নাজিল হয়নি। সেই রাতে কেবল সুরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পর্যায়ক্রমে সেই কোরআন নাজিল হয়। আর অপর দিকে লাইলাতুল বরাতের রজনীতে পুরো ৩০ পারা কোরআন রাসুল (সাঃ) এর কালবের ৭ম স্তর থেকে ১ম স্তরে নাজিল হয়। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে এল্মে তাসাউফের ভাষায় সাত আসমানের ব্যাখ্যা হলো, সাত আসমান বলতে কালবের ৭টি স্তরকে বোঝায়। কালবের সাতটি স্তর। ১) সুদুর, ২) নসর, ৩) সামসি, ৪) নুরী, ৫) কুরব, ৬) মকিম, ৭) নফসী। অর্থাৎ পবিত্র কোরআন এই নফসির মোকাম থেকে সুদুরের মোকামে নাজিল হয়েছিল। এই বিষয়টা মুলত আধ্যাত্মিক জগতের বিষয়। এই বিষয় শরিয়তের জ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। আর যারা এই বিষয়টা কেবলমাত্র শরিয়তের বিদ্যা দিয়েই ব্যাখ্যা করতে চেয়েছে তারাই এই বিভ্রান্তির জন্ম দিয়ে বলেছে যে লাইলাতুল বরাত বলতে কিছু নেই।
লাইলাতুল বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য নিচের এই video clip টি দেখতে পারেন যেখানে লাইলাতুল বরাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে কি কি আয়াত আছে তা তুলে ধরা হয়েছে।
https://www.youtube.com/watch?v=8ek9Erlnbas

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.