![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বই পড়তে ও স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি । পেশায় ছাত্র শিক্ষক দুটোই। মাস্টার্স করছি এবং একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে আছি ৮-৯ মাস হল। অনেক অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে হয়। কত-শত মানুষ, কত হাসি, কত গান, কত দুঃখ! কিন্তু হায়, লেখক হিসেবে আমার ক্ষমতা খুবই সীমিত! সাহিত্যের কিছু বুঝি না। যা ভালো লাগে তাই পড়ি। অনুগ্রহ করে ভুল গুলো ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।
- বাবা, তুই কেমন আছিস?
- "আমরা কখনো খারাপ থাকি না, বাবা" মৃদু হেসে ছেলে উত্তর দেয়।
- আমরা মানে? তুই কাদের সাথে থাকিস, বাবা?
- মানে বাবা, আমরা যারা মারা গেছি তারা। যারা খুব ছোটবেলায় মারা গেছি তারা একসাথে থাকি। আমরা কখনো খারাপ থাকি না। একটু চুপ থেকে ছেলে আবার বলে, "আবার কখনো খুব ভালো ও থাকি না।' গলার স্বরটা একটু বিষণ্ণ শোনায়।
-তুই কি আমার উপর রাগ করে আছিস, সোনা?
ছেলে কোন উত্তর দেয় না।
-আমার উপর রাগ করিস না, বাবা। আমি অনেক দূরে ছিলাম। আমার কিছুই করার ক্ষমতা ছিল না তখন।
ছেলে চুপ করে থাকে। একটু উদাস চোখে আশে-পাশে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়।
-স্কলারশিপটা আগেই কনফার্ম হয়ে গেছিল। তারপর তুই তোর মায়ের পেটে আসলি। আমি ভাবলাম মাস্টার্স ডিগ্রীটা কমপ্লিট করে আসি। খুব ভালো ইউনিভার্সিটি ছিল। আর তাছাড়া প্রমোশনটাও দরকার ছিল। ভাবলাম, তুই আসবি, বেতনটা একটু বাড়লে খুব সুবিধা হবে।
-মায়ের জন্য খুব পরান পুড়ে, বাবা। মা যখন বাথরুম এ পড়ে যায় তখন পেটের ভিতরে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। মা তো প্রথমে অজ্ঞান হয়ে গেছিল। বাসায় কেউ ছিল না তখন। মা জ্ঞান ফেরার পর অনেক কষ্টে নিজেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেয়ে দাদীকে ফোন করে। মার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল। তারপর ও পেটে হাত বুলিয়ে আমাকে বলছিল, "সোনা মানিক, তোর কিচ্ছু হবে না। ভয় পাস নে, আমি তোর সাথে আছি। দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে।"
বাবার চোখে পানি চলে আসে।
-মা সবসময় আমার সাথে ছিল। যখন স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাচ্ছিল তখনও আমার সাথে কথা বলছিল। কত আদর করছিল!
একটু চুপ করে ছেলে আবার বলে,
"কিন্তু তুমি আমার সাথে ছিলে না, আমাদের সাথে ছিলে না। মা শেষের দিকে চিৎকার করে তোমার নাম ধরে ডাকছিল। তুমি আশে-পাশে কোথাও ছিলে না। আমি তোমাকে কত খুঁজলাম!
-আমারে তুই মাফ করে দে, বাবা। আমি একজন অপদার্থ বাবা, তুই আমারে মাফ করে দে।
-আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি বাবা। শুধু মাঝেমাঝে খুব অভিমান হয়।
কিছুক্ষণ দু'জনেই চুপ।
-মার কথা খুব মনে পড়ে। খুব দেখতে ইচ্ছে হয়। এত চেষ্টা করি মায়ের সাথে দেখা করার, একটু কথা বলার, কিন্তু কিছুতেই পারি না। শুধু তোমার সাথেই এখান থেকে যোগাযোগ করতে পারি।
-তুই কিভাবে এটা করিস? মানে, এই যে এভাবে আমার সাথে যোগাযোগ করিস, এটা কিভাবে সম্ভব!
-আমিও ঠিক জানি না, বাবা। কিভাবে জানি আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারি।
-তোদের ওখানে অন্যরাও কি এভাবে যোগাযোগ করতে পারে?
-বাবা, এখানকার কোন বিষয়ে আমি তোমাকে কিছু বলতে পারব না। নিষেধ আছে।
বাবা অপ্রস্তুত ভঙ্গীতে হাসেন।
- তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস, পাঁচ-ছয় বছর বয়সীদের মতো। দেখতেও অনেক সুন্দর হয়েছিস। তোর মায়ের চেহারার সাথে অনেক মিল আছে।
ছেলেটা খুকখুক করে হেসে ফেলে। তারপর অনেকটা বড়দের মতো করে বলে, "বাবা, আমার বয়স এখন পাঁচ বছর চার মাস সাতাশ দিন। পাঁচ-ছয় বছর বয়সীদের মতোই তো লাগবে।
বাবা অপ্রস্তুত ভঙ্গীতে হেসে বলেন, "তাই তো! আমার খেয়াল ছিল না রে।"
- তোমাকে দেখতে বয়স্ক বয়স্ক লাগছে। মাকে কেমন দেখতে লাগে এখন? মা তো সিনেমার নায়িকাদের থেকেও বেশি সুন্দরী। কী যে সুন্দর লাগতো তখন!
- "সিনেমার নায়িকাদের দেখতে কেমন লাগে তুই জানিস?" একটু আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করেন বাবা।
- "তখন জানতাম না, কিন্তু এখন জানি।" ছেলে হাসে।
- কিভাবে জানিস!
- "তা তো বলা যাবে না।" মাথাটা দু'দিকে নাড়াতে নাড়াতে দুষ্টুমি করে বলে ছেলে। "তবে এখন আমি অনেককিছু জানি।"
একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা যায় কি যায় না।
- তুমি যে কয় মাস ছিলে মা খুব হাসিখুশি থাকত। মাঝেমাঝে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখত আর লাজুকভাবে হাসত। মাকে খুব সুন্দর লাগতো তখন। আমার সাথে নানা বিষয়ে কথা কথা বলত। আমি কিছু বুঝতাম আর কিছু বুঝতাম না।
- তুই কিভাবে বুঝতি তখন? তুই তো কেবল পেটে!
- বুঝতাম। অনেককিছু বুঝতাম। তুমি আশে-পাশে থাকলে বুঝতে পারতাম। তুমি যখন মায়ের পেটে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে শুনতে তখন বুঝতে পেরেই তো বেশি লাফালাফি করতাম।মা যা দেখত, যা শুনত, যা ভাবত প্রায় সবই আমি বুঝতে পারতাম।
- স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে শোনার ব্যাপারটা যে তুই বুঝতে পারতিস এটা তোর মা ও বলত।
- বাবা, আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি এখন যাই। তুমি কাজ কর।
হঠাৎ করে ছেলেটা চলে গেল। কিসের দেরি হচ্ছে, কেন যেতে হবে, কোথায় যাবে কিছুই বলল না। হঠাৎ করে যেন শুণ্যে মিলিয়ে গেল। এতক্ষণ যেটা হল, সেটা কী হল, কীভাবে সম্ভব হল - কিছুই বুঝতে পারছেন না বাবা, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর রাকিবুল হাসান, বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন এ পি,এইচ,ডি গবেষণারত। তিনি জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সায়েন্স ল্যাবের লাগোয়া তাঁর ছোট রুমটিতে সামনের ক্যালেন্ডারের বিমূর্ত চিত্রের দিকে তাকিয়ে, অনেক ব্যথিত ও বিস্মিত হয়ে বসে থাকলেন।
©somewhere in net ltd.