![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বই পড়তে ও স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি । পেশায় ছাত্র শিক্ষক দুটোই। মাস্টার্স করছি এবং একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে আছি ৮-৯ মাস হল। অনেক অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে হয়। কত-শত মানুষ, কত হাসি, কত গান, কত দুঃখ! কিন্তু হায়, লেখক হিসেবে আমার ক্ষমতা খুবই সীমিত! সাহিত্যের কিছু বুঝি না। যা ভালো লাগে তাই পড়ি। অনুগ্রহ করে ভুল গুলো ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।
১
বেশ বড়লোকি পার্টি। নানা রকম আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা। লিভিং রুমের একপাশে বার, আরেকপাশের দেওয়ালে টাঙানো বিশাল এলইডি টিভি। এত বিশাল যে আমিই বোধহয় ওর ভিতরে ঢুকে যাবো। ওটাতে হিন্দী সিনেমার দুই জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকা অনেকক্ষণ ধরে নাচানাচি করছে। অনেক পরিশ্রম করছে বেচারারা। বোধহয় ওরাও জানে যে আজ শিল্পপতি রফিকুল সাহেবের বিবাহ বার্ষিকী। অবশ্য এরা ভুলেও বিবাহ বার্ষিকী বলে না, বলে ম্যারেজ অ্যানিভারসারী।
আমার এ ধরনের পার্টি ভালো লাগে না। আবশ্য আমি এ ধরনের পার্টিতে ইনভাইটেশনও পাই না। ইদানীং চাকরীতে একটু উপরে উঠে আসায় মনে হয় আমার কপাল খুলেছে।
এখনও হার্ড ড্রিঙ্কে অভ্যস্ত হতে পারিনি। চরম ব্যর্থতা। একটা কোল্ড ড্রিঙ্ক নিয়ে রুমের একপাশে একটা শেলফে একটু হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বাড়িটা দেখতে থাকি। কী বাড়ি রে বাবা! পুরো পশ্চিমা কেতায় সাজানো। সব সাদা। রুমটা অনেক বড়, হলরুমের মত। তার এখানে ডিভান, ওখানে সোফা, এখানে উঁচু, ওখানে নিচু - সে এক এলাহী কারবার। এক জায়গায় দেখি ছোট সুইমিং পুল মত, তার উপর আবার সরু ব্রীজ। রুমের মধ্যে এ সব! তবে অস্বীকার করব না, রুমটা দেখতে সুন্দর লাগছে। দেওয়ালে চমৎকার কয়েকটা পেইন্টিং। এতদিন ভাবতাম, এদের এত টাকা, খরচ করে কিভাবে! খরচ তাহলে এভাবেই হয়!
আমার সোজাসুজি রুমের ওপাশে দুই মোটাসোটা লোক খুব হাসাহাসি করছে। সাইজ অনুযায়ী ওদের নাম দিলাম বড় পেটমোটা আর ছোট পেটমোটা। বড় পেটমোটা হাসির কিছু বলছে আর ছোট পেটমোটা শুনছে। শুনতে পেলে ভালো হত। আমিও একটু হাসতাম।
মহিলারা যথারীতি তাদের শাড়ী-গয়না প্রদর্শন শুরু করেছেন। তবে কিছু মহিলা, কয়েকজন মেয়েও আছে, আসলেই অনেক সুন্দরী। টাকাপয়সা থাকলে আর যাই হোক সুন্দরী বউ পাওয়া যায়। লুচ্চা বসগুলা তাদের অধীনস্তদের বউদের সাথে ঢলাঢলি করার চেষ্টা করছে। শালা! আমার মুখে থুতু চলে আসে।
হঠাৎ পাশ থেকে, 'আরে আসিফ, এখানে একা একা দাঁড়িয়ে আছো কেন?' তাকিয়ে দেখি আমাদের জি.এম। সাথে তার বউ আর একটা অপরিচিত মেয়ে।
'এই তো স্যার, এমনিই', একটা অমায়িক হাসি দেই।
'পরিচয় করিয়ে দিই, এই দুই সুন্দরীর ইনি হলেন আমার মিসেস আর অন্য সুন্দরীটি আমার শ্যালিকা তৃণা', বলে হো হো করে হেসে উঠলেন, যেন খুব মজার কথা বলেছেন। তারপর আমার দিকে ফিরে, 'আর ও হলো আমাদের আশুলিয়া ব্রাঞ্চের ম্যানেজার, আসিফ।'
এখন মনে হয় ফানি লোকদের কদর বেশি। সবাই দেখি নিজেকে ফানি হিসেবে দেখাতে চায়। কিছুদিন আগে এই মার্কেটটা ছিল গাম্ভীর্যের। তখন বসগুলা গম্ভীর ভাব ধরার চেষ্টা করত।
'আপনি তো দেখতে একদম হাসান সাহেবের মতো', তৃণা বলে ওঠে। আমার বস এবং তার বউও সাঁয় জানায়। আমার কেন জানি ব্যাপারটা পছন্দ হয় না। একটু রাগ হয়।
'আমি দেখতে কারো মতো না, বোধহয় আপনার হাসান সাহেব আমার মতো দেখতে', গলার স্বর মনে হয় একটু শীতল শোনায়।
আমার বলার ভঙ্গীটা ধরতে পেরে তৃণার চোখে কৌতুক ফুটে ওঠে। তৃণা বেশ সুন্দরী, কিন্তু পোশাক বেশি রকম উগ্র। লো-কাট ব্লাউজ, সবুজ স্বচ্ছ শাড়ী। এরকম পোশাক পরা অশালীনতা নয়, কিন্তু আমি যদি ওর বুকের দিকে তাকিয়ে থাকি তাহলে আমি অসভ্য।
আমার বস তার বউকে নিয়ে অন্যদিকে চলে যায়। আমি তৃণার সাথে টুকটাক কথা বলতে থাকি। মাঝে মাঝে বুকের দিকে তাকানোর অসভ্যতা করি। পার্টি চলতে থাকে। রাত গভীর হয়।
২
সকালে শেভ করার সময় আয়নায় নিজেকে দেখে কথাটা আবার মনে পড়ল- 'আপনি তো দেখতে একদম হাসান সাহেবের মতো'। এই হাসান সাহেব, যে আমার মতো দেখতে, তাকে জানার খুব ইচ্ছে হল।
কে এই হাসান সাহেব? কেমন তার জীবন? তারও কি ছোটবেলায় বাবা মারা গিয়েছিল? অভাব-অনটনে বড় হয়েছে? সেও কি টিউশানি করে পড়াশোনার খরচ চালাত? বেশি বেশি ঘুমাত যেন বেশি খিদে না পায়, দুইবেলা খেয়ে কাটিয়ে দেয়া যায়? আমার তা মনে হয় না। যেহেতু তৃণাদের পরিচিত ধনী পরিবারের সন্তান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। হয়ত সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্মিয়েছে। অক্সফোর্ড থেকে পড়াশোনা করে এসে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করছে।
আচ্ছা, এই হাসান সাহেবের জীবনটা কি আমি পেতে পারতাম না। হয়ত হাসান সাহেবের জীবনটাই আমার জন্য রাখা ছিল। শেষ মুহূর্তে একটু ভুল হয়ে যাওয়ায় এই জীবনটা পেয়েছি। তাহলে মা টা চিকিৎসার অভাবে তাড়াতাড়ি মরে যায় না, মীরাও তিন বছরের প্রেম শেষে বিদায় বলে চলে যায় না।
সেদিন থেকে আমি মনে মনে হাসান সাহেবকে খুঁজতে থাকি। রাস্তার পাশে, ভিড়ের বাজারে আমার মতো দেখতে মানুষটাকে খুঁজি, যার জীবনটা আমারও হতে পারত।
©somewhere in net ltd.