নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এবং আমরা

বই পড়তে ভালোবাসি।

ছেলেমানুষ_

বই পড়তে ও স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি । পেশায় ছাত্র শিক্ষক দুটোই। মাস্টার্স করছি এবং একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে আছি ৮-৯ মাস হল। অনেক অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে হয়। কত-শত মানুষ, কত হাসি, কত গান, কত দুঃখ! কিন্তু হায়, লেখক হিসেবে আমার ক্ষমতা খুবই সীমিত! সাহিত্যের কিছু বুঝি না। যা ভালো লাগে তাই পড়ি। অনুগ্রহ করে ভুল গুলো ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।

ছেলেমানুষ_ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তখন আকাশের রঙ ছিল গাঢ় নীল

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৮

সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে খুব মেজাজ খারাপ লাগছে। সবকিছু খুব বিরক্তিকর মনে হচ্ছে। এত বিরক্তির অবশ্য তেমন কিছু নেই। আজও বেশ আরামের দিন। আজও হরতাল। একটু দেরি করে ভার্সিটি গেলেও অসুবিধা নেই। শুধু হাজিরা দেওয়া। হরতালে ছেলেপুলে ক্লাসে আসে না। তাই কোন কাজও নেই। শুধু শুধু ভার্সিটি যেয়ে নিজের রুমে বসে থাকা। বসে থেকে যে মাছি মারব সে উপায়ও নেই। আজকাল মাছিও খুঁজে পাওয়া যায় না। সারা দেশটাতেই বোধহয় ফরমালিন দেওয়া। বেশ টাটকা দেখালেও আসলে অনেক আগেই মরে গেছে।



সকাল আটটা বাজে। এখনও আমার ঘরে মশা পিন-পিন করে বেড়াচ্ছে। আগে মশারা শুধু রাতের বেলা জ্বালাত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বোধহয় এদের কোন মানসিক সমস্যা হচ্ছে। দিন-রাতের পার্থক্য বুঝতে পারছে না। দিনের বেলায় মাছির অভাব পূরণ করে দিচ্ছে। আমার ঘরে মশার উৎপাত ৩ ডিগ্রী বেশি। কিছুদিন আগে সিটি কর্পোরেশন থেকে মশার ওষুধ ছিটাতে এসেছিল। বড় ভয়াবহ ওষুধ। মশার সাথে সাথে দেওয়াল থেকে টিকটিকিও মরে পড়ে যায়। এ নিয়ে গত বছরের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ ছিল। মশার সাথে সাথে আমিও কাবু হয়ে গেলাম। ৩ দিন ধরে প্রচণ্ড মাথাব্যাথা। তাই এবার ওষুধ স্প্রে করার সময় বুদ্ধিমানের মত দরজা-জানালা সব বন্ধ করে রাখলাম। ঘরে যেন না ঢোকে।



মশারা আমার থেকে বেশি বুদ্ধিমান। ওদের গুপ্তচর খুঁজে বের করল যে, এই বিপদের দিনে আশে-পাশে একটা নিরাপদ আশ্রয় আছে। সব মশাকে ই-মেইল করে জানিয়ে দিল। দলে দলে মশারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে আমার ঘরে আসতে লাগল। সেইদিন রাতে ঘুমানোর সময় লাইট বন্ধ করে রীতিমত ভয় পেয়ে গেলাম। প্যাঁ পোঁ, পি পিঁ, পিন-পিন, পোঁ পোঁ নানা ধরণের শব্দ। ভাগ্যিস আমি মশারীর ভেতর ছিলাম। ভেতর থেকে বুঝলাম সারা ঘরে হাজার হাজার মশা। একটু টেনশন নিয়েই ঘুমাতে গেলাম সেদিন।



আমার রক্তের কোয়ালিটি বোধহয় ভাল, পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-টিটামিন আছে। সেই লোভেই মনে হয় বিপদ কেটে গেলেও মশক বাহিনী ঘর থেকে বিদায় নিল না। বরং দিন দিন শক্তিবৃদ্ধি করছে। এরা বোধহয় মাইকিং করে আমার উন্নত কোয়ালিটির রক্তের খবর জনে-জনে (নাকি মশকে-মশকে!) জানিয়ে দিচ্ছে। মশক কলোনিতে গলিতে গলিতে পোস্টার লাগাচ্ছে,



একটা আইডিয়াল সাবজেক্ট পাওয়া গেছে। গ্রেড এ কোয়ালিটির রক্ত। সাবজেক্টের ঘুম গাঢ় এবং বেকুব ধরণের। মাঝে মাঝেই মশারী টানাতে ভুলে যায়। মশার কয়েলের ধোঁয়ায় সমস্যা। কয়েল জ্বালায় না। আপনারা সবাই আমন্ত্রিত।



নিচে আমার বাসার ঠিকানা আর কো-অরডিনেট দেওয়া। এত ডিগ্রী অক্ষাংশ, এত ডিগ্রী দ্রাঘিমাংশ। মশাদের GPS সিস্টেম আছে নাকী! কে জানে? সারাক্ষণ ওড়াউড়ির উপর থাকে। ভাল একটা নেভিগেশন সিস্টেম থাকার কথা।



আজ আমার বাজারে যাওয়ার দিন। সারাদিন শুয়ে-বসে থেকে চূড়ান্ত অলস হয়ে গেছি। সামান্য বাজারের কাজটাও বিশাল কিছু মনে হয়। প্রায় এভারেস্ট বিজয়ের কাছাকাছি। মুসা ইব্রাহীম এমন কী আর করেছে। এক বারই তো মোটে এভারেস্ট এ উঠেছে। আমাকে প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর বাজার করতে হয়!



এমনিতে ভার্সিটির শিক্ষকরা এত শুয়ে-বসে থাকেন না। প্রত্যেকেই নিজের পড়াশোনা, গবেষণা, ক্লাস নেওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আমি আপাতত পড়াশোনার মধ্যে নাই। চাকরী পাওয়ার পর ঠিক করেছিলাম, বহুৎ পড়াশোনা হয়েছে, প্রথম ছয় মাস শুধু আরাম করব। সেই আরামকালের পাঁচ মাস চলছে। তার উপর টানা হরতাল। সারা দিন ৩-৪টা মুভি দেখে, গল্পের বই পড়ে আর শুয়ে থেকে কাটিয়ে দিই। তারপর সারাদিনের বিশ্রামে ক্লান্ত হয়ে পড়ে রাতে লম্বা ঘুম। দিন-দিন এত অলস হয়ে যাচ্ছি যে সকাল বেলা টয়লেটে যেতেও কষ্ট লাগে। সারা দিন শুয়ে-বসে থেকে মাজা ব্যাথা হয়ে গেল। আরাম করাও বেশ কষ্টের কাজ!



যাই হোক, মন শক্ত করে বাজারের ব্যাগ নিয়ে হাঁটা দিলাম। এই বাজারের নাম বৌ বাজার। আসলে হওয়া উচিত বুয়া বাজার। আশেপাশের ছাত্রাবাসগুলোর সব বুয়া এখানে বাজার করতে আসে। রাজশাহী শহর ছাত্রাবাসের শহর। অলিতে-গলিতে, মোড়ে মোড়ে ছাত্রাবাস। আর ছাত্রাবাস মানেই বুয়ার হাতের রান্না। রাজশাহীতে বুয়াদের সার্ভিস বেশ ভাল। টাকা দিয়ে দিলে নিজেরাই বাজার-টাজার করে রান্না করে খাওয়াবে। টাকা দিয়ে নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে থাকুন, বুয়া ঘরে খাবার দিয়ে যাবে। রান্নাঘর নিয়ে ঝামেলা? কোন সমস্যা নেই, বুয়া নিজের বাড়ি থেকে রান্না করে ঘরে এসে দিয়ে যাবে। মোট কথা আপনার খাবার নিশ্চিত, শুধু স্বাদে একটু সমস্যা।



বাজারে যাওয়ার পথে সাইফুল স্যারের সাথে দেখা হয়ে গেল। সাইফুল স্যার আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র প্রফেসর। যথারীতি বেল্ট ছাড়া শার্ট ইন করে পরা। আমি স্যারকে কখনো বেল্ট পরতে দেখি নাই। সবসময়ই তিনি বেল্ট ছাড়া শার্ট ইন করে থাকেন। স্যারের উদর অঞ্চলের স্বাস্থ্যও বেশ সমৃদ্ধ, বেশ একটা টাইট ফিটিং ভাব।

‘কী, বাজারে যাচ্ছ নাকি?’ স্যার জিজ্ঞেস করলেন।

ইচ্ছে হল বলি, ‘না স্যার, বাজারের ব্যাগ নিয়ে হাডুডু খেলতে যাচ্ছি‘, কিন্তু তা না করে সালাম সহযোগে মুখে বিগলিত হাসি ঝুলিয়ে স্যারকে পার হয়ে আসি।



সাইফুল স্যার কঠোর নিয়ম-কানুন মেনে চলা লোক। এই আটটার সময় ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন। কাজ-কাম থাকুক আর না থাকুক সবার আগে ক্যাম্পাসে যাবেন আর সবার পরে ক্যাম্পাস থেকে বেরোবেন। আমার ধারণা স্যারের বউ বড়ই দজ্জাল মহিলা। বউয়ের দাপটে স্যার বাসায় টিকতে পারেন না। আমি প্রায় সব সিনিয়র টিচারদেরই দেখি তাঁরা বাসায় যেতে চান না। ভার্সিটির টিচারদের বউ ভাগ্য মনে হয় খুব একটা ভাল না।



এই সাত সকালেই প্রচণ্ড রোদ, প্রচণ্ড গরম। আর তার মাঝে আলু-পটল-বেগুন কিনতে যেয়ে ঘেমে নেয়ে একেবারে বিচ্ছিরি অবস্থা। বাসায় যেয়ে গোসল করে খেয়েদেয়ে একটা ছোট ঘুম দিয়ে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেব ঠিক করছি, এমন সময় আমি মেয়েটাকে দেখলাম। এই বাজারটা রাস্তার দুপাশে বসে। আর সেই রাস্তা দিয়ে উজ্জ্বল হলুদ রঙের একটা কামিজ পরা মেয়েটা হেঁটে গেল। কেমন স্বপ্নের মত। এত সুন্দর মানুষ হয়! হঠাৎ করে রোদ পড়ে গেল, দক্ষিণ দিক থেকে ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করল, আকাশটা হয়ে গেল গাঢ় নীল। কোথা থেকে যেন একটা মিষ্টি গন্ধ নাকে ভেসে এল আর আমি ভ্যাবলার মত বাজারের ব্যাগ হাতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ব্যাগের কোণা দিয়ে একটা লাউ উঁকি দিচ্ছে। ব্যাটা দোকানদার আমাকে কচি লাউ বলে একটা পাকা লাউ গছিয়ে দিয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.