নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেনিআসহকলা

সবাইকে শুভেচ্ছা।

শফিক আলম

মানুষকে বিশ্বাস করতে চাই এবং বিশ্বাস রেখেই কাজ করতে চাই।বাস্তবের ভিতরে বসবাস করতে ভালবাসি। কল্পনা করতে ভাল লাগে, কিন্তু বাস্তবকে ভুলে নয়। সততা বলতে আংশিক বুঝি না, পুরোটাই বুঝতে চাই। প্রকৃতির মাঝে শান্তি এবং স্বস্তি দু\\\'টোই খুজে পাই। নারীর প্রতি আকর্ষন আছে তবে উন্মাদনা নেই। বয়সকে অনেক ক্ষেত্রেই বাধা মনে করি না। লিখতে ভালবাসি, কবিতা-গল্প, যা কিছু। চারটে বই প্রকাশ করেছি নিজ উদ্যোগে। প্রতিভা নেই, শখ আছে। অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে, পারি না কেন বুঝি না।

শফিক আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পত্র মিতালী এবং পারভিন ববি

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৫

আমার এক বন্ধু, খুবই কাছের, সেই স্কুল জীবন থেকে। নামটা না হয় না-ই বললাম। ওর মাথায় মাঝে মাঝে কিছু পোকা ঢুকে যেতো। ঐ পোকা ওকে যেভাবে চলতে বলতো সেইভাবেই চলতো এবং চলতেই থাকতো যে পর্যন্ত না পোকাটা মাথা থেকে বেরিয়ে যেতো।
এখন যে কথাগুলো লিখবো তা আজ থেকে তিন যুগ আগের কথা। তখন আমরা স্কুল শেষ করে সবে কলেজে উঠেছি। সত্তর দশকের মাঝামাঝি। কলেজে উঠা মানে সবার জন্যই একটা খোলা পৃথিবী। অনেক কিছুই যেমন নতুন নতুন লাগে, তেমনি অনেক কিছু করতেও ইচ্ছে করে। যাই হোক, তখন না ছিল কম্পিউটার, না ছিল ফেস্‌বুক। সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করা হতো ডাকযোগে চিঠি চালাচালি করে। এনভেলোপ এবং পোস্ট কার্ড দু'টোই চলতো, এক টাকা বা আট আনা এই রকম খরচ হতো। তখন এখনকার মতো গ্লোবাল বন্ধুত্ব না থাকলেও একেবারেই যে ছিল না, তা নয়। মাধ্যম ছিল 'পত্রমিতালী' বা 'pen pal'। দৈনিক পত্রিকার ভিতরের পাতায় শ্রেনীভুক্ত বিজ্ঞাপনে 'পত্রমিতালী' কলামে প্রচুর বিজ্ঞাপন থাকতো। কত জায়গা থেকে, এমন কি প্রবাস থেকেও বন্ধুত্বের ইচ্ছা ব্যক্ত করে বিজ্ঞাপন দিত। ইংরেজী পত্রিকায় কিছু বিদেশীদেরও খোঁজ পাওয়া যেতো। এইসব বিজ্ঞাপন প্রকাশ করার জন্য কোন টাকা-পয়সা লাগতো না। বিভাগীয় সম্পাদককে নাম-ধাম, ঠিকানা সমেত দুই লাইনের একটা চিঠি পাঠালেই পত্রিকায় উঠে যেতো। যাকে পছন্দ হতো তাকেই লেখা যেতো। অবশ্য পরষ্পরের ভালো লাগার ব্যাপার ছিল, তবেই বন্ধুত্ব অনেকদিন টেকসই হতো।আমার বন্ধুটির শখ হলো সে পত্রমিতালী করবে। যথারীতি নাম-ঠিকানা সহ আবেদন জানিয়ে পাঠিয়ে দিল এবং পত্রিকায় প্রকাশিত হলো। পত্রিকায় নিজের নাম-ঠিকানা দেখতে পেয়ে সে আবার অন্য রকম আনন্দ। এবার চিঠির জন্য অপেক্ষার পালা। আগেই বলেছি সেটা ইমেইলের যুগ নয় যে চোখ বুজলাম আর চিঠি এসে গেল। কমপক্ষে ৪/৫ দিন তো লাগবেই। সপ্তাহ খানেক পর মাত্র দু'টো চিঠি এলো এবং যথারীতি বন্ধুটির মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে আশা করেছিল অন্তত: অর্ধ ডজন চিঠিতো থাকবেই এবং বলতে দোষ নেই, ঐ সময় এই আশাটাও করা হয়েছিল যে দু'চারটে মেয়ে বন্ধুর চিঠিতো পাওয়া যাবে। তবে এতো শীঘ্র তো সবকিছু ঘটেও না। অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষায় মেওয়া ফলে এই প্রবাদ বাক্য মনে রেখে সে অপেক্ষা করতে থাকলো। দিন-সপ্তাহ-মাস গেল কিন্তু চিঠি যাও পাওয়া গেল তাতে মন ভরার মত কিছুই নেই। আমি দেখা হলে জিজ্ঞেস করি রমনীয় লেখা ক'টা পাওয়া গেল। বলে একটাও না। আমি বললাম, 'তুই আশা করিস কিভাবে যে কোন মেয়ে তোকে লিখতে যাবে বন্ধু হওয়ার জন্য! ওরা তো মেয়েদেরই লিখবে।' সে জবাব দিল, 'লেখে না তোকে কে বললো? নিশ্চয়ই লেখে। আমি জানি। বন্ধুত্বে তো আর দোষ নেই।' সেও বটে। উদারতা থাকলে হবে না কেন? তবে ওর ব্যাপারে হচ্ছে না এটাই সত্যি। দিন চলে যায়, বন্ধুটিও কোনও রকমে মিতালী চালিয়ে যাচ্ছে একটা বৃহৎ আশা বুকে নিয়ে। কিন্তু ওই চলছে আর কি, যেন প্রতিদিন নিরামিশ দিয়ে অন্ন ভোজন। কিছু দিন চলার পর এক দিন সন্ধ্যায় সে একগাদা চিঠি নিয়ে আমার বাসায় হাজির। কমছে কম এক ডজন তো হবে। আমার বিছানায় ফেলে বললো, 'খোল এগুলো।' আমি তো কিছুই বুঝলাম না। সবগুলো খামেরই মুখ বন্ধ। আমি খুলতে যেয়ে দেখি খামের উপরে প্রাপকের (To) নাম লেখা 'পারভিন ববি'।' আমি বললাম, 'কার চিঠি নিয়ে এসেছিস! এগুলো তো তোর না।' ও বললো, 'সবগুলোই আমার চিঠি, তুই খোল।' এরপর সে একটা খবরের কাগজ খুলে আমাকে দেখালো, সে পত্রমিতালীর বিজ্ঞাপন দিয়েছিল পারভিন ববি ছদ্মনামে। আর তার ফল মিললো বিদ্যুত গতিতে। সপ্তাহান্তেই একগাদা চিঠি। 'তো এতে তোর লাভ কি হলো? তোর পৌরুষ বিকিয়ে দিয়ে এখন মেয়েমানুষ সেজে তোকে চিঠি চালাচালি করতে হবে।' ও বললো,'তাতে অসুবিধা কি? কেউ তো আর জানলো না আমি কে। এই বার সবগুলোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবো। চিঠি পাবো না বললেই হলো!' আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি, এসবে কি মজা তাও বুঝতে পারছি না। ও আবার বললো, 'তুই চিঠিগুলো খুলে এক এক করে পড়্‌, যেগুলো পছন্দ হবে সেগুলোর উত্তর লিখে দিতে হবে।' আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম, 'আমি উত্তর লিখে দেবো কেন? আমি এসবে নাই।' ও জানে আমি একটু-আধটু লেখালেখি করি, কবিতা লেখি যখন যা মন চায়। তাই সে নাছোড়বান্দা। আমি খুললাম খামগুলো এবং না হেসে পারলাম না এই ভেবে যে যারা লিখেছে তারা কেমন একটা ধোকা খাচ্ছে! কারো হতের লেখা সুন্দর, কারোটা কাক-বগের ঠ্যাং যেন। কারো লেখায় সুন্দর অনুভুতি, কারোটা অনুভুতি প্রকাশ করতে যেয়ে হোচট খেয়ে পড়েছে। এর মধ্যেই বেছে বেছে ঠিক করা হলো কাকে কাকে উত্তর দেয়া হবে। সিলেকশানের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ পারভিন ববির (!) নিজস্ব এক্তিয়ার। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম যে এই পারভিন ববি নামটা সে বেছে নিল কেন? ওর জবাবটা এলো এইভাবে যে তখন সিনেমা জগতের খবর পাওয়া যেতো সাপ্তাহিক "চিত্রালী" অথবা "পূর্বানী"-তে। ওর মাথায় এই পত্রমিতালী ব্যাপারটা যখন কিল্‌বিল্‌ করছে, সেই সময় একদিন কোনও এক পত্রিকায় এই ভারতীয় নায়িকার নামটা ওর চোখে পড়ে এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে এই নামটা ছদ্মনাম হিসেবে ব্যবহার করবে। এই কাজটা সে আমাকে কিছু না জানিয়েই করেছিল।
এরপর চুটিয় প্রেম-বন্ধুত্ব দু'টোই চলতে থাকলো। আমি ড্রাফ্‌ট করে দেই আর সে নিজ হাতে লিখে পাঠিয়ে দেয়। দিনে দিনে চিঠির পাহাড়ও বাড়তে থাকলো। এবং এক সময় যথাবিহিত আমিও ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। বন্ধুটিকে বলে দিলাম যে আমি আর পারবো না, তুই নিজে থেকে যা পারিস লেখ্‌। এবার দেখলাম সে আর তেমন জোর করলো না। আমি বাঁচলাম। এভাবেই চলতে থাকলো দিনগুলো। আমি আর তেমন খোঁজ নেই না ওর জাল পত্রমিতালীর। তবে যা হয়, ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যায় সবকিছু। এগুলো তো সময়ের খেয়ালী বৈ কিছু নয়। কলেজ জীবনের শুরুটা হয় পাগলপারা, তারপর যখন ডিগ্রী বা উচ্চ শিক্ষার সময় ঘনিয়ে আসে তখন সব বদলে যায়। বন্ধুটির এইসব খেয়াল মিইয়ে গেল দু'টি কারনে, এক. কৌতুহল কমে গেল অথবা শখ মিটে গেল, দুই. অনেক হয়েছে, এবার পারভিন ববিকে দেখতে চাইছে সবাই। তা'ছাড়া কলেজ পাশ করে এখন যে যার মত ছুটতে হবে জীবনের কারিগর হবার জন্য। যে কারনে বন্ধুটি লেখালেখি কমিয়ে দিল। চিঠি আসতে থাকলো কিন্তু উত্তর-প্রত্যুত্তর কমে গেল। চিঠি আসে, পড়ে থাকে। এক সময় সব বন্ধ হয়ে গেল। এভাবেই একজন পারভিন ববির দিন শেষ হলো।
এই ঘটনাগুলো হয়তো আমি লিখতামই না যদি সেই বন্ধুটি এতদিন পর হঠাৎ আমাকে একটা চিঠি না লিখতো। এই সেদিন ওর একটা চিঠি পেয়ে আমি পুরোপুরি নস্টালজিক হয়ে যাই। চিঠিটা স্বভাবতই ডাক-এ আসেনি, এসেছে ক্যুরিয়ারে। মফস্বল থেকে আমাকে একটা আঞ্চলিক পত্রিকা পাঠানোর কথা ছিল ওর, কিন্তু কি মনে করে খামের ভিতরে চিঠিও ভরে দিয়েছে। ওর চিঠি পড়ে আমি খুব আবেগতারিত হয়ে পড়ি। তিন যুগ আগের সেই লেখা! বয়সের ভারে লেখাগুলোও কিছুটা বৃদ্ধ হয়েছে, কিন্তু পড়তে মোটেও কষ্ট হয় না। খুব সুন্দর করে মনের কথা লিখেছে। সঙ্গে সঙ্গে ওকে ফোন করলাম। বললাম, 'কে বলে তুই লিখতে পারিস না? তোর সেই পারভিন ববির ধারটা তো এখনো আছে।' ও বললো, 'হ্যা, ট্রেনিং তো জমা দেই নাই।' আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। এই কথাটা '৭৫-এর পর খুব চালু ছিল "অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দেই নাই।" মুক্তিযোদ্ধারা বলতো। এখন আর মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং কাজে লাগে না, কিন্তু রাজাকারদের ট্রেনিং কাজে লাগছে মনে হয়। আমার বন্ধুটি যে পত্রমিতালী করে লেখালেখির যথেষ্টই ট্রেনিং নিয়েছিল সন্দেহ নেই।
সেই সব দিনগুলো পিছনের দিকে যেতে যেতে এখন প্রাচীন হয়ে গেছে। আমরাও সামনে এগুচ্ছি, আর প্র্তিদিন প্রাচীন হচ্ছি।
আমি বন্ধুটির দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৪

নানাভাই বলেছেন: সেই সব দিনগুলো পিছনের দিকে যেতে যেতে এখন প্রাচীন হয়ে গেছে। আমরাও সামনে এগুচ্ছি, আর প্রাচীন হচ্ছি।
ঐ আমলে অনেকেই এটা করতো।
আমার পরিচিত এখনকার একজন বড় লেখককে ও আমি এটা করতে দেখেছি।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪১

শফিক আলম বলেছেন: হ্যা, ছিল অনেকেই। কিন্তু এই রকম ছল-চাতুরি কেউ করতো কি না জানি না। তবে করতো হয়তো, নইলে আমার বন্ধুটির মাথায় ব্যাপরটা ঢুকলো কি করে! ধন্যবাদ।

২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪১

পরোবাশি২০১৩ বলেছেন: I know someone who went to Kolkata by air to meet his pen pals, both male and female. That was long time ago...about 40 years ago.

৩| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৬

শফিক আলম বলেছেন: Yeah, there were some true and serious pen pals. Thanks.

৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৯

দিশার বলেছেন: হুমম আপনার লেখা লেখির হাতেখড়ি তাহলে জাল প্রেম পত্রে দিয়ে !

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৫

শফিক আলম বলেছেন: :) বলতে পারেন। তবে ঠিক জাল নয়, কল্পনার ফানুস আর রঙ-এর মিশেলে কিছু একটা ছিল।

৫| ১৭ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৫৩

আহমেদ আলিফ বলেছেন:
আপনি তো বেশ ভালো লিখেন।
চালিয়ে যান , লেখা কিন্তু থামাবেন না।
আপনার সুস্থতা কামনা করছি!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.