![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষকে বিশ্বাস করতে চাই এবং বিশ্বাস রেখেই কাজ করতে চাই।বাস্তবের ভিতরে বসবাস করতে ভালবাসি। কল্পনা করতে ভাল লাগে, কিন্তু বাস্তবকে ভুলে নয়। সততা বলতে আংশিক বুঝি না, পুরোটাই বুঝতে চাই। প্রকৃতির মাঝে শান্তি এবং স্বস্তি দু\\\'টোই খুজে পাই। নারীর প্রতি আকর্ষন আছে তবে উন্মাদনা নেই। বয়সকে অনেক ক্ষেত্রেই বাধা মনে করি না। লিখতে ভালবাসি, কবিতা-গল্প, যা কিছু। চারটে বই প্রকাশ করেছি নিজ উদ্যোগে। প্রতিভা নেই, শখ আছে। অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে, পারি না কেন বুঝি না।
গতকাল সারাদিন অফিসের কাজে যথেষ্টই ব্যস্ত ছিলাম। বেলা প্রায় তিনটার দিকে হঠাৎ করেই খেয়াল হলো ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলার কথা এবং অবশ্যই টেন্ডুলকরের কারনেই। শুক্রবার ওর আউট হওয়া পর্যন্ত খেলা দেখেছি আর শুধুই মনে হয়েছে আজই হয়তো ওর শেষ জীবন্ত (live) খেলা দেখছি। কিন্তু মনে মনে চেয়েছি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস-এ খুব ভাল খেলে স্কোর অন্ততঃ পাঁচ শ'তে নিয়ে যাক, যেন শচীন আরো একবার ব্যাট করতে নামতে পারে। মনে পড়তেই তাড়াতাড়ি cricinfo.com ওপেন করতেই দেখতে পেলাম "Tendukar era ends with 2-0 sweep". নিমিষেই মনটা ভারী হয়ে উঠলো। আমি লেখাটার দিকে তাকিয়ে রইলাম "2-0 sweep" কোন ব্যাপারই নয় আমার কাছে, কিন্তু "Tendukar era ends" লেখাটা আমাকে হাতুরীর মত পেটাচ্ছিল। আমি জানতাম এটাই হতে যাচ্ছে, তারপরও বিশ্বাস হতে কষ্ট হচ্ছিল। ২৪ বছরের দীর্ঘ সময়ে কোন ব্যত্যয় ঘটেনি, ছিল না বিচ্ছেদ। আর তাই হয়তো বিশ্বাস এতটাই গভীর হয়েছিল যে ক্রিকেট মানেই শচীন, আর শচীনের শেষ মানেই ক্রিকেটের শেষ। তবে ক্রিকেটের শেষ হবে না ঠিকই কিন্তু ক্রিকেটের ধ্রুপদী গান শোনাবে কে? কে ক্রিকেটের কবিতা গাঁথবে?
আমি ভারতের ক্রিকেটের খেলা দেখতামই শচীনের জন্য। শচীন আউট তো আমার খেলা দেখা শেষ। শচীন যখন খেলতো তখন কি মনে হতো ভারত খেলছে! মনে হতো শচীন খেলছে ক্রিকেটকে আর ক্রিকেট সমৃদ্ধ হচ্ছে। মন ভরে তার স্ট্রোক দেখতাম...স্ট্রেইট ড্রাইভ, কাভার ড্রাইভ, স্যুইপ, ফ্লিক আবার ডিফেন্সিভ ফরওার্ড। স্ট্রেইট ড্রাইভ করে দুই ধাপ সামনে এগিয়ে যেয়ে ব্যাটটি ওভাবেই ধরে রাখতো কিছুক্ষন, যেন কবিতার সেই কাংক্ষিত শব্দটাকে বসিয়ে পূর্ণতা দিচ্ছে। আউট হয়ে গেলে মনটা খারাপ হতো ঠিকই কিন্তু সেই মূহুর্তেরও সৌন্দর্য্য ছিল না কি! বিনা বাক্যে চুপচাপ মাঠ থেকে বেরিয়ে আসতো। কত আউটই তো ছিল বিতর্কিত, এই কোলকাতার ইডেনের শেষ টেষ্টটিও বিতর্কিত এলবিডব্লিউ। কিন্ত সে বেরিয়ে এলো ঠিকই। শচীনকে হয়তো আমি এতটা শ্রদ্ধা করতাম না, হয়তো পছন্দও করতাম না, যদি তার ব্যক্তিত্ব এতটা উচ্চতায় না উঠতো, এতটা সম্ভ্রান্ত না হতো। হয়তো অনেকেই ওকে ঐ ভাবেই দেখেছে। মানুষ কত শিষ্ট, মার্জিত আর সহনশীল হতে পারে অথবা হওয়া উচিত তা সে চব্বিশটি বছর সবাইকে দেখিয়েছে। বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। এ খেলা শ্লেজিং করার জন্য নয়।
এরপর হয়তো টেলিভিশনের সামনে বসে অথবা সুযোগ হলে স্টেডিয়ামে বসে কখনো ক্রিকেট খেলা দেখবো শুধু এই আমার দেশ, বাংলাদেশটার জন্য। আর কোন আকর্ষনে নয়। ক্রিকেটের যে রিদ্ম তা আমার কাছে হারিয়ে গেছে। ক্রিকেটের যে সংগীতে এতদিন কান পেতে থেকেছি, যে কবিতার ধ্রুপদ শব্দগুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে আপ্লুত হয়েছি, তা আর কোথায় পাবো! যে ক্রিকেটের সুরের মূর্ছনায় অভিভূত থেকেছি সেই ক্রিকেটের বংশীবাদকের বিদায়ে এক শুন্যতার বলয়ে নিপতিত হয়ে গেছি। এই শুন্যতা হঠাৎ মৌন করে দেয় সবকিছু।
©somewhere in net ltd.