![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষকে বিশ্বাস করতে চাই এবং বিশ্বাস রেখেই কাজ করতে চাই।বাস্তবের ভিতরে বসবাস করতে ভালবাসি। কল্পনা করতে ভাল লাগে, কিন্তু বাস্তবকে ভুলে নয়। সততা বলতে আংশিক বুঝি না, পুরোটাই বুঝতে চাই। প্রকৃতির মাঝে শান্তি এবং স্বস্তি দু\\\'টোই খুজে পাই। নারীর প্রতি আকর্ষন আছে তবে উন্মাদনা নেই। বয়সকে অনেক ক্ষেত্রেই বাধা মনে করি না। লিখতে ভালবাসি, কবিতা-গল্প, যা কিছু। চারটে বই প্রকাশ করেছি নিজ উদ্যোগে। প্রতিভা নেই, শখ আছে। অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে, পারি না কেন বুঝি না।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার ইতিহাস চিপ্তে চিপ্তে একেবারে তেতো করে ফেলা হয়েছে। এখন একে ফুটবল খেলার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পায়তারা চলছে। জাম্বুরা ফুটবল। যেমন দু্ঃখ লাগে, তেমনি অদ্ভুত লাগে। এসব সম্ভব হচ্ছে শুধু বাঙ্গালী বলেই কি? আমার তো মনে হয় না আর কোন জাতীর কপালে এমনটি জুটেছে! বিশ্বের প্রতিটি জাতী তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে নিয়ত গর্ব করে থাকে, মুক্তিযুদ্ধ হয়ে যায় তাদের অহংকারের অংশ। আর আমরা কি করছি? প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে প্রশ্নবিদ্ধ করছি। ২৪ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং নয় মাসের সকরুন কিন্তু বীরগাঁথার মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কাছে কিছুই নয়? আমাদেরই মা-বোনের সম্ভ্রম এবং লাখো প্রানের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি, তা কেবলি 'ঘোষনা'-র মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে চাই আমরা! কি নিষ্ঠুর বাচালতার মাঝে আমরা এই খেলায় দু'টি দলে বিভক্ত হয়ে অর্থহীন বিজয়ের হাসি হাসতে চাই! এই দুঃখ এবং লজ্জার কথা লিখতে হচ্ছে সম্প্রতি এ, কে, খন্দকারের লেখা বই "১৯৭১: ভেতরে বাইরে"-তে নাকি তিনি লিখেছেন যে বঙ্গবন্ধু তার ৭ই মার্চের ভাষন শেষ করেছেন "জয় পাকিস্তান" বলে। কারা শুনেছিলো এই শ্লোগানটি? আমি সেই ঐতিহাসিক জনসভা্য উপস্থিত থাকতে পারিনি। কিন্তু তখন মফস্বলের এক কিশোর বালক ঠিকই জানতো যে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক জনসভা হচ্ছে, যেই সভায় বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালীর বাঁচা-মরার ঘোষনা দেবেন। লক্ষাধিক মানুষ সেই জনসভায় উপস্থিত ছিল, তারা কি শুনেছিল সেই 'জয় পাকিস্তান'? সেখানে নানা পেশার মানুষও ছিল...সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি। আজতক চার দশকেও কেউ, এমনকি '৭৫-এ উল্টোরথে চলার পরিবর্তনের পরও কেউ বলে নি মুজিব 'জয় পাকিস্তান' বলেছিলেন। এমন কি নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও কেউ কোন প্রশ্ন তুলে নি। তখন তো আওয়ামী ছাড়াও অন্যান্য দল যুদ্ধে জড়িত ছিল। আজ এতদিন পর কেন তবে এই উপহাস শেখ মুজিবকে নিয়ে, তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতা নিয়ে? বাংলাদেশের মানুষদের খুব সহজেই ধোঁকা দেওয়া যায়, সোজা কথায় মগজ ধোলাই খুব সহজেই দেওয়া যায় বলেই হয়তো এই সবের আয়োজন। কারন বাঙ্গালীরা বরাবরই আবেগপ্রবন জাতী। আবেগ দ্বারা তারিত মানুষ কখনই স্থিরচিত্ত হতে পারে না বলেই তারা প্রপাগান্ডায় বিশ্বাসী হয়ে থাকে, যেখানে যুক্তি দিয়ে বিচার করবার অবসর তাদের নেই। আর এই সব কারনেই সম্ভবতঃ দুর্জনেরা গত তিন যুগ ধরে বাজারে যাচ্ছে তাই চাউর করে হর্ষ বদনে ড্রইং রুমে বসে ফুটবল খেলা দেখছে।
এই 'জয় পাকিস্তান'-এর জন্য কোন ল্যাবরেটরী টেস্টের দরকার পড়ে না যদি আমরা সোজাসুজি ভাষনটি আরেকবার শুনি। যারা বিভ্রান্ত হোন, তাদের বলবো বঙ্গবন্ধু যখন 'জয় বাংলা' বলে ভাষনটি শেষ করলেন, তখন কি এমন কোন রেশ ছিল যেখানে মনে হয় যেন একটা ছন্দপতন। যেন আরও কিছু বলা হয়েছে, কিন্তু তা কেটে ফেলা হয়েছে? তার পুরো ভাষনে পাকিস্তানী শাসকদের অত্যাচারের কথা বলেছেন, তার ক্ষোভের কথা বলেছেন আর বলেছেন বাঙ্গালীর মুক্তি আর স্বাধীনতার কথা। তিনি বলেছেন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার কথা, বাঙ্গালীর কাছে যা আছে তাই নিয়ে পাকিস্তানীদের মোকাবিলার কথা। একটি যুদ্ধ প্রস্তুতির আগাম বার্তাই তিনি দিয়ে দিয়েছেন। তাই যদি হয়ে থাকে, তা'হলে কোনও ভাবে কি আর সম্ভাবনা থাকে যে তিনি 'জয় পাকিস্তান' বলবেন? এটা একেবারেই বেমানান, বেখাপ্পা। কোন যুক্তির পর্যায়েই পড়ে না। '৬৬-এর পর থেকে যে জাতীর মুখে মুখে 'জয় বাংলা' শ্লোগান, যেই জাতীর মিটিং মিছিলে কেবলই 'জয় বাংলা' শোনা যায়, যেই শ্লোগান ছিল দল-মত নির্বিশেষে (জামাত-মুসলিম লীগ ছাড়া) সবার মুখে মুখে, যেই নেতা শুধুই বাঙ্গালীর অধিকার আর মুক্তির কথা বলে এসেছেন, তিনি কি করে বাঙ্গালীর সর্বোত্তম সংকটের মূহুর্তে বলতে পারেন 'জয় পাকিস্তান'? বললে সেই দিনই তো তার নেতৃত্বের যবনিকা হয়ে যাওয়ার কথা। বিশ্বাসঘাতকের তালিকায় তার নাম উঠে যাওয়ার কথা। জাতীর পিতা তো দুরের কথা।
কেন যেন মনে হয় কেউ কেউ, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অন্য ভাবে দেখতে চায়, তারা মনে করে যে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা চায় নি। শেখ মুজিব তথা আওয়ামী নেতারা তাদের ভাষনে ভুলিয়ে ভালিয়ে এদেশের মানুষদের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়েছে, আর এদেশের মানুষেরা লেমনচুশ মুখে পুড়ে তাদের কথা শুনে সব ভুলেছে। আর তাই এখন বাজারে যেসব উল্টো কথা বলা হচ্ছে তার সবই সত্যি। নইলে এগুলো বলাবলি হচ্ছে কেন? সত্যিই তো! এই যে এতো সব মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতা বিরুদ্ধ কথা, এগুলো একটা স্বাধীন দেশে হয় কি করে! আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো '৭৫-এর পট পরিবর্তন এবং তৎপরবর্তি দুই দশকের ইতিহাস। এই দেশটা '৭৫-এর পর ২০/২২ বছর রাজাকার এবং নব্য রাজাকারদের দখলে ছিল। অর্থাৎ পুরো একটি জেনারেশান। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত স্বাধিনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের উপর বই প্রকাশ তেমন একটা হয়নি বললেই চলে। সাহস পেতো না কেউ। আর সেই দুই দশকে সুপরিকল্পিতভাবে এই দেশের মানুষদের মগজ ধোলাই দেওয়া হয়েছে ভ্রান্ত এবং কল্পিত কাহিনী তৈরী করে। স্কুল-কলেজের পাঠ্য বই থেকে সত্যিকার ইতিহাস মুছে ফেলে মন গড়া ভুল ইতিহাস সংযোজন করে একটি জেনারেশানকে পুরোপুরি কনফিউজ্ড করে ফেলা হয়েছে। এমনভাবে করা হয়েছে যেন সত্য-মিথ্যা একাকার হয়ে যায়। তবে জাতি বিশেষ করে তরুন সমাজ যদি একটু সচেতন হতো তা'হলে সত্যিকার ইতিহাস জানা কঠিন কিছু ছিল না। তখনও অনেক মূল্যবান বই-পুস্তক বাজারে ছিল। অন্ততঃ এই ধারনাটুকু তো থাকা উচিত যে একটি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাস সবসময় একটি ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলে। কতকগুলো পর্যায় পার হয়ে আসতে হয়। হঠাৎ করে কোনও একদিন কারও ঘোষনায় একটি জাতি স্বাধীন হয়ে যেতে পারে না। হঠাৎ যেটা ঘটে সেটা তো বিদ্রোহ। আমাদের স্বাধীনতাকে জানতে হলে ১৯৪৭ থেকেই জানতে হবে। এমনকি '৪৭-এর আগেও। কেউ কেউ মনে করে থাকেন, বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস মানেই '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। একটি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাস কি এতটাই সংক্ষিপ্ত আর হঠাৎ উত্থিত হতে পারে!
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনটি ছিল একটি ধারাবাহিকতার ফল। যার শুরু হয়েছিল '৬৬-এর ছয় দফা দিয়ে। যে ছয় দফা ছিল বাঙ্গালীর পূর্ণ স্বায়ত্ব শাসন, আর তা না হলে স্বাধীনতা। যে নেতা এই ছয় দফার মতো দাবি নিয়ে এগিয়ে যায় তার না থাকে 'জয় পাকিস্তান' বলার উপায়, না থাকে ফিরে আসার সুযোগ। এর পরিনতি শুধুই স্বাধিনতায়।
স্বাধিনতার ঘোষনা নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। আমার কাছে এই ব্যপারটা একেবারেই গৌন মনে হয়। খুব কম দেশই আছে যারা ঘোষনা দিয়ে স্বাধিন হয়ে হয়েছে। স্বাধিনতার প্রেক্ষিত একেক দেশে একেক রকম। কোন জাতি স্বাধিন হতে চাইলে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তা ধিরে ধিরে পরিনতির দিকে এগিয়ে যাবেই। ভারত-পাকিস্তানের স্বাধিনতার জন্য আগাম স্বাধিনতা ঘোষনার প্রয়োজন পড়ে নি। ভিয়েতনাম '৪৫ সালে ফ্রান্স এবং আমেরিকার সহযোগিতায় ঘোষনা দিয়ে স্বাধিন হয়ে যায়। যদিও তাদের ইতিহাস পরবর্তিতের আবার অন্যদিকে মোড় নেয়। যুদ্ধ করে স্বাধিন হওয়ার কাহিনী সব সময়ই অন্য রকম। কেউ ঘোষনা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে দেয়, কেউ যুদ্ধ শুরু করে ঘোষনা দেয়। কেউ আবার মুক্ত হয়ে স্বাধিনতার ঘোষনা দিয়ে থাকে।
জিয়াউর রহমান স্বাধিনতার ঘোষনা দিয়ে থাকলে সেই রেকর্ডকৃত ঘোষনাটি জনসম্মুখে প্রচার করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। না হলে সংসদ আছে সেখানেও প্রচার করে দেখা যেতে পারে। আসলে দেখতে হবে তার স্বাধিনতা ঘোষনা দেওয়া এখতিয়ার আছে কি না। এই যুগে সেই ঘোষনা শোনা একেবারেই কোন কঠিন ব্যাপার নয়। এখনই যে কেউ Youtube কিংবা অন্য যে কোনও মুক্তিযুদ্ধের ওয়েবসাইটে যেয়ে শুনতে পারেন। তিনি ঘোষনা দেন নি কিন্তু পাঠ করেছেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে। এটা তিনি ঘোষনাতেই বলেছেন। এটি শোনার পরও যদি কেউ বিশ্বাস না করে এবং এটিকে একটি সরাসরি ঘোষনা বলে চালিয়ে দিতে চান, তা'হলে বুঝতে হবে তিনি আগাম mindset করে বসে আছেন। তাকে সত্যটা দেখানো মুস্কিল। সেই সময় একজন সামরিক কর্মকর্তার মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য একটি ঘোষনা খুবই জরুরী ছিল এবং সেই একাত্মতাই জিয়াউর রহমান ঘোষনার মাধ্যমে করেছিলেন।
এ, কে, খন্দকার কেন এবং কিসের ভিত্তিতে এই অবাস্তব তথ্যটি দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করলেন সেটা তিনিই জানেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবে প্রমান করার দায়িত্বও তার। তবে আমাদের দেশে নিজের স্বত্বা, নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে একেবারে বিপরীতমুখি হয়ে যাওয়ার রাজনীতিবিদদের সংখ্যাও কম নয়। শুধু রাজনীতি নয়, এই দেশটাকে নিয়ে খেলা চলছে অনেক দিন থেকে। কিছুটা নিজেদের স্বভাব, বাকিটা বাইরের প্রভাব।
একটি দুষ্টচক্র আমাদেরকে বহুদিন ধরেই বিভ্রান্ত করার প্রয়াস চালিয়ে আসছে। আমরা একটিই জাতি, একই ভাষা, একই আচার, তারপরও আমরা বিভ্রান্ত হয়ে থাকি। বিচার বিশ্লেষনের ক্ষমতা আমাদের এতটাই কম যে আমাদের যা কিছু গৌরব আর অহংকার, তার সবই ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিঃশ্ব হয়ে যাই! দীনতা আমাদের কম নয়, একটু বেশীই।
©somewhere in net ltd.