নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেনিআসহকলা

সবাইকে শুভেচ্ছা।

শফিক আলম

মানুষকে বিশ্বাস করতে চাই এবং বিশ্বাস রেখেই কাজ করতে চাই।বাস্তবের ভিতরে বসবাস করতে ভালবাসি। কল্পনা করতে ভাল লাগে, কিন্তু বাস্তবকে ভুলে নয়। সততা বলতে আংশিক বুঝি না, পুরোটাই বুঝতে চাই। প্রকৃতির মাঝে শান্তি এবং স্বস্তি দু\\\'টোই খুজে পাই। নারীর প্রতি আকর্ষন আছে তবে উন্মাদনা নেই। বয়সকে অনেক ক্ষেত্রেই বাধা মনে করি না। লিখতে ভালবাসি, কবিতা-গল্প, যা কিছু। চারটে বই প্রকাশ করেছি নিজ উদ্যোগে। প্রতিভা নেই, শখ আছে। অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে, পারি না কেন বুঝি না।

শফিক আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলের গল্প, চোখের জলে...

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৮

আজ নাজিম এসেছিল অফিসে। এই তরুণ মানুষটাকে আমার ভাল লাগে। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের প্রথম সাক্ষাতেই ভাল লেগে যায়। অথবা এভাবে বলা যেতে পারে তাঁদের হয়তো কিছু ক্ষমতা থাকে অন্যকে কাছে টানবার। সে ভদ্র, বিনয়ী এবং হাসি-খুশি। আমার ভাবনার সঙ্গে কিছুটা মিলে যায়, হয়তো এটাও একটা কারন ভাল লাগার।

জিজ্ঞেস করলাম, ঢাকা শহরটাকে কেমন এনজয় করছো!

কিছু না বুঝে বললো, বুঝলাম না স্যার।

আমি বললাম, দেখো, সারা দুনিয়াতে কোথাও পাবে না এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহর তলিয়ে যায়। ভেনিস নগরীর খালগুলো এমন ভাবে চলে গেছে যেন দালানগুলো পানিতে ভাসছে। সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্য তৈরিই করা হয়েছে ওভাবে। আর আমাদের দেশে ঢাকা শহরের দালানগুলো এখন পানিতে ভাসে আমাদের ব্যর্থ, নির্লিপ্ত, নির্বিকার মানসিকতার জন্য। পার্থক্য একটাই, ভেনিসের পানিতে নৌকা ভাসে, আর আমাদের পানিতে গাড়ি, রিক্সা-ভ্যান এবং মানুষও ভাসে। কখনো হুমড়ি খেয়ে পড়ে আবার ভেসে ওঠে। বেদনাহত মানুষের চোখের জল দেখার উপায় নেই। জলে জলে একাকার! এগুলো তো এনজয় করার মতই ব্যাপার, তাই না?

আমি বলেই চলি, পানির জট কেটে গেলে আমাদের ভ্রান্ত জীবনের উদার পাওনা হিসেবে জ্যামজট এসে কপালে জুটে। হয় এটা, নয় ওটা। গতকাল অফিস থেকে বাসায় ফিরেছি আড়াই ঘণ্টায়। তাও আবার হাতির ঝিলে গাড়ি রেখে হেঁটে বাসায় গিয়েছি, যেখানে আটকে ছিলাম প্রায় এক ঘণ্টা। ওখান থেকে বাসায় গেলাম আট মিনিটে আর ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে বাসায় এলো আরও ৪৫ মিনিট পরে। শুনলাম গতকাল ঢাকা শহর প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল, জলজট আর জ্যামজটে। এসবই তো এনজয় করার মত ব্যাপার!

নাজিম বলে, স্যার, এখন বাইরে বের হওয়াই বন্ধ করে দিয়েছি। কাজ থাকলেই শুধু বের হই, বাকি সময়টা বাসাতেই কাটিয়ে দেই।

আমি বলি, দিন যাচ্ছে আর আমাদের চামড়া মোটা হচ্ছে। আমরা সব সহ্য করে নিতে পারি। তুমি কাজ না থাকলে বাড়িতে বসে থাকাই শ্রেয় মনে কর, আমিও তাই মনে করি। এরকম আরও অনেকেই তাই মনে করে। তাহলে জীবনের মানেটা কি? এতো মোরগ-মুরগির জীবন! একটা খোয়ার আর ছোট্ট একটি উঠান। ব্যস! সমাজবদ্ধ মানুষ আমরা দিনের পর দিন অসামাজিক হয়ে যাচ্ছি। আমরা চার দেয়ালে আবদ্ধ হয়ে পড়ছি। প্রতিদিন দুই আড়াই ঘণ্টা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যখন বাসায় ফিরি তখন সব ভুলে যাই, বড্ড নিরাপদ আর সুখের মনে হয়। সব ভুলে যাই। কিন্তু কতদিন? মানুষের জীবন মানুষের মত না হলে একদিন আমাদের ভেতর থেকে মানবিক গুণাবলি লুপ্ত হয়ে যাবে। ক্রমাগত হতাশায় ডুবে থাকলে মানুষ বেশিদিন প্রকৃতিস্থ থাকতে পারে না।
নাজিম বলে, স্যার, গতকাল ফেসবুকে একজন সংসদ ভবনের সামনের ছবি পোস্ট করে লিখেছে ‘বলুন তো সংসদ ভবন কোন নদীর তীরে অবস্থিত’!

সত্যিই তো, সব যখন ডুবে যায়, অচল হয়ে যায় তখন কেবল পরিহাসই বেঁচে থাকে। কোন জায়গাটা ডুবেনি কাল?
আমি বলি, কি করে বের হবে এই অবস্থা থেকে! জীবন-যাত্রা দিন দিন অচল হয়ে যাচ্ছে। সময় কিভাবে আমাদের জীবন থেকে প্রতিদিন কত মুল্যবান অংশ কেড়ে নিচ্ছে ভাবতে পারো?

নাজিম বলে, উপায় নাই!

আমি ওর দিকে চেয়ে থাকি। বলি, তুমি কি জানো এই শব্দ দু’টি কি রকম ভয়ঙ্কর? হতাশার শেষ কথা। এই শব্দ দু’টির পর পরিণাম হিসেবে বেঁচে থাকে কেবল ‘আত্মসমর্পণ’। কি যুদ্ধের ময়দানে, কি জীবনের দীর্ঘ পথ চলায় যখন বলা হয় ‘উপায় নাই’ তখন আত্মসমর্পণ করতে হয় নিয়তির কাছে। আমরাও এখন যুদ্ধ না করেই আমাদের জীবনটাকে ছেড়ে দিচ্ছি নিয়তির কাছে।

আমি ওর কথায় সায় দিয়ে বলি, তুমি ঠিকই বলেছ, উপায় নেই। আমিও তাই মনে করি। এই উপায় নেই’র জায়গায় একদিন এসে দাঁড়াবার ভয় ছিল বলেই গত এক দশক ধরে আড্ডায় বা লেখালেখিতে বলে আসছি আমার আশংকার কথা। বড় বড় মানুষেরা হতাশায় থাকলেও বলে ‘আমি আশাবাদী মানুষ’। আমি নগণ্য এক সাধারন মানুষ, এসব ডায়ালগে কিছু যায় আসে না। তাই সত্যি কথাটাই বলি ‘আমি আশাবাদী নই’, অন্ততঃ এই ঢাকা শহর নিয়ে। সময় বয়ে গেছে অনেক, কেউ কিছুই করেনি।

যে কাজের জন্য এসেছিল সেই কাজ সেরে একসময় নাজিম চলে যায়।

আমি পড়ে থাকি আমার মাঝে। এই ঢাকা শহর আমার নয়, ক’বছরই বা থেকেছি আমি এই শহরে। কিন্তু রাজধানীটা তো আমার। একটা দেশের প্রাণকেন্দ্র এইভাবে মরে যায় কেমন করে! মানুষ না মারলে শহর মরে কিভাবে? সোজা কথায় আমরা বলাৎকার করেছি এই শহরটাকে। কিছু মাটি খেকো মানুষ শহরের আশে পাশের সব খাল ভরাট করে ফেলেছে নির্দয় ভাবে, দেখার কেউ ছিল না। কিছু টাকা খেকো মানুষ শহরের সব নালা-নর্দমা ভরে যেতে সাহায্য করেছে। আর আমরা উদাসীন শহরবাসী ‘দেখি না কি হয়’ ভেবে ভেবে ষোল কলা পূর্ণ করেছি। রাজনীতিপ্রিয় মানুষ আমরা রাজনীতির ঘাস খেয়ে জাবর কেটেছি মনের সুখে।

আমরা আবাসস্থল তৈরি করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছি, পথের খোঁজ করিনি কখনো। পরিণামে এখন ‘পথ হারাবো বলে এবার পথে নেমেছি’। পথেই বসে থাকি আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা! বৃষ্টির জলে দাঁড়িয়ে আমরা চোখের জলে দিশাহারা। আমরা পথ হারিয়েছি, দিশাও হারিয়েছি।

এখন নদী-নালা-খাল-বিল বলে...আমার বলাৎকারে হবে তোমার সর্বনাশ!
বৃষ্টি বলে...আমি তো ঝরবোই, জলধারা বয়ে যাওয়ার পথ যদি না করো তবে আমি তো ভাসাবোই!
বিশ্ববিধাতা বলে...তুমি যদি নিজেই করো তোমার পথ রুদ্ধ, আমি তবে কেন হবো পরিত্রাতা!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪২

আনু মোল্লাহ বলেছেন: খুবই চমৎকার একটি পোস্ট। সহজ কথায় ঢাকার সমস্যাগুলো তুলে এনেছেন।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানাই প্রিয় শফিক ভাই :)

২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সত্যিই তো, সব যখন ডুবে যায়, অচল হয়ে যায় তখন কেবল পরিহাসই বেঁচে থাকে।

আমাদের বেঁচা ধাতার দাবীটা মনে হয় শ্রেষ্ঠ পরিহাস!!!

বক্তব্যপ্রধান হলেও বিষয়গুলৌ সবই নিত্যদিনের কশ্টের। তাই ভাল লাগা +++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.