নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেনিআসহকলা

সবাইকে শুভেচ্ছা।

শফিক আলম

মানুষকে বিশ্বাস করতে চাই এবং বিশ্বাস রেখেই কাজ করতে চাই।বাস্তবের ভিতরে বসবাস করতে ভালবাসি। কল্পনা করতে ভাল লাগে, কিন্তু বাস্তবকে ভুলে নয়। সততা বলতে আংশিক বুঝি না, পুরোটাই বুঝতে চাই। প্রকৃতির মাঝে শান্তি এবং স্বস্তি দু\\\'টোই খুজে পাই। নারীর প্রতি আকর্ষন আছে তবে উন্মাদনা নেই। বয়সকে অনেক ক্ষেত্রেই বাধা মনে করি না। লিখতে ভালবাসি, কবিতা-গল্প, যা কিছু। চারটে বই প্রকাশ করেছি নিজ উদ্যোগে। প্রতিভা নেই, শখ আছে। অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে, পারি না কেন বুঝি না।

শফিক আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

নদীর রক্তের রঙ কালো

১৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৫৭

ক'দিন ধরেই, বিশেষ করে রোজার পর থেকে বাড়ি থেকে হাতিরঝিল গুলশান হয়ে অফিসে আসছি জ্যামজট এড়ানোর জন্য। লাভ যা হচ্ছে তা তেমন উল্লেখ করার মত নয়। এদিক দিয়েও মাঝে মাঝে ভালই আটকে যাই।
গুলশান লেক-এর পাশ দিয়েই আসতে হয়। বলা যায় উপর দিয়েই আসতে হয়। ব্রিজটা পার হয়ে বনানীর ১১ নাম্বার রাস্তা ধরতে হয় যে। প্রতিদিনই লেকটাকে দেখি আর মনটা খারাপ হয়ে যায়। লেকের পানি কালো হয়ে গেছে। সুন্দর লেক তার জল কালো!

আমাদের ঢাকা শহরটা হাওয়ায় ভেসে আছে। উপরের দিকে তাকিয়ে বলতে হয় মেগাসিটি। নিচের দিকে তাকালে ঘেন্না লাগে! এই শহরের মানুষেরাও হাওয়ায় হেঁটে চলে, মাটিতে পা রাখে বলে মনে হয় না। নইলে শহরটাকে বাঁচাতে চাইতো। একে মেগাসিটি বলার কারণটা বুঝতে বাকি থাকে না। ঐ যে উঁচু উঁচু অট্টালিকা আর বাহারী বড় বড় গাড়ী! অট্টালিকা যেমন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, তেমনি গাড়িও দাঁড়িয়েই থাকে। রাস্তা নেই, নিয়ম নেই, কানুন নেই, পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে হাঁটা যায়না। তবুও মেগাসিটি! আসলে বুক চিতিয়ে বলা-কওয়ার আনন্দই আলাদা। শুনে পুলকিত হই।

আমার এক বন্ধু ছিল। পাড়ার বন্ধু। ছাত্র হিসেবে একেবারেই ভাল ছিল না। যে কারনে আমাদের স্কুলে চান্স ছিল না। খারাপ ছাত্র অথবা যারা লেখাপড়া করতে চাইতো না তাদের জন্য অন্য স্কুল ছিল। মেট্রিক পাশ দেওয়ার পর শুনলাম ব্যবসা করছে। একদিন দেখি সে পেটটাকে সামনের দিকে বাড়িয়ে একটু পিছনে হেলে হাঁটছে। ভুঁড়ি হয় নি, কিন্তু ভুঁড়িওয়ালার ভাব করছে। কেন? ঐ যে বুক চিতিয়ে বলতে-কইতে চাইছে, আমি ব্যবসায়ী বড়লোক! ভুঁড়ি যার আছে তার টাকা আছে, এমন একটা ধারনা আমাদের মাঝে প্রচলিত আছে। ওর অবস্থা দেখে হাসি পেতো, দু;খও লাগতো বেচারার জন্য। কিন্তু ঢাকার অবস্থা দেখে তো দুঃখ করতে পারিনা, এযে আমারও শহর! আদি ঢাকাইয়া না হলেও বসত গড়েছি যে হেথায়! বড় বড় অট্টালিকা পেট উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, চোখে সানগ্লাসের মত রিফ্লেক্টিভ গ্লাস। ওদিকে নিচে নোংরা বিষ্ঠাময় পদযুগল। এই শহরের মানদণ্ড হিসাব করা হয় উপরের দিকে তাকিয়ে। কতগুলো সুউচ্চ দালানকোঠা হয়েছে তার উপর। বাসযোগ্য কিনা সেটা অবশ্যই বিবেচ্য নয়। তবে সত্যি কথা এই যে আমরা সবাই কংক্রিটের বস্তিতে বসবাস করছি। অগাধ টাকাপয়সার মালিক যারা তারাও খুব একটা সুখে নেই, সেটা বনানী-গুলশান দেখলেই বুঝা যায়। সেখানেও নর্দমার পানি উপচে পড়ে। মহানগরের বনেদী পাড়ার এই অবস্থা!

গুলশান লেকের পানি কালো, ওদিকে হাতিরঝিলের পশ্চিম দিকটায়, যেখানে সোনারগাঁও পাঁচতারা হোটেল, তার পাদদেশের পানির দিকে তাকানো যায় না, বমনের উদ্রেক হয়। দুর্গন্ধে মাথা ব্যথা করে। তবু ওটা আমাদের গর্বের লেক। ওর আশে পাশে সবই আছে। বসতবাড়ি, কিছু দোকানপাট এবং সেই পাঁচতারা হোটেল। বুক চিতিয়ে বলি, আমাদের হাতির ঝিল!

পানি আমাদের সহ্য হয় না বোধ হয়। নদীমাতৃক দেশ, অনেক শুনেছি আর কত! কি হবে নদী-জল দিয়ে। মাটি চাই, শুধুই মাটি। টিক্কা-ইয়াহিয়াও বলেছিল 'মাটি চাই'। মানুষ গণ্য নয় মোটেই। এখন আমরাও তাই বলি। মাটি চাই আমার অট্টালিকার জন্য, আমার ব্যবসার জন্য, আমার বসতভিটার জন্য। আর তাই বোধ হয় আমরা নদী-পুকুর-লেক হননে ব্যস্ত। বুড়িগঙ্গাকে মেরেই ফেলেছি বলা যায়। বলাৎকার করতে করতে বেচারীর শরীরের কিছু রাখা হয় নি। শীর্ণ হয়ে গেছে। এখন রক্তক্ষরণ চলছে। আচ্ছা নদীর রক্তের রঙ কি কালো? কালোই বোধ হয়। নইলে সব মৃতপ্রায় জলাধারের রং কালো কেন? আমাদের এই মেগাসিটির সকলের মল-মুত্র আর বর্জ্যের আধার হচ্ছে এইসব নদী-লেক। আমরা কালো দেখছি চারিদিক...পুতিগন্ধময় কালো।

কিন্তু কালোর আরেক নাম যে অন্ধকার। নয় কি?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:১৬

মুচি বলেছেন: ভাই মলমূত্রে পানি এত কালা হয় না, এগুলো জৈব বর্জ্য। সর্বনাশের সবটাই আমাদের কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য। অপরিকল্পিত বাংলাদেশ। :(

১৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৩৪

শফিক আলম বলেছেন: ভাই মুচি, একবার হাতিরঝিলের সোনারগাঁও হোটেলের পাদদেশটা ঘুরে আসু্ন, বুঝতে পারবেন গন্ধটা কিসের! কালোও তেমনি। কোথা থেকে আসে এগুলো! অস্বীকার করি না কারখানার বর্জ্যই মুলতঃ দায়ি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.