নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য সবসময় সত্য,আমি সত্যেরই সারথী।লেখালেখির অভ্যাস পুরানো,ফেলতে পারি না;সময় অসময়ে জেগে ওঠে।ব্লগ কিংবা ফেবুতে আমি একজনই..\"শাহেদ শাহরিয়ার\'\',জয়\' নামটা বন্ধুদের দেয়া।ওটা\'ও তাই রেখেই দিয়েছি।লিখছি,যতকাল পারা যায় লিখব;ব্যস এতটুকুই!

শাহেদ শাহরিয়ার জয়

আমি শাহেদ শাহরিয়ার,একটু আবেগি আর খানিকটা যৌক্তিক।

শাহেদ শাহরিয়ার জয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘৃণার ছায়ার নিছে আমি!

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৫

*****২৬১৩৫৮ নম্বরটি মোবাইল স্কিনে সহস্রবার তুলেছি,সাহস হয়নি কিছু বলার জন্য ফোনটা করি।আজ,এতটা সময় পরও ওর কোন কিছুই আমার কাছে বিবর্ণ হয়নি,এমনকি ওর মোবাইল নম্বেরর ডিজিটগুলো এলোমেলো হয়ে স্থান বদল করেনি।সময় হয়তো ফেলে এসছি,স্মৃতি ঠিকই বয়ে বেড়াচ্ছি.. :ইন্টারের সময়টা বেশ ছোট,তার ওপর ওর সাথে ঝগড়ায় চলে গেছে প্রায় দেড়টা বছর।২য় বছরের শেষ সময়টা আমাদের কলেজের বাগানেই বেশি কেটেছে।কর্ণফুলির ছলছল ছুটে যাওয়া,মেহগুনির বিশাল সারি আর দুপাশে পাহাড়ের রাজত্বের মধ্যে আমরা ছিলাম অবাধ্য।কি করে যেন ওর সাথে আমার কথা বলার শুরু,যাকে একটা সময় প্রচন্ডরকমের ঘৃণা করতাম,তাকে ছাড়া যেন সময়টা কাটতেই চাইতো না!
তখন ভাবনাই আসেনি সে কি করে আমায় বন্ধু হতে বলে যে কিনা আমি এক নম্বর বেশি পেলে ক্লাসে রীতিমত এলাহি কান্ড বাধিয়ে দেয়।আর আমিও কিকরে যেন ওর অনুরোধ ফেলতে পারি নি।আসলে সেটা কেউই ফেলতে পারত না! ওর চোখে কি যেন ছিল,যেটা দিয়ে সে ছেলেদের মনের লুকানো কথা পড়তে পারত,ওর কন্ঠে নীলকন্ঠ পাখি তার আপন সুরটা দিয়ে গেছে,শত সহস্র কোলাহলেও সে কন্ঠ চিনতে না ফিছন ফিরতে হয় না বেগ পেতে হয়।সে পায়ে কোন নূপুর পরতো না,তারপরও কাছে এলে মনেহয় ঝুম-ঝুম কিছু একটা বাজছে!ক্লাস শেষে যখন বাসায় ফিরতাম,লুকিয়ে আয়নায় দাঁড়িয়ে ওর বলার ভঙ্গিটা অনুকরণ করতাম আর নিজের ভুল অনুকরণে নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে যেতাম।আসলে ওর অনুকরণই ছিল আমার দুর্বলতা!কলেজের শেষ সময়টায়,এই অনুগত ছাত্রটা তাই শেষ কাতারের ছাত্রে পরিণত হলো,স্যারদের বাংরবার সাবধানবাণীকে তুচ্ছ করে,কলেজের খাতায় পাওয়া নম্বরের চেয়ে ওর কাছে পাওয়া একটু প্রশংসাই আমাকে আপ্লুত করতো।ভবিষ্যত ভাবনা বলে কিছু থাকতে পারে সেটা আমার ভাবনায়ও ছিলনা,ওকে নিয়ে কাটানো বাগানের কয়েক ঘন্টাই ছিল আমার জীবন,বাকি সময় অবাস্তব,অর্থহীন!
স্বপ্নীল সময়টা খুব দ্রুতই যাচ্ছিল,শুধু রয়ে যাচ্ছিল মনের মধ্যে উষ্ণ আর টগবগে কত্তগুলা স্মৃতি,ফাইনাল পরীক্ষা ঘনিয়ে আসলেও আমার মনের মধ্যে কোন সংশয় ছিল না,ছিল বিজয়ীর ভাব,এ প্লাস পাওয়ার চেয়ে ওকে পাওয়াটাই আমার কাছে বেশি জরুরি।নিজের মনকে বোকা বানাতে,এডিসনের একটা কথা তখন ধ্রুবসত্য ধরে নিয়েছিলাম: পরীক্ষার কয়েকটা কাগজ আমার ভবিষ্যত নির্ধারন করতে পারে না!
যথারীতি পরীক্ষার সময় আসলে আমি হেলে দুলে পরীক্ষা দিতে লাগলাম,রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কোন থিওরিই আর আমার মাথায় অবশিষ্ট ছিল না,যা ছিল তা নব্য প্রেমে পরা অকালপক্ক মনের একঝুড়ি রঙ্গিন আবেগ,পরীক্ষার নিরেট সাদাখাতায় সেটা ঢালার যোগ্য না!তিন ঘন্টা সময়ের দু'ঘন্টা ত্যক্ত- বিরক্ত হয়ে লিখলাম,আর তিন ঘন্টার পরও যারা গম্ভীর,কিছু খোয়া যাওয়া চেহারা নিয়ে বের হতো তাদের দেখে হাসতাম!বাবা-মা অতসব বুঝতো না,শুধু জিঙ্গেস করতো: পরীক্ষা কেমন দিচ্ছি আর আমি এক কথায় বলতামঃ ভাল!
শেষপর্যন্ত সেটা আর ভাল থাকেনি,ক্লাসের ছিলাম ফার্স্টবয়,সেটার সুবাদে হয়তো পরীক্ষার রেসাল্টে নিচের দিকে নামটা ছিল আর সবার ওপরে ছিল ও!আমি তখনও বুঝে উঠতে পারিনি কি ভিষন যন্ত্রণা ওঁত পেতে আছে আমার জন্য,ও ফার্স্ট হয়েছে এর চেয়ে খুশির খবর আর কি হতে পারে!আমিতো শেষপর্যন্ত সেটাই চেয়ছি যে,ও ফার্স্ট হোক; ও-র স্বপ্নটাই তো আমার স্বপ্ন,ওর বিজয় মানেইতো আমার বিজয়।কিন্তু সত্যিকারে সেই বিজয়ী হয়েছে: সে বিজয়ী হয়েছে তার কুটনীতিতে,বিজয়ী হবার কুটনীতি!সে জানত আমাকে বই থেকে আলাদে করতে পারলে তার বিজয় নিশ্চিত,স্কুল জীবনে সে অদ্বিতীয়া,কলেজে কি করে তার স্থানচ্যুত হয়!তার কুটনীতির কাছে আমি প্রথমবার হারিনি,যখন সে আমার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হতো কিন্তু দ্বিতীয়বার বিজয়ী হবার আশায় গিলোটিনে মাথা ঢুকিয়েছি।মাথা হয়তো কাটেনি,নাক কেটেছেঃ বাবা-মা আর পরিবারের,আমার কোথাও কাটার ব্যাথা অনুভূত হয়নি শুধু মনটা দুমড়ে- মুচড়ে গেছে!যখন ও ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে আমার সাথে তার ব্যবধান চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাল,আমি কিছুই দেখিনি: শুধু মনে হলো কিছু একটা ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে,আমার প্রতি ওর ভালোবাসা আর ওর প্রতি আমার ঘৃণা।ছয় কিংবা সাত মাসে সে এক অদ্ভুত ছায়া ফেলে গেছে,যার বাইরে না আমি যেতে পারি, না ওর অদৃশ্য অবয়বটাকে ঘৃণার বানে ভাসিয়ে দিতে পারি!
আজ,অনেকটা বসন্ত পরে,আমার পাশে আরেকজন দাঁড়িয়ে,সে কুটনীতি জানে না,বুঝেও না,কিন্তু আমি,আমিতো বুঝি।আমি যে সেটা রপ্ত করেছি,আর তাই সে কথা এ মানুষটাকে একটি বারের জন্যও বলি নি!যখন মানুষটি ভার্সিটিতে বসন্ত উদযাপনে যেতে বলে আমি কৌশলে এড়িয়ে যাই।আমি চাইনা আমার হৃদয়ে যে একটা অতীত সুপ্ত অবস্থায় পরে আছে তা জেগে উঠুক,চাইনা অতীত আর বর্তমান আমায় নিয়ে হাসুক আর চাইনা ওর ফেলে যাওয়া পথে হাটতে গিয়ে আমি আবার ওর ঘৃণার ছায়ার নিচে আটকা পরি।ও যেখানে ছিল বা আছে সেখানে নাহয় আমি নাইবা গেলাম,ভালোবাসলেতো মানুষকে কত কিছুই উৎসর্গ করতে হয়,আমি নাহয় আমার কিছু সময়,হৃদয়ের একটা অংশ,কিছু স্মৃতি আর কিছু স্থান ওর জন্য ত্যাগই করলাম!তবুও সে ভাল থাকুক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.