নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

~~~আটপৌড়ে কাব্য......

~~~কেমন যেন একটা উৎকন্ঠায় আছি.......

শাহেরীন

শাহেরীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছাত্র রাজনীতি বনাম সন্ত্রাস(পর্ব-১)

০৭ ই মে, ২০১০ রাত ২:০৬

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সোনালী ইতিহাস ছাত্রদের আন্দোলনের কাছে অসাধারন ঋনী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে স্বাধীনতার পরে ছাত্ররাজনীতির কোনো স্বচ্ছ এবং গঠনমুলক ধারা গড়ে উঠেনি আমদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ছাত্র রাজনীতির সর্বশেষ অবদান ছিল ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধি আন্দোলনে। কিন্তু এরপরই মূলতঃ পথ হারিয়ে ফেলে দেশের শীর্ষ ছাত্র সংগঠনগুলো, যদিও সাধারণ ছাত্ররা বিভিন্ন সময়ে নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। কিন্তু দলীয় রাজনীতি আর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিনত হয়েছে বারবার যুদ্ধক্ষেত্রে। এর সাথে চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, ভর্তি বানিজ্য এসব তো আছেই। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষে ছাত্রছাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনা সারা পৃথিবীতে বিরল হলেও বাংলাদেশে প্রায় নিত্য নৈমিত্যিক ঘটনা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালগুলোর সেশন জট নামক বিষয়টা কত অদ্ভুত আর অপরিচিত তা কেবল বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায়।

এই বিষয়ে ২০০৭ সালের ছাত্র আন্দোলনকে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনাই বলতে হবে, যেখানে ছিল প্রকৃত ছাত্রদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ। যদিও তখন আমাদের তথাকথিত রাজনীতিকরা ছাত্রদের সক্রিয় আন্দোলনকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। আর তাদের হীন আচরনের জন্য এবং ছাত্রদের যোগ্য নেতৃত্ব(কারণ ছাত্রদের সংগঠনগুলো মূলতঃ রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুরবৃত্তি) না থাকায় ঐ আন্দোলন এগুতে পারেনি, বা পুরোপুরি সফল হয়নি। তবে প্রকৃত ছাত্রদের সক্রিয় ও স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ আর্মি শাসিত তত্তাবধায়ক সরকারের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল।



বর্তমানে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক তথাকথিত ছাত্র রাজনীতির তান্ডবে ফের অশান্ত হয়ে ওঠেছে দেশের শিক্ষাঙ্গন। এর উত্তাপ গিয়ে লেগেছে জাতীয় রাজনীতিতেও। ২০০৯ সালের ১১ মার্চ ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে মারা যান শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি নোমানী। এর ধারাবাহিকতায় গত ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১০ সালে একই ধরনের আরেকটি সংঘর্ষে মারা যান ছাত্রলীগ নেতা ফারুক। প্রতিদিনই চলছে কোথাও না কোথাও সংঘর্ষ অথবা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংঘর্ষের কারণেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয়। ভর্তি কার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে পারছেনা প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও চাঁদাবজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্য, ক্ষমতার লড়াই ও হল দখলসহ অপরাধের সব শাখায়ই রয়েছে ছাত্রনেতাদের অবাধ বিচরণ। অপরাধের বৃত্তে বন্দী এখন ছাত্র রাজনীতি। স্বার্থ নিয়ে অর্ন্তকলহ আর সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে তারা। আর এর শিকার হচ্ছেন একের পর এক শিক্ষার্থী। ঘটছে জঘন্য হত্যাকান্ড। প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন এসবে জড়িয়ে পড়ছে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই ৭৩ টি হত্যাকান্ড হয়েছে। সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে ঝরে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু বকর। আবু বকরকে নিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত ছাত্রলীগের হাতে আটজন খুন হলেন। সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের হাতে খুন হলেন ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক। বেশ কয়েকজনের রগও কেটে দিয়েছে তারা। এর রেশ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মী মাসুমও খুন হন। করিৎকর্মা পুলিশ ফারুক হত্যা মামলায় শিবিরের এক নেতাকে গুলি করেও মেলে ফেলেছে ইতিমধ্যে। এ নিয়ে এ বছরই তথাকথিত ছাত্ররাজনীতির বিষাক্ত থাবায় এগারো জন ছাত্র খুন হলেন। এভাবে হত্যার মিছিলে লাশের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। এর যে রাশ টানা হবে তারও কোন লক্ষণ নেই। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের গঠনতন্ত্রে ছাত্র সংগঠনকে অংগ সংগঠন থেকে বাদ দিয়ে সহযোগী সংগঠন হিসেবে রাখলেও আগের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। ছাত্র সমাজকে লাঠি হিসেবে ব্যবহার করার প্রচন্ড আকর্ষণ থেকেই তারা ছাত্রদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে তাদের লেজ হিসেবে তাদের রেখে দিয়েছে। ফলে গোড়ায় গলদ রেখে সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতির জন্য যতই চিৎকার করা হোকনা কেন তা কোন কাজে আসবেনা।



একদিকে আবাসন সংকট, বছর বছর ফি বৃদ্ধি, প্রশাসনের হুমকি অন্যদিকে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের নির্যাতন এই হলো বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্র। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্র একই। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, ছাত্র নির্যাতনের নিরাপত্তাহীন ফ্যাসিষ্ঠ কারাগারে বন্দী আমরা নিজেরা, আমাদের শিক্ষা জীবন। আবু বকরের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে যখন সরকারের মন্ত্রীরা বলেন, “তারা বিব্রত বোধ করছেন”, “এরকম ঘটনা ঘটতেই পারে” তখন আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না কারা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সন্ত্রাসীদের কাছে ইজারা দিয়েছে।।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৯

ধারণা বলেছেন: একমত পোষণ করছি।

১৪ ই মে, ২০১০ সকাল ১১:১৬

শাহেরীন বলেছেন: ধন্যবাদ.....

২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৬

যুক্তিপ্রাজ্ঞ বলেছেন: আমি ছাত্র রাজনীতির ঘোর বিপক্ষে. ৫২-৬৯ এর উদাহরণটানা প্রগলভ বুদ্ধিজীবীরা পুঁথি-গেলা বিপ্লব করে করে দেশ ও দশের ক্ষতি করে এখন রাজনীতির ঝোলখাওয়া বোল আওড়ে যান, তাদের সাবালকত্ব হয় না, হায়! তারা ৫০-৬০ দশকের নিরক্ষর দেশের কলোনিয়াল সমাজ আর আজকের সমাজের ভিন্নতা ভুলে যান, অতীত ছাড়া তাদের কোন বক্তব্য নাই, দলবাজী ছাড়া দৃষ্টিভঙ্গি নাই. বিদ্যাপীঠে বিদ্যাশিক্ষা ছাড়া বাকিসব গৌণ - এ বোধটুকু তাদের ঘটে কখনও ঢুকে না. তারা মস্ত প্রবন্ধ লিখে, টকশোতে এসে গাঢ়স্বরে শাদাচুলের ভারে মাথা কাত করে জানিয়ে দিয়ে যান, ছাত্ররাজনীতি না থাকলে নাকি দেশে নেতৃত্ব তৈরি হবে না! হায়, এত ছাত্ররাজনীতি করেও গত ৪০ বৎসরে আমরা শুধু অঘাবগাই পেলাম, নেতা পেলাম না! মহাথির-ব্লেয়ার-সারকোজি-ওবামা-রাজিব গান্ধি-মনোমোহন –- এরা কেউ ছাত্ররাজনীতি না করেই দেশের রাজনীতিতে সফল, আমাদেরই ছাত্ররাজনীতি না হলে নয়. দেখুন, ছাত্ররাজনীতির নামে কীসব প্রোডাক্ট পেয়েছি আমরা -– তোফায়েল, আসম রব, মাখন, প্রধান, আমান, নিরু, অভি, পিন্টু –- এদের যে কাউকে নিয়ে ভাবলেই মানসপটে ভেসে উঠে চণ্ডাল, মাস্তান, নীচ, দুর্নীতিবাজ এক গণশত্রুর প্রতিমূর্তিng. আমি জানি না, এদের ব্যপারে কেউ কোন উচ্চ ধারণা পোষন করেছেন কি না.

ঢাবি নাকি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড –- কী কী গুন নিয়ে এই অক্সফোর্ডামি? ছাত্র রাজনীতি দিয়ে? দলবাজি দিয়ে? সাদা-নীল-গোলাপি দিয়ে? অস্ত্র-বোমা-খুন-ধর্ষন দিয়ে? চাঁদাবাজি দিয়ে? টেন্ডারবাজি দিয়ে? লেজুড়বৃত্তি করে? ‘ভাঙ্গ-গাড়ি’র চণ্ডালি করে? শিক্ষার, গবেষণার মান ও পরিবেশ নিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলার আত্মতৃপ্তি সুদূর অতীতেই বিলিন হয়েছে. স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে যখন ছাত্ররাজনীতি চালু হয়, তখন থেকেই এই অধপতনের শুরু, এখনতো অবস্থান স্রেফ গাড্ডায়. স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে সময়ের দাবি হিসাবে এই পতন জাতিকে মেনে নিতে হয়েছিল, কিন্তু এখন কেন? আর কত? শোনা যায়, জিয়া রাষ্ট্রীয় সফরে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন, সাথে ক’জন ছাত্রনেতাও ছিলেন. সিঙ্গাপুরের কর্তৃপক্ষ জানাল, তারা ছাত্র কী তা জানে, নেতা কী তাও জানে, কিন্তু ছাত্রনেতা কী তা জানে না, সুতরাং তারা রাষ্ট্রীয় আতিথিয়তা পাবে না. জাতি হিসাবে ইতরামী ও নৈরাজ্যপনায় আমরা জুড়িহীন -– ছাত্রনেতা আমাদের ইউনিক আবিস্কার!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.