নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক

Shahin H Khan

আমি নিজেকে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে ভাবতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।আমি দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করলেও এমন একটি প্লাটফর্ম খুঁজে ছিলাম যেখানে মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা পাওয়া যাবে।বছর খানেক আগে প্রায় প্রতিদিনই একের পর এক ব্লগার হত্যা করা হলে সাভাবিক ভাবেই আমি ব্লগে লেখালেখির চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলি।অবশেষে Somewherein blog এ লেখালেখি করার জন্য মন স্থির করলাম।যানি না কতটা পথ অতিক্রম করতে পারবো।তবে সফলতার সাথে বহুদুরের পথ অতিক্রম করতে সকলের সহযোগিতা চাই।

Shahin H Khan › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন সিনহা ও স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বপ্ন ভাঙ্গন

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১২







এস কে সিনহা ও স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বপ্ন ভঙ্গন


বিচার বিভাগ।একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। বিচার বিভাগ বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক পুরোপুরি স্বাধীন। দেশের রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের একজন জেষ্ঠ্য বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। বিচারপতি মোজাম্মেল হকের পর দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নিয়োগ দেয় বর্তমান সরকার। তিনিই দেশের একমাত্র হিন্দু প্রধান বিচারপতি। তখনকার সময় অনেকেই ধারনা করেছিলো যে,মোদি সরকার কে খুশি করতেই তখন সরকার একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী এস কে সিনহাকেই বেছে।কারন জনাব এস কে সিনহার চেয়ে ৩ মাসের সিনিয়র ছিলেন তখনকার আপিল বিভাগের বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।সিনহাকে নিয়োগ দেওয়ায় মানিক সাহেব ক্ষোভে ফেটে পরেন। এরপরের ঘটনা আমরা সবাই জানি


ভারতকে খুশি করতে গিয়ে সরকার যে খাল কেটে কুমির নিয়ে আসতে চলেছে তখন সরকার মোটেও আচ করতে পারেনি।সিনহা সাহেব সত্যিকার অর্থেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন।আর সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় তখনই যখন তিনি "নিম্ন আদালতের বিচারকদের" নিয়োগ ও শৃঙ্খলাবিধি সংক্রান্ত একটি আইন সংসদে পাশ করার জন্য সরকারকে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।সরকার প্রধান বিচারপতির এই চাপে বেশ বিব্রত বোধ করে।দেশের সর্বোচ্চ আইনকর্তা এটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম বহুবার সময় চেয়েছেন।দিনের পর দিন সময় দিয়েও সরকার যখন বিচার বিভাগের কথা কর্ণপাত করেনি।তখন এসকে সিনহা আইন মন্ত্রনালয়ের সচিব কে কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে " নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির " আইন গেজেট আকারে কেন প্রকাশ করছেন না সরকার তার ব্যাখা চায় আপিল বিভাগ। আর তখনই চটে যায় সরকার। কারন তখন ধারনা করা হচ্ছিল হয়তো কিছুদিন পর আইনমন্ত্রী কেও এর জন্য কাঠগড়ায় দার করাবেন ততকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

"নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি" কি?

আমাদের দেশের বিচার বিভাগ দুই স্তর বিশিষ্ট

১। উচ্চ আদালত(সুপ্রিম কোর্ট)
২। নিম্ন আদালত(জেলা ও মহানগর দায়রা জজ আদালত)

" উচ্চ আদালত বা সুপ্রিমকোর্ট"

উচ্চ আদালত আবার দুই ভাগে বিভক্ত
১।হাইকোর্ট বিভাগ
১।আপিল বিভাগ

হাইকোর্টে
এটি দেশের সর্বোচ্চ আদালত।৭ বছর নিম্ন আদালত ও ৩ বছর সুপ্রিমকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন এমন ব্যক্তিদের রাষ্ট্রপতি ২ বছরের জন্য প্রথমে অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন।দুই বছর পর রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শক্রমে অস্থায়ী থেকে পূর্ন বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

আপিল বিভাগ

আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা ১০জন।প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে ১১জন।

হাইকোর্টে ১০ থেকে ১৫ বছর বিচারপতি হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এমন বিচারপতিদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি।এই পদে একজন বিচারপতি অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বহাল থাকেন।বিচারপতি দের চাকরির বয়স বর্তমান সরকার ৬৭ থেকে ৬৯ করে।বিতর্কিত তত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় দেওয়া বিচারপতি খায়রুল হকের বয়স ছিলো ৬৭।তখন সরকার তাকে খুশি করতে ৬৯ করে তাকে উক্ত পদে আর ২ বছর থাকার সুযোগ করে দেয়।



নিম্ন আদালত

নিম্ন আদালত বলতে জেলা ও মহানগর দায়রা জজ আদালত কে বুজায়।যখন দেশের কোন নাগরিক থানায় একটি মামলা করে তখন মামলাটি প্রথমে জেলা বা দায়রা জজ আদালতেে নিষ্পত্তি হয়।এরপর ভুক্তভোগী রায় নিয়ে কিংবা যার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালত রায় দিয়েছেন তিনি যদি রায় নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকেন তখন তিনি সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্টে ডিভিশনে রায় পুনঃবিবেচনার আবেদন করতে পারেন।হাইকোর্টের রায়ও যদি সন্তুষ্ট করতে না পারে।তাহলে শেষ পর্যন্ত আপিল বিভাগে যাওয়া যাবে।এরপর ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত আসামির জন্য সর্বশেষ সুযোগ রাষ্ট্রগতির নিকট প্রাণ ভিক্ষার আবেদ। এটা খারিজ হলেই বিচার কার্য শেষে রায় কার্যকর করার সময় হয়।এই হল বিচার বিভাগ

তাহলে নিম্ন আদালতের শৃঙ্খলাবিধি টা কি?

শৃঙ্খলাবিধি হল বিচারক নিয়োগ, তাদের এজলাসে উপস্থিতির সময় নির্ধারন,রাজনৈতিক বলয় থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরী করা ইত্যাদি।
আমাদের দেশের নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়।নিম্ন আদালতের বিচারক হতে হলে তেমন কোন যোগ্যতা থাকা লাগেনা। অনার্স পাশ আর আঃ লীগ কিংবা বিএনপি করলেই একজন ব্যক্তি বিচারক হতে পারেন।এই সরকারের আমলে গত ১২ বছরে ৪৫৩জন ব্যক্তি নিম্ন আদালতের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।যাদের প্রায় ৯০%ই আঃ লীগের সাথে কোন না কোন ভাবে অতিতে কিংবা বর্তমানে সম্পৃক্ত ছিলেন বা এখনো আছেন।কারো কারো বিরুদ্ধে সরাসরি যুবলীগ বা ছাত্রলীগ করার অভিযোগ আছে।বেগম খালেদা জিয়ার বিচার নিম্ন আদালতের যে বিচারকের অধীনে হয়েছে সেই আক্তারুজ্জামান নিজেও একজন আওয়ালীগার।সে জন্যেই বেগম জিয়া রায়ের দিন বলে ছিলেন, "এই আদালত আমার জন্যে নয় বিচার করবে না,এটা দলীয় সরকারের নিয়োগ করা বিচারক"!

তাহলে বিচারপতি সিনহা নিম্ন আদালতের শৃঙ্খলাবিধির মধ্যে কি করতে চেয়েছিলেন?

বিচারপতি সিনহা নিম্ন আদালতের বিচারকদের দলীয় নিয়োগের বলয় থেকে বেরিয়ে নিয়ে এসে সুপ্রিমকোর্টের অধীনে নিয়ে আসতে চেয়ে ছিলেন এতে সাধারণ মানুষের নিম্ন আদালতের প্রতি আস্থা তৈরী হবে।ন্যায় বিচার পাওয়ার বেপারে মানুষ আশাবাদী হবে।তাই তিনি অধীনস্থ জজ ও বিচারকাদের একটা শৃঙ্খলায় আনতে চেয়েছিলেন।তিনি চেয়েছিলেন দেশের মানুষ কোথাও বিচার না পেলেও বিচার বিভাগে এসে যেন সেই বিচার পায়।অথচ সরকার সিনহার এই স্বপ্নকে নিমিষেই চুরমার করে দিলো।সরকার বিচারপতি সিনহাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল।সর্বশেষ পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে বিচারপতি সিনহা ও সরকার মুখোমুখি দ্বন্দ্বেে লিপ্ত হল।ওই সংশোধনী ছিলো বিচারপতিদের অভিসংশন বা চাকরিচ্যুত করার ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত থাকবে।কিন্তু আপিল বিভাগ ওই রায় বাতিল করে দেয়।সরকার আর বিচার বিভাগ রায়ের পর্যবেক্ষন নিয়ে ইতিহাসের চরম দ্বন্দ্বেে লিপ্ত হয়।সরকার স্বাধীন বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ করা শুরু করে।বিচারপতি সিনহাকে অসুস্থ সাজানো হয়। পহেলা জুলাই বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা সম্বলিত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আওয়ামী লীগের তোপের মুখে পড়েছেন। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা একটি আত্মজীবনীমূলক বই প্রকাশ করেছেন যেখানে তিনি দাবি করছেন তাকে সরকারের চাপ এবং হুমকির মুখে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। বিচারপতি সিনহার বই 'এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি" মাত্রই প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি এখন আমাজনে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। এই বইতে বিচারপতি সিনহা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন কোন পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়েছিল, এবং কিভাবে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়, এবং তারপর কেন তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মুখে তিনি দেশে ছেড়েছেন। বিচারপতি সিনহা লিখেছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়টি যেন সরকারের পক্ষ যায়, সেজন্যে তার ওপর 'সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে চাপ তৈরি করা হয়েছিল।'মি. সিনহার পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছিল ২০১৭ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত একটি মামলার আপিলের রায়কে কেন্দ্র করে। এ রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সরকারের কাছ থেকে প্রচণ্ড চাপের মুখে বিচারপতি সিনহা দেশ ছেড়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।তিনি সাক্ষাতকারে বলেন, "আমাকে যখন কমপ্লিটলি হাউজ এ্যারেস্ট করা হলো, ...তখন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন একজন করে ডাক্তার আমার কাছে পাঠানো হতো। আমি নি:শ্বাস নিতে পারছিলাম না।
বাংলাদেশের পার্লামেন্টে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের ইমপিচ করার ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পরিবর্তে পার্লামেন্টের সদস্যদের দেবার পর ২০১৬ সালের ৫ই মে হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বিশেষ বেঞ্চ ওই সংশোধনীকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়। সরকার এর বিরুদ্ধে আপীল করে, এবং সাত সদস্যের একটি বেঞ্চে আপীলের শুনানী হয়।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার বইতে লেখেন, "জুলাইয়ের ৩ তারিখ প্রধান বিচারপতি হিসেবে তার সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ আপীল খারিজ করে হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় বহাল রাখে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের ১ তারিখ সর্বসম্মত রায়ের পূর্ণ বিবরণ প্রকাশিত হয়।"

সেখানে তিনি লেখেন, "ওই সিদ্ধান্তের পর সেপ্টেম্বরের ১৩ তারিখে পার্লামেন্ট একটি প্রস্তাব পাস করে - যাতে সেই রায়কে বাতিল করার জন্য আইনী পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।"

এরপর কি ঘটে তা আমরা সবাই জানি।এবং এভাবেই একজন বিচারপতির "স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বপ্ন" নিমিষেই ভেংগে যায়।প্রতিষ্ঠিত হয় দলীয় সরকারের বিচার বিভাগ দলীয় সরকারের গনতন্ত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.