নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
অফিস ছুটি হতে আর কিছুক্ষণ বাকি । বসে বসে ঝিমচ্ছিলাম । ঠিক সে সময় রিসিপশন থেকে ফোন । স্যার, বদরুল নামের একজন এসেছেন । আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান । বদরুলের নাম শুনেই আঁতকে উঠলাম । আমার কাজিন । এমবিএ করে চাকরী বাকরি না করে টো টো করে ঘুরছে । কখন কি করে নিজেও জানে না । কারো কথাও শুনে না । ওর কাছ থেকে দূরে থাকাই মঙ্গল বলে মনে হয় । তাই একটু এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি । তাড়াতাড়ি বললাম পাঠাও । চেয়ার থেকে উঠে কৃত্রিম গোছগাছ শুরু করলাম । ভাবটা এমন এখুনি বের হয়ে যাবো । বদরুল আসলো আরো কয়েক মিনিট পরে । রুমে ঢুকে লম্বা করে সালাম দিল । আমি মনে মনে চমকে উঠলাম । বদরুলের লম্বা সালামের পেছনে নিশ্চয়ই একটা উদ্দেশ্য আছে ।
নিজেকে রাখ ঢাক কাট ছাট করে বললাম, কিরে বদরুল কেমন আছিস ?
বের হচ্ছ নাকি ভাইয়া ? বদরুল আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করল ।
হ্যাঁ, ছুটির সময় হয়ে গেছে ।
কোথায় যাবা ? বাসায় নাকি অন্য কোথাও ?
উত্তরটা ভেবেই রেখেছিলাম । বাসায় বললে ও সঙ্গে ঝুটে যেতে পারে তাই বললাম নারে বাজারে যেতে হবে । তোর ভাবি বাজার করে নিয়ে যেতে বলেছে । আমি জানি বদরুল বাজার জায়গাটা অপছন্দ করে।
তা হলে তো অসময়ে চলে এসেছি, তাই না ?
না ঠিক আছে । বলে ফেল কি বলবি ।
না তেমন কিছু না এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম রাস্তায় জ্যাম তাই তোমার এখানে ঢুকে গেলাম ।
চা খাবি ?
না, থাক তোমার দেরি হয়ে যাবে ।
না হবে না । দিতে বলি ?
বল ?
চায়ের কথা বলে আমি জিজ্ঞাসা করলাম,তারপর চাকরী বাকরির কোন চেষ্টা করছিস ?
না । আপাতত আম্মার উপর ভরসা করে আছি ?
মানে ? বুঝলাম না । আম্মার উপর ভরসা করে আছিস মানে কি ?
মানে সোজা । আমার চাকরীর জন্য তোমার খালাম্মা মানে আমার মা নামাজ রোজা করে একাকার করে ফেলছে ।
দেখি মার নামাজ রোজায় কাজ হয় কিনা । ছোট্ট একটা পরীক্ষা বলতে পারো ।
ও আচ্ছা । তা কোথাও এপ্লাই করেছিস ?
কোথাও না । বদরুল নির্বিকার ভাবে বলল ।
তাহলে চাকরী বাকরি হবে কি ভাবে ?
বললাম না মায়ের দোয়ায় হবে ।
বিষয়টা পছন্দ না হলেও বললাম ও আচ্ছা ।
তা, তোর না আমেরিকায় যাওয়ার কথা ছিল ?
ছিল , কিন্তু ভিসা হয়নি ?
কেন হয়নি ?
আমার চেহারাটা ওদের পছন্দ না । তাছাড়া ওরা বোধ হয় চায় না আমি ওদের দেশে গিয়া হেগে মূর্তে ফার্টিলাইজার তৈরিতে সাহায্য করি ।
আমি কিছু বললাম না । পাগলকে বলার ইচ্ছে নাই, সাকো নাড়িস না । বদরুলকে ভাল করে দেখলাম । দেয়ালে টানানো একটা ছবির দিকে তাকিয়ে আছে ।
তোর এমবিএ তো কবে শেষ হয়েছে এখন ও কিছু করছিস না, ব্যাপারটা কি ঠিক হচ্ছে ?
আমি তো করতেই তাই কিন্তু আল্লাহ্ ই তো চায় না আমি কিছু করি ।
আল্লাহ্ চায় না মানে কি ?
মানে সোজা, এই যে তোমার খালাম্মা মানে আমার মা দিন রাত আমার জন্য নামাজ, রোজা করছে যাতে আমার ভাল একটা চাকরি হয় কিন্তু হচ্ছে না । মানে আল্লাহ দিচ্ছে না ।
তুই চেষ্টা কর তাহলেই হবে ?
আমি তো জানি আমি চেষ্টা করলে এক মাসের মধ্যে হবে ।
কিন্তু আমি দেখতে চাচ্ছি আম্মার দোয়ায়, নামাজ রোজায় কতদূর কাজ হয় । এই ধরে আমি কোথাও এপ্লাই না করেও যদি একটা চাকরি পেয়ে যাই সেটা হবে মায়ের দোয়ার কারিশমা । অর্থাৎ আল্লাহ্ মায়ের দোয়া কবুল করেছে । সেই সঙ্গে বুঝে নেব আল্লাহ্ বলেও কেউ আছে ?
কেন তুই আল্লাহ বলে যে কেউ আছে সেটা বিশ্বাস করিস না ?
এইতো কঠিন প্রশ্ন করলা । এখন যদি বলি, বিশ্বাস করি না তাহলে আমার সম্পর্কে তোমার মনে নেগেটিভ ধারনা জন্মাবে । ভাববে আমি বুঝি নাস্তিক হয়ে গেছি । আবার যদি বলি, বিশ্বাস করি তাহলেও উপদেশ দিতে শুরু করবে ।
আহা: সোজা জিনিষটা বুঝতে চাস না কেন ? চেষ্টা না করলে চাকরী পাবি কি ভাবে ? চাকরী তো আর গাছের ফল না কেউ এসে বলবে এই নাও এটা খাওয়া শুরু কর ।
মিরাকল বলে একটা কথা আছে না ? বদরুল প্রশ্ন করল ।
আমি বললাম । আছে ।
আমি সেই মিরাকল এর অপেক্ষায় করছি । মিরাকলি আল্লাহ এসে যদি আমাকে চাকরি দিয়ে যায় তা হলে আমি চাকরি করবো । সেটা যে কোন সোর্স থেকেই হতে পারে ।
আল্লাহ এসে তোকে ঘরে চাকরি দিয়ে যাবে ?
হ্যাঁ, যদি মায়ের দোয়া কবুল হয়ে থাকে তা হলে তাই তো হওয়া উচিত । কি উচিত না ?
আমি কিছু বললাম না । চুপ করে থাকলাম । বুঝলাম পাগল আরো বড় পাগল হওয়ার পথে ।
বিশ্বাস হচ্ছে না ! তাই না ? আমি আবার ও কিছু বললাম না । বুঝতে পারছি নিরাপদ দুরুত্ব বজায় রাখা উচিত ।
তোমাদের সমস্যা কোথায় জানো ভাইয়া ?
আমি মাথা নাড়লাম, না জানি না ।
তোমাদের সমস্যা হচ্ছে, তোমরা আল্লাহকে বিশ্বাস কর কিন্তু তার উপর ভরসা কর না । আমি পরিপূর্ণ বিশ্বাসের আগে ভরসা করে দেখতে চাই ।
কি বলবো বুঝতে পারলাম না । হঠাৎ একটু অন্য মনস্ক হয়ে গেলাম । ভাবতে লাগলাম, সত্যিই তো আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি ঠিকই কিন্তু তার উপর ভরসা করি না ।
কি হলে তোমার ? আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বদরুল প্রশ্ন করল ।
না কিছু না । চল উঠি । তোকে আজ আমার বাসায় নিয়ে যাবো । তোর ভাবিকে ভুনা গরুর মাংস আর খিচুড়ি রান্না করতে বলবো । দুই ভাই বসে চুটিয়ে আড্ডা দেব ।
সেটা সম্ভব না ভাইয়া । আমার জরুরী একটা কাজ আছে ।
তোর আবার জরুরী কাজ কি ?
কেন আমার কি জরুরী কাজ থাকতে পারে না ?
না পারবে না কেন ? অবশ্যই পারে ।
চল আমার সঙ্গে তোমাকে দেখাই আমার জরুরী কাজ কি ।
না তুই যা ্ আমি বাসায় যাবো ।
বাজারে যাবা না ?
হ্যাঁ বাজার হয়ে বাসায় যাবো ।
ঠিক আছে চল তা হলে । আমি আর বদরুল অফিস থেকে বের হয়ে এলাম ।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১:২৭
কবির আহমেদ মাধব বলেছেন: