নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে \"আমার কবিতা নামে\" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন

আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সওদা - ভৌতিক রহস্য গল্প (৪ র্থ পর্ব)

১৩ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১:৫৬



পাঁচ

মেসে ঢুকতেই কাউন্টারে বদরুলকে পেয়ে আমার রুমে ডেকে নিয়ে এলাম । দোতালায় আমি ছাড়া এখন আর কোন বোর্ডার নেই । রুমগুলো সব তালা দেয়া । বারান্দা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিজের অজান্তেই শরীরটা কেমন ছমছম করে উঠল।
ধীরে সুস্থে তালা খুলে ভেতরে ঢুকলাম । আমার পেছন পেছন বদরুল এসে ঢুকল । আমি খাটে বসে বদরুলকে চেয়ারে বসতে বললাম, ও বলল, বসতে হবে না রঞ্জু ভাই , কি বলবেন বলেন , হিসাবের খাতা নিয়ে বসেছি ।
তুমি কি স'দু ভাইকে দেখেছো ? আমি কোন রকম ভূমিকায় না গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলাম ।
বদরুল কিছু বলল না । মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল । তারপর কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলল,
সকালে বলি ভাই ?
এখন বললে কি সমস্যা?
রাতের বেলায় তেনাদের নিয়ে কোন কথা বলতে হয় না । বদরুল দেখে মনে হলো, ও গুটি চালতে শুরু করেছে ।
তেনারা মানে কারা ? আমি তোমাকে স'দু ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করছি । দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করলাম ।
তেনারা মানে মৃত মানুষদের কথা বলছি । বদরুল ভয় পাবার অভিনয় করে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো । মেজাজটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এই লোকটা ভণিতা ছাড়া কিছু বলতে পারে না ।
আমার প্রশ্নের উত্তর দাও , তুমি কি স'দু ভাইকে দেখেছো ?
জি ,দেখেছি ; বদরুল কিছুক্ষণ নীরব থেকে আমতা আমতা করে উত্তর দিল ।
কবে ?
ফাঁসি দেবার দু’দিন পরে । সন্ধ্যার সময় দোতালায় এসেছিলাম, হঠাৎ দেখি স'দু ভাইয়ের রুমের লাইট জ্বলছে । দরজা ভেতর থেকে বন্ধ । কে ভেতরে দেখার জন্য আমি দরজার ফাঁক দিয়ে উকি দিতেই দেখি স'দু ভাই টেবিলে বসে কি যেন লিখছে । আমার তো জান যায় যায় অবস্থা , তখন আমি এক দৌড়ে নিচে গিয়ে বাবুর্চি তোতারে ডেকে এনে দেখি কেউ নাই । ভেতরের বাতিও নেবানো।
তুমি মিথ্যা বলছ না তো ?
আল্লাহর কসম ভাই, মিথ্যা বোলুম ক্যান ? বদরুল কসম কেটে মাথায় হাত রেখে বলল ।
তোমার কাছে স'দু ভাইয়ের রুমের চাবি আছে তাই না ? আমি সরাসরি বদরুলের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম । বদরুল সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে ফেলল । মানুষ কখনো সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা বলতে পারে না । বিবেক বাঁধা দেয় । বদরুলের কথা আমার এমনিতেই বিশ্বাস হয় না ।
না, বদরুল মাটির দিকে তাকিয় বলল ।
এবার কিন্তু মিথ্যা বলছ । আমার সঙ্গে ওসির সাহেবের কথা হয়েছে কোন রকম উল্টা পাল্টা দেখলেই সরাসরি ফোন করতে বলেছেন । তুমি কি চাও আমি তোমার কথাটা ওসি সাহেব'কে বলি । ওসি সাহেবের কথাটা আমি বানিয়ে বললাম । আমার সন্দেহ হচ্ছে বদরুল এমন কিছু জানে যা আমাকে বলতে চাচ্ছে না ।
ওসির কথা শুনে, বদরুল হঠাৎ খুব ঘাবড়ে গেল ।
কাঁচুমাচু হয়ে বলল, রঞ্জু ভাই আমি কিন্তু কিছু করি নাই ।
তুমি কিছু করেছো সেটা তো আমি বলিনি । শুধু এইটুকু বলেছি আমার সঙ্গে মিথ্যা বললে ফেঁসে যাবে । তোমার কাছে স'দু ভাইয়ের রুমের চাবি আছে তাই না ?
বদরুল মাথা নাড়ল, আছে ।
তুমি স'দু ভাইয়ের রুমে ঢুকেছিলে তাই না ?
বদরুল 'না' বলতে গিয়েও কি মনে করে থেমে গেলো ।
দেখো, মিথ্যা বলো না, একদম ফেঁসে যাবে ।
পুরো ঘটনাটা আমাকে খুলে বলো ।
কোন ঘটনা ?
তুমি স'দু ভাইয়ের রুমে কেন ঢুকেছিলো? কোন জিনিষপত্র কি সরিয়েছ ?
আল্লাহর কিরা রঞ্জু ভাই আমি কিছু সড়াইনি ।
তারমানে তুমি স'দু ভাইয়ের রুমে ঢুকছিলে ?
জ্বি ?
কেন ঢুকেছিলে?
ঝাড়পোছ করতে ।
ঝাড়পোছ করেছো ?
না, ।
না কেন ?
ভয়ে চলে এসেছি ?
ভয় ? কিসের ভয়ে ?
স'দু ভাইয়ের ।
স'দু ভাইয়ের মানে ?
আমি সকাল বেলা স'দু ভাইয়ের রুমে ঢুকে জানালাগুলো খুলছিলাম হঠাৎ পেছন থেকে স'দু ভাইয়ের গলা শুনে চমকে পেছন ফিরে দেখি স'দু ভাই টেবিলের উপড়ে বসে আছে । আমি তাকাতেই আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, বদরুল জানালা খুলিস না রে রোদ আসে । আলো সহ্য হয় না ।

এরপর আমি দৌড়ে রুম থেকে ওই রুম থেকে বের হয়ে আসি । পরে তোতার ডেকে এনে দরজা বন্ধ করেছি । বিশ্বাস করেন রঞ্জু ভাই এর মধ্যে এক বিন্দু মিথ্যা নাই ।
চাবিটা তোমার সঙ্গে আছে ?
জি , বলে বদরুল এক গোছা চাবি বের করে তার মধ্যে থেকে পিতলের একটা চাবি দেখালো।
চাবিটা আমাকে দাও ।
বদরুল চাবির গোছা থেকে চাবিটা খুলে দিতে দিতে বলল, রঞ্জু ভাই একটু সাবধানে থাকবেন । দোতালায় কিন্তু এখন আপনি ছাড়া আর কেউ নেই ।
ঠিক আছে , তুমি এখন যাও ।
খাবেন না ? খাবার দেবো ?
না, খাবো না । তুমি পারলে এক ফ্লাক্স চা পাঠাও । রাতে লেখালেখি করতে হবে ।
কোন কিছুর দরকার হলে আমারে আওয়াজ দিয়েন । আমি জেগে থাকবো ।
ঠিক আছে,দরকার হলো ডাকবো । তুমি এখন যাও ।
বদরুল দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়ে ডাক দিল , রঞ্জু ভাই ?
বলো ?
আজ আপনার খোঁজে একটা মেয়ে এসেছিলো ।
মেয়ে ? আমি অবাক হয়ে তাকালাম বদরুলের মুখের দিকে । কেননা ঢাকা শহরে আমার পরিচিত এমন কোন মেয়ে নেই যে আমার সাথে দেখা করতে মেস পর্যন্ত আসবে । তারপর জিজ্ঞাসা করলাম , কখন ।
দুপুরের দিকে ?
কিছু বলেছে ?
আপনি নেই , শুনে জিজ্ঞাসা করলো কখন আসবেন । জানিনা বলায় । কখন আসলে আপনাকে পাওয়া যাবে জিজ্ঞাসা করলো , আমি বলেছি , সকালে । এরপর ঠিক আছে বলে চলে গেছেন ।
ঠিক আছে তুমি যাও ।
বদরুল চলে যেতে জামাকাপড় পাল্টে চা খেয়ে লিখতে বসলাম । একটানা অনেকক্ষণ লেখার পর হঠাৎ লেখার খেই হারিয়ে ফেললাম । কিছুতেই লিখতে পারছি না । বারবার চিন্তায় ছেদ পরছে । একজন লেখকের জন্য এটা বুঝি সবচাইতে বেশি কষ্টের বিষয় ।

হঠাৎ খুব গরম অনুভব করছি । দু ঢোক পানি খেয়ে টেবিলের পাশের জানলাটা খুলে দিয়ে আবারও লিখতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম ।আরো কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর বুঝলাম আজ আর কিছু হবে না । দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি , সাড়ে তিনটা বাজে । লেখা বন্ধ করে যতোটুকু লেখা হয়েছে তা নিয়ে বিছানায় শুয়ে তা পড়তে লাগলাম । পড়তে পড়তে ঘুমে চোখের পাতা লেগে এসেছিলো হঠাৎ বাইরে দুপ করে কিছু একটা পরার শব্দ হলো । সঙ্গে সঙ্গে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠলো । দ্বিতীয় বার শব্দটা শোনার জন্য কান খাড়া করে রাখলাম । ঘড়ির কাটার টিকটিক শব্দ ছাড়া অন্য কোন শব্দ নেই । আবারও হলো শব্দটা । এবার বেশ স্পষ্ট ভাবেই শোনা গেল। বারান্দার ডান পাশ থেকে আসছে শব্দটা অর্থাৎ স'দু ভাইয়ের রুমের দিক থেকে ।

হঠাৎ টের পেলাম কোন কারণ ছাড়াই মাথার চুলগুলো একটা একটা করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে । শোয়া থেকে উঠে বসলাম । আমার কাছে মনে হলো কেউ খুব সন্তর্পণে দরজা খুলে বাহীরে আসলো। কিন্তু কোন রুমের দরজা খুললো সেটা বুঝতে পারলাম না । এবার বারান্দায় পায়ের শব্দ শোনা গেলো । কেউ খুব ধীরে ধীরে হাঁটছে । আমার হৃৎস্পন্দন বেড়ে চলেছে । কান খাড়া করে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম । অশুভ ভাবনায় পেয়ে বসলো । মনে হলো দরজা খুললেই ভয়াবহ কিছু একটা দেখবো । পায়ের শব্দটা আমার দরজা হয়ে সিঁড়ির দিক থেকে ঘুরে আবার স'দু ভাইয়ের ঘরের দিকে যাচ্ছে । পায়ের শব্দটা আমার দরজার কাছাকাছি আসতেই, আমি একটানে দরজাটা খুলে ফেললাম । পুরো বারান্দা অন্ধকার । কোন আলো নেই । অন্ধকারে কাউকে দেখতে পেলাম না । অন্ধকারটা চোখে সয়ে আসতে দেখলাম শূন্য বারান্দা খাঁ খাঁ করছে । আমি কিছুটা ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম ।

কাউকে না দেখে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম । বুকের ভেতর কম্পন বেড়ে গেছে । টেবিলের উপর রাখা বোতল থেকে ঢকঢক করে পানি খেলাম । বিছানায় বসতেই দরজায় পরপর তিনটা টোকার শব্দ হলো । সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠে দরজার দিকে তাকালাম । বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেছি । ভয়ে ঘামতে শুরু করেছি । মাথার চুলগুলো আবারও একটা একটা করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ।

তবুও কোন রকম জিজ্ঞাসা করলাম কে ? কে ? গলাটা যেনো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে । দিয়ে কোন শব্দ বের হতে চাচ্ছে না । অথচ এই মাত্র পানি খেলাম ।
কেউ উত্তর দিল না । আমি দরজার কাছে গিয়ে কান পেতে দাঁড়িয়ে রইলাম ।
না, আর কোন শব্দ নেই । হয়তো মনের ভুল , অতিরিক্ত উত্তেজনায় এলোমেলো শুনছি ।

বেশ কিছুক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে থাকার পর আবারও বিছানায় এসে বসলাম । নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছি ভয় পাবার কিছু নেই । সব মনের ভুল হবে । মৃত মানুষ কখনও ফিরে আসতে পারে না । বিছানায় শুয়ে আবারও যেই না লেখাটা পড়তে শুরু করেছি । ওমনি আবার দরজায় ঠুক ঠুক ঠুক করে শব্দ হলো।

সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলাম দরজার কাছে তারপর একটানে খুলে ফেললাম দরজা । তারপর যা দেখলাম তাতে আমার পুরো শরীর কেপে উঠল । আমি হিস্টিরিয়ার রুগীর মতো চিৎকার করে উঠলাম কে ? কে ?

দরজায় যে দাঁড়িয়ে আছে সে আর কেউ না । স্বয়ং স'দু ভাই । নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস হলো না । মা গো বলে অস্ফুট একটা শব্দ করে পিছিয়ে এলাম । স'দু ভাই দরজায় এসে দাঁড়ালেন । আধো আলো আধো অন্ধকারে স'দু ভাইকে চিনতে অসুবিধা হলো না । মুখটা শুকিয়ে পাংশু হয়ে গেছে । চোখ দুটো গর্তের ভেতরে ঢুকে আছে । শরীরের চামড়া লকলক করছে । আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলাম ।

স'দু ভাই বললেন, রাইটার সাব, একটা কাঁথা দিবা ? আমার খুব শীত করছে । এইখানে,এখানে খুব খুব শীত । দাওনা একটা কাঁথা । আমি দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিলাম ।
প্রচণ্ড ভয়ে পিপাসায় বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে। মনে হলো আমি মরে যাচ্ছি । কানের ভেতরে ভো ভো শব্দ শুনতে পাচ্ছি । কিছু দেখছি বলে মনে হলো না । মনে হলো সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসছে । হঠাৎ ওমর ফারুক সাহেবর কথা মনে হলো, বুঝতে পারলাম, ভদ্রলোক কেন ভয় পেয়েছেন । আমি বড় করে হা করে শ্বাস নিয়ে ছাড়তে লাগলাম । বাকি রাতটুকু দরজায় হেলান দিয়ে কাটিয়ে দিলাম ।

ছয়

ফজরের আযানের পর বিছানায় শুতেই ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে এলো । কতক্ষণ ঘুমিয়েছি বলতে পারবো না । হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভাঙল । চোখ খুলে বুঝতে পারলাম না শব্দটা কোথা থেকে আসছে । দ্বিতীয় বার শব্দ হতেই বুঝলাম প্রচণ্ড জোড়ে কেউ দরজায় আঘাত করছে ।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি পৌনে ছয়’টা বাজে । এক ঘণ্টাও ঘুমাতে পারিনি । এলোমেলো পা ফেলে দরজা খুলতেই দেখি পুলিশের সেই এসআই দাঁড়িয়ে আছে । পুলিশ দেখে আমি চমকে উঠলাম । কোন রকম নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,কি ব্যাপার ?
ভাল করে তাকাতে পারছিনা । মনে হচ্ছে চোখের ভেতর অসংখ্য সূচ ফুটছে । দু হাতে চোখ কচলাতে কচলাতে এসআইয়ের দিকে তাকালাম ।
আপনিই তো রঞ্জু সাহেব ?
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, জি .....
দুঃখিত আপনাকে বিরক্ত করতে হলো । একটু নীচে আসুন।
কেন কি হয়েছে ?
আসুন না, গেলেই তো দেখতে পাবেন ।
কোথায় যেন পড়েছিলাম রিকশা চালক আর পুলিশের সঙ্গে কখনো তর্ক করতে নেই তাতে সম্মানহানির আশঙ্কা থাকে । সেই বাক্যটা মনে করে আলনা থেকে একটা সার্ট টেনে গায়ে দিয়ে এসআইয়ের পিছু পিছু বারান্দা ধরে হাটতে শুরু করলাম । সিঁড়ির নিচে ছোট খাটো একটা জটলা চোখে পরলো। কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে । ভিড়ের মধ্যে অন্য সবার সাথে এফডিসির সামনে দেখা সেই পাগল লোকটাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আমি চমকে উঠলাম । কালো কোট, হলুদ চোখ, বিশাল মাথাওয়ালা লোকটাকে চিনতে কোন অসুবিধা হলো না । হাসি হাসি মুখ করে লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমার পুরো শরীর যেন কেঁপে উঠল । মাথা ঘুরে পরে যেতে গিয়ে সিঁড়ির রেলিংটা থাবা দিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে গেলাম ।
ব্যাপারটা খেয়াল করে, অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে এসআই জিজ্ঞাসা করলেন, কি হলো ?
কয়েক মুহূর্ত কথা বলতে পারলাম না । নিজেকে কোন রকম সামলে নিয়ে আবারও তাকালাম জটলাটার দিকে কিন্তু সেই লোকটাকে আর দেখতে পেলাম না । মনে মনে বললাম, আমি বোধ হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি ।
দু'টো সিঁড়ি নামতেই দেখতে পেলাম, সিঁড়ির পাশের মেঝেতে কেউ একজন উপুড় হয়ে পরে আছে । ঘাড়টা বিশ্রী ভাবে ডানপাশে মোচড়ানো । রক্তের দু’টো ধারা গড়িয়ে মেঝেতে নেমে গেছে ।
উপর থেকে এক নজর দেখেই বুঝলাম বেঁচে নেই কিন্তু কে ওভাবে পরে আছে চিনতে পারলাম না । পেছনটা দেখে বদরুল বলে মনে হলো । দ্রুত পা ফেলে নীচের নেমে গেলাম । কাছে গিয়ে বদরুলকে চিনতে মোটেই বেগ পেতে হলো না । বদরুলকে এভাবে অপঘাতে মরতে দেখে আমি খুব ঘাবড়ে গেলাম। পরপর দু’টো মৃত্যু আমাকে হতবিহম্বল করে দিলো । মাথাটা ঘুরে উঠলো । নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে উহু শব্দটা বের হয়ে এলো ।
এসআই আমাকে ধরে কাউন্টারের সামনে নিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলেন । আমি এসআইয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম, কিভাবে ?
সেটাই তো জানতে চেষ্টা করছি । ভোরে কেউ একজন থানায় ফোন করে খুনের ঘটনাটা জানায় । তবে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, পেছন থেকে কেউ খুব জোড়ে ধাক্কা দিয়ে সিঁড়ির উপর থেকে ফেলে দিয়েছে ।
কথাটা বলে একটু থেমে কিছু একটা চিন্তা করে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি তো দোতালাতেই থাকেন।”
আমি মাথা নাড়ালাম , হা ।
আচ্ছা, বদরুল সাহেবের সঙ্গে আপনার কখন শেষ দেখা হয়েছে ?
গতকাল রাতে ।
রাত ! কখন ?
১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে । আমি এসআইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম ।
কি নিয়ে কথা হয়েছে ?
বদরুলের কাছ থেকে কয়েকটা বিষয় জানতে চেয়েছিলাম ।
কি জানতে চেয়েছিলেন?
আমার গতরাতে দেখা স'দুভাই এর মুখটা মনে পরে গেল । আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, পারেন ।
তা হলে বলে ফেলুন । দয়া করে লুকাবেন না বা মিথ্যা কিছু বলবেন না ।
মেসের অনেকে নাকি স'দু ভাইকে মেসের মধ্যে ঘুরে বড়াতে দেখেছে । আমার কাছে মনে হয়েছিলো পুরো ব্যাপারটা বানোয়াট । তাই বদরুল'কে ডেকে নিয়ে জানতে চেয়েছিলাম আসলে ঘটনাটা কি ?
উনি কি বললেন ?
বদরুল আমাকে জানালো বিষয়টা সত্য । সে ও নিজেও নাকি পরপর দুবার স'দু ভাইকে দেখেছে ।
কবে দেখেছে, কোথায় দেখেছে ? এসআই বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন । দেখে বুঝা গেলো স'দু ভাইকে দেখার বিষয়টা উনি বিশ্বাস করনি ।
স'দু ভাইয়ের মৃত্যুর দু’দিন পরে, স'দু ভাইয়ের রুমে দেখেছে ।
এসব মিথ্যে কথা । যতোসব গাল,গপ্প । একজন মৃত মানুষ কখনো দেখা দেয় না ।
আমিও প্রথমে তাই ই মনে করেছিলাম, কিন্তু ব্যাপারটা আসলেই সত্যটা হচ্ছে ............।

এই পর্যন্ত বলে গতরাতে নিজ চোখে দেখা ঘটনাটা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম । অহেতুক বিপদ ঢেকে আনার কোন মানে হয় না ।

এসআই বুদ্ধিমান মানুষ আমাকে থেমে যেতে দেখে একটু হেসে বললেন,"আসল সত্যিটা" বলতে কি আপনি স'দু সাহেবকে দেখার বিষয়টা বলতে চাচ্ছেন ?

আমি মাথা নেড়ে বললাম, জি হ্যাঁ ।
আপনার মতো একজন শিক্ষিত মানুষ বলছেন এ কথা ?
একটু ভেবে নিয়ে , এসআই এর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, বলছি, কেননা গতরাতে আমিও স'দু ভাইকে দেখেছি । তারপর এসআইকে গতরাতের পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম । সব শুনে এসআই বললেন, স্ট্রেঞ্জ ! এতো দেখছি সত্যিই ভৌতিক ব্যাপার । আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম ।

পরপর দু’টো মৃত্যু ঘটনায় পুরো শহরে হৈ চৈ পরে গেছে । রাতে মেসের হল রুমে অন্য সব বোর্ডারদের সাথে বসে বিটিভির সংবাদ মধুমিতা মেসে হত্যাকাণ্ডের নিউজ দেখলাম । বোর্ডারা মেস ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছে , কিন্তু থানা থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে , কেউ যেন মেস ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না । গেলেই এরেস্ট করা হবে । পুলিশ মেসের সকলের নাম, দাম, ঠিকানা টুকে নিয়ে গিয়েছে । ফলে কেউ চাইলেও মেস ছেড়ে যেতে পারছে না ।

প্রতিদিনই লোকজন মেসটাকে দেখতে আসতে শুরু করেছে । কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় লাল কালিতে বড় বড় করে ছবিসহ হেডলাইন ছাপা হলো, “মেস মালিকের আত্মহত্যার পর কর্মচারীর রহস্যজনক মৃত্যু । এলাকাবাসী বলছে, ভৌতিক ঘটনা ”। পত্রিকা বিক্রির এর চেয়ে বড় বিজ্ঞাপন আর কি হতে পারে ।

একটা দৈনিকে পুলিশ কে খোঁচা দিয়ে ছাপাল, “পুলিশের নাকের ডগায় ঘটে চলেছ একের পর এক হত্যাকাণ্ড, পুলিশ রহস্যের কূল কিনারা করতে পারছে না । মেস ও আশেপাশের লোকজন বলছে, ভূতুরে কাণ্ড।”

অদ্ভুত একটা বিষয় খেয়াল করছি দু'দিন ধরে, মধুমতি মেসের উঠানের ঠিক মাঝখানে একটা প্রকাণ্ড একটা আম গাছ রয়েছে। গাছটা নাকি স'দু ভাইয়ের পর দাদা লাগিয়েছিলেন । গাছের গোঁড়াটা লাল সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো। সকল বিকেল নানা রকমের পাখির কলকাকলিতে গাছটা মুখর হয়ে থাকতো , কিন্তু স'দু ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে গাছে আর কোন পাখি বসছে না । এ কথাটাও চারিদিকে ছড়িয়ে পরেছে । কেউ কেউ বলছে, এই গাছেই নাকি ভূত আছে । তাই গাছটিকে কেটে ফেলতে হবে ।

দু’জন পুলিশ পালা করে মেসে সেখানে বসতে শুরু করেছে । আমি মনে মনে ঠিক করে ফেললাম মেস ছেড়ে দেবো । এ'তে সামস্ সাহেবের সঙ্গে এর মধ্যে দু’দিন ফোনে কথা হয়েছে । তিনি স্বাভাবিক খোজ খবর নিয়ে আরেক জন পরিচালকের খোঁজ দিয়ে বলেছেন, তিনি নাকি একটা ভাল চিত্রনাট্য খুঁজছেন । তিনি ঐ পরিচালকে আমার কথা বলে ঠিকানা দিয়ে দিয়েছেন , ভদ্রলোক যে কোন দিন আসবেন আমার সঙ্গে দেখা করতে ।
নিজের ভাগ্যের এ পরিবর্তনে আমি আনন্দিত হবার পরিবর্তে ক্রমশ ভীত হয়ে উঠছি । বারংবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে, হলুদ দুটো চোখ আর কুৎসিত একটা মুখের হাসি ।
স'দু ভাইকে দেখার পর থেকে আমার চারপাশে অদ্ভুত সব ব্যাপার ঘটছে । প্রায় রাতেই বারান্দায় কারো পায়ের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে । মাঝে মাঝে ঘরের মধ্যেও যেন কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছি ।লেখালেখি নিয়েও চলছে তুগলগি কারবার ।
কোন একটি কাহিনী চিন্তা করে লেখা শুরু করলেই প্রচণ্ড ঘুম পেয়ে যাচ্ছে, কিছুতেই আর চোখ খোলা রাখতে পারি না । লিখতে লিখতেই ঘুমিয়ে পরি । সকালে উঠে নিজেকে হয় বিছানায় নয়তো মেঝেতে আবিষ্কার করি । সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যে লেখাটা লিখতে শুরু করে ছিলাম সেটা পুরোপুরি শেষ করা অবস্থায় পাই ।
একরাতে মধ্যে একটা পুরো চিত্রনাট্য তৈরি করা আমার পক্ষে মোটেও সম্ভব নয় । কিন্তু হাতের লেখা হুবহু আমার। আমার লেখাতে এমনিতে খুব কাটা ছেড়া হয় । কিন্তু এ লেখাগুলো একেবারে নিখুঁত । এ রকম অদ্ভুত ঘটনায় আমি বেশ বিচলিত হয়ে উঠেছি । আর একটি বিষয় আস্হির হয়ে উঠেছি সেটা হচ্ছে, ইদানীং প্রায় ই গভীর রাতে মনে হয় স'দু ভাইয়ের রুম থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসে। খুবই করুন সে কান্নার শব্দ। মাঝে মাঝে কেউ এসে দরজায় টোকা দেয় । আমি ভয়ে জমে থাকি । কিছুতেই আর দরজা খুলি না ।মনে হচ্ছে, পাগল হয়ে যাচ্ছি ।

প্রচণ্ড রকমের ক্ষুধা মন্দা দেখা দিয়েছে । কিছু খেতে পারছি না । কিছু মুখে দিলেই বমি হয়ে যাচ্ছে । দ্রুত স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে । আয়নার সামনে দাঁড়ালে বুঝতে পারি চোখ মুখ ভেতরে বসে যাচ্ছে । চোখের নিচে কালি জমছে । কোন কিছু ভাল লাগে না । সর্বক্ষণ এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করে নিজের মধ্যে । কোন কাজই মন দিয়ে করতে পারছি না। একটার পর একটা সিগারেট টেনে চলি । কোন কোন রাতে দেখা যায় জ্বলন্ত সিগারেট হাতে নিয়েই ঘুমিয়ে পরছি ।

চলবে ......

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুন, ২০২২ দুপুর ২:২৬

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: এতোবড় গল্প কেউ পড়ে কি? :( যাদের কাম নাই তারাই পড়বে। একটু ছোট করে লিখলে সবাই পড়বে।

১৩ ই জুন, ২০২২ রাত ১০:৩১

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। খুব ভাল বলেছেন

২| ১৩ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:০১

খাঁজা বাবা বলেছেন: সদু সাহেবের মৃত্যুর ব্যপারটা আগামীতে পরিষ্কার হবে নিশ্চই। :)

১৩ ই জুন, ২০২২ রাত ১০:৩৪

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: পরিস্কার হওয়া উচিত, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

৩| ১৩ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:২৮

অনন্য দায়িত্বশীল বলেছেন: বড় গল্প।

১৩ ই জুন, ২০২২ রাত ১০:৩৭

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: জি, ৪ পর্ব চলছে । দশ পর্বে শেষ হবে ইনশাআল্লাহ

৪| ১৩ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৪:০৯

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: প্রচন্ড ডিপ্রেসনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে রঞ্জু, সামনে কী হয় সেটাই দেখার অপেক্ষায় রইলাম

১৩ ই জুন, ২০২২ রাত ১০:৩৮

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। দেখি রঞ্জু ব্যাটার শেষ পর্যন্ত কি হয়।

৫| ১৩ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:৩৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আপনার লেখার লেখির জন্য রইলো শুভকামনা।

১৩ ই জুন, ২০২২ রাত ১০:৩৯

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা

৬| ১৪ ই জুন, ২০২২ রাত ২:৩২

অপু তানভীর বলেছেন: কাহিনী সত্যি যাচ্ছে অন্য দিকে। না পড়ে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না । দ্রুত পরের পর্ব পোস্ট করে ফেলুন !

১৪ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১২:০০

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেকে অনেক ধন্যবাদ , ভাল থাকুন ..

৭| ০২ রা জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫১

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: এই পর্বের শুরুতে গল্পটা ভৌতিক মক্ন হচ্ছিলো না, রহস্য কাহিনী মনে হচ্ছিল। কিন্তু এ যে সত্যিই ভুতের হাট বাজার...

০১ লা আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:৩৬

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: খুব ভাল বলেছেন, লেখার ধরনটাই এমন আপনা থেকে গতি পায়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.