নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
গতকাল বিকালে ভুত দেখলাম। বিকাল না বলে সন্ধ্যা বলাটাই বোধ হয় ঠিক হবে। কারণ তখনো পশ্চিমের আকাশে সূর্য পুরোপুরি অস্তমিত হয়নি । ক্যানভাসের উপর ছড়ানো ছিটানো রং এর মতো পুরো আকাশ জুড়ে দিনের শেষটুকু আলো পরম মমতায় লেপটে রয়েছে ।
আমি তখন ছাদে গাছের পরিচর্যা করছি। সন্ধ্যা হই হই করছে । ঈদের ছুটিতে ছেলেমেয়েরা গেছে তাদের নানুর বাড়ি বেড়াতে। শ্বশুর সাহেব আমাকে বেশ কয়েকবার যেতে বলেছেন। কিন্তু আমার ইচ্ছে করেনি যেতে। শ্বশুর বাড়ি গিয়ে হাসিহাসি মুখে করে ভাঁড় সেজে সর্বত্র ঘুরে বেড়ানো আমার ধাতে নাই।
বিয়ের পর মেয়েদের বাপের বাড়ি হচ্ছে, তাদের একান্ত নিজস্ব জায়গা। সেখানে স্বামী সাঙ্গে থাকলে তারা সর্বক্ষণ একটা আতংকের মধ্যে থাকে। বাবার বাড়ি বেড়ানোর আনন্দটা ঠিকমত উপভোগ করতে পারে না। তাই কি দরকার আছে তাকে শুধুশুধু আতংকের মধ্যে রাখার। যে কটা দিন বাবার বাড়িতে থাকে আনন্দের সাথে থাকুক। এছাড়া আমিও ঘর কোণে মানুষ। ছুটি ছাটায় নিজের বাসায়, নিজের ছাদ বাগান নিয়ে থাকতে ভালবাসি। এদিক দিয়ে আমার জীবন হচ্ছে, শম্বুক জীবন। নিজস্ব গণ্ডির বাইরে গেলেই গুটিয়ে যাই।
আসরের নামাজের পর ছাদে উঠে ড্রামে থাকা গাছের গোঁড়াগুলো খুঁচিয়ে দিতে লাগলাম। টানা বৃষ্টিতে গাছের গোঁড়ার মাটি ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে। খুঁচিয়ে দেওয়ায় জমে থাকা পানি সরে গেলো। আমার ছাদে বসার জন্য মোড়া,চেয়ার দু'টোই রাখা আছে। যখন যেটা দরকার সেটায় বসে কাজ করি। আমি ছাদের মাঝামাঝি মোড়ায় বসে নারিকেলের ছোবা,গোবর আর মাটি দিয়ে মিল্ক ভিটা দুধের প্যাকেটে লাউগাছের জন্য মাদা তৈরি করছিলাম । ঠিক এমন সময় ছেলে মেয়েদের সম্মিলিত হইহুল্লোরের শব্দ কানে এলো। নগর জীবনে খেলার জায়গা জমি কমে আসায় ছেলে মেয়েরা বিকেল বেলা তাদের বাসা বাড়ির ছাদে উঠে হইচই করে,খেলাধুলা করে । ব্যাপারটা আমার বেশ ভাল করে জানা আছে । তাই মাথা তুলে চারপাশে তাকালাম । না, আশপাশের কোন বাড়ির ছাদেই কাউকে দেখতে পেলাম না। সর্বত্র শূন্যতা বিরাজ করছে ।
মনের ভুল ভেবে আবার কাজে মন দিলাম। বিকালে ছাদে আসলে আমি সাধারণত মাগরিবের নামাজ পড়ে তারপর নিচে নামি । ছাদের ড্রামে চাদর,জায়নামাজ সবই রাখা আছে । কিছু সময় পর আবারও সেই হইহুল্লোড়ের শব্দ শুনতে পেলাম । এবারের শব্দ আগের চেয়ে বেশ স্পস্ট ও কাছে মনে হলো । মনে হলো নিচের ছাদে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা দলবেধে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছে। একজন অন্যজনকে ছুয়ে ফেলতে পারলেই সকলে একযোগে আনন্দে চিৎকার করে উঠছে।
আমাদের এ বাড়িটা সাত তলা। ছ'তলার উপর ছোট দুটো ফ্লাট। তার উপর অর্থাৎ সাত'তলায় পানির ট্যাংকসহ খোলা ছাদে আমার বাগান।চারপাশে ইটের দেয়াল করা বাউন্ডারির ভেতর বড় বড় প্রায় ৪০টা ড্রামে বিভিন্ন জাতের গাছ পুরো ছাদ ঘুরিয়ে লাগানো। বর্ষার জল পাওয়ায় গাছগুলো আড়মোড়া ভেঙ্গে নতুন ডালপালা ছেড়ে এতোটাই ঘন ও ঝোপালো হয়ে উঠেছে যে ছাদের মেঝেতে বসে কাজ করলে বাহির থেকে দেখা যায় না।
ছ'তলার ছাদ তালাবন্ধ থাকে । ভাড়াটিয়াদের প্রবেশ নিষেধ। ছাদ খোলা রাখলে নানান সমস্যা সৃষ্টি হয় বলে এই ব্যবস্থা । আমি মোড়া থেকে উঠে নিচের ছাদে উকি দিলাম। কাউকে দেখা গেল না। সদ্য বৃষ্টি সিক্ত শ্যাওলা পড়া ভেজা ছাদ খা খা করছে । মাথার উপর ছোপ ছোপ কালো মেঘের দলা উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ভেসে যাচ্ছে। দেখে মনে হলো, অভিমানী কুমারী মেয়ে অভিমানে গাল ফুলিয়ে চোখের কোণে জলের আধার নিয়ে বসে আছে। টুক টাক ধমক দিলেই অঝোর ধারায় ঝরে ভাসিয়ে নেবে সব। অন্যান্য দিন এ সময় আকাশে চিলসহ নানা জাতের পাখি উড়তে দেখা যায় কিন্তু আজ আকাশ খোলা মাঠের মতো একেবারে শূন্য।
পরিবেশটা ঠিক জুতসই মনে হলো না । আমার অজান্তেই যেন কোথাও কিছু একটা ঘটে যাচ্ছে । সেই চাপটা এসে জমা হচ্ছে বুকের ভেতর । অথচ ধরতে পারছি না, কি ঘটছে,কেন ঘটছে। কোন কারণ ছাড়াই ভেতরটা খচখচ করতে লাগলো।
হেটে হেটে চারপাশ থেকে নিচের ছাদে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই । তাকার কথাও না। অথচ স্পষ্ট শুনলাম নিচের ছাদ থেকে এলো শব্দটা। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি মেঘগুলো খুব দ্রুত জমাট বাধছে। হয়তো কয়েক মুর্হুতের মধ্যেই হয়তো বৃষ্টি শুরু হবে। চারপাশটা অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হতে আর খুব বেশি দেরি নেই। অনেক দূরের একটা ছাদে রেলিং ঘেঁষে দু'টো ছেলে মেয়ে দাড়িয়ে গল্প করছে। এ ছাড়া চারপাশে শুনশান নীরব। ঈদের ছুটিতে ফাকা হয়ে গেছে বাসাবাড়িগুলো । অন্য সময় হলে,এসময় প্রতিটি ছাদে দু'একজন করে হেটে বেড়ায় । তাই খুব একটা ভয় ঢর লাগে না। কিন্তু আজ ! কোন কারণ ছাড়াই শরীর কাটা দিয়ে উঠছৈ। মনের খচখচানি ভাবটা বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ।
দ্রুত ফিরে এসে মোড়ায় বসে লাউয়ের বীজগুলো তৈরি হওয়া মাদার মাঝামাঝি ঢুকিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিলাম । তারপর মাদাগুলো পানির ট্যাঙ্কের পাশে রেখে উঠে দাড়াতেই পরপর দু'বার মেয়েলি কাশির শব্দ ভেসে এলো। শতভাগ নিশ্চিত শব্দটা নিচের ছাদ থেকে এসেছে। এ রকম কিছু একটা প্রত্যাশায় আমার সমস্ত দেহ মন প্রস্তুত হয়ে ছিলো। তাই এবার আর ভুল হবার বিন্দু মাত্র অবকাশ নেই। দৌড়ে গিয়ে আতা গাছের পাশে গিয়ে নিচের ছাদে তাকালাম। নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম ছাদের রেলিং ঘেঁষে সন্ধ্যার ম্রিয়মাণ আলোয় বিশ,বাইশ বছরের একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠলো । আমি হতবাক বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠলাম কে, কে?
আমার চিৎকারে মেয়েটি উপরের দিকে মুখ করে তাকালো। সন্ধ্যার আধো, আলো আধো অন্ধকারে তার মুখের আদল খুব একটা বোঝা গেল না। মনে হলো ডিমাকৃতি মুখাবয়বে একরাশ কালো অন্ধকার মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে । বিস্মিত হবার ভাবটা কোন রকম গোপন করে আবার জিজ্ঞাসা করলাম, কে,কে আপনি ? ছাদে কি করছেন ?
আমার প্রশ্ন শুনে তার মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা গেলো না। মৃদু হাসি হেসে আমার দিক থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে সন্তর্পনে ছাদের অন্যপ্রান্তে হেটে গেলো। উপড় থেকে ছাদের সে অংশটা দেখা যায় না। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে আবার চিৎকার উঠলাম। কথা বলছেন না কেন;কে,কে আপনি? ক'তলায় থাকেন ? ছাদে আসার চাবি পেয়েছেন কোথায়?
মাথার মধ্যে তখন একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে । নিচের ছাদ তো তালা মারা। তাহলে মেয়েটি ছাদে আসলো কিভাবে ? দারোয়ান আমাদেরকে জিজ্ঞাসা না করে কোন ভাড়াটিয়াকে চাবি দিবে না। ভালো করে বারন করা আছে। দৌড়ে নিচের সিঁড়িতে নেমে গেলাম এবং থমকে গেলাম। ৬ তলার ছাদে যাবার দরজায় যথারীতি তালা ঝুলছে । ৬ তালার চাবি আমার সাথে নেই। আমি শুধু সাত তলার চাবি সাথে নিয়ে আসি ।
মুহূর্তে যা বুঝার তা বুঝতে আর বাকি রইলো না। উল্টো দৌড়ে ছাদে উঠে কোন রকম ছাদের গেইটে তালা মেরে যতদ্রুত সম্ভব ৩য় তলায় আমার ফ্লাটে এসে তালা খুলে ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। ছাদ থেকে নামার সময় ক্ষণকালের জন্য যেন মনে পৃথিবীর সব অশরীরী আত্মা আমার পিছু পিছু নিমে আসছে। ফ্লাটে ঢুকে বাতি জ্বালাতেই টুস করে একটি শব্দ করে বাতিটা নিভে গেলো। এক নিমিষে ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত হলাম অথচ সামনে অপেক্ষা করছে পুরো একটি রাত।
সাখাওয়াত বাবন
০৩।০৭।২০২৩
ছবি : Maya Von
০৪ ঠা জুলাই, ২০২৩ সকাল ১০:৩৯
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: বেশ ভালো বলেছেন । তবে ভুত হয়ে তিন সন্ধ্যায় ছাদে ঘুরাঘুরি করবেন না তাতে পেত্নী হয়ে যেতে পারেন
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
২| ০৩ রা জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৫:০০
মিরোরডডল বলেছেন:
অথচ সামনে অপেক্ষআ করছে পুরো একটি রাত ।
কেমন কাটলো রাত?
০৪ ঠা জুলাই, ২০২৩ সকাল ১০:৪০
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ভয়ংকর রাত !
৩| ০৩ রা জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৫:০১
মিরোরডডল বলেছেন:
ছাদ বাগানের কিছু ছবি দিলে ভালো লাগতো।
০৪ ঠা জুলাই, ২০২৩ সকাল ১০:৪৪
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: আমার ছাদ বাগান নিয়ে ব্লগ লিখবো একদিন সেদিন পাবেন । সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ।
৪| ০৩ রা জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:৫৩
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: আহা তারপর ভুতটা কি করল? সে কি পুরো রাতই আটকে ছিল ছাদে!
০৪ ঠা জুলাই, ২০২৩ সকাল ১০:৪১
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: কি আর করবে ছাদে ঘুরে বড়াচ্ছে আর এদিকে আমি সারারাত না ঘুমিয়ে ছটফট করে কাটিয়েছি । চোখ বন্ধ করলেই মনে হয়েছে, ঘরের ভেতর কে যেন হাটছে ।
৫| ০৩ রা জুলাই, ২০২৩ রাত ১১:৩৭
কিরকুট বলেছেন: ভুতের ডানা থাকে জানেন না!!??
০৪ ঠা জুলাই, ২০২৩ সকাল ১০:৪৫
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: এরপর তার সাথে দেখা হলে , জেনে নিবো । ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য ।
৬| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২৩ রাত ১২:০৮
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: উপরে কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছে সে ভুত হয়ে গিয়েছিল। আপনি মনে হয় ওনাকে দেখেছেন।
০৪ ঠা জুলাই, ২০২৩ সকাল ১০:৫১
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: আশা করি কঙ্কাবতী এভাবে আর কাউকে ভয়ে দেখাবে না । খুব ভালো মন্তব্য করেছেন । ধন্যবাদ
৭| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৩
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
ঢাকার কিছু কিছু এলাকায় বাসা বাড়ির ছাদে এমনকি বাসাবাড়ির ভেতরেও এমন সমস্যা আছে বলে জানা যায়। সবাই যে গল্প করেন বা মিথ্যা বলেন তা নয়, কিছু তো সমস্যা আছে। গল্প ভালো লেগেছে। +++
০৪ ঠা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:০১
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: খুব গুছিয়ে মন্তব্য করেছেন । পড়ে আরাম বোধ করলাম । ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য ।
৮| ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: গ্রেট।
০৫ ই জুলাই, ২০২৩ সকাল ১১:৫৪
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন । জুলভান ভাইকে মিস করছি ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৪:০৭
কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: হায় হায়
কি সাংঘাতিক!
যাইহোক তুমি ভূত দেখেছো ভাইয়া আর আমি ভূত হয়েছিলাম।
একবার বিউটি পারলার থেকে সেজে আসার পর আমার বাড়ির লোকজন সব আমাকে ভূত ভেবেছিলো।