নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানার কোন শেষ নাই, জানতে চাওয়ায় লাজ নাই।

Sohag Tanvir Shakib

পড়ি, জানি এবং অন্যকে জানানোর চেষ্টা করি।

Sohag Tanvir Shakib › বিস্তারিত পোস্টঃ

যেভাবে হঠাৎ বোকা হয়েছি-১

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৪৮



অভিবাবকদের স্বপ্ন আর আমার স্বপ্ন একত্রে পূরণ করার লক্ষ্যে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে গ্রাম থেকে মফস্বল শহরে আসি ২০১২ সালে। শহরের লেপুসিপাহী রোডে এক ছাত্রাবাসে থাকার ব্যবস্থা আগে
থেকেই করা থাকে। ছাত্রাবাসে তখন আমি-ই সবার জুনিয়র। থাকি একলা সিঙ্গেলরুমে। তাই সবার সাথে পরিচয় হলেও বন্ধুত্ব হয় না। তবে কিছুদিনের ভিতর আমার চেয়ে দুই বছরের সিনিয়র লিখন ভাইয়ের সাথে হালকা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়। যেদিন লিখন ভাইয়ের এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে তার আগের রাতে সে আমাকে বলে.........
: "সাকিব, আমার সাথে কালকে তোমাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হবে।"
: "সেখানে আমি গিয়ে কি করবো ভাই?"
: "শহরে পরীক্ষার্থীদের সাথে তাদের মা-বাবা আসে, এখানে তো আমাদের মা-বাবা নাই; তাই প্রথমদিন তোমাকে সাথে নিয়ে যেতে চাচ্ছি"
: "আরো তো বড় ভাইয়েরা আছে, তাদের সাথে গেলে ভালো হতো না?"
: "বড় ভাইদের কেউ-ই কালকে ফ্রি নাই, তাই তোমাকে বলছি।"
পরের দিন সকালে লিখন ভাইয়ের সাথে রিক্সায় করে যাই শহরের জুবলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে। সকাল দশটার আধা ঘণ্টা আগে আমরা সেখানে গিয়ে পৌঁছাই। অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের সাথে পনে দশটায় লিখন ভাই ভিতরে প্রবেশ করে। সকাল দশটা থেকে তাদের পরীক্ষা শুরু হয়। দুপুর ১ টা পর্যন্ত চলবে। আমি কিছু সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার পর, মেসে এসে গোসল সেরে দুপুরের খাবার খেয়ে লিখন ভাইকে রিসিব করতে দুপুর ১২ টায় আবার সেখানে যাই। চৈত্রের দুপুর। প্রচন্ড রোদ চারিদিক। আমি একটা বন্ধ রাখা দোকানের বারান্দায় রোদ থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় নেই। আমার কাছে থেকে অল্প একটু দূরে একই সরল রেখায় জুবলী স্কুলের মেইন গেট। আমি গেটের দিকে তাকিয়ে থাকি। সেখানে আস্তে আস্তে অভিবাবকদের জটলার আয়তন বাড়তে থাকে। আমি সেদিকে চেয়ে লিখন ভাইয়ের আগমন অপেক্ষা করি। এমন সময় লক্ষ্য করি, গেটের ওখানে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে আমার দিকে অপলক নয়নে চেয়ে আছে। ফলে মেয়েটির দিকে আমিও চেয়ে থাকি। লজ্জায় মাঝে মাঝে চোখ ফিরিয়েও নেই। চোখ ফিরিয়ে বেশি সময় থাকতে পারি না। মেয়েটির চোখে চোখ পড়ে আমার। আমি তার চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করি। কালো বোরকা আর ব্রাউন কালারের নেকাবে মেয়েটির চোখ দু'টি চৈত্রের রোদে ঝলমল করে। কালো বোরকার আড়াল থেকে হাতের বের হয়ে থাকা অংশটুকু টিউব লাইটের মত জ্বলজ্বলে দেখায়। আমি ক্র্যাশ খেয়ে হুস হারিয়ে ফেলি। কারণ, হালকা-পাতলা গড়নের এত সুন্দর একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে আমার মনে আসে ফিলিংক্স, চোখে আসে স্বপ্ন, হৃদয়ে আসে ভালোবাসা। কল্পনার রাজ্যে গিয়ে মেয়েটিকে নিয়ে ঘর বাঁধি। হানিমুনে কক্সবাজার গিয়ে সি বিচে ছাতার নিচে দু'জন পা ছাড়িয়ে বসে ডাব খাই। এক সময় ছেলেমেয়ের বাবাও হয়ে যাই। সেই ছেলেমেয়েদের হাত ধরে পার্কে ঘুরেও বেড়াই। এমন মধুর কল্পনার মাঝে গাড়ির হর্ণে এক সময় বাস্তবে ফিরে আসতে হয় আমাকে। তারপর মেয়েটিকে পটানোর জন্য অপলক চেয়ে থাকা, মাঝে মুচকি হাসা, মাথার চুলে হাত দিয়ে বাংলা সিনেমার হিরোদের মত পোজ দেওয়া এসবের কোনো কিছুই বাদ দেই না।
এদিকে আর মিনিট পাঁচেক সময় বাকি আছে পরীক্ষা শেষ হতে। গেটের সামনে অভিবাবকদের ভির বেড়ে যায়। আমিও গেটের দিকে এগিয়ে যাই। বহু কষ্টে ভির ঢেলে মেয়েটির কাছাকাছি গিয়ে একটু দূরত্ব বজায়ে রেখে মুখোমুখি দাঁড়াই। তত সময়ে আমার শরীর ঘেমে শার্ট পুরাপুরি ভিজে যায়। মেয়েটির চোখের তাহনিতে সব কষ্ট নষ্ট হয়ে যায় আমার। তখন লিখন ভাইয়ের অপেক্ষার চেয়ে মেয়েটিকে পটানো আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ত করি, লিখন ভাই না ডাকলেও আমি প্রতিদিন আসব। মেয়েটির জন্য আমাকে যে আসতেই হবে। ইতিমধ্যে লিখন ভাই বেড়িয়ে আসে। আমি আরো দেড়ি করে যাওয়ার জন্য তাকে দেখে লোকজনের ভিরে আড়াল হই। তবু মেয়েটিকে চোখের আড়াল করি না। লিখন ভাই আমাকে খোঁজাখুজি করে। তাও আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করি না।
কিছু সময় পর একজন মেয়ে পরীক্ষার্থী এসে ঐ মেয়েটাকে বলে....
:" নানু চালো যাই।"
এই কথাটি শুনে আমি নিজের কাছে নিজে এতটাই আবুল হই যে, লজ্জায় নিজের মুখ নিজের-ই দেখতে ইচ্ছা করে না।
তারপর আর গরমে রোদের ভেতর দাঁড়িয়ে না থেকে লিখন ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলি....
: "আপনি এখানে? আমি আপনাকে খুঁজে অস্থির। দেখেন তো ঘামে শার্ট একেবারে ভিজে গেছে।
সে আমার কাঁধে হাত রেখে সহানুভূতির সুরে বলে..
:"চলো, ঠান্ডা কিছু খাই।"


-সোহাগ তানভীর সাকিব
গল্পলেখক
রাধানগর, পাবনা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.