নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানার কোন শেষ নাই, জানতে চাওয়ায় লাজ নাই।

Sohag Tanvir Shakib

পড়ি, জানি এবং অন্যকে জানানোর চেষ্টা করি।

Sohag Tanvir Shakib › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রেক্ষাপট

২৮ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৩৭


ইসলামের ইতিহাসে তথা বিশ্বের ইতিহাসে হুদায়বিয়ার সন্ধি এক যুগান্তকারী ঘটনা। বিশ্বের ইতিহাসে এ সন্ধি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এ সন্ধিতে সাক্ষর করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এক অসাধারণ রাজনৈতিক প্রতিভা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেন। তাই হুদায়বিয়ার সন্ধি মহানবী (সাঃ) এর জীবনে Land mark বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পবিত্র কোরআনে একে "ফাতহুম মুবিন" বা সুস্পষ্ট বিজয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলাম প্রসারের ক্ষেত্রে হুদায়বিয়ার সন্ধি গুরুত্ব অপরিসীম

পবিত্র জিলকদ মাসে মক্কার সীমানার মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ হারাম বা নিষিদ্ধ ছিল। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর দীর্ঘ ছয় বছর নিজ জন্মভূমি না দেখায় সবার মাঝে মক্কা যাওয়ার আগ্রহ ছিল। ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কয়েকজন সাহাবির আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহর নির্দেশে মক্কায় হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে গমনের ঘোষণা দেন। ১,৪০০ জন সাহাবি এবং ৭০ টি উটের কাফেলাসহ রাসুল (সাঃ) "কাসোয়া" নামক উটের ওপর আরোহণ করে হজ্বের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে মক্কা অভিমুখে রওনা হন। রাসুল (সাঃ) জুহফা ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থান উসফান নামক স্থানে পৌঁছালে বিশর ইবনে সুফয়ান আল-কাবি সংবাদ দিলেন, খালিদ বিন ওয়ালিদ অথবা ইকরামা ইবনে আবু জেহেলের নেতৃত্বে ২০০ অশ্বরোহী সেনাদল "কুররা উল গামিম" নামক স্থানে পথরোধ করতে ঘাঁটি করেছে। এমতাবস্থায় রাসুল (সাঃ) গতিপথ পরিবর্তন করে মক্কা শহরের ৯ মাইল দক্ষিণে হুদায়বিয়া নামক স্থানে ঘাঁটি স্থাপন করলেন।
খুযাআ গোত্রের নেতা বুদায়েল কতিপয় সাথী নিয়ে রাসুল (সাঃ) এর নিকট আসেন এবং মদিনায় ফিরে যাওয়ার জন্য রাসুল (সাঃ) কে অনুরোধ করেন। রাসুল (সাঃ) অত্যান্ত বিনয় এবং ভদ্রতার সাথে তাঁদের মক্কায় গমনের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেন এবং মক্কা নগরীতে প্রবেশের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর পালাক্রমে মিকরায় আল-জুলায়স হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে তাঁর কাফেলাসহ মদিনায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব করেন। আবু সুফিয়ানের জামাতা উরওয়া রাসুল (সাঃ) এর নিকট আসেন। রাসুল (সাঃ) প্রত্যেককে তাঁর মহৎ উদ্দেশ্যের কথা জানান এবং মক্কা প্রবেশে কুরাইশদের বাঁধা না দেয়ার আহবান করেন।
পরিস্থিতি কিছুটা প্রতিকূল মনে করে রাসুল (সাঃ) খোরাশ ইবনে উমইয়া আল-খুজাইকে নিজ উটসহ মক্কায় প্রেরণ করেন। কুরাইশগণ তাঁর উটের পা কেটে তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়। খোরাশের পর হযরত ওমর (রাঃ) এর পরামর্শ মোতাবেক রাসুল (সাঃ) হযরত ওসমান (রাঃ) কে মক্কায় প্রেরণ করেন। জনবর উঠে, কুরাইশরা হযরত ওসমান (রাঃ) কে হত্যা করেছে। ফলে মুসলিম যোদ্ধাগণ রাসুল (সাঃ) এর হাতে হাত রেখে দূঢ়কণ্ঠে শপথ গ্রহণ করেন। তারা হযরত ওসমান (রাঃ) কে হত্যার বদলা না নিয়ে মদিনায় ফিরে যাবে না। এ শপথকে বাইয়াতুল রিজওয়ান (Pledge of good pleasure) অথবা বৃক্ষের নিচে শপথ বা বাইয়াতুস শাজারা (Pledge of the tree) বলে অভিহিত করা হয়। মুসলমান বীর সৈনিকদের দৃঢ় শপথের কথা শোনার পর কুরাইশরা শঙ্কিত হয়ে ওসমান (রাঃ) কে ছেড়ে দিয়ে সুহাইল বিন আমরকে রাসুল (সাঃ) তথা মুসলমানদের নিকট শান্তি আলোচনার জন্য প্রেরণ করে। ফলে মুসলমানদের সাথে কুরাইশদের এক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে এটিই বিখ্যাত হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত।
ইসলামের ইতিহাসে হুদায়বিয়ার সন্ধির গুরুত্ব ও এর ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারি। এটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনুপম রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে। কেননা এ চুক্তির পর রাসুল (সাঃ) ইসলামের দাওয়াত বিভিন্ন দেশে প্রচার করতে সক্ষম হন এবং নারী ও কুরাইশদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের মাত্রা অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। এ সন্ধির শর্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, মুসলমানদের মক্কা বিজয়ের পথে আর কোনো বাঁধা থাকে না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.