নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেখাব বিশ্ব আপনার চোখে

মোঃ শামীম পারভেজ হিমেল

মোঃ শামীম পারভেজ হিমেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাচ্ছাদের ইন্টারেট আসক্তি থেকে দূরে রাখার ৯টি টিপস

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৪৮

বর্তমানে বাবা মায়েদের জন্য একটা বড় সমস্যা হচ্ছে সন্তানেরা মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি পিছে বেশি সময় কাটায় এবং এই গেম বা নেট আসক্তি অনেক ভাবে তাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট থেকেই হয়তো একটু সময় পেতে আমরা বাচ্চাদের মোবাইল বা ল্যাপটপে ভিডিও দেখতে বা গেম খেলতে দেই। একটু বড় বাচ্চাদের পড়ার জন্য বা দুনিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমরাই মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি কিনে দেই। কিন্তু এই গ্যাজেট ব্যবহার করতে গিয়ে সন্তানের শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হয় এর দায় আমাদেরই নিতে হবে। বাবা মা হিসেবে অবশ্যই আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যা তারা এসব গ্যাজেটের অসৎ ব্যবহার করবে না গ্যাজেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বেনা। কাজটা নিঃসন্দেহে কঠিন কিন্তু অসম্ভব না। আসুন জেনে নেই কিছু টিপস যা আমাদের সন্তানদের গ্যাজেটের প্রতি আকর্ষণ কমতে সাহায্য করবে।

গেম ,ইন্টারনেট বা গ্যাজেট আসক্তি কমাবেন কিভাবে?
বাবা মা উভয়কে দলবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বাবা মা দুইজনকেই একত্রে কাজ করতে হবে। কারণ দুইজনই যদি একসাথে কাজ না করে তাহলে বাচ্চারা ব্যাপারটার গুরুত্ব সহজে বুঝবেনা। ভাববে এই ক্ষেত্রে ছাড় দিলেও চলে যেহেতু বাবা বা মা একজন তো এটাকে নরমাল ভাবেই নিচ্ছে।তাছাড়া রাসূল (সা) বলেছেন প্রত্যেককে তাদের অধিনস্তদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। তাই বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বাবা মা উভয়কে সমান সচেতন হতে হবে।কিভাবে কি করা হবে তা বাবা মাকে একত্রে বসে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। সুবিধা, অসুবিধা, ফলাফল ইত্যাদির ব্যাপারে আগেই আলাপ করে নিতে হবে।



আপনার সন্তান কি দেখছে তার প্রতি লক্ষ্য রাখুন
আজকাল বাচ্চাদের নিয়ে টিভি দেখার মতো অবস্থা আর নাই। বাচ্চাদের কার্টুন গুলোতেও বেশির্ভাগ সময় বাবা মায়ের কাছে কথা লুকানো, মিথ্যা বলা, অন্যের উপর নিজের দোষ চাপিয়ে দেয়া বা অল্প বয়সেই বিপরীত লিংের প্রতি আকর্ষণ ইত্যাদি জিনিসগুলো থাকে। হিন্দি সিরিয়ালের কথা তো বাদই দিলাম। বাচ্চারা কি দেখছে তার প্রতি তাই লক্ষ্য রাখতে হবে।কিছু অনুষ্ঠান আছে শিক্ষনিয় এবং মজারও, বাচ্চাদের সেগুলা দেখতে দিতে হবে।এছাড়া নিজেরা ইউটিউব থেকে বেছে ভিডিও দিতে পারেন।বাসার টিভি বা অন্যান্য ইন্টারনেট যুক্ত ডিভাইস ঘরের এমন রুমে রাখুন যেখানে সবার সহজ যাতায়াত রয়েছে এবং চলার পথে দেখা যায় কে কি দেখছে। যদি বাচ্চাদের রুমে টিভি বা কম্পিউটার থাকে তাহলে তা ব্যবহারের সময় দরজা খোলা রাখতে বলবেন। বাচ্চাদের বুঝাবেন যে আপনি ওদের অবিশ্বাস করেন বলে এটা করছেন তা না, বরং আপনি তাদের নেটের খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা করতে চান বলেই এই নিয়ম করেছেন।

নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করুন যা সবাইকে মানতে হবে
এসব গ্যাজেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করুন যেমন দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ব্যবহার করতে পারবে বা হোমওয়ার্ক শেষ হলে ব্যবহার করতে পারবে ইত্যাদি। আপনার সন্তান যদি একটু বড় হয় ও নিজে কম্পিউটার চালাতে পারে তাহলে তাকে রুলস মানার ব্যাপারে বুঝাতে হবে ও না মানলে এক সপ্তাহ কম্পিউটার ধরতে দেয়া হবেনা বা এই জাতীয় শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। শাস্তির ব্যাপারে কঠোর থাকতে হবে। বাচ্চা যতোই কাঁদুক বা বিরক্ত করুক, তাকে চুপ করাতে শাস্তিতে শিথিলতা আনা যাবেনা। বাচ্চা যতো বড় হবে ও গ্যাজেট ব্যবহারের ব্যাপারে স্বাধীন হবে, ততো বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে।

অনলাইনের অচেনা মানুষ বিপদজনক তা বুঝাতে হবে
অনলাইনের অচেনা মানুষেরা যে কতো ক্ষতি করতে পারে তা তাদের বুঝাতে হবে। হয়তো আপনার মনে হতে পারে এতো অল্প বয়সে এসব বলে বাচ্চাদের ভয় পাইয়ে দিচ্ছেন আপনি। কিন্তু আমরা দুনিয়ার জন্য বাচ্চাদের যেভাবে প্রস্তুত করি সেভাবে অনলাইনের জন্যেও প্রস্তুত করা দরকার। অনলাইনে নিজের নাম্বার বা বাসার ঠিকানা দিলে এবং নিজের ডিটেইলস প্রকাশ করলে কতো ক্ষতি হতে পারে তা উদাহরণ দিয়ে বুঝাতে হবে। দৈনন্দিন জীবন বা নিজের ছবি যে অচেনাদের সাথে শেয়ার করা কতো খারাপ হতে পারে তা বুঝাতে হবে।

ভার্চুয়াল জীবনের চেয়ে বাস্তব জীবনকে বেশি গুরুত্ব দিতে শিখাতে হবে
নিঃসন্দেহে একজন বাচ্চার মানসিক বিকাশে তার চারপাশের মানুষ ও পরিবেশ অনেক প্রভাব ফেলে।বাচ্চা যদি ভার্চুয়াল জীবনেই বেশি সময় দেয়, তাহলে তার মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হবেনা বরং সে বাস্তব জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে সমস্যার সম্মুখীন হবে। সুতরাং সন্তানের বাড়ন্ত সময়ে তার সাথে বেশি সময় কাটান। নিজের ঘরে এবং আসে পাশের প্রতিবেশী দের বা অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে কিভাবে কথা বলবে, কিভাবে মিশবে ইত্যাদি শিক্ষা দেন। বাস্তব জীবন যে ভার্চুয়াল জীবনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝাতে হবে।

বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
লেখা বা কিছু পড়া শিখা অনেক সময় সাপেক্ষ। একেকটা অক্ষর শিখা, ভাওয়েল শিখা, উচ্চারণ শিখা, এরপর বানান করে পড়া অনেক সময়ের ব্যাপার।লিখতে শিখা তো আরও বেশি কঠিন। তাই যেসব বাচ্চা কম্পিউটারে গেম খেলে অভ্যস্ত তাদের কাছে লেখাপড়া খুব বোরিং লাগে। মোবাইল বা কম্পিউটারে খুব কম সময়েই লেখা যায়। প্রতিটা কাজও সহজেই করা যায়।সেখানে সময় সাপেক্ষ লেখা আর পড়ার কাজ তাদের ভালো লাগেনা। এজন্য ছোট থেকেই প্রতিদিন আপনার সন্তানকে বই পড়ে শোনান।তাদেরকে কুর’আন পড়ে শোনান। কুর’আনে বর্ণিত বিভিন্ন কাহিনী, নবী রাসুলদের কাহিনী পড়ে শোনান। পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলুন।যখন তারা পড়তে শিখবে প্রতিদিন অন্তত আধাঘণ্টা তাদের পড়তে দিন।

বাচ্চাদের সাথে খেলুন
কম্পিউটার গেম গুলো খেলাধুলা করার আসল অর্থই বদলে দিয়েছে।আগে মানুষ খেলা বলতে বুঝতো শারীরিক খেলা কিন্তু এখন বাচ্চারা খেলা বলতে বুঝে প্লে স্টেশন বা কম্পিউটারে বসে গেম খেলা। এসব খেলা বাচ্চাদের মানসিক বিকাশে অনেক বাঁধা দেয়। গেমের সব কিছু আগে থেকেই ঠিক করা থাকে, বাচ্চারা শুধু সেই পথে খেলতে থাকে।নতুন কিছু স্বাধীন ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা তাদের থাকেনা।কম্পিউটার গেমে সহজেই খুন খারাবি ইত্যাদি শিখা যায়।যেহেতু তারা নিজেরা ব্যথা অনুভব করেনা তাই এসব ভায়োলেন্স যে কতো কষ্টের সে ব্যাপারে তাদের কোনো আইডিয়াই থাকেনা। বরং ভায়োলেন্সের প্রতি আকৃষ্ট হয়।অনেক ১৮+ গেমও বাচ্চারা খেলে এবং অনেকের বাবা মা খেয়াল করেনা বা করলেও খেলতে দেয় কারণ বাচ্চারা তাদের বুঝায় এসব গেমে খারাপ কিছু নাই।অনেক বাবা চাচারা বাচ্চাদের নিয়ে এসব গেম খেলে, ভাবে বাচ্চাদের সাথে একটা বন্ধন তৈরি হচ্ছে কিন্তু আসলে তারা ভায়োলেন্স বা খারাপের প্রতি তাদের উৎসাহ দিচ্ছে।

বাচ্চাদের এসব গেম থেকে দূরে রাখা খুব প্রয়োজন। তাদের শারীরিক খেলার প্রতি আগ্রহী করতে হবে।অনেক বাচ্চার হয়তো বাইরে গিয়ে খেলার সুযোগ নাই কিন্তু প্রচুর ইনডোর গেম আছে যা বাচ্চারা খেলতে পারে।বাবা মায়ের বাচ্চাদের সময় কাটানোর, সাথে নিয়ে খেলার বিকল্প নাই।বাচ্চাদের পিছে সময় দেয়া তাদের পিছে টাকা খরচ করার চেয়েও বেশি উত্তম।

বাচ্চাদের যা শিক্ষা দিচ্ছেন তা নিজেও করুন
নিজের সাথে সৎ হয়ে একবার ভাবুন তো, আপনি কি নিজে আপনার স্মার্টফোন বা ল্যাপটপে বেশি সময় কাটান?হয়তো আপনি একটু সময় পেলেই ফেসবুকে ঘুরে আসেন, ওয়াটস এ্যাপে ফ্রেন্ড বা আত্মীয়দের সাথে গল্প করে সময় কাটিয়ে দেন।বা হিন্দি সিরিয়াল বা মুভি নিয়ে পরে থাকেন।অনেক বাবা একটু রিল্যাক্স হওয়ার জন্য পোলো বা ইত্যাদি গেম খেলে থাকেন। নিজেরা যদি গ্যাজেটের পিছে বেশি সময় দেন তাহলে সন্তানেরাও তাই শিখবে কারণ ওরা কান দিয়ে না বরং চোখ দিয়ে শিখে।নিজেকে জিজ্ঞেস করে দদেখেন আআপনি তাদের জন্য সসঠিক উদাহরণটা তৈরি করছেন কিনা।নিজের এসব গ্যাজেট ব্যবহার করা কমিয়ে দেন। ভার্চুয়াল জগতের চেয়ে বাস্তব জগৎকে বেশি মূল্য দেন।বাচ্চাদের সাথে সময় কাটান। পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সময় ল্যাপটপ বন্ধ রাখেন, মোবাইল সাইলেন্স মোডে দিয়ে রাখেন।

বাচ্চাদের জন্য বিকল্প পথ তৈরি করুন
আপনার কি মনেহয় যে আপনার সন্তান গেম বা ইন্টারনেট, গ্যাজেটের প্রতি অনেক বেশি আসক্ত হয়ে পরেছে এবং এসব নিয়ম আর এখন কাজে লাগবেনা?হয়তো আপনার ছেলে মেয়েরা এসব গ্যাজেটের পিছে বেশি সময় দেয় কারণ এছাড়া তাদের করার খুব একটা তেমন কিছু নাই।তাদের জন্য আপনি বিকল্প পথ তৈরি করতে পারেন যাতে তারা সে সময়টা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে পারে।কয়েকটি বিকল্প উপায় এখানে দেয়া হলো।আপনারা চাইলে নিজেরাও ভেবে আরো উপায় বের করে নিতে পারবেন।

সুইমিং, বাইক রাইডিং বা প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন।
কিছু সহজ কিন্তু মজার রান্না যেমন ফ্রুট সালাদ করা, বিস্কুট বা কেক বানানো ইত্যাদি সাথে নিয়ে করতে পারেন।
সন্তানকে নিয়ে লাইব্রেরীতে গিয়ে পছন্দ মতো আঁকার, হ্যান্ডি ক্র‍্যাফট বানানোর বা সাইন্স প্রযেক্ট বানানোর বা নরমাল রান্নার বই ইত্যাদি কিনে দেন।
লাইব্রেরী থেকে আনা বই থেকে তাদের সাথে নিয়ে কোনো প্রযেক্ট তৈরি করুন, বা নতুন কোনো রান্না করুন ইত্যাদি।
বাচ্চাদের নিয়ে পিকিনিক প্ল্যান করুন ও একসাথে পিকিনিকে যান।
সেলাই, বাগান করা, হাতের তৈরি জিনিস বানানো ইত্যাদি শিখাতে পারেন।এটা অনেক উপকারী। বাচ্চারা তাদের সময় তাহলে ভালো কিছু কাজে ব্যয় করতে পারবে ও মানসিক বিকাশও হবে।
পুরষ্কারের ব্যবস্থা করুন।আপনার সন্তানকে নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত গ্যাজেট ব্যবহার করতে নিষেধ করেন।যদি যে মানে তাহলে পুরষ্কার দিন।বাচ্চারা গিফট পেতে খুব ভালোবাসে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৫:৩৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপনি কি পত্রিকাতে লিখেন? পোস্ট সুন্দর।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০০

মোঃ শামীম পারভেজ হিমেল বলেছেন: আগে লিখতাম। এখন আর সময় হয়ে ওঠে না। এখন নতুন করে শুরু করার পরিকল্পনা আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.