নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মকথন ৫ঃ নিজেরে খুঁজি

০৭ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৪

প্রাতঃভ্রমণ, ধানমন্ডি লেক, পরমায়ু সংঘ - সব মিলিয়ে নিকট অতীতের যে সুর প্রাণে বাজে, তার উৎস কিন্তু দূ-----র দূ-----র অতীতে লুকিয়ে আছে। আজ সেই দূ-----র দূ-----র অতীতের স্মৃতিগুলো যেন স্বচ্ছ কাঁচের অ্যাকুরিয়ামের ভিতরের নানা বর্ণের মাছেদের মত আমার অতি কাছের। অতি কাছের, অতি প্রিয় সেই স্মৃতিতে আজ জায়গা করে নিয়েছে কলাবাগান স্টাফ কোয়ার্টার, খেলার সাথীরা এবং আমার ও সাথীদের প্রাণপ্রিয় খুশু ভাই

তখন ১২ টা বিল্ডিং নিয়ে গড়ে উঠেছিল সরকারি এই কলোনী (এখন আরো কিছু যোগ হয়েছে) - আমরা থাকতাম মিরপুর রোডের পাশে ২ নং বিল্ডিংয়ে, এবং বাসার সামনে, দক্ষিণে ছিল সুন্দর মাঠ (এখনো আছে)। শীতকালে টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট, বছরের অন্য সময়ে ফুটবল এবং আরো অনেক খেলার আয়োজনের যিনি মধ্যমণি তিনি আমাদের খুশু ভাই। খেলার সরঞ্জাম কেনার জন্য তখন সিঁকি (২৫ পয়সা), আধুলি (৫০ পয়সা), টাকা - যে যার সামর্থ্য মত দিত - স্বল্প আয়ের বাবাদের সন্তানদের শখের খেলা-ধূলার আয়োজনটা বেশ কষ্টের ছিল। সব টাকা-পয়সা জমা থাকত খুশু ভাইয়ের কাছে। খুশু ভাইয়ের বাবার আয় ভালই ছিল (আজ মনে হয়), সকলের চাঁদা দিয়েও যখন আরাধ্য খেলার বস্তুটা কেনার মত টাকা হতো না, তখন বাকীটা উনি দিয়ে দিতেন। তারপর কোন এক বিকেলে একদল বালককে সাথে নিয়ে এক কিশোর রওনা হত শুক্রাবাদের দিকে। এখন যেখানে নিউমডেল ডিগ্রি কলেজ, সেখানে ওকিস স্পোর্টস নামে একটা খেলার সরঞ্জাম বিক্রির দোকান ছিল। দল বেঁধে আনন্দের সাথে, মনে করি একটা ফুটবল কিনে আনলাম। তারপর মনের আনন্দে তাতে লাথি। কিন্তু সেই আনন্দ বেশী দিন স্থায়ী হতো না। কারণ তখনকার বলের উপরে থাকত চামড়া আর ভিতরে টিউবের ব্লাডার। বলের মুখে কিছুটা জায়গা ফাঁকা থাকত, ব্লাডারটা সেই মুখ দিয়ে ভিতরে ঢুঁকিয়ে পাম্প করে বলের সাইজে আনা হতো এবং মুখটা ফিতা দিয়ে ভাল করে বেঁধে দেওয়া হতো।

কয়েকদিন পরেই ব্লাডারের বাতাস কমে যেত, আর সেটাকে পাম্প করার জন্য রিকশার দোকানে যেতে হতো-বাতাস করার পয়সা কে দিবে, এনিয়ে ঝামেলা হত। আর বর্ষা কাল আসলে তো আরও মুশকিল, বলে পানি ঢুঁকে গোল বল অচিরেই নারিকেলের আকার ধারণ করত - একদিকে শট নিলে অন্যদিকে চলে যেত। এত সব অসুবিধার পরও কিন্তু বলে লাথি দিয়ে বালকেরা আনন্দে আত্মহারা থাকত। কিন্তু সেই আনন্দও কোন এক বিকেলে লিক হওয়া ব্লাডারের মত চুপসে যেত যখন বলে অনেকক্ষণ পাম্প দেওয়ার পরও বলটা চুপসে থাকত। অতঃপর রিকশার মিস্ত্রী ব্লাডারটা পানিতে চুঁবিয়ে আবিষ্কার করত যে ব্লাডার ছিদ্র হয়ে গেছে। এবার তাতে তালি দেও, তালি দেওয়ার টাকা-পয়সার ব্যবস্থা কর। কিন্তু তালি দিয়ে আর কয়দিন, আবার একই সমস্যা - এবার অন্য জায়গায় তালি, ব্লাডার বেচারার প্রাণ ওষ্ঠাগত। আর উপরের চামড়া বাবাজীরও দফা-রফা, সূতোর সেলাই ছিঁড়ে বল হা হয়ে যায়, রৌদ-বৃষ্টিতে ভিজে বেচারার রং চেনা দায়। অচিরেই আবার চাঁদা তুলে নতুন বল কেনার চেষ্টা চলতে থাকে।

কিন্তু বলহীন সেই বিকেলগুলো যেন আর কাঁটতেই চাইত না। তাই সেই সময়টায় খুশু ভাই আমাদের অন্যভাবে ব্যস্ত রাখতেন। উনি সেই বয়সেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন এবং উনার ক্কেরাত অত্যন্ত মধুর ছিল। উনি আমাদের নিয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন, মসজিদ ছিল ১০ নং-এ (এখনো আছে)। কলোনীর অভিভাবকরাও তাই উনাকে খুব ভালবাসতেন, উনার সাথে আছে শুনলে অভিভাবকরা নিশ্চিন্ত বোধ করতেন। কলোনীর মসজিদে বালকের দল উনার সাথে নামাজ আদায় করে, সেই সাথে যুক্ত হয় কিছু দুষ্টুমি। সবাই রুকুতে গেছে, আমাদের বালক দলের কোন এক সুবোধ বালক তার পাশের জনকে দিল ধাক্কা, সে দিল তার পাশের জনকে, হুটোপুটি লেগে গেল, সেই সাথে বালকদের চাপা হাসি, মৃদু কথাবার্তা। নামাজ শেষ হতেই মুরুব্বীরা তোড়ে আসতেন, বেয়াদব কোথাকার, নামাজের মধ্যে, .........।
খুশু ভাই লজ্জায় মরে যেতেন, ২ নং বিল্ডিংয়ের মাঠে নিয়ে লাগাতেন কঠিন ঝাড়ি। সবাই মাথা নত করে উনার শাসন হজম করতাম।

কি আর করা, আপাততঃ মসজিদে দল বেঁধে যাওয়া বন্ধ। বিকেলে মাঠে গোল হয়ে খুশু ভাইয়ের চারিদিক ঘিরে বসি আমি,ফরহাদি (খুশু ভাইয়ের ছোট ভাই),কচি, সজল(কচির ছোট ভাই), খোকন,বল্টু, ...... । খুশু ভাই বলেন, "তোরা যদি আর দুষ্টামি না করিস তবে তোদের এক জায়গায় নিয়ে যাব নামাজ পড়তে"। সবাই সমস্বরে জানালাম "আমরা আর দুষ্টামি করব না"। উনি তখন বল্লেন, "আগামীকাল থেকে আমরা ধানমন্ডি লেকের পাড়ের মসজিদে নামাজ পড়তে যাব"। সবাই খুশিতে চেঁচিয়ে উঠলাম।

লেক পাড়ের সেই সব স্মৃতি নিয়ে আগামী পর্বে হাজির হবার আশা রাখি, যদি আল্লাহ ইচ্ছে করেন।


৭ মে ২০১৬
ঢাকা
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:১৭

প্রামানিক বলেছেন: এপর্ব ভালো লাগল। আগামী পর্বের আশায় রইলাম।

০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:১৮

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই পাঠ ও মন্তব্যে।

আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

পরের পর্বে জন্য আপনার অপেক্ষায় অনুপ্রাণিত বোধ করছি।

ভাল থাকুন। সবসময়।

২| ০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:২২

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার এ লেখাটা পড়ে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হ'লাম। এখনকার ছেলেপুলেরা কল্পনাও করতে পারবেনা, কতটা কষ্ট করে আমরা আমাদের এই নির্দোষ বিনোদন গুলোর ব্যাবস্থা করতাম। ফুটবল ব্লাডারের লীক সারানো, পাম্পার দিয়ে পাম্প করা, ভেজা বল শক্ত হয়ে যাওয়া, জার্সি কেনার জন্য চাঁদা তোলা, ইত্যাদি প্রত্যেকটি কাজ অনেকটা সমবায়ের মত করা হতো।
ভালো লাগলো আপনার আত্মকথন ৫,পরেরটার অপেক্ষায় থাকলাম। খুশু ভাই এর নেতৃত্বসুলভ গুণাবলীর পরিচয় পেয়ে ভালো লাগলো। তার জীবন শেষ পর্যন্ত কোন দিকে গড়িয়েছে, জানালে বাধিত হবো।

০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৩১

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ খায়রুল আহসান ভাই পাঠ ও মন্তব্যে।

//আপনার এ লেখাটা পড়ে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হ'লাম। এখনকার ছেলেপুলেরা কল্পনাও করতে পারবেনা, কতটা কষ্ট করে আমরা আমাদের এই নির্দোষ বিনোদন গুলোর ব্যাবস্থা করতাম। ফুটবল ব্লাডারের লীক সারানো, পাম্পার দিয়ে পাম্প করা, ভেজা বল শক্ত হয়ে যাওয়া, জার্সি কেনার জন্য চাঁদা তোলা, ইত্যাদি প্রত্যেকটি কাজ অনেকটা সমবায়ের মত করা হতো।// -- আপনার মন্তব্য পড়ে আমিও নস্টালজিক হলাম, ভেজা বল শক্ত হওয়া, ... কত কষ্টের, অথচ কত সুখের।

আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

হ্যা, নেতৃত্ব গুণের অধিকারী খুশু ভাইকে আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগছে।

খুশু ভাইকে নিয়ে আরো অনেক লেখার আছে, এখনই সব জেনে গেলে পরে উৎসাহ কমে যাবে।

ভাল থাকুন। সবসময়।

৩| ০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:৫০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: চমৎকার আত্মকথন। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:২৪

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ হেনা ভাই পাঠ ও মন্তব্যে।

আপনার মত সাহিত্যিকের এত সুন্দর মন্তব্যে পেয়ে ভাল লাগছে।

ভাল থাকুন। সবসময়।

৪| ০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:১৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: শামছুল ইসলাম,



সেই ব্লাডারওয়ালা চামড়ার ফুটবল , গাল ব্যথা করে ব্লাডার ফোলানোর চেষ্টা , ছেঁড়া বলে তালি মারা ; বড় বেশী নষ্টালজিক ।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতেই হয় ----- সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি ......................

০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:২৯

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ আহমেদ জী এস ভাই পাঠ ও মন্তব্যে।

//দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতেই হয় ----- সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি ......................// -- খুব সুন্দর বলেছেন।

ভাল থাকুন। সবসময়।

৫| ০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:২৭

সুমন কর বলেছেন: আপনার খুশু ভাইয়ের কথা পড়ে ভাল লাগল।

চলুক.....+

০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৩২

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন ভাই পাঠ ও মন্তব্যে।

আপনার ভাল লাগার খুশু ভাইকে নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছে আছে।

প্লাসে উৎসাহটা আরো বেড়ে গেল।

ভাল থাকুন। সবসময়।

৬| ০৮ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩২

নীলপরি বলেছেন: স্মৃতি রোমন্থন ভালো লাগলো। +

০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:২৫

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ নীলপরি পাঠ ও মন্তব্যে।

আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
প্লাসের জন্য ধন্যবাদ।

ভাল থাকুন। সবসময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.