![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......
ডিসেম্বর মাস, বিজয়ের মাস । শীতের সকালে নরম রোদ জানালা গলে তোহা সাহেবের পিঠে হালকা পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে । খাটের ওপর বসে উনি খবরের কাগজ পড়ছেন । সকালের নাস্তা হয়ে গেছে । পান চিবুতে চিবুতে বড় ছেলেকে ডাকলেন, হাদি ।
হাদি ক্রিকেট খেলতে মাঠে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল পাশের ঘরে । জ্বি, বাবা – বলে সাড়া দিয়ে বাবার সামনে এসে হাজির হলো ।
ছেলেকে ফুলপ্যান্ট পরা দেখে উনি বুঝতে পারলেন মাঠে খেলার সাথীরা অপেক্ষা করছে । ছুটির দিন ছাড়া উনি সময় করতে পারেন না । তাই দরকারী কথা ছুটির দিনেই সারতে হয় ।
‘হাদি, মাঠে খেলতে যাচ্ছিস ?’
‘জ্বি, বাবা ।’
‘পড়ালেখা কেমন চলছে ?’
‘ভাল ।’
‘ভাল হলেই ভাল। এবার পরীক্ষার রেজাল্ট কী ?’
হাদির মধ্যে একটা লাজুক ভাব এসে যায় । মুখ নিচু করে আস্তে করে বলে, ফার্স্ট হয়েছি ।
তোহা সাহেবের শুকনো ছোট মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, খাড়া নাকের উপর চেপে বসা চশমাটা বাম হাত দিয়ে উপরে ঠেলে দিয়ে ছেলের দিকে তাকান।
কিছু একটা বলে ছেলেটাকে উৎসাহিত করা দরকার । প্রতিবছর এই রকম ভাল রেজাল্ট করে আজ ছেলেটা নবম শ্রেণিতে । বাবা হিসাবে গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। কিন্তু চুপচাপ স্বভাবের তোহা সাহেবের কিছু বলা হয়ে ওঠে না । সারা বছর উনি ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার কোন খোঁজ নেন না । কিন্তু বছর শেষে একদিন সবার রিপোর্ট কার্ড দেখেন ।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাদিকে বলেন, সবাইকে এখানে আসতে বল, রিপোর্ট কার্ড সহ ।
হাদি প্রথমেই রান্নাঘরে ওর মার কাছে যায় । উনি স্বামী ও নিজের জন্য চা তৈরি করছেন । হাদি মার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলে, মা, বাবা সবার রেজাল্ট দেখতে চাইছে ।
আতিয়া বেগম ছেলের কথা শুনে দ্রুত চায়ে চিনি মিশিয়ে নাড়তে থাকেন – ছেলে-মেয়েরা ওদের বাবার মুখোমুখি হওয়ার আগেই চা নিয়ে স্বামীর কাছে পৌছাতে হবে । বড় ও মেজ ছেলে ছাড়া সবার রেজাল্ট খারাপ । দেখলেই তোহা রাগ করবে, প্রতিবছর যেমন করে । আর রাগ ওঠলে ওর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না ।
দীর্ঘদেহী পাতলা গড়নের তোহা সাহেব কিছুটা কুঁজো হয়ে খবরের কাগজের ওপর ঝুকে আছেন । আতিয়া চায়ের কাপটা স্বামীর দিকে এগিয়ে দিয়ে মৃদু হাসতে হাসতে বলে, নাও, চা খাও ।
তোহা সাহেব চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বলেন, কই, তোমার রাজপুত্ররা ?
আতিয়া খাটের একপ্রান্তে বসেন । দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাদি, টিপু, ফয়েজ ও জামাল গুটি গুটি পায়ে ঘরে ঢোকে । হাদি রিপোর্ট কার্ডগুলো বাবার সামনে বিছানায় রাখে – সবার ওপরে হাদিরটা, সবার নীচে মুন্নীরটা । মুন্নী ওদের একমাত্র বোন, জানুয়ারীতে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ।
তোহা সাহেব বড় ও মেজো ছেলের কার্ড দুটা উনার বাম পাশে আর অন্যগুলো ডান পাশে রাখলেন । মুখ গম্ভীর । দাঁড়িয়ে থাকা ফয়েজ ও জামালের দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকালেন – ওরা মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকালো । এবার বৌয়ের দিকে ফিরলেন, মুন্নী কই ?
আতিয়া হড়বড়িয়ে বলে ওঠেন, এই তো পাশের ঘরে । ফাহাদ ঘুমাচ্ছে । ওর পাশে আছে । তুমি ওকে কিছু বলো না ।
ছোট ছেলের কথায় তোহা সাহেবের মনটা নরম হয়ে যায় । তুলতুলে ছোট্ট দুটো হাত । দাঁত শুন্য মাড়ির খিল খিল হাসি । সারা ঘরটা ভরিয়ে রাখে ।
কার্ডগুলো আতিয়ার দিকে ঠেলে দিয়ে উনি বললেন, এগুলো নিয়ে যাও । আর সবাই আমার সামনে থেকে দূর হও ।
সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচল । ধীর পায়ে চার ভাই ঘর পেরিয়ে বাইরের দরজার কাছে গেল । তারপর সিঁড়িঘর থেকে ধুপ-ধাপ আওয়াজ পাওয়া গেল । দে ছুট । মাঠের দিকে । সেখানে সবাই জড়ো হয়েছে ব্যাট আর টেনিসবল নিয়ে ।
মুন্নী পাশের ঘর থেকে কান পেতে সব শুনছিল । বিপদ কেটে গেছে বুঝতে পেরে মুন্নী ঘুমন্ত ফাহাদের কপালে একটা আদর দিয়ে দেয় । ওর খেলার সাথীরা ওকে প্রায়ই ডাকে । ও যায় না । ওর সব খেলা এখন এই ছোট্ট জীবন্ত খেলনাটার সাথে ।
চলবে..
শামছুল ইসলাম
৩১-০৩-২০১৭
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত
৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৪৩
শামছুল ইসলাম বলেছেন: চেনা পরিচিত দৃশ্য নিয়েই গল্পটা বলার চেষ্টা করেছি।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
২| ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:২৬
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: বাবা একটু কড়া না হলে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ভালো হয় না। তবে সব ছেলে মেয়ে সমান মেধাবী হবে, এমন নয়।
গল্প ভালো লাগছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। ধন্যবাদ ভাই শামছুল ইসলাম।
৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৪৮
শামছুল ইসলাম বলেছেন: হ্যাঁ, বাবারা একটু কড়া না হলে অনেক ক্ষেত্রেই ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ভালো হয় না। হুম, সবাই সমান নয়, কিন্তু অনকেই তা মানতে পারে না, ভাবে ফাঁকিবাজ।
৩| ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৩
আনু মামুন বলেছেন: চালিয়ে যান ভাই
৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৫০
শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
৪| ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৫
পুলহ বলেছেন: ভদ্রলোকের রাগটা একটু বেশিই মনে হলো ! সুন্দর আর চিরন্তন একটুকরো পারিবারিক ছবি....
"ওর সব খেলা এখন এই ছোট্ট জীবন্ত খেলনাটার সাথে ।"-- বাহ !
অনেকদিন বাদে ব্লগে আপনার লেখা পেলাম সম্ভবত। ভালো আছেন ভাই আশা রাখি !
শুভকামনা পরের পর্বগুলোর জন্য।
৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৫৩
শামছুল ইসলাম বলেছেন: হুম, ভদ্রলোক একটু বেশীই রাগী।
হ্যাঁ, অনেকদিন পরেই ব্লগে আসা। ভালো আছি।
পরের পর্ব শীঘ্রই আসছে।
৫| ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৭
দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: চিরপরিচিত সেই পারিবারিক দিকটি তুলে ধরেছেন।আশা রাখি,শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারবেন।
৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৫৬
শামছুল ইসলাম বলেছেন: পারিবারিক চিরপরিচিত দৃশ্যটাই তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। আমিও আশা করছি গল্পটা শেষ করতে পারবো।
৬| ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:০১
আহমেদ জী এস বলেছেন: শামছুল ইসলাম ,
অনেকদিন পরে ঘরোয়া একটি গল্প নিয়ে এলেন । অবশ্য আপনার গল্পগুলো বরাবরই জীবন ঘনিষ্ঠ ।
"চলবে.." বলেছেন । চলুক, আমরাও দেখি তবে সাথে থেকে ।
ভালো আছেন আশা করি । শুভেচ্ছান্তে ।
০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:০৭
শামছুল ইসলাম বলেছেন: ভালো আছি, তবে কিছুটা কাজের ব্যস্ততা আছে।
আমি ঘরকুনো মানুষ, তাই ঘরোয়া গল্প বলতেই ভালোলাগে্।
শুভেচ্ছা আপনাকেও !!!
৭| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৩৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: আমি ঘরকুনো মানুষ, তাই ঘরোয়া গল্প বলতেই ভালো লাগে্ -- আমাদেরও ঘ্রোয়া গল্প শুনতে বেশ ভাল লাগে। অতএব, চালিয়ে যান ভাই!
অনেকদিন পরে আপনি গল্পের ডালি নিয়ে আসরে ফিরে এলেন, তাই ভাল লাগছে। আপনার অনুপস্থিতিতে সামু বন্ধ থাকেনি, যথারীতি এগিয়ে চলেছে... তবে কেউ কেউ হয়তো আপনাকে আমার মত মিস করেছে। আপনি ছিলেন আমার লেখায় নিয়মিত মন্তব্যকারী। তাই আপনাকে আমি খুঁজেছি, রেসপন্স না পেয়ে চিন্তিতও হতে শুরু করেছিলাম। যাক ফিরে এসেছেন, প্রত্যাবর্তনে খুশী হয়েছি- স্বাগতম!
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:০৩
শামছুল ইসলাম বলেছেন: কোন কিছু থেমে থাকার নয়, চলছে...চলবে... এই পৃথিবী ও তার সমস্ত কিছু । আমি সেই চলার এক আনুষঙ্গ মাত্র । এবং এও সত্য কোথাও একটা চিহ্ন হয়তো রয়ে যায় । সেই চিহ্নটা আপনার মনে রেখাপাত করেছে জেনে মনটা নরম হয়ে গেল । সামুতে না আসলেও আপনার কথা কখনো কোনো অবসরে মনে পড়েছে আমারও ।
৮| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৫৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: বাবা একটু কড়া না হলে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ভালো হয় না। তবে সব ছেলে মেয়ে সমান মেধাবী হবে, এমন নয় -- ২ নং প্রতিমন্তব্য প্রসঙ্গে বলছি, স্কুল জীবনে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। তার প্রকৌশলী পিতা জুন আর ডিসেম্বর মাস এলেই আমাকে তার কাছে ডেকে নিয়ে অর্ধ-বার্ষিক আর বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইতেন। কোন কোন সময় রিপোর্ট কার্ডও দেখতে চাইতেন। আমার রেজাল্ট মোটামুটি ভালই হতো। ক্লাসের প্রথম ৫/৭ জনের মধ্যেই থাকতাম। কিন্তু আমার বন্ধুটির রেজাল্ট কখনোই ভাল হতোনা। সে নিম্নগড় মানের, বড় জোর গড় মানের ফলাফল অর্জন করতো। চাচা শুধু তার সামনে আমাকে প্রশংসাই করতেন না, আমার সামনে তাকে তিরস্কারও করতেন। আমি তখন খুব লজ্জা পেতাম। শেষের দিকে রেজাল্টের মরশুমে আমি তাদের বাড়ী যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি আজও মনে করি, পিতামাতার নিজ সন্তানকে বন্ধুদের সামনে ভর্ৎসনা করা বা হেয় করা মোটেই উচিত নয়।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:১১
শামছুল ইসলাম বলেছেন: আপনার ছাত্রজীবনের মূল্যবান স্মৃতিচারণের মাধ্যমে যে চিত্র তুলে ধরেছেন, তা কাম্য না হলেও ঘটেছে । আমিও আমার গল্পে সেটাই দেখিয়েছি, যা বাস্তবে ঘটে - কিন্তু বাবা বুঝতে পারেন না যে তিনি ভুল করছেন । যদি এখনো এমন কোন বাবা থেকে থাকেন এবং আমার গল্প পড়ে যদি তাঁর বোধোদয় হয়, তবে মনে করবো আমার গল্প লেখা কিছুটা হলেও সার্থক । গল্প লেখে এরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়াটাও আমার গল্পের ইচ্ছেটাকে আরো তীব্র করে । শুভেচ্ছো ও ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:২১
জুন বলেছেন: পারিবারিক আবহে তৈরী এক গল্পের আভাষ পেলাম শামসুল ইসলাম । মনে হলো বড্ড চেনা পরিচিত দৃশ্য ।
চলবে যখন তখন চলার সাথেই আছি ।
+