![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......
#বিষাদ_রচনা
#পর্ব_৩
বাবার হাত ধরিয়া রাস্তা পারাপার করিতেছে একটি ছোট ছেলে – এই দৃশ্যটি রমিজ মিঞার চোখে আজকাল প্রায়ই ভাসিয়া উঠিতেছে । বাবা শক্ত করিয়া তাহার একটি হাত ধরিয়া অন্য হাত দিয়া সংকেত দিতেন ধাবমান গাড়ি গুলিকে । বাবার হাতের সংকেতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাইয়া গাড়ি গুলি বেগ কমাইয়া দিতো, বাপ-বেটা নির্বিঘ্নে রাস্তা পার হইতেন ।
তাহার পর ছোট মফিজ মিঞা বড় হইতে হইতে বাবার হাত ছাড়িয়া নিজেই রাস্তা পার হওয়া গুরু করিল, বাবার শেখানো পদ্ধতিতে – হাত উঁচাইয়া সংকেত দিয়া । তবে বেশ কিছুকাল হইলো, বাবার শেখানো রাস্তা পার হওয়ার পদ্ধতি মফিজ মিঞা আর অনুসরণ করিতেছে না । গাড়ি নিরাপদ দূরত্বে থাকিলে তবেই রাস্তা পার হইতেছে । কারণ হাত তুলিয়া রাস্তা পার হইতে গিয়া সেদিন মৃত্যুর খুব নিকট হইতে ঘুরিয়া আছিয়াছেন – যমদূত অল্পের জন্য তাঁহাকে ছুঁইতে পারে নাই । যথারীতি হাত তুলিয়া রাস্তা পার হইতে ছিলেন । কিন্তু দ্রুত ধাবমান গাড়িটি গতি কিছু মাত্র না কমাইয়া তাহার গায়ের উপর দিয়ে যাওয়ার উপক্রম করিল । তখন বাধ্য হইয়া উনি প্রাণপণে দিলেন এক দৌঁড় – উসাইন বোল্টও বোধ হয় রমিজ মিঞার সহিত পারিয়া উঠিতো না । গাড়িটি সাঁ করিয়া উনার গা ঘেঁষিয়া চলিয়া গেল । রাস্তা পার হইয়া রমিজ মিঞা হাঁপাইতে লাগিল । এদিকে উৎসুক জনতার ভিড় লাগিয়া গেছে । কেহ একজন কহিল, বোকার মত দৌঁড় দিলেন কেন? আর একটু হইলে তো গাড়ির নীচে পড়িতেন ।
রমিজ মিঞার মেজাজ যথেষ্ট খারাপ হইলেও নিজেকে যথাসম্ভব সংযত রাখিয়া কহিল, আমি তো হাত তুলিয়াই রাস্তা পার হইতে ছিলাম । কিন্তু গাড়িওয়ালা গতি না কমাইয়া গায়ের উপর দিয়া গাড়ি উঠাইয়া দিতে ছিল । তাই দৌঁড়াইয়া প্রাণ বাঁচাইলাম ।
সাথে সাথে রমিজ মিঞার সমর্থনে কয়েকজন কয়েকজন আগাইয়া আসিল ।
জনতা দুই ভাগ হইয়া তর্কে লিপ্ত হইলো ।
রমিজ মিঞার একটি জরুরি কাজ ছিল । সে কাটিয়া পড়িল ।
জনতার নিকট হইতে পালানো যায় । কিন্তু এই ঢাকা শহরে বাস করিতে হইলে রাস্তা পারাপারের যন্ত্রণা হইতে তো মুক্তি নাই । কিছু ফুটওভার ব্রিজ আছে । প্রয়োজনের তুলনায় তাহা অপ্রতুল । আগে কিছু জেব্রাক্রসিং ছিল । ইদানিং তাহাও দৃষ্টিগোচর হইতেছে না ।
এই রূপ হতাশাজনক পরিস্থিতিতেও একটি দৃষ্টান্ত রমিজ মিঞাকে আশান্বিত করিয়া তুলিয়াছে । গুলশান এক নম্বরে জামে মসজিদের কাছে রাস্তার দুই পাশে দুই ব্যক্তি লোকজনকে রাস্তা পারাপারে সাহায্য করিয়া থাকে । তাঁহাদের সাজপোশাক অনেকটা ট্রাফিক পুলিশদের মতো, হাতেও একটি কালো হাতলওয়ালা রঙিন প্লাস্টিকের দন্ড – রাতের বেলা তাহা আলো ছড়ায় । তবে জামার উপরের হাতাকাটা জ্যাকেটটি এতোই পুরনো হইয়াছে গিয়াছে যে, তাহা আর আলো ছড়ায় না । মসজিদ কর্তৃপক্ষ এই লোক দুইটিকে নিয়োগ করিয়াছে – প্রতি মাসে কিছু মাসোহারা দিয়া থাকে । রমিজ মিঞা মাঝে মাঝে কিছু নগদ দিয়া তাহাদের সাহায্য করিয়া থাকে, যাহাতে তাঁহারা এই কাজে উৎসাহ পায় । সে ভাবে, এই কাজ ছাড়িয়া তাহারা ছিনতাই-ডাকাতিতে নিজেদের নিয়োজিত করিলে কি-ই বা করিবার ছিল? হয়তো সে নিজেও তাহাদের হাতে পড়িয়া মোবাইল, টাকা সর্বস্ব হারাইয়া নিগৃহীত হইতে পারিত । রমিজ মিঞার ছিনতাইকারীর দ্বারা নিগৃহীত হইবার করুণ কাহিনী আছে – তাহা আর এক দিন সবিস্তারে বলিব ।
রমিজ মিঞার মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় নন্দলালের মত গৃহের এক কোণে পড়িয়া থাকিতে । শুক্র-শনি ছুটির দিনে সেই আকাঙ্খাটা আরো মাথা চাড়া দিয়া উঠে । এমনি এক শনিবার সকালে নাস্তা করিয়া চায়ের কাপ লইয়া বিছানায় বসিয়া আয়েশ করিয়া ইত্তেফাকের পাতায় ডুবিয়া ছিল – যেমন মাছ গভীর জলে নিমগ্ন হইয়া জল ক্রীড়া করে । অন্যরকম ফিচারের একটি সংবাদ তাহার সমস্ত মনোযোগ আকর্ষণ করিল ।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর গিন্নির কথায় তাঁহার মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটিল ।
-পত্রিকা পড়িলে তো পেট ভরিবে না । ফ্রিজে তরিতরকারী,মাছ কিছুই নাই । দয়া করিয়া বাজারে গেলে কৃতার্থ হইতাম ।
মফিজ মিঞা গিন্নির সহিত সদ্য পঠিত খবরটি লইয়া আলোচনা করিয়া মনটা কিছুটা হালকা করিতে চায় । তাই গিন্নিকে মিষ্টি কথায় সন্তুষ্ট করিবার মানসে বিছানা হইতে নামিয়া অনুগত রাজ্য সভার পারিষদের ন্যায় গিন্নিকে কুর্নিশ করিয়া কহিল,
-যথা আজ্ঞা, মহারাণী । আপনার আদেশ শিরোধার্য । তবে বান্দার একটি ক্ষুদ্র আর্জি ছিল ।
স্মিত হাস্যে গিন্নি কহিল,
- আর্জি পেশ করিবার অনুমতি দেওয়া হইল । কিন্তু সময় পাঁচ মিনিট মাত্র।
-তথাস্ত বলে রমিজ মিঞা তাহার বক্তব্য শুরু করিল ।
-মনে কর, এক বৃদ্ধা ঢাকা শহরের একটি ব্যস্ততম সড়ক পার হইতেছে জেব্রা ক্রসিং দিয়া, মাথায় একটি ছাতি । রাস্তার মাঝামাঝি আসিবার পর বাকীটুকু আর পার হইতে পারিতেছে না । একের পর এক গাড়ি দ্রুত বেগে তাঁহার দুই পাশ দিয়া সাঁ সাঁ করিয়া চলিয়া যাইতেছে । আধা ঘন্টা দাঁড়াইয়া থাকিবার পর বৃদ্ধা ক্লান্ত হইয়া রাস্তার উপরই বসিয়া পড়িল । এই রূপ গাড়িচালকদের সম্বন্ধে তোমার মতামত কী?
-চরম অবিবেচক, মনুষ্যত্বহীন । তাঁহারা কী এই ভাবে গাড়ি চালাইতে পারিত যদি তাহাদের মা বা গুরুজন কেউ রাস্তা পার হইতো?
-ঠিক বলিয়াছো । আমরা কখনোই নিজের আপনজনকে অপরের জায়গায় বসাইয়া চিন্তা করি না । তাই এমন অবিবেচকের মত কাজ করিয়া থাকি । তবে শত শত অবিবেচক গাড়িচালকদের মধ্যে হইতে একজন বিবেচক গাড়িচালক খুঁজিয়া পাওয়া গিয়াছে । সেই চালক তাঁহার গাড়িটির গতি কমাইয়া কোণাকুণি করিয়া রাস্তার উপর পার্ক করিয়া অন্য গাড়িগুলিকে থামিতে বাধ্য করে । এই সুযোগে বৃদ্ধা উঠিয়া রাস্তা পার হইয়া স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে ।
গিন্নি খুশি হইয়া যোগ করিল,
-যাহা হউক, এখনো বাংলাদেশে এমন বিবেচক গাড়িচালক আছে ।
রমিজ মিঞা ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ ইত্তেফাকের অন্যরকম ফিচারের সংবাদটি গিন্নিকে দেখাইলো - ছবিতে এক বৃদ্ধা রাস্তা পার হইতেছে । তাহার পর কহিল, ঘটনাটি বাংলাদেশের ঘটে নাই, ঘটিয়াছে চীনের সিনহুয়া শহরে।
গিন্নি কিছুটা আশ্চার্যান্বিত হইয়া কহিল, বিদেশী গাড়িচালক? বিশ্বাস হইতে কষ্ট হইতেছে । তবে ছবি ও খবর তো মিথ্যা হইতে পারে না ।
রমিজ মিঞা বিজ্ঞের মত মাথা নাড়িয়া কহিল, সারা বিশ্বটাই অবিবেচকদের দ্বারা ভরিয়া যাইতেছে ।
গিন্নি তাঁহার কথার কোন উত্তর না দিয়া ঘর হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া কিছুক্ষণ পর ফিরিয়া আসিল ।
রমিজ মিঞার হাতে বাজারের ব্যাগ ধরাইয়া দিয়া কহিল, বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড লইয়া তোমার এত না ভাবিলেও চলিবে ।
মো: শামছুল ইসলাম
তারিখ: ২৯/১১/২০১৭ ইং
৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:০৪
শামছুল ইসলাম বলেছেন: হা...হা...হা...।
আমার তো কুন দুষ নাই মেয়াবাই । দুষ তো রমিজ মিঞার । হ্যাতে ইত্তেফাকের অন্যরকম ফিচার ঘাটাঘাটি করি কী সব বাইর করে ।
২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৭
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন ।
৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:০৪
শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ গিয়াস ভাই ।
৩| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫১
কথাকথিকেথিকথন বলেছেন:
সুন্দর সাধুরীতির দৈনন্দিন কাণ্ডকারখানা । আচ্ছা মফিজ মিয়াঁ নাকি রমিজ মিয়াঁ ?
৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:০৯
শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ।
সুন্দর বলিয়াছেন, "সুন্দর সাধুরীতির দৈনন্দিন কাণ্ডকারখানা ।"
যাহা বাহান্ন, তাহাই তিপ্পান্ন ।
আমি মফিজ মিঞা নামেই চালাইয়া যাইতেছি - যিনি আমাদের সমাজের প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন ।
৪| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫০
করুণাধারা বলেছেন: রাস্তা পার হওয়া একটা চ্যালেঞ্জ মনে হয়। গঠনগত কারণে কিছু কিছু রাস্তা এমন যে সবসময়ই একদিকে সিগনালে গাড়ি বন্ধ থাকলেও আরেকদিক দিয়ে গাড়ি চলতেই থাকে। ফলে এইসব রাস্তা পার হতে গেলে সবসময়ই গাড়ি চলার ফাঁকে ফাঁকে চলতে হয়। পথচারীরা বাধ্য হয়ে হাত উঁচু করে গাড়ি থামার সংকেত দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন, অনেকসময় এজন্যে গাড়ি চাপাও পড়েন। এত জনবহুল, পর্যাপ্ত ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাসবিহীন শহরে এছাড়া রাস্তা পারাপারের উপায়ই বা কি!
গল্পের আকারে সমস্যাটাকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করলেন। ভাল লাগল।
৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:১৫
শামছুল ইসলাম বলেছেন: আপনার বিশদ বর্ণনায় রাস্তা পারাপারের সমস্যাটা আরো সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে ।
এই সিরিজটা লেখার বিষয়ে আমি গল্পের আশ্রয় নিয়েছি প্রতিটি পর্বেই এবং আগামী পর্বগুলোতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে আশা করি।
ধন্যবাদ ।
৫| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম, বহুদিন আমি নিজে অনিয়মিত ব্লগে, তাই...
কেমন আছেন? আশা করি ভাল। ভাল থাকুন সতত।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:১৩
শামছুল ইসলাম বলেছেন: আমিও আপনার মতোই । আছি ভালোই - আলহামদুলিল্লাহ ।
আপনিও ভালো থেকেন ।
৬| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৫৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড লইয়া তোমার এত না ভাবিলেও চলিবে -- এই না হলে গিন্নি!
পথচারীদের রাস্তা পারাপারের বিপদ নিয়ে একটি সচেতনতামূলক পোস্ট লিখেছেন, সেজন্য সাধুবাদ।
করুণাধারা এর মন্তব্যটা (৪নং) ভাল লেগেছে।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:২৫
শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ পাঠ ও মন্তব্যে ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৩
বিলিয়ার রহমান বলেছেন: পরিবহন শ্রমিকদের সঘাপতি( সভাপতি) আফনেরেতো খাই দিবে মেয়াবাই!!![:)](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_03.gif)