নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

জোছনা ও জননীর গল্প: মুক্তিযুদ্ধের শুরুর কথা (পর্ব-৬)

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:১৮



(অনুভূতির কথা)

অনেক দিন আগে জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাসটা শুরু করেছিলাম । পাঁচ পর্ব পর্যন্ত লেখে নানা কাজে কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম । আবার শুরু করছি নতুন করে । এতদিন পর শুরু করছি, তাই পুরনো পর্বগুলোর লিংক নীচে:

জোছনা ও জননীর গল্পঃ ( ১ম পর্ব)

জোছনা ও জননীর গল্পঃ (২য় পর্ব)

জোছনা ও জননীর গল্পঃ (৩য় পর্ব)

জোছনা ও জননীর গল্পঃ (৪র্থ পর্ব)

জোছনা ও জননীর গল্প: (৫ম পর্ব)


১। ভূমিকা:


এই উপন্যাসের শুরু থেকে ২৫ মার্চ, ১৯৭১ পর্যন্ত সময়কালে প্রতিটি পর্ব শুরু হয়েছে কোন না কোন মানুষের কথা দিয়ে। সেই মানুষটার একটা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে শুরু হয়েছে প্রতিটি পর্ব । উঠে এসেছে তাঁর এবং তাঁর আশে-পাশের মানুষদের নিয়ে গড়ে ওঠা জীবনের গল্প । কিন্তু আজ যে পর্বটা নিয়ে আলাপ করবো, তা শুরু হয়েছে মতিঝিলের একটা অফিসের বর্ণনা দিয়ে । অশান্ত-অস্থিতিশীল সেই সময়ে United Commercial – এর মালিক ও তার কর্মচারীদের জীবনের নানাদিক ফুটে উঠেছে । ফুটে উঠেছে হুমায়ূন আহমেদের এক অনন্য সৃষ্টি গৌরাঙ্গের সংক্ষিপ্ত কিন্তু হৃদয় ছোঁয়া চরিত্র ।
শাহেদ ও গৌরাঙ্গের বন্ধুত্ব, তাঁদের দুই পরিবারের কথা, মালিক মইন আরাফী সাহেবের কথা এবং অফিসের আরো কিছু সহকর্মীর কথা শুনতে চলুন পাঠক ঘুরে আছি ঘটনাপ্রবাহে ।

২। ঘটনাপ্রবাহ

ইউনাইটেড কমার্শিয়ালের মালিক মইন আরাফীর বাড়ি মুর্শিদাবাদ । দেশ বিভাগের সময় দুইশ’ ‘রূপেয়া’, একটা রূপার হুক্বা এবং একটা দামী শাল নিয়ে তিনি এদেশে আসেন । ক্রমে ক্রমে ইন্সুরেন্স, ইন্ডেন্টিং, শেয়ার ব্যবসা করে কোটিপতি হয়ে যান । ষাট বছর বয়সী বেটে গাট্টাগুট্টা টকটকে গৌরবর্ণের টাকওয়ালা এই লোকের আছে বাহারি বাদামী রঙের গোঁধ । তিনি অফিসের সবার কাছে পরিচিত “বি হ্যাপি স্যার” নামে । কারণ তিনি অফিসের কর্মচারীদের টেবিলে নিজেই হাজির হন, তাঁদের ডেকে পাঠান না, অফিসিয়াল কাজের প্রয়োজনে । শুধু তাই নয়, কর্মচারীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উনি না যেতে পারলেও দামী উপহার পাঠান । তাঁদের কাঁধে হাত রেখে বন্ধুসুলভ আচরণে আলাপ করেন ।
শাহেদের কাঁধে হাত রেখে তিনি অফিসে ঢুকছেন । শাহেদের মেয়ের খবর নিচ্ছেন । আবার এক ফাঁকে দেশের এই অবস্থায় ব্যবসার যে লালবাতি জ্বলে যাচ্ছে, সেটাও শাহেদকে জানিয়ে দিলেন ।
ঢিলাঢালা ভাবে অফিস চলছে । দোতলা হলুদ রঙের অফিসের একতলার গোডাউন ফাঁকা – নেই চিল্লাচিল্লি, মারামারি । তাই হেড ক্যাশিয়ার আসগর আলি দেওয়ান সাহেবেরও হাতে কাজ নেই, দিনে পনেরো-বিশটা ভাউচার সই করছেন, আগে যেখানে সই করতেন হাজার খানেক । এই অবসরে উনার গল্পের একটাই সারমর্ম দেশটা বারোটা বেজে যাচ্ছে, আল্লাহ এই দেশের কপালে বোল্ড লেটারে লিখে দিয়েছেন- ‘Closed’ । কেউ তাঁর কথার বিরোধিতা করলে উনি তাঁর নামের আগে ‘শিশু’ টাইটেল জুড়ে দেন । তাই উনার আশেপাশে কেউ যায় না, শখ করে কে ‘শিশু’ টাইটেলটা নিতে যাবে?
দেওয়ান সাহেব তাই শাহেদকে পানের অফার দিয়ে আলাপ জমাতে চায় । শাহেদের অনাগ্রহে উনি বিরক্ত হন এবং জানান যে উনার কাছে একটা জরুরি খবর আছে । খবরটা হলো, অফিস বিক্রি করে দিয়ে ‘বি হ্যাপি স্যার’ করাচি চলে যাচ্ছেন । আগামী মাসে বেতন হবে না । দেওয়ান সাহবে শাহেদকে গৌরাঙ্গের চিঠিটা দেয় ।

চিঠিতে গৌরাঙ্গ কালবিলম্ব না করে শাহেদকে ওর পুরনো ঢাকার বাসায় যেতে অনুরোধ করেছে – অতীব গুরুত্বপূর্ণ দু’টো বিষয় ঘটে গেছে গৌরাঙ্গের জীবনে ।
কিন্তু শাহেদের পক্ষে আজ গৌরাঙ্গের বাসায় যাওয়া প্রায় অসম্ভব – অসম্ভব টু দি পাওয়ার টেন । গৌরাঙ্গের বাসায় গেলে নির্ঘাত রাতে ওর বাসায় থাকতে হবে । তার মানে পাঁচ দিন মেয়ের সাথে কথা হবে না । শাহেদ চারটায় অফিস থেকে বেরিয়ে আসমানীর জন্য মরণচাঁদের দোকান থেকে রসগোল্লা আর মেয়ের জন্য ইত্তেফাকের মোড় থেকে খাঁচাসহ পাঁচটা মুনিয়া পাখি কেনে । বাসায় এসে আসমানীর কাছ থেকে জানতে পারে মেয়ে তার নানির বাড়ি গেছে, মাও যাবে কিছুক্ষণ পরেই । সকালে শাহেদ আসমানীর উপর রাগ দেখানোর জন্য শ্বশুর বাড়ি থেকে আনা চালের রুটি ও গরুর মাংস না খেয়েই অফিসে চলে যায় – তারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ।
শাহেদ গোসল শেষে ঘরে এসে দেখে আসমানী চলে গেছে । বিষন্ন মনে রাত আটটা পর্যন্ত বারান্দায় বসে থাকে শাহেদ । তারপর রসগোল্লা আর মুনিয়া পাখি নিয়ে রওনা হয় গৌরাঙ্গের বাসার দিকে – পাখিগুলি গৌরাঙ্গের মেয়ে রুনুকেই দিবে ।
বংশালে রোডে শ্বশুরের তিনতলা বাড়ির দোতলায় থাকে গৌরাঙ্গ, প্রথমতলায় রডসিমেন্টের দোকান আর শ্বশুর থাকেন তিনতলায় । শাহেদকে পেয়ে গৌরাঙ্গ ও ওর স্ত্রী নীলিমা খুব খুশি হয় । গৌরাঙ্গের অনেক পাগলামির পর জানা গেল তাঁর দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । ঘটনা এক: গৌরাঙ্গের শ্বশুর তাকে নগদ আঠারো হাজার টাকা দিয়েছেন । ঘটনা দুই: নীলু রবীন্দ্রসঙ্গীত অডিশনে রেডিওতে সি গ্রেড পেয়েছে । শাহেদ নীলিমার এই প্রতিভার কথা শুনে চমৎকৃত হয় এবং ওর গান শুনতে চায় । এদিকে গৌরাঙ্গ মদ খেয়ে পুরো মাতাল । তার অসংলগ্ন কথায় বিরক্ত হয়ে নীলিমা শাহেদকে অনুরোধ করে যেন সে তাঁর বন্ধুকে মদ না খাওয়ার জন্য অনুরোধ করে । কারণ তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, বন্ধু অন্ত:প্রাণ তাঁর স্বামী শাহেদের কথা ফেলতে পারবে না ।
বন্ধু বৎসল গৌরাঙ্গ রাত দুটোর সময় শাহেদকে ঘুম থেকে জাগায় – নীলিমার গান ওকে আজই শুনতে হবে । গৌরাঙ্গ হারমোনিয়াম ও তবলা নিয়ে আসে শাহেদের ঘরটায় । গৌরাঙ্গ তবলায় তাল ঠুকে, কিন্নরি কণ্ঠে নীলিমা গায়-
ওপারে মুখর হলো কেকা ঐ
এপারে নীরব কোন কুহু হায়

মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে কারো সুরেলা কণ্ঠ ভেসে আসছে ।

৩। একান্তে দেখা – গৌরাঙ্গ

গৌরাঙ্গের চরিত্রের প্রধান দিক তাঁর সরলতা, প্রচন্ড হৃদয়াবেগ । বন্ধুর জন্য যে সব উজাড় করে দিতে পারে, তাঁর নাম গৌরাঙ্গ । একই দিনে সে ও শাহেদ ইউনাইটেড কমার্শিয়ালে চাকরিতে জয়েন করে । কাকতালীয়ভাবে দু’জনেই সেদিন পড়ে ছিল ঘিয়া রঙের পাঞ্জাবি । তাঁদের দু’জনের প্রথম সন্তান কন্যা । এই মিলটুকু থেকেই গৌরাঙ্গ শাহেদকে নিজের পরম বন্ধু বলে ধরে নেয় । তাঁকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করতে চায় মাত্র একমাসের চাকরি জীবনে ।
শাহেদ তাঁর মধ্যে কিছুটা ছেলেমানুষিও খুঁজে পায় । ‘তুই’ বলার অধিকার না পেয়ে সে শাহেদের সামনের টেবিল থেকে অন্য টেবিলে চলে যায়, আবার কিছুদিন পর ওই টেবিলেই ফিরে আসে ।
গৌরাঙ্গ দেশকে প্রচন্ড ভালোবাসে । দেশ একদিন স্বাধীন হবে । সেই দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসাবে সে বীরদর্পে হেঁটে বেড়াবে । তাঁর সন্দেহ বাতিকগ্রস্থ শ্বশুর ইন্ডিয়া চলে যাচ্ছে দেখে সে খুব ক্ষুদ্ধ ।
গৌরাঙ্গ ভাব দেখায় সে নীলিমাকে তেমন পাত্তা দেয় না । কিন্তু আসলে সে নীলিমাকে খুব সমাদর করে । বন্ধুকে চিঠি লিখে সে নীলিমার রেডিওতে অডিশন পাওয়াটা উদযাপন করতে চায় । তাই রাত গভীর হলেও বন্ধুকে ডেকে তুলে স্ত্রীর গান শোনায় ।
একজন সাদা মনের মানুষ বলতে যা বোঝায়, গৌরাঙ্গ তাই ।

৪। যে কথাগুলো বারবার পড়লেও পুরনো হয় না - এপিগ্রাম

১। বস জাতীয় মানুষদের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাওয়া যায় না । যখন পাওয়া যায় তখন মনে হয় কোথাও বোধ হয় সমস্যা আছে ।
২। সত্য কথার প্রধান সমস্যা হলো, সত্য কথা শুনতে ভালো লাগে না । যে বলে তাকেও ভালো লাগে না ।
৩। মিথ্যা কথা শুনতে ভালো লাগে । যে বলে তাকেও বড় আপন মনে হয় ।
৪। সব বয়স্ক মানুষদের কর্মকান্ডেই কিছু ছেলেমানুষী থাকে ।


৫। দু'টি কথা

গৌরাঙ্গ-শাহেদের যে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব, সম্প্রীতির যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত – যার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে ছিল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম । অস্ত্রহীন বাঙালির যুদ্ধ জয়ের জন্য সেটাই ছিল একটা মোক্ষম অস্ত্র – যা আমাদের বিজয় ছিনিয়ে আনতে সাহায্য করেছিল । কিন্তু নানা বিভ্রান্তির বেড়া জালে সেই অস্ত্রে কী আজ জং ধরছে না?

পুলিশ ইন্সপেক্টর মোবারক হোসেনের গল্পটা নিয়ে আসছি আগামী পর্বে।

(চলবে.....)

মোঃ শামছুল ইসলাম

ঢাকা
তাং: ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩৯

শামছুল ইসলাম বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই ।
বহুদিন পর শুরু করে প্রথমেই আপনার মন্তব্য পেয়ে খুব খুশী লাগছে ।

২| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: গৌরাঙ্গের চরিত্রটা নিপুণভাবে আলোকপাত করেছেন। ভালো লেগেছে।
"গৌরাঙ্গ-শাহেদের যে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব, সম্প্রীতির যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত – যার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে ছিল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম । অস্ত্রহীন বাঙালির যুদ্ধ জয়ের জন্য সেটাই ছিল একটা মোক্ষম অস্ত্র – যা আমাদের বিজয় ছিনিয়ে আনতে সাহায্য করেছিল । কিন্তু নানা বিভ্রান্তির বেড়া জালে সেই অস্ত্রে কী আজ জং ধরছে না?" দুঃখজনক ব্যাপার!

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪২

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রূপক দা ।
আপনার বিশদ মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে, গৌরাঙ্গের চরিত্রটা মনে হয় আমি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি ।

৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:৩৬

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: আগের বেশ কয়েকটা পর্ব পড়েছিলাম।

আবারো শুরু করেছেন দেখে ভালো লাগছে।

আমি বইটা অর্ধেক পড়ে কোথায় যে রেখেছি আর খুঁজে পাচ্ছিনা।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৩৪

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ।
হ্যাঁ, আগেও একবার শুরু করেছিলাম ।
এবার লেগে থেকে শেষ করতে চাচ্ছি ।
ইন-শা-আল্লাহ ।

৪| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: গুড।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:১৩

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই ।

৫| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৬

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: জোছনা ও জননীর গল্প হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ লিখা গুলির একটি।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৩৩

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ গিয়াস ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.