নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

জোছনা ও জননীর গল্প: মুক্তিযুদ্ধের শুরুর কথা (পর্ব-৭)

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৬



১। ভূমিকা:
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এদেশের সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের সমর্থন ছিল এবং অনেকেই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে ছিলেন । তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ পুলিশ ইন্সপেক্টর মোবারক হোসেন । তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের চাকুরি করেও যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নির্দেশ পালন করেছেন, তাঁদেরই একজন মোবারক হোসেন । এটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল সে সম্পর্কে কী আমাদের ধারণা আছে?
ধারণাতীত সেই কাজটা একজন সামান্য পুলিশ ইন্সপেক্টর করে দেখিয়ে দিয়েছেন, একজন উপযুক্ত নেতার নির্দেশনায় সেদিন মানুষ কতটা মরিয়া ছিল স্বাধীনতার জন্য ।
মোবারক হোসেনের সাথে পাঠকের প্রথম দেখা সোবহানবাগের একটা দোতলা বাড়ির ছাদে । তারপর বিভিন্ন চরিত্রের সাথে তার দেখা হয়েছে । তবে উপন্যাসের প্রয়োজনেই তা ধারাবহিকভাবে হয়নি । মাঝে অন্যান্য চরিত্রের আগমন ঘটেছে । মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে তিন বার পাঠকের সাথে তাঁর দেখা হবে । তাই ঘটনাপ্রবাহকে তিন ভাগে ভাগ করেছি বোঝার সুবিধার জন্য । পাঠক, আসুন চমকপ্রদ সেই সব ঘটনা উপভোগ করি ।
২। ঘটনাপ্রবাহ
ঘটনাপ্রবাহ-১
সোবহানবাগের একটি দোতলা বাড়ি । শহর হলেও আশেপাশে গাছ-গাছালির সমারোহে গ্রামের একটা আবহ বিদ্যমান । সকালের সূর্যটা গাছের মাথার উপর দিয়ে ভোরের বার্তা নিয়ে আসছে । চমৎকার মন ভালো করে দেওয়া একটা সকাল । মোবারক হোসেনকে এই সব কিছুই স্পর্শ করছে না । অধিক রাতে নিদ্রা যাওয়ার কারণে গত দু’বছর তাঁর সকাল দেখা হয় নি । আজ যখন সুযোগ হলো, তখন তাঁর স্ত্রী চতুর্থ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে ।
সারারাত যন্ত্রণায় ছটফটিয়ে পরদিন দুপুরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম দিয়ে তিনি মারা গেলেন । তাঁর মৃত্যুতে মোবারক হোসেন কিছুটা ব্যাথিত । তবে আগের তিন টা সন্তান ছিল মেয়ে, এবার পুত্র সন্তান হওয়ায উনি খুশি । ২৫ মার্চ ১৯৬৯ সালে তাঁর পুত্রের জন্মের সাথে জড়িয়ে আছে আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা – এদিন জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করেন আয়ুব খানের কাছ থেকে এবং দেশে সামরিক শাসন জারি করেন । তাই তিনি তাঁর ছেলের নাম রাখলেন ইয়াহিয়া ।
মৃত মাকে মোবারক হোসেন প্রায়ই স্বপ্নে দেখেন । তাঁর মার স্বপ্নের কথা অনুযায়ী তিনি ছেলেকে দেখাশোনা করার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করেন । সোফিয়া নামের মধ্যবয়স্কা এই মহিলার তিনটি গুণে তিনি মুগ্ধ । খুব ভালো রান্না করে, স্বামীকে যমের মত ভয় পায় এবং তৃতীয় গুণটাকে উনি বেকুবি হিসাবে দেখেন । স্বামীর সংসারকে নিজের সংসার মনে করেন । শুধু তাই না, আগের পক্ষের সন্তানদের তিনি নিজের সন্তান হিসাবেই মানুষ করতে লাগলেন ।
পুত্র ইয়াহিয়া মোবারক হোসেনের কাছে সৌভাগ্যের প্রতীক স্বরূপ । এই বিশ্বাস আরো দৃঢ় হলো যখন ১ জানুয়ারী ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খান রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করার অনুমতি দিলেন । শুধু তাই না, সেই দিনই তিনি অভিশপ্ত খাকি পোশাক থেকে বদলি হলেন ডিএসবি-তে ।
গোয়ান্দা বিভাগে যোগ দেওয়ার দু’মাসের মাথায় এক বিশেষ দিনে তাঁর ডাক পড়ল সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের অফিসে, শেরশাহ সুরি রোডের এক বাসায় । ২৫ মার্চ ছেলের প্রথম জন্মদিনের সব আয়োজনের মধ্যেও তাঁকে যেতে হলো । সেখানে দেখা হলো রূপবান কর্ণেল শাহরুখ ও চিমশে চেহারার চল্লিশোর্ধ পূর্ণিমা জেলার কবি জোহরের সাথে । কর্ণেল তাঁকে দায়িত্ব দিল শেখ মুজিবর রহমানের বাসার সামনে হাজির থেকে উনার গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য । এবং প্রতি বুধবারে এই বাসায় এসে জোহরকে রিপোর্ট করতে ।
মোবারক হোসেন তাঁর দায়িত্ব পালন গুরু করে দিলেন । নানা রকম অভিজ্ঞতা তাঁর হতে লাগলো । তৃতীয় দিনের মাথায় তিনি শেখ মুজিবর রহমানের চোখে পড়ে গেলেন । অমিত সম্মোহনী শক্তির এই বিশাল হৃদয় মানুষটার কাছে মোবারক হোসেন অকপটে তাঁর সব কথা বলে দিলেন । উনি মোবারক হোসেনকে ডাকলেন ছাদে যাওয়ার জন্য । মোবারক কারণ জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বললেন, তোকে ছাদ থেকে লাফ দিতে হবে ।
মোবারক উনার সাথে হাঁটা দিলেন । বঙ্গবন্ধু দোতলায় এসে উনার স্ত্রীকে বললেন, এই আমাদের দু’জনকে নাশতা দাও । এ হলো আমার এক ছেলে ।
বঙ্গবন্ধুর চোখ-মুখে তৃপ্তি ও আনন্দ ঝলমল করতে লাগলো ।
পাঠক, ঘটনাপ্রবাহ-২ ও ঘটনা-প্রবাহ-৩ আজ আর বলতে ইচ্ছে করছে না । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে বাঙালি কতটা ভালোবাসতেন, তার একটা ছোট্ট ঘটনায় আমার হৃদয় ভরে গেছে । আমি এই ঘটনাটাকে স্মৃতিতে চির জাগরূক রাখতে চাই ।
৩। একান্তে দেখা – মোবারক হোসেন
খুব সাধারণ একজন মানুষ মোবারক হোসেন । তাঁর মধ্যে বেশ কিছু দোষও দেখতে পাই । নিজের স্ত্রীর প্রসবকালীন কষ্টের মধ্যেও তিনি পাশের বাসার ভদ্রমহিলার কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেন নি – আগের তিন সন্তানের মতো আগত সন্তানকেও তিনি ধাইয়ের উপর ছেড়ে দিয়েছেন । তাঁর ধারণা, মেয়েছেলেদের কই মাছের প্রাণ, যাই যাই করেও যায় না । তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁকে জমের মত ভয় পায় দেখে সে খুশি । তাঁর ধারণা, যে পরিবারে এই স্বামী ভীতিটা নেই, সেই পরিবারে কখনো সুখ আসে না ।
নারী জাতির প্রতি তাঁর মধ্যে একটা তাচ্ছিল্যের ভাব আছে । মাওলানা ভাসানী ফাতেমা জিন্নাহকে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানালে সেটাকেও তিনি বাঁকা চোখে দেখেছেন, যদিও মাওলানাকে তিনি পছন্দ করেন ।

তাঁর মধ্যে পাকিস্তান প্রীতি প্রবল । রবীন্দ্র সঙ্গীত, আরবী হরফে বাংলা লেখা, ছয় দফা, এগারো দফা, আগরতলা মামলা, ইয়াহিয়া খান প্রীতি – ইত্যাদি ইস্যুতে আমরা তাঁর যে মনোভাবের পরিচয় পাই, তা হতাশাজনক । তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না, মোবারক হোসেনের মাধ্যমে লেখক সেই সময়ে কিছু পাকি প্রেমিকের যে চরিত্র চিত্রণে করেছেন – তা অনবদ্য ।
মোবারক হোসেনের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ভালো । কর্ণেল সাহেব তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করেছিল, জোহর এই পর্যন্ত কয়টা সিগারেট খেয়েছে, সে সঠিক উত্তর দিয়েছিল – নয়টা ।
পুত্র ইয়াহিয়াকে তিনি অত্যন্ত ভালোবাসেন । ছেলের প্রথম জন্মদিন তিনি খুব ধুমধাম করে পালন করেন ।

মোবারক হোসেনের পাকিস্তান প্রীতির জন্যই কর্ণেল সাহেব তাঁকে বঙ্গবন্ধুর গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য ৩২ নম্বরের বাসায় ডিউটি দেন । কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সাথে দেখতে পাই, বঙ্গবন্ধুর আদেশে তিনি বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিতে রাজী হয়ে যান ।

৪। যে কথাগুলো বারবার পড়লেও পুরনো হয় না - এপিগ্রাম
১। বাঙালি অদ্ভুত এক জাতি । যাদের বিশ্বাস করে তাদের সব কথা বিশ্বাস করে । আবার যাদের অবিশ্বাস করে তাদের সত্য কথাও বিশ্বাস করে না ।
২। বাড়ি মানেই অলস দুপুর । বাড়ি মানেই ভাদ্র মাসের গরমে আচমকা উড়ে আসা হিমেল হাওয়া । বাড়ি মানে বারান্দার রেলিং-এ শুকাতে দেয়া রঙিন শাড়ি ।
৩। গ্রহকে ঘিরে উপগ্রহ ঘুরপাক খায় । শেখ সাহেব বিশাল গ্রহ । তাকে ঘিরে ঘুরপাক খাওয়া উপগ্রহের সংখ্যাও সেই কারণে অনেক ।

৫। দুটি কথা
পরশ পাথরের সংস্পর্শে আসলে যেমন পাথরও হীরা হয়ে যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সান্নিধ্যে এসে তেমনি অতি সাধারণ মোবারক হোসেন এক অসাধারণ মানুষ হয়ে ওঠেন । ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবর রহমানের বাসার ঘটনাটা তারই ইংগিত বহন করে ।

পুলিশ ইন্সপেক্টর মোবারক হোসেনের চরিত্রের আরো কিছু দিক এবং ঘটনাপ্রবাহ-১ ও ঘটনাপ্রবাহ-২ নিয়ে আসছি আগামী পর্বে।

(চলবে.....)

মোঃ শামছুল ইসলাম
ঢাকা
তাং: ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: আমি কিন্তু নিয়মিত পড়ছি।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩২

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই ।
আপনি নিয়মিত পাঠ করছেন দেখে খুব ভালো লাগছে ।

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৬

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: চলুক।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২১

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ সেলিম ভাই ।

৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


বড় ঘটনা, আপনার লেখার ষ্টাইলটাকে সহজ করার চেষ্টা করেন; " পাঠক, আসুন চমকপ্রদ এসব ঘটনাকে উপভোগ করি", এই ধরণের বাক্য কমপক্ষে আমার কাছে ভালো লাগে না

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৫

শামছুল ইসলাম বলেছেন: " পাঠক, আসুন চমকপ্রদ এসব ঘটনাকে উপভোগ করি", এই ধরণের বাক্য কমপক্ষে আমার কাছে ভালো লাগে না -- আমি পাঠককে লেখার সাথে সম্পৃক্ত করতেই এমনটা করে থাকি । তবে পাঠকের যদি ভালো না লাগে, তবে বাদ দেওয়া যেতে পারে । আমার ধারণা ছিল আমি সহজ করে লিখি । আজ আপনার মন্তব্যে একটু দ্বিধায় পড়ে গেলাম ।

৪| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


অনেকেই বলেন, শেখ সাহেবের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করতে গেছেন, জিয়ার কথায় যুদ্ধ করতে গেছেন; এগুলো পুরোপুরি সঠিক নয়, মুক্তিযোদ্ধারা স্বেচ্ছায় যুদ্ধে গেছেন। পরে দেখা গেছে যে, মুক্টিযোদ্ধারা উনাদের ২ জনের চেয়ে বেশী অনুধাবন করেছেন; উনারা বরং পেছনে পড়ে ছিলেন।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৬

শামছুল ইসলাম বলেছেন: আমি "জোছনা ও জননীর গল্প" উপন্যাসে যা পেয়েছি, তাই তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.