নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

জোছনা ও জননীর গল্প: মুক্তিযুদ্ধের শুরুর কথা (পর্ব-৮)

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৫৩



১। ভূমিকা:
মোবারক হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্বন্ধে এই পর্বে আমরা অনেক কিছু জানতে পারবো । বাঙালিদের নিয়ে সেই সময়ে সামরিক কর্মকর্তা ও বিহারীদের মনোভাব কেমন ছিল, তা ও জানা যাবে । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কর্মপন্থা নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তা ও বিহারীদের মধ্যে যে উৎকণ্ঠা বিরাজমান ছিল, মোবারকের সাথে কর্ণেল সাহেব ও জোহরের কথায় তা ওঠে এসেছে ।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি মোবারক হোসনের গভীর ভালোবাসার প্রকাশটা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে গল্প যত এগিয়েছে ।
২। ঘটনাপ্রবাহ
ঘটনাপ্রবাহ-২
বুধবার মোবারক হোসনের ছুটি । ছুটির দিনেও উনি সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত শেখ মুজিবর রহমানের বাড়িতে ডিউটি করেন । তারপর বাজার করেন, গরুর মাংস কিনেন । বাসায় ফেরেন বেলা বারোটা নাগাদ । পুত্র ইয়াহিয়া গোসল করার সময় হাসে-কাঁদে । পুত্রের এই হাসি-কান্না তিনি খুব উপভোগ করেন । দুপুরে ঘুমিয়ে নিয়ে বিকালে শের শাহ্ সুরী রোডে যাওয়াটা তাঁর কাছে অস্বস্তিকর লাগে । তাই দুপুরে ঘুমের মধ্যেও অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেন, কখনো ভয়ংকর স্বপ্নও দেখেন । কিন্তু জোহর সাহেব তাঁর সাথে খুবই স্বাভাবিক আচরণ করেন, মাঝে-মাঝে হাসি তামাশাও করেন । উনার কথাবার্তার অধিকাংশই থাকে ভোজন সংক্রান্ত । মাঝে মাঝে রাজনৈতিক কিছু হালকা আলোচনাও করেন । রাজনৈতিক আলোচনার এক পর্যায়ে প্রসঙ্গক্রমেই এসে পড়ে স্বাধীনতার ঘোষণার কথা । মোবারকের ধারণা, দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে নেতা বানিয়েছেন । তাই দেশের মানুষের ইচ্ছাকে দাম দিয়ে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিবেন । আর জোহরের ধারণা, স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে ঢাকা শহরের রাস্তায় এক হাঁটু রক্ত হবে ।
দেশের এই চরম ক্রান্তি লগ্নেও এক শ্রেণির বাঙালি সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী নিজেদের আখের গুছাতে ব্যস্ত । তাদেরই একজন মোবারকের মামা মুসলেম উদ্দিন সরকার । লবণ আর মোমবাতির ব্যবসা করে তাঁর রমরমা অবস্থা । তার ভাষায়, এই ‘গন্ডগোল’ আরো দুই মাস চললে কেরোসিনের ব্যবসাটাও বেশ ভালো জমবে । সে কেরোসিনের ব্যবসায় তার ভাগ্না মোবারককেও শামিল হতে বলেন । মোবারক রাজী হয় না । মুসলেম উদ্দিন ভাগ্নাকে অন্য প্রস্তাব দেন – মোবারকের ইন্টারমিডিয়েট পড়া মেয়ে মরিয়মের জন্য পাত্রের কথা বলেন । পাত্রের মা-বাবা ছোটবেলায় মারা গেছেন । ছেলে নিজের চেষ্টায়, বন্ধুবান্ধবদের সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সে মাস্টার্স করছে । জীবনে সব পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে, শুধু ম্যাট্রিকে সেকেন্ড হয়েছিল । পাত্রের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি ।
পাত্রের বিস্তারিত শুনে মোবারক মামাকে হ্যা, না কিছুই না বলে দুপুরের খাওয়া শেষে ঘুমেোতে চলে যায় ।বিকেলে ঘুম থেকে ওঠে মামার আনা মুক্তাগাছার মন্ডা নিয়ে শের শাহ্ সুরী রোডে কর্ণেল সাহেবের সাথে দেখা করতে যায় । কর্ণেল সাহেব মোবারককে তাঁর পিস্তলটা উনাকে দিয়ে দিতে বলেন । একটা ভয়ের অনুভূতি তাঁর সারা শরীরটাকে অবশ করে দেয় । রাতে উনি গায়ে জ্বর ও প্রচন্ড মাথা ব্যথা নিয়ে বাসায় ফেরেন । সেখানে পাত্রের সাথে তাঁর দেখা হয় । পাত্র তালগাছের মতো লম্বা । আর উনার মেয়ে মরিয়ম বেঁটে । বিবর্ণ চেহারার পাত্রকে উনার পছন্দ না হলেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে তিনি বিয়েতে সায় দেন । পাত্রের দাবী অনুযায়ী এগারো হাজার টাকা দিতেও রাজী হন । এই টাকা দিয়ে পাত্র তাঁর কিছু ঋণ শোধ করবে ।

ঘটনাপ্রবাহ-৩
চাদর গায়ে জড়ানো জোহরকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে দেখে মোবারক চমকে ওঠে । জোহরের হাত দু’টোও চাদরের নীচে । চাদরের নীচে কী পিস্তল আছে? ভোর পাঁচটায় জোহরকে দেখে তাঁর মনে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হতে থাকে । জোহর তাঁর মনের কথা বুঝতে পেরে চাদর সরিয়ে তার হাত দু’টো দেখায় । উনারা দু’জন চা খান । কথায় কথায় জোহর জানতে চায়, মোবারক এখানে এখন কার ডিউটি করছে? মোবারক সহসা জবাব দিতে পারে না । জোহর নিজেই তার জবাব দেয় – মোবারক শেখ মুজিবর রহমানের ডিউটি করছে । শুধু সে নয়, পুরো বাঙালি জাতিই তাঁর ডিউটি করছে ।
কিছুক্ষণ পর সেই অবিসংবাদিত নেতা নীচে নেমে আসে । মোবারকের সাধে কুশল বিনিময় করে । মাত্র একবার শোনা মোবারকের তিন মেয়ের নাম ধরে ওদের কথা জানতে চায় । তাঁর স্মৃতিশক্তির প্রখরতা ও আন্তরিকতা দেখে মোবারক বিস্মিত হয় । মাওলানা ভাসানীর ভাষণ আছে – উনি শুনতে যাচ্ছেন, মোবারককেও তাঁর ভাষণ শোনার আহ্বান জানান ।
মোবারক তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে পল্টনে ভাষণ শুনতে যায়, বড় মেয়ে মরিয়ম কোথায় গেছে কেউ জানে না । মেয়েরা বাবাকে খুব ভয় পায় । মোবারক তাঁদের দু’জনকে আইসক্রিম কিনে দিয়ে ওদের সাথে সহজ হতে চায় । পল্টনের বিশাল সমাবেশে ভাসানী সাহেব তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন । সাত কোটি মানুষকে মাওলানা এই বলে ধন্যবাদ জানান যে, তাঁরা আজ বুঝতে পেরেছে যোজন যোজন ব্যবধানে গড়ে ওঠা দুটি ভিন্ন সংস্কৃতির রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়াটাই ভুল ছিল । এখন সেই ভুল সকলেরই ভেঙ্গে গেছে ।



৩। একান্তে দেখা – মোবারক হোসেন
মোবারক হোসেন বত্রিশ নম্বরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পছন্দ করেন । ছেলে ইয়াহিয়ার সাথে সময় কাটাতে ভালবাসেন । কিন্তু কর্ণেল ও জোহর সাহবের সাথে শের শাহ্ সুরী রোডে দেখা করার কথা মনে হলেই তার সমস্ত আনন্দ উবে যায় ।
তিনি আত্মীয় বৎসল । মামা মুসলেহ উদ্দিনকে প্রায়ই তিনি টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করেন ।
স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি অনমনীয় । বঙ্গবন্ধুর কোন ক্ষতি তিনি হতে দেবেন না । জোহরকে চাদর গায়ে বত্রিশ নম্বরের বাড়ীর সামনে দেখে তিনি শঙ্কিত হয়ে ওঠেন ।


৪। যে কথাগুলো বারবার পড়লেও পুরনো হয় না - এপিগ্রাম
১। পুরো বাঙালি জাতি এখন একজনের ডিউটি করছে । সেই একজনের নাম শেখ মুজিব ।

৫। দু’টি কথা
যিনি একদিন ইয়াহিয়া খানের নামের সাথে মিল রেখে নিজের ছেলের নাম রেখে ছিলেন, সেই মোবারক হোসেন বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে ওঠে ছিলেন । শুধু তিনি নন, সাত কোটি বাঙালি তখন তাঁর নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল । এবং এক বাক্যে তাঁর নির্দেশ মেনে চলছিল ।
নাইমুল ও মরিয়মকে নিয়ে আসছি আগামী পর্বে।

(চলবে.....)

মোঃ শামছুল ইসলাম

ঢাকা
তাং: ৪ জানুয়ারী, ২০১৮

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
মধুর স্মৃতিমাখা স্মৃতিচারণ ভালো লাগছে
চলতে থাকুক.............

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:২২

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ নূরু ভাই ।

২| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: চলুক।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:২৩

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই ।

৩| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২২

চাঁদগাজী বলেছেন:


গল্প, ঘটনা, ইতিহাস, রচনা?

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৪

শামছুল ইসলাম বলেছেন: জোছনা ও জননী উপন্যাসে গল্প আছে, ইতিহাস আছে, বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে কাহিনী এগিয়ে গেছে । এই টুকু আমার উপলব্ধি । ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.