নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

#পাঠ_প্রতিক্রিয়া: আবু তোরাবের দৌড়; মোস্তাক শরীফ; প্রকাশক: অ্যাডর্ন

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:২৪


.
এই মাত্র শেষ করলাম ‘আবু তোরাবের দৌড়’ । মোস্তাক শরীফের অনবদ্য গদ্যে শুক্রবার দুপুরটা কী এক আবেশে আমাকে জড়িয়ে রেখেছে । শুরু করেছিলাম গত সপ্তাহে ।নানা ব্যস্ততায় আজ শুক্রবার ছুটির আমেজে শেষ করলাম ।
.
‘পাথর’ গল্পটা পড়ে সুমনের মতো আমিও কিছুক্ষণ পাথর হয়ে ছিলাম ।
--“বেলা গড়াতে থাকে । বকের ঝাঁক কখন অদৃশ্য হয়ে গেছে, দিগন্তে মিলিয়ে...”
--“সুমন বসে থাকে । দু’হাজার কড়কড়ে দুটো নোটের ভার পাথরের মতো বুকে চেপে থাকে তার, তাকে উঠতে দেয় না ।“.
আমিও বুকের উপর চেপে থাকা পাথরটা সরানোর জন্য কাগজ-কলম নিয়ে বসি ।
.
অসাধারণ সব মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্পে লেখক আমাকে ছুঁয়ে গেছেন, আমার অহমকে উনার ‘অহম’ গল্পের মধ্য দিয়ে অনুভব করেছি । রফিক মাস্টারের আত্মহত্যার কারণ উদঘাটনের জন্য ওসি মমতাজ উদ্দিন আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করেন । কারণটা জানার পর আবেগটা আমাকে ছুঁয়ে যায় ভীষণভাবে । বইটা বন্ধ করে চশমাটা খুলে কিছুক্ষণ বসে থাকি । প্রতিনিয়ত কত রফিক মাস্টার এমনি অপমানের শিকার হচ্ছে, কে তার খবর রাখে?
.
‘একটি অসামান্য ভ্রমণের গল্প’ আমার কাছে একটি অসামান্য গদ্য কবিতার মতো মনে হয়েছে । নিহত মানুষটি বুড়িগঙ্গায় ভাসতে ভাসতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বেদনার যে কাব্য রচনা করেছেন, তা প্রতি মুহূর্তে আমাকে কাঁপিয়ে দিয়েছে ।
.
--“কীভাবে সে মরেছিল সেটা নিজেও টের পায়নি সে ।
আপাতত সে ভেসে চলেছে বুড়িগঙ্গায় ।”
‘সে’, সেই মানুষটার কথা হৃদয়ে বড় বেজেছে ।
--“বেঁচে থাকলে হয়তো এখনও অন্যান্য দিনের মতোই বাদুড়ঝোলা হয়ে বাসে করে অফিস থেকে বাড়িতে ফিরত সে । ..... মেয়ের আবদার মেটানোর জন্য ফুটপাথের খেলনাওয়ালার সাথে ...”
খুব সাধারণ একজন মানুষ । কিন্তু তারও কী অসামান্য স্মৃতির পসরা-
---“নি:সঙ্গ সেই নদীতীর থেকে বহু মাইল দূরে ছয়তলার একটি ফ্ল্যাটে সাদাসিধে একজন মানুষের জন্য রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় সময় কাটাচ্ছিল এক শিশু আর তার মা ।“
তাদের অনন্তকালের অপেক্ষায় রেখে অনন্তকালের পথে যাত্রা করেছে সে – এই ‘সে’ তো আমিও হতে পারতাম! ‘সে’-এর জন্য হৃদয় কাঁদছে ।
.
‘চা’ গল্পের পরাগকে চিনে না, এমন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মানুষ কমই আছে । টিউশনির টাকা দিয়ে মা ও বোনের জন্য পরাগের জিনিস কিনে দেবার আকুতি, মধ্যবিত্তের খুব চেনা । খুব চেনা হঠাৎ টিউশনি হারিয়ে দিশেহারা পরাগের মুখচ্ছবি ।এতো বেদনার মাঝেও টুটুলের মার ‘চা’-এর জন্য পরাগের অধীর আগ্রহ গল্পটাকে অন্যমাত্রা দিয়েছে ।পরাগের চা প্রীতি গল্পটাকে নিরেট দু:খের কবল থেকে বের করে এক ধরণের সুষমা ছড়িয়েছে ।
.
‘নার্গিস বেগমের লাইফ হিস্ট্রি’ ছোটগল্পের সার্থক রূপ । শেষ পর্যন্ত গল্পটা আমাকে টেনে নিয়ে গেছে । বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছি শেষটা জেনে – নার্গিস তার স্বামীকে বিষ দিয়েছিল পানির সাথে ।
তবে গল্পটা যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, সেটা আমার ভালো লাগেনি ।একজন সম্পূর্ণ অপরিচিতা মহিলা একজন পুরুষের কাছে এভাবে নিজের জীবনের একান্ত কথা বলতে পারেন? নার্গিসের লাইফ হিস্ট্রিটা কী অন্যভাবে বলি যেত না?
.
‘ আমি তাকে যে কারণে খুন করেছিলাম’ গল্পে কামাল তার বন্ধু আতাহারকে খুন করে । খুনের কারণটা কামাল গল্পের শেষে এসে বলেছে ।তবে সে বলার আগেই আমি ধারণা করেছিলাম । মানুষ তার বন্ধুকে যে সমস্ত অকারণ কারণে খুন করে, তার একটি ভালোবাসাজাত ঈর্ষা । সেই সেই ঈর্ষার আগুনে পুড়ে সে বন্ধুকে খুন করলেও বিবেক তাকে ক্ষমা করেনি । দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সে আতাহারের ধলপুর গ্রামে আসে, দেখা করে বন্ধুর বাবা আমজাদ সাহেবে ও তার মার সাথে ।
ধলপুর স্টেশনের বর্ণনা, স্টেশনমাস্টারের বর্ণনা, আমজাদ সাহেবের বর্ণনা – এতো নিখুঁত ছিল, যেন আমি তাদের দেখতে পাচ্ছি ।
.
‘আবু তোরাবের দৌড়’ গল্পে দুবছরের আবু হামজার পানিতে পড়ে মৃত্যুর করুণ কাহিনী বর্ণনায় লেখক সার্থক । হৃদয়স্পর্শী সেই বর্ণনায় মন নরম হয়ে আসে । তবে এই মৃত্যুর জন্য স্ত্রী আফরোজাকে দায়ী করাটা কী অস্বাভাবিক নয়? যাই হোক, বড় ভাইয়ের কথায় আবু তোরাবের ভুল ভাঙ্গে । উর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে থাকে সে । আফরোজা কী বংশী নদীতে ঝাপ দিয়েছিল? চরম এই উৎকণ্ঠার মধ্যে গল্পের সমাপ্তি আমাকে ভাবিয়ে তোলে । এখানেই লেখকের সার্থকতা ।
.
‘সনাতনের ঘর’ গল্পে সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে যে ভোগান্তির কবলে পড়তে হয় সনাতনকে, তার মর্মস্পর্শী চিত্র দেখতে পাই । সনাতন ঘুরে দাঁড়ায় এই অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করার জন্য । কিন্তু ছফদরের লোকেরা তার ঘরে আগুন দিয়ে তাকে ঘর ছাড়া করতে চায় । সনাতন কোনো মতে বেঁচে যায় । ইসমাইল ও অন্যান্যদের সান্তনা তাকে একটুও স্পর্শ করে না । বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সে সবাইকে জানিয়ে দিতে চায় – এই ঘর ছেড়ে সে কোথাও যাবে না, প্রাণ যায় যাক ।
.
.
‘নীল অর্কিড’ উপন্যাস পড়ে ২০১৭ সালে বেদনায় নীল হয়ে মোস্তাক শরীফের সাথে পরিচয়, ২০১৮-তে এসে সেই পরিচয় আরো গভীর হলো ‘আবু তোরাবের দৌড়’ পড়ে । আগামীতে এই পরিচয় আরো গভীর হবে – এই আশাবাদ ব্যক্ত করে শেষ করছি ।
.
মো: শামছুল ইসলাম
তারিখ: ০২/০৩/২০১৮ ইং

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: বইটি পড়ার ইচ্ছা জাগলো।

০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:১২

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই । আপনার পড়ার ইচ্ছা জাগাতে পেরে ভালো লাগছে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.