নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: আমি দোলনচাঁপা হয়ে ফুটবো(১)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০৫

(১)
.
-দোলন, দোলন!
মা ডাকছে। আমি শুনছি সাড়া দিচ্ছি না। আমি আর আজাদ অঙ্ক করছি। প্রাইমারি বৃত্তির জন্য আমাদের বাসায় দুজনে মিলে পড়ি।
-এই দোলন, দোলন।
মার অধৈর্য গলা। আমি এই ডাকটা খুব পছন্দ করি। মা যখন ডাকে, আমি ইচ্ছে করেই দেরী করে সাড়া দেই।
আজাদ একটু উসখুস করছে। মা-ছেলের এই ধরণের খুনসুটি ওর কাছে অপরিচিত। ওর মা নেই।
--মা, আমরা পড়ছি। তুমি বিরক্ত করো না তো!
অনেকদিন হয়ে গেছে, মা আমাকে আর বিরক্ত করে না। আজাদের সাথেও বহুকাল দেখা নেই।
-দোলন, দোলন বলে কে যেন ডাকছে। সেই ডাক শুনে পুরনো স্মৃতি মনে পড়ল। ঘাড় ফিরিয়ে দেখি খোঁচা খোঁচা দাড়ির মাঝ বয়সী এক ভদ্রলোক ডাকছেন। নতুন রোগী।
--আসছি, বলে একটা মেয়ে হাতে পানির ফ্লাক্স নিয়ে বারডেম হাসপাতালের ওয়ার্ডের দরজা দিয়ে ঢুকল।
দুজনের কথাবার্তায় বুঝলাম উনারা স্বামী-স্ত্রী। দোলন নামটা মেয়েদের। মা যে কেন আমাকে এই নামে ডাকতেন? বাসায় ডাকলে ভালোই লাগত। কিন্তু জানালা দিয়ে যখন জোরে জোরে খেলারত আমাকে খেলা শেষ করে বাসায় আসার জন্য ডাকতেন, তখন খুব রাগ হতো। দুষ্টু ছেলেরা আমাকে খ্যাপাতো।
পরে মার মুখেই শুনেছি, একটা মেয়ের খুব শখ ছিল উনার। প্রথম ছেলের পর দ্বিতীয়টা মেয়ে হবে বলেই উনি আশা করেছিলেন। লক্ষণগুলোও নাকি সে রকমই ছিল। উনি মনে মনে একটা নাম ঠিক করে নিলেন। দোলন – কবি নজরুল ইসলামের দোলনচাঁপা থেকে দোলন। মেয়ে হয়নি তাতে কী? উনার কাছে আমি দোলন। পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুদের কাছে আমি দোলা। একটা কন্যা সন্তানের জন্য মার আকুতিটা রয়েই গেল। আমার পর আরও দুই ভাই এলো তাঁর কোল জুড়ে। মায়াবতী একটা মেয়ের জন্য তাঁর দু:খটা রয়েই গেল।
.
(২)
.
দোলনকে দেখে আমার মার মায়াবতী কন্যার জন্য দু:খটা আমাকে স্পর্শ করল। এমন মায়াময় চেহারা কখনো দেখিনি!
নাকি আমার অসুস্থ শরীরের কারণে মনটাও নরম হয়ে গেছে? আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম দোলনকে ছোটবোন আর রোগীকে বোনজামাই বানাব। আমি মানুষের সাথে বেশ সহজেই মিশতে পারতাম। পারতাম বলছি এই কারণে যে, এখন আমি লোকজনকে এড়িয়ে চলি। কেন? ধীরে ধীরে সব বলব। পুরনো অভ্যাসটা একটু ঝালিয়ে নিলাম। দোলনের স্বামীর নাম জহির। তাঁদের একমাত্র কন্যার নাম পাপিয়া। কয়েকদিন আগে উচ্চ রক্তচাপের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল জহির। তাই হার্টে ব্লক পরীক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছে। বাচ্চাদের হাসপাতালে আনা ঠিক না। তাই আনে নি।
বিকেলে দর্শনার্থীদের ভীড় থাকে। গত তিনদিন যাবত তাই দেখছি। এই সময়টা আমি চরম বিরক্ত বোধ করি।
এতো ভিড় করার কী আছে! কারণ আমার কাছে তেমন কেউ আসে না। ওয়ার্ডের দরজা দিয়ে একটা ফুটফুটে মেয়ে উঁকি দিচ্ছে। আমি দেখেই বুঝলাম দোলনের মেয়ে। মা-মেয়ের এতো মিল। জহির ভাইও দরজার দিকে করুণ চোখে একবার তাকায়, আবার পাশে টুলে বসা দোলনের দিকে একবার তাকায়। দোলন ওর মনের কথা বুঝতে পেরে মেয়েকে ইশারায় ডাকে। রোগীর বিছানায় বসা নিষেধ। মেয়ে মার কোলে বসে বাবার দিকে কেমন মায়াময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জহির ওর হাতটা বাড়িয়ে দেয়। মেয়েটা মার কোল ছেড়ে বেডের পাশে এসে বাবার হাত ধরে। আমার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। আমি দোলনকে হাতের ইশারায় বুঝাই যে আমি বাইরে যাচ্ছি। একটু একা থাকার জন্য ছাদে উঠি। পড়ন্ত শরতের বিকেলে ব্যস্ত শাহবাগ। অলস আমি ফিরে যাই অতীতে।
.
(৩)
.
ইস্কুল জীবনে মার কড়া শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমি তখন হাওয়ায় ভাসছি। ঢাকা কলেজের মুক্ত পরিবেশ তাতে যেন ঘি ঢেলে দিল। স্যারের কাছে পড়ার নাম করে প্রায়ই রাত করে বাসায় ফিরি। নতুন বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সিগারেট ফুঁকি। তবে যাই করি, পড়ালেখায় ফাঁকি দেই না। এইচএসসি তেও ভালো ফলাফল হলো।
সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আমার প্রবল ইচ্ছা। সেই লক্ষ্যে নিয়মিত ফুটবল খেলি। পাড়ায় ভালো ফুটবলার হিসেবে সবাই চেনে। দ্রুতগতি, চমৎকার ড্রিবলিং – অপ্রতিরোধ্য স্ট্রাইকার হিসেবে আমাকে পরিচিত করে তোলে। সেনাবাহিনীতে আবেদনপত্র জমা দিলাম। প্রাথমিক মেডিক্যাল, প্রাথমিক ভাইভা ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইএসএসবির জন্য নির্বাচিত হলাম। অবাক হয়ে দেখলাম, শারীরিক সক্ষমতায় আমি সবার চেয়ে অনেক এগিয়ে। বুকটা আশায় ভরে গেল। বহুদিন পর মার গলা জড়িয়ে ধরে ছোট্ট বেলার মত আদুরে গলায় বললাম,
-মা, তোমার দোলন আইএসএসবি-তে গ্রিন কার্ড পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে আমার চূড়ান্ত মেডিক্যাল।
মা যে কী খুশি হলো। আমার কপালে একটা আলতো চুমো দিয়ে বলল,
--বাবা, তুমি জীবনে অনেক বড় হও!
……………………
(৪)
.
মেডিক্যাল নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত ছিলাম না। আমি দীর্ঘদেহী, ফর্সা। তেমন কোন গুরুতর অসুখ কখনো হয়নি। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত আমি থমকে গেলাম। মেডিক্যিাল রিপোর্টে ধরা পড়েছে জন্ম থেকেই আমার হৃদপিন্ডে সমস্যা।
সেদিন বাসায় ফিরে মার মুখোমুখি হতে ইচ্ছে হলো না। হোটেলে বসে চা খাচ্ছি। বন্ধু সাজ্জাদ এলো। সবকথা শুনে সাজ্জাদ বলল,
-মন খারাপ করিস না দোস্ত। আমার বাসার চিলেকোঠায় চল; আড্ডা দেই।
একে একে সব বন্ধুদের খবর দেওয়া হলো। আমি টেলিফোনে মাকে দু:সংবাদটা দিলাম। ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস শুনতে পেলাম। সাজ্জাদের বাসায় থাকার ব্যাপারে মা রাজি হয় না। আমার পীড়াপীড়িতে রাজি হলেন।
সেই রাতটা আমি কখনোই ভুলবো না। আমরা ছাদে মাদুর পেতে বসেছি।সারা আকাশ ভরা তারা। চাকতির মত চাঁদ উঠেছে। জোছনার আলোয় ভেসে যাচ্ছে আকাশ, পৃথিবী আর আমাদের ছোট্ট ছাদ। বন্ধুদের অনুরোধে রুহুল গান ধরল, “চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে, ...”।
একটার পর একটা সিগারেট টানছি। সাজ্জাদ একটা বোতল খুলে কি যেন খাচ্ছে। আমাকে বলল,
-খাবি নাকি এক চুমুক।
--কি ওটা?
-ডাইল! এটা খেলে সিগারেট আর চা খেতে খুব ভালো লাগে।
--দে দেখি।
কি কুক্ষণে যে আমি ওটা খেয়েছিলাম।
.


(৫)
.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হলাম। কিন্তু আমার মাথা থকে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ভূত নামল না। ক্লাস করি। আর মন পড়ে থাকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশ সেবার; নিজের ভবিষ্যত গড়ার।
তার পরের দু’বছরও দু’বার আইএসএসবি-তে তুখোড় ফলাফল করে গ্রিন কার্ড পেলাম। কিন্তু মেডিক্যাল উৎরাতে পারলাম না।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হলো। নিজেকে শেষ করে দেওয়ার একটা জিদ চাপল। সমস্ত পৃথিবীর উপর তখন আমার ভীষণ রাগ। মাদকের সর্বনাশা নেশাটা ভয়াবহ রূপ নিল। নেশার টাকা ভূতে যোগায় – কথাটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। আর নেশার জগতে নতুন নতুন সঙ্গীরও অভাব হয় না।
বাসায় আকারে-ইঙ্গিতে মা আমাকে বোঝাতে চান, উনি আমাকে সন্দেহ করছেন। আমি পাত্তা দেই না। এক ছুটির দিন বাবা আমাকে চেপে ধরলেন। কেন আমি এতো রাত করে বাসায় ফিরি? কেন দিনের বেলা পড়ে পড়ে ঘুমাই?
আমি নিরুত্তর।
হঠাৎ বাবা রেগে যান। এমন রাগতে উনাকে আগে কখনো দেখিনি। রাগত স্বরে বললেন,
-আনোয়ার সাহেব বলছিলেন, তুমি নাকি আজেবাজে ছেলেদের সাথে ঘোরাঘুরি কর? নেশা কর? আনোয়ার সাহেব আমাদের প্রতিবেশী। আমি বুঝতে পারলাম লুকোচুরি খেলে আর লাভ নেই। মৃদু স্বরে বললাম,
--হ্যাঁ বাবা, উনি ঠিকই বলেছেন।
হঠাত করে বাবা একদম শান্ত হয়ে গেলেন।
একটা চেয়ার টেনে চুপচাপ বসে পড়লেন।
বাবার ক্লান্ত-দুখী মুখটা দেখে আমার খুব মায়া হলো।
কিছু একটা বলে বাবাকে সান্ত্বনা দিতে খুব ইচ্ছে করছিল।
কিন্তু মানুষ যা করতে চায়, সব সময় তা করতে পারে না। দ্বিধা-লজ্জা তাকে বিরত রাখে।
.
.............
চলবে...
মো. শামছুল ইসলাম

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর গল্প।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:০১

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রাজিব ভাই।
মন্তব্যটা খুব ভালো লেগেছে, সহজ সরল সুন্দর গল্প । আমি সহজ ভাষায়ই আমার গল্পটা বলতে চাই, যেন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে।

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২৩

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়লাম। কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন। শুভকামনা জানবেন।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:২৫

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। ভালো আছি। আপনার জন্যও শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.