নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন বিস্মৃত একাত্তরের শহীদের কথা

২৭ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:৪৬

সে আমার আত্মীয় নয় । তাঁর সাথে আমার কখনো কথাও হয়নি । দূর থেকে তাঁকে দেখেছি । এতো কাল পরে তাঁর মুখও মনে পড়ে না । শুধু মনে আছে, তাঁর গায়ের রঙ ছিল বেশ কালো । আর হাসলে সাদা দাঁত গুলো হেসে ওঠতো। বিকেলে গ্রীন রোড কলোনি থেকে বেরিয়ে, মিরপুর রোড পেরিয়ে, খেলার সাথীদের সাথে চলে যেতাম ধানমণ্ডি ৮ নম্বর মাঠে ফুটবল খেলা দেখতে । বছর সাতেকের একটা ছেলে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখতো কালো মানিকের অপ্রতিরোধ্য রক্ষণ শৈলী ।
.
কী অসীম সাহসী ছিলেন আমার সেই স্বপ্নের যুবক ও ফুটবলার! বঙ্গবন্ধুর সেই ডাক, “তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়.”, তিনি উপেক্ষা করতে পারেন নি। তাঁর লাইসেন্স করা পিস্তল নিয়ে একাত্তরে ২৫ মার্চের সেই কালো রাতে তিনি গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাস ভবনে । রাত নামে । বঙ্গবন্ধুর ভক্তরা সবাই চলে গেছে ৩২ নম্বর ছেড়ে নেতার আহ্বানে শত্রুকে প্রতিরোধের জন্য। কিন্তু তিনি ৩২ নম্বর ছেড়ে যাবেন না। সেখানেই শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য মন স্থির করেন । ৩২ নম্বর রোড ধরে পশ্চিমে এসে মিরপুর রোডে ওঠেন, তারপর রাস্তা পেরিয়ে ছোট্ট কালভার্টের ধারে পজিশন নেন । সোবহানবাগের দিক থেকে হেড লাইটের তীব্র আলো ছড়িয়ে পাক হানাদার বাহিনীর সামরিক ট্রাক গুলো রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে এগিয়ে আসছিল । পাক হানাদার বাহিনীর ভারী ট্রাক গুলো যখন ৩২ নম্বরে ঢুকছিল, তাঁর হাত নিশপিশ করছিল । পিস্তল থেকে গুলি ছোঁড়েন পাক হানাদার বহনকারী ট্রাক লক্ষ্য করে । রাতের নিকষ কালো অন্ধকার ভেদ করে সেই গুলি ছুটে যায় । হানাদার বাহিনীও রাতের অন্ধকারে ছুটে আসা প্রতিরোধের উৎস স্থল লক্ষ্য করে অবিরাম মেশিন গানের গুলি চালায় । গুলিতে তাঁর একটা হাত উড়ে যায় । শরীরটা অজস্র বুলেটে ঝাঝড়া হয়ে যায় । ২৫ মার্চের রাতে প্রিয় নেতাকে গ্রেফতার করার আগেই তিনি শহীদ হলেন । উনিই কী প্রথম শহীদ?
.
দুই দিন সেখানেই পড়েছিল তাঁর লাশ । ২৭ মার্চ কার্ফ্যু কয়েক ঘন্টার জন্য শিথিল হয় । অতি গোপনে ধানমণ্ডি ৭ নম্বর রোডের দোতলার বাসায় তাঁর লাশ আসে । মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, সবাই সেদিন নি:শব্দে কেঁদে ছিল । অল্প কিছু লোক তাঁর জানাজায় অংশ গ্রহণ করে । জানাজা পড়ান শ্রদ্ধেয় তরুণ ইমাম ইয়াহইয়া সাহেব । আমার কলাবাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহপাঠী হারুনের বড় ভাই ছিলেন তিনি । উনি পরে ধানমণ্ডি মসজিদের ইমাম হয়েছিলেন স্বাধীনতার পর । ৭১ সালে যিনি ইমাম ছিলেন, তিনি পাকিস্তান সরকারের সমর্থক ছিলেন । কথিত আছে, তিনি অনেক বাঙালিকে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন ।
.
আমার স্বপ্নের ফুটবলার, সেই শহীদের কথা কী কারো মনে আছে? স্বাধীনতার পর প্রায় প্রতিটি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ধানমণ্ডি মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো । মাঠের মাঝখানে ছিল একটা তাল গাছ । সেই তাল গাছকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার বিশাল ইট-বালির মঞ্চ ছিল । আলো জ্বেলে সন্ধ্যার পর স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান হতো । শিল্পীরা স্বাধীনতার গান করতেন । কবিতা আবৃত্তি করতেন । কেউ কেউ ভাষণও দিতেন । আর এসবের নীরব সাক্ষী হয়ে ধানমণ্ডি মাঠের কোনায়, পশ্চিমে একটা স্মৃতি স্তম্ভ দাঁড়িয়ে ছিল বেশ কয়েক বছর । সেখানে তাঁর নাম লেখা ছিল । কবে, কখন, কারা – সেই স্মৃতি স্তম্ভ সরিয়ে নিয়ে গেছে, আমার জানা নেই । ধানমণ্ডি ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, সেই যুবককে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আমি খুঁজেছি – পাইনি ।
.
বিস্মৃত সেই শহীদের নাম “খোকন”, ধানমণ্ডি ক্লাবের খোকন।
সে কোথাও নেই। তবুও জেগে আছে আমার অন্তরে । কবির সেই বাণী স্মরণ করে শেষ করছি,
`উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই!
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান- ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই!”
.
বি. দ্র: - আমার খুব ইচ্ছা শহীদ খোকনকে নিয়ে বিস্তারিত লেখার। কেউ তাঁর সম্বন্ধে তথ্য দিয়ে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকব।
.
মো. শামছুল ইসলাম
২৬ মার্চ ২০১৯




মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:২৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


উনার পরিবারের লোকজনদের জন্য সহানুভুতি রইলো।

২৭ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:৪০

শামছুল ইসলাম বলেছেন: উনার পরিবারের কারো সাথে আমার পরিচয় নেই। যদি কখনো দেখা হয়, আপনার আন্তরিক অনুভূতির কথা জানাব।

২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:৫৩

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ইচ্ছে থাকিলে উপায় হয়।
লিখে ফেলুন।

২৮ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:১৯

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ মাহমুদ ভাই।
ঠিক বলেছেন, ইচ্ছে থাকিলে উপায় হয়।

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: না। উনার সম্পর্কে কিছু জানি না।

২৮ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:২০

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রাজিব ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.