নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি দাওয়াত ও কিছু ঘটনা (পর্ব-২)

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:২১

১ম পর্বের লিংক: Click This Link
...

সজলের খবরাখবর নেওয়ার জন্য অনলাইনে একটু চেষ্টা চালালাম। হাজার হলেও ওপেন দাওয়াত, যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারবে – এই রকম একটা ঘোষণা ই ফারুক সজলের পক্ষ হয়ে সবাইকে জানাচ্ছে। সজলের কলিজাটা বিশাল বড় নিশ্চয়ই। সজল আমাদের গ্রুপ থ্রি-র, তোহার কাছে থেকে খবর পেলাম। তোহা আমাকে ওর সাথে গুলিয়ে ফেলেছিল – ও সেন্টগ্রেগরিজ, আমি ধানমণ্ডি। দুয়ে দুয়ে চারের মতো আমিও একটা সূত্র পেয়ে গেলাম। কল্পনায় চশমা পরা লম্বা শ্যাম বর্ণের একটা ছেলের ছবি এঁকে ফেললাম মনের ভিতরে। মানুষের চেহারা সহজে আমি ভুলি না, নামটা হয়তো ভুলে যাই।
.
ধানমণ্ডি স্কুলের পুরনো এক বন্ধুও দেখলাম গ্রুপে আছে - তৌহিদ। আমি, তৌহিদ এবং স্কুলের বন্ধুরা প্রায়ই মিলিত হই, আড্ডা দেই। ফোনে ওর সাথে কথা বললাম। জানতে চাইলাম, কোন ফর্মালিটি আছে কি-না? ও জানালো, কোন ফর্মালিটি নেই। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় প্রোগাম। একটা বাড়তি আগ্রহ থেকেই গেল। আমি তাই আরও জানতে চাইলাম, এই হঠাৎ গণ দাওয়াতের কারণ কী? তৌহিদের সরল ভাষ্য, সজল এখন অনেক ধনী। তাই কলেজে ওর ব্যাচের বিজ্ঞান, বাণিজ্য, কলা অনুষদের সবাইকে খাওয়াতে চায়। আনন্দিত মনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার অপেক্ষায় আছি। সাথে কিছুটা উদ্যোগও ভর করেছে।
.
আমার বাসা শহরের এক প্রান্তে, যেখানে মেট্রো রেলের কাজ চলছে অনন্তকাল ধরে। দাওয়াত পেয়েছি শাহবাগ এলাকায় । অফিস গুলশানে। অফিস ছুটি সাড়ে পাঁচটায়। অফিস থেকে বাসায় গিয়ে শাহবাগে এসে দাওয়াত খাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই ঠিক করে রেখেছি, অফিস শেষে সোজা দাওয়াত পাড়ায় চলে যাবো। ল্যাপটপটা অফিসের সার্ভার রুমে রেখে আসব। শুক্র-শনি, দুইদিন ল্যাপটপ ছাড়াই কাটাতে হবে। উপায় নেই। উবার বা সিএনজিতে চলাচল করার সময় ল্যাপটপ সাথে না থাকাই ভালো।
.
কিছুটা টেনশন কী কাজ করছে আমার মাঝে? হয়তো । রাতে কিছুটা ভয়ের একটা স্বপ্ন দেখলাম। কোন এক ছাদের কিনারায় আমি। হাতে কাছে কিছু নেই। নীচে পড়লে ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যাবে। হঠাৎ কেমন করে যেন পতন থেকে বেঁচে গেলাম। ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার ঘুমিয়েও গেলাম।
.
বৃহস্পতিবার সকালে শেভ করতে যেয়ে হাত থেকে রেজরের খাপটা পড়ে গেল। তেমন কোন ব্যাপার না। তবে গতকাল রাতের স্বপ্ন আর আজকের ছোট্ট ঘটনাটা মনে দ্বিধার সৃষ্টি করছে।
অফিসেও একটু ঝামেলা হলো ছুটির আগে। তাই ল্যাপটপটা প্রয়োজন হয়ে পড়ল। শুক্র ও শনিবার বাসায় বসে ইআরপি সিস্টেমের সমস্যাটার সমাধান করতে হবে। যে গাড়িটা আমাদের অফিস-টু-বাসা আনা-নেওয়া করে, তাতে আমার এক সহকর্মীকে অনুরোধ করলাম ল্যাপটপটা আমার বাসায় পৌঁছে দিতে। আমি ওদের সাথে আজ যাচ্ছি না। কলেজের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরব।
.
বাসা থেকে স্ত্রী কয়েকবার ফোন করলো। আমি কোথাও গেলে শাহানা টেনশন করে। তাই বারবার ফোন করে খবর নেয়। আমি ওকে দোষ দেই না। ঢাকা শহরের এখন যে অবস্থা, ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা কোথায়? বিশেষ করে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকগুলোর।
.
একটা সিএনজি পেয়ে গেলাম। পিজির সামনে পৌঁছে গেলাম শেষ বিকেলে, সন্ধ্যার কিছু আগে। দূর থেকে দেখেছি, কখনো ভিতরে প্রবেশ করা হয়নি ঢাকা ক্লাবের। আজ পদ্মা লাউঞ্জে বন্ধুর দাওয়াতে অংশ নিতে এসেছি। ভবিষ্যতে আর কখনো আসা হবে কি-না কে জানে। এখানে নিয়মিত যাতায়াত করতে হলে পকেটটা একটু ভারী হতে হয়।
.
মোবাইলটা বের করে সময় দেখলাম। মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে এসেছে। আমি ঘড়ি ব্যবহার করছি না অনেক দিন। মোবাইল দিয়েই সময় দেখার কাজটা সেরে নেই। শাহানা দামী ঘড়ি কিনে দিতে চেয়েছে অনেকবার। আমি রাজী হইনি। সাথে দামী জিনিস নিয়ে চলাফেরা করতে আমার আপত্তি আছে। গেটের দারোয়ানকে মসজিদ কোথায় আছে জানতে চাইলাম। সে রাস্তার ওপারে পুলিশ ফাঁড়ির দিকে দেখিয়ে দিলেন। কি মনে করে আমি জানতে চাইলাম, পদ্মা লাউঞ্জটা কোন দিকে? সেখানে আজ রাতে আমার দাওয়াত আছে। একথার শোনার পর উনি বললেন, ভিতরে একটা মসজিদ আছে। একজন লোককে আমার সাথে দিতে চাইলেন, যে আমাকে মসজিদ পর্যন্ত দিয়ে আসবে। আমি বিনীত ভাবে তার অনুরোধ প্রত্যাখান করলাম। আমি নিজেই মসজিদের খোঁজে ঢাকা ক্লাবের ভিতরে প্রবেশ করলাম। শেখ সাদীর “Eat coat, Eat coat” কথাটা মনে পড়ল।
.
মসজিদটা পেয়ে গেলাম। শাহানাকে ফোন করে জানালাম পৌঁছে গেছি সময়ের অনেক আগেই। ধীরে-সুস্থে জামাতে নামাজ পড়লাম। মসজিদের ঘড়িতে দেখলাম ৬:৪৫। আরো ৪৫ মিনিট হাতে আছে। আড্ডা শেষে রাতে কখন বাসায় ফিরতে পারি ঠিক নাই। দীর্ঘ ৩৭ বছর পর দেখা হবে কারো কারো সাথে। কথারা সহজে ফুরাবে না। তাই মোবাইলটা বের করে এশার পরে যে কাজটা প্রায় নিয়মিতই করি, তাই শুরু করলাম। সূরা বাকারা দশ আয়াত, সূরা কাহফ এর প্রথম ১০ আয়াত, সূরা মুলক আর ইখলাস,ফালাক ও নাস পড়ে ফেললাম। বেশ কিছুদিন হলো এটা চর্চা করছি। বয়স হয়েছে। প্রেশার হয়েছে। কোন একদিন সকালে ঘুমটা নাও ভাঙ্গতে পারে। কুরআন পড়ার ফাঁকে সহকর্মী মাজহার ভাইয়ের ফোন পেলাম। উনি আমার বাসার কাছে পৌঁছে গেছেন। আমি শাহানাকে ফোন করে জানালাম কেয়ারটেকার যেন ল্যাপটপটা গেট থেকে নেয়। মনটা হালকা লাগছে, ল্যাপটপ বাসায় পৌঁছে গেছে, শুধু এশার নামাজটা বাকী থাকল।
.
সময়ের আগেই পৌঁছে গেলাম পদ্মা লউঞ্জে । গেটকিপার দোতলায় যেতে বলল। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছি। ডানপাশের দেওয়ালে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু সাদা-কালো ছবি পর পর সাজানো। আধুনিকতার ছোঁয়ার মাঝেও নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধারণ করার প্রয়াসটুকু ভালো লাগল। মাঝখানে একটা ছোট্ট টেবিল। তার চারপাশ ঘিরে বসে আছে কলেজের বন্ধুরা। আমাকে স্বাগত জানায় সবাই। কোন পরিচিত মুখ পেলাম না। তবে ফেসবুকের কল্যাণে অনেককেই ইতিমধ্যে চিনে গেছি। ফারুক সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। আমরা পাঁচ-ছয় জন আড্ডায় মেতে ওঠলাম। ঠোঁটে মৃদু একটা হাসি সবসময় খেলা করছে আজমের। এটা-ওটা নিয়ে রসিকতা করছে। সবাই হাসছে, আমিও হাসছি। আজম হাসতে হাসতেই ফারুককে ইংগিত করল বিশেষ পানীয়টা পাওয়া যাবে কি-না। বেয়ারা আসল, ফারুক ওকে সার্ভ করতে বলল। আমি ভাবছি, ফারুক ওর বিভিন্ন স্ট্যাটাসে মাঝে মাঝেই ধর্মীয় কিছুর উল্লেখ্য করে। আর এখন নিজেই...।
অবশ্য এখন এমন অনেককেই পাওয়া যায় ফেসবুকে, অত্যন্ত ধার্মিক, কিন্তু বাস্তবে সম্পূর্ণ উল্টা। আরো কিছু বন্ধুর আগমন হলো। ফারুক বলল, চলো আমরা ওদিকে যাই। বিশাল লম্বা টেবিল, টেবিলের দুই প্রান্তে দুটা চেয়ার, আর দু’পাশে পঁচিশ-ত্রিশটা চেয়ার। আজম বাম প্রান্তের সিঙ্গেল চেয়ারে বসল, আমরা ওকে ঘিরে দু’পাশে বসলাম। আমি দুটো চেয়ার ছেড়ে বসলাম। ফারুক ওর পাশের চেয়ারটায় বসতে বলল। সামান্য সৌজন্য। কিন্তু আমি মনে মনে অভিভূত। ও বাণিজ্য অনুষদের, আমি বিজ্ঞানের। কখনো ওর সাথে আগে দেখা হয়েছে বলে মনে হলো না। বুঝলাম কোন সজল ফারুককে দাওয়াতের দায়িত্বটা দিয়েছে।
.
বেয়ারা দু’টা পানীয় দিল। একটা আজমকে আর একটা বশিরকে। আমি মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। ফারুক নিজের ও আমাদের জন্য কমলার জুসের অর্ডার দিল। আড্ডা ক্রমেই জমে ওঠছে। যদিও সজল তখনো আসেনি।
.
চলবে..
মো. শামছুল ইসলাম
১৩ এপ্রিল ২০১৯

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: এটা কি আত্মজীবনি?
লেখা ভালো লেগেছে।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১১:০০

শামছুল ইসলাম বলেছেন: তেমন বিশেষ কিছু চিন্তা করে লেখায় হাত দেই নি। নিজের সাম্প্রতিক কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:১৫

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: ১ম পর্ব পড়েছিলাম, এখন ২য় পড়লাম।
সুন্দর অভিজ্ঞতা চলুক।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:৪৪

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। দুই পর্বই পড়ে ফেলেছেন।
মাশাআল্লাহ।
৩য় পর্বটাও দিয়ে দিচ্ছি।
পাঠকই তো পোস্টের প্রাণ ভোমরা।

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:২৪

জুন বলেছেন: সজল সাহেব না আসা পর্যন্ত আপনার মত আমিও দেখছি বড়ই টেনশনে আছি। চলুক সাথে আছি ঐ মেট্রোরেলের মতই :).
+

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:৪৮

শামছুল ইসলাম বলেছেন: আপনাকে টেনশনে ফেলার জন্য দু:খিত।
"চলুক সাথে আছি ঐ মেট্রোরেলের মতই " - মন্তব্যটা খুবই প্রাসঙ্গিক ও ভালো লেগেছে।
সজল সাহেব আসছেন আপনার টেনশন রিলিজ করে দিয়ে লেখকের টেনশন বাড়িয়ে দিয়ে।
পড়ুন ৩য় পর্ব।

৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: তেমন বিশেষ কিছু চিন্তা করে লেখায় হাত দেই নি। নিজের সাম্প্রতিক কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।


ধন্যবাদ। ২য় পর্বও পড়লাম।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:৪৬

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই।
প্রতিটি পর্ব পড়া ও সেই সাথে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

৫| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:১৮

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: খুব ভালো লাগলো।

আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:৪৮

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ মাহমুদ ভাই।
আমিন।
আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।
আমিন।

৬| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:১৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: শামছুল ইসলাম,




চলছে , চলুক ।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:৫৬

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ আহমেদ জী এস ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.