নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলতে চাই

সামছুল কবির মিলাদ

আমি মুক্ত আমি স্বাধীন

সামছুল কবির মিলাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিজের ভাল তো পাগলেও বোঝে, তাহলে বিপথগামি তরুণপ্রজন্ম কেন নেশার জগতে?

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩০



ছোটবেলায় আমরা মাদক বলতে বুঝতাম তামাক জাতীয় পণ্য যেমন– বিড়ি, সিগারেট, জর্দা আর বড় জোর চোলাই মদকে। পাঠ্য পুস্তকে মাদক দ্রব্যের কুফল পড়তে গিয়ে জানা হয়েছে হেরোইন, গাঁজা, চরস, আফিম, কোকেইন, পেথিডিন ইত্যাদি উচ্চমার্গীয় কিছু নাম। কিন্তু বর্তমানে এসব নেশা জাতীয় দ্রব্য বিপথে যাওয়া তরুণ প্রজন্মের কাছে একেবারে ব্যাকডেটেড হয়ে গেছে। এখন অভিজাত সমাজে বিপথগামী তারুণ্যের ক্রেজ ইয়াবা, ফেন্সিডিল আর শিশা। এসব মাদক গ্রহণ আজকাল তাদের নিকট স্মার্টনেস আর স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মাদক দ্রব্য স্বাস্থ্য ও জীবনের প্রতি কতটুকু হুমকি স্বরূপ তা ভাবার অবকাশ কোথায় তাদের? ক্ষণিকের আনন্দের বিনিময়ে তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক বৈকল্য, শারীরিক পঙ্গুত্ব আর অক্ষমতার দিকে।



যে তরুণের আজ দেশ গড়ার দৃপ্ত শপথে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে প্রতিষ্ঠার উচ্চ শিখরে আরোহণ করে সমাজে নিজের ও পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করার কথা, সে আজ সর্বগ্রাসী মাদকের করাল থাবায় হয়ে পড়েছে নিস্তেজ, অসাড়। মাদকদ্রব্য তার যাবতীয় মানবীয় অনুভূতিকে ভোঁতা করে দিয়েছে। মাদকের প্রতি দুর্নিবার মোহে পড়ে সম্ভাবনাময় অনেক যুবক পরিণত হয়েছে পরিবার তথা সমাজের বোঝায় আর ভাইরাসের মত তারা সংক্রামিত করছে সমগ্র দেশ ও জাতিকে। পারিবারিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে আজকাল নেশাখোর তরুণদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বিপথগামী বন্ধুদের নিয়ে তারা নিজদের আলাদা জগত তৈরি করে নিয়েছে। বাবা-মা, ভাইবোনদের সাথে তৈরি হয়েছে তাদের যোজন যোজন গ্যাপ। পরিবারের কর্তা ব্যক্তিটিও আজকাল আর টের পায় না তার পরম আদরের সন্তানটি বাইরে কোথায় যায়, কি করে, কার সাথে মেলামেশা করে! বাবা মায়ের অজানা থেকে যায় কেন তার প্রাণপ্রিয় সন্তান ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে অন্ধকারে ঝিমায় রানিক্ষেত রোগে আক্রান্ত মুরগীর মতন। কিন্তু যখন জানা হয় ততোক্ষণে বড্ড বেশি দেরি হয়ে গেছে।



ছোট বেলায় আমরা স্কুল ছুটি শেষে তড়িঘড়ি করে বাসায় ফিরতাম কখন ছুটে যাব ফুটবল মাঠে, কখন ছুটে বেড়াব উড়ন্ত রঙ্গিন প্রজাপতির পিছনে কিংবা ফড়িঙয়ের লেজে সূতা বেধে কখন উড়িয়ে দিব শূন্যে সে আশায়। বনে বাদাড়ে ঘুরে বন্য ফুলের মধু খেয়েছি কত, বড় গাব গাছের মগডাল থেকে নামিয়ে এনেছি শালিক কিংবা ঘু ঘু পাখির ছানা। নারিকেল গাছের কোঠর থেকে টিয়া পাখির বাচ্চা বের করতে গিয়ে মা টিয়ার ঠোকর খেয়ে রক্তাক্ত হয়েছি কত। শীতের বিকেলে ন্যাড়া ধান ক্ষেতে কাটা ঘুড়ির পেছনে ছুটতে গিয়ে পা কেটেছি, হাত কেটেছি কাটা ঘুড়ির ধারালো সূতায়। মাদক কি জিনিষ জানার কোন অবসর কিংবা সুযোগ কোনটাই ছিল না। উপরন্তু এসব ডানপিটে কর্মকাণ্ডে যে নির্মল বিনোদন আর অনাবিল আনন্দ খুঁজে পেতাম তার কানাকড়িও কি পাচ্ছে বর্তমানের ডিজিটাল প্রজন্ম? তারা যতক্ষণ বাসায় থাকে মজে থাকে ট্যাবলেট, পিসি আর স্মার্টফোন নিয়ে অন্তর্জালের ভার্চুয়াল মায়াবী জগতে। আর বাসার বাইরে গেলে পা বাড়ায় নিষিদ্ধ ইয়াবা, শিশা কিংবা ফেন্সিডিলের আখড়ায়। নিজের ভাল নাকি পাগলেও বোঝে; কিন্তু হে বিপথগামি তরুণ প্রজন্ম, তোমরা কোন শ্রেণীর পাগল যে প্রাণসংহারি জেনেও নেশার জগত ছাড়তে পার না?



আজ আমরা যারা শৈশব কৈশোরের দুরন্ত সময় পার করে সুশীল অভিভাবকের তকমা গায়ে জড়িয়েছি , নিজ সন্তানের সঠিক ভাবে বেড়ে উঠার বিষয়টি যথাযথ ভাবে তদারক করতে পারছি কি ? অর্থ উপার্জনের নেশায় মশগুল কর্পোরেট কালচারে অভ্যস্ত এ যুগের বাবা মায়েরা মনে করে – কাড়ি কাড়ি টাকার সংস্থান করতে পারলেই বুঝি সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু হায়! আমরা কেন প্রায়ই ভুলে যাই যে জগতে অর্থই যত অনর্থের মূল। সঙ্গত কারনে তাই ইয়াবা, শিশা আর ফেন্সিডিলের ছোবলের মাত্রা সমাজের অভিজাত শ্রেণীতেই প্রবল। সাম্প্রতিক কালের ঐশীর ঘটনা কি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়নি গলদটা কোথায়? এ থেকেও যদি আমরা শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হই, তবে বুঝতে হবে আমাদের বিবেক বিবেচনায় আজ ঘুণপোকা বাসা বেঁধেছে।



আজকাল শিশুর প্রথাগত ক্যারিয়ার নিয়ে বাবা মা থাকে বেশি মাত্রায় চিন্তিত। ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে বাসায় আসে সাবজেক্ট ওয়াইজ প্রাইভেট টিউটর। আসে গানের টিচার, নাচের টিচার, আর্টের টিচার। কিন্তু ধর্মীয় রীতি নীতি ও অনুশাসন তথা নীতি নৈতিকতা শিক্ষার বিষয়টি থাকে চরম উপেক্ষিত। এ কারনেই অভিভাবকের অগোচরে সন্তান জড়িয়ে পড়ছে নিষিদ্ধ বস্তুর আকর্ষণে। অথচ ইহজাগতিক বস্তুগত আকর্ষণ থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করতে ধর্মীয় অনুশাসন কাজ করে দারুণ এক রক্ষাকবচ হিসাবে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে আমলে নেয়ার সময় এসেছে। আমরা চাইনা বিচার বুদ্ধি বিবেচনাহীন,পারবারিক মায়া- মমতার বাঁধনকে তাচ্ছিল্যকারী, ধর্মীয় অনুশাসনবিমুখ ঐশীর মত দ্বিতীয় কোন আদম সন্তান এ সমাজে পয়দা হোক।



ভৌগোলিক কারনে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। হাত বাড়ালেই এখন সর্বনাশা মাদকের খোঁজ মেলে। পুলিশের নাকের ডগার উপর দিয়েই চলে মাদকের অবাধ রমরমা বাণিজ্য। কিন্তু মাসিক বখরার বিনিময়ে পুলিশ যেন দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, হাজার গুণ পাওয়ার ফুল চশমা পরিয়েও এ দৃষ্টি শক্তি ফেরত আনা যাবে না যতদিন তাদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক পেশাদারিত্ব, সততা আর মূল্যবোধের অভাব থাকবে। সীমান্তে বি এস এফ আর বিজিবি’র কড়া প্রহরা সত্বেও দেশে এত মাদকের অনুপ্রবেশ কিভাবে ঘটে তার সঠিক অনুসন্ধান আর প্রতিকার অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। কিন্তু সেটি হলে তো অনেকের প্যান্ডোরার বাক্সটি খুলে যেতে পারে, বন্ধ হয়ে যেতে পারে কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য। তাই আপাতত সে রকম কিছুর আশা করা হয়ত অলীক কল্পনা কিংবা দিবা স্বপ্নেরই নামান্তর। কিন্তু তাই বলে হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না।



আমরা শক্ত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে মাদকের বিস্তার রোধ করতে পারি বহুলাংশে। ঘরে ঘরে, পাড়া মহল্লায় সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। মাদকের ভয়াবহতার বিষয়ে শিশু, তরুণ, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে মোটিভেট করতে পারলে ভোক্তার অভাবে এ বাণিজ্য এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই শুরু করতে হবে নিজের ঘর থেকেই। আপনার সন্তানকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন; প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি শিশুর চরিত্র গঠনের উপরও দিতে হবে সমান গুরুত্ব, তবেই সমাজকে মাদকের অশুভ ছায়া থেকে মুক্ত করা সম্ভব। আর সন্তানকে মানুষ করাই তো হওয়া উচিত বাবা মায়ের জীবনের প্রকৃত অর্জন তথা সার্থকতা।



মাদকদ্রব্য হতে সন্তানকে দূরে রাখার প্রয়াসে মা-বাবাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপসঃ



*সন্তানের প্রতি আপনার ভালবাসা প্রকাশ করুন। তাকে ভালবেসেছেন অথচ তা প্রকাশ করছেন না এমনটি যেন না হয়।



*সে কিছু বলতে চাইলে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তার কথা শুনুন। তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবেন না।



*তাকে গুণগত সময় দিন, আপনার পছন্দ অপছন্দ বিষয়ে তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন।



*সফলতার পাশাপাশি তাকে জীবনে ব্যর্থতা মেনে নেয়ার মত করে তৈরি করুন। তার কোন ব্যর্থতার নেতিবাচক সমালোচনা বা বিদ্রুপ করবেন না।



*তার ন্যায় সঙ্গত আবদার পূরণের চেষ্টা করুন, যাতে সে বন্ধুবান্ধবের নিকট হীনমন্যতায় না ভোগে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত আদর সোহাগ দিয়ে মাথায় তুলবেন না। সন্তান বখে যাবার এটা অন্যতম একটা কারন।



*তার সামনে কোন অপরাধ করা বা অপরাধের পক্ষ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।



*সন্তান যখন একটু বুঝতে শিখবে , তখন নেশার বিষয়াদি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলুন এবং নেশার পরিণতি গুলি তাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে অবহিত করুন।



*তার উপর অযথা চাপ তৈরি করবেন না। তোমাকে এটা করতেই হবে- এ জাতীয় বাক্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।



*অন্যের সঙ্গে তার তুলনা করবেন না, তাকে অহেতুক সন্দেহ করবেন না।



*গোপন নজরদারি, বিশেষ করে বাড়ির কাজের লোক, দারোয়ান, ড্রাইভারকে দিয়ে তার উপর কখনই নজরদারি করবেন না।



*তার ভাল কাজের প্রশংসা করুন আর অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করলে একটা পর্যায় পর্যন্ত সেটিকে অধিক গুরুত্ব দিবেন না।



*প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে তার নিকট প্রযুক্তির ইতিবাচক দিক গুলি তুলে ধরুন। ইতিবাচক প্রযুক্তি ব্যবহারে তাকে উৎসাহিত করুন।



*ফেসবুকে আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে সন্তানকে এড করে নিন, এতে তার উপর আপনার সূক্ষ্ম একটা নজরদারি থাকবে। কিন্তু সাবধান, সন্তান যেন কিছুতেই আপনার মোটিভ বুঝতে না পারে। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।



*তার বন্ধুদের গুরুত্ব দিন। ভাল বন্ধুদের সাথে মিশতে উৎসাহিত করুন। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতে বা কোথাও রাত কাটাতে চাইলে কুশলী হউন। দেখুন ও কাদের সাথে কোথায় যাচ্ছে, কার বাসায় রাত কাটাচ্ছে-প্রয়োজনে বন্ধুদের মা বাবার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিন।



*বয়ঃসন্ধিকাল পেরোতে থাকলে তাকে যৌনতার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করুন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:০১

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: খুবই ভাল এবং গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার তুলে এনেছেন। কেউ কেউ (মনে চাইলে) এ থেকে উপকৃত হতে পারেন।
আমার সন্তানদের আমার অভিজ্ঞতার আলোকেই বড় করছি। যার অনেকটা আপনর সাথেও মিলে যায়।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.