![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাপানের রাজধানী টোকিও বিশ্বের সর্ববৃহৎ মেগাসিটি। এর জনসংখ্যা তি্ন কোটিরও বেশি। অত্যন্ত সুশৃ্ংখল ও আধুনিক একটি নগরী। কোথাও কোন বিশৃংখলা নেই। এত যে লোক বাস করে বোঝা যায় না। বাংলাদেশের সাথে জাপানের মত দেশের অর্থ ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে তুলনা চলে না মানছি, কিন্তু সুশৃংখল স্বভাবের জন্য তো আর পয়সা লাগে না। তাই মনের গভীরে একধরনের তুলনা আর দীর্ঘশ্বাস চলেই আসে।
শিঞ্জুকো টোকিওর ব্যস্ত বানিজ্যিক এলাকা। এর সাবওয়ে স্টেশনে অনেকগুলো স্তর। লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম। এলিভেটর ও প্লাটফর্মগুলো জনারণ্য। কিন্তু ঠেলা ধাক্কা, বেহুদা চেঁচামেচি নেই। টোকিও ছাড়াও আছে ওসাকা, হিমেজি, ফুকুয়াকা, টয়োটা সিটি। সবই সচল কর্মব্যস্ত অথচ শান্ত সুশৃ্ঙ্খল। বরং টোকিওতেই একটু বেশি ভিড়। পিক আওয়ারে রাজপথে মোটামুটি যানজটও থাকে। কিন্তু কোনদিন হর্ণের শব্দ শুনা যায়না। সাধারনতঃ পথে ঘাটে তেমন ভিড় দেখা যায়না। ভাবছেন, এত লোক, তারা কোথায়! সহজ উত্তর, টোকিওর সারা শরীরে জালের মত ছড়িয়ে আছে সাবওয়ে। বেশির ভাগ লোক যাতায়াতে সাবওয়ে ব্যবহার করে। ফলে জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ থাকে সাবওয়েতে, মাটির নিচে অদৃশ্য।
জায়গা সংকুলানের এটি একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি। বিশ্বের অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশও নগর গুলোতে মাস ট্রানজিট হিসেবে সাবওয়ে ব্যবহার করছে। থাইল্যান্ডে এক যুগ আগে সাবওয়ের পত্তন হয়েছে। একদা প্রচন্ড যানজটের নগরী ব্যাংকক এখন যানজট মুক্ত হয়ে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ঘিঞ্জি নগরী কলকাতায়ও ট্রাম নামের বিদ্যুতচালিত মাস ট্রানজিট সিস্টেম চালু রয়েছে। এছাড়াও তারা নগরীটিতে ৯৫ কিলোমিটার দী্র্ঘ সাবওয়ে নির্মানের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
চায়নায়ও বিস্মিত হওয়ার মত অবস্থা। তাদের অবকাঠামো আর প্রযুক্তিগত উন্নতিই শুধু নয়। বিস্মিত হবেন পথে ঘাটে কম লোকজন দেখে। এত বড় দেশ, লোকসংখ্যা প্রায় দেড়শ কোটি। দেশ অবশ্য আকারে বেশ বড়, ৯৭ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। তা হোক, এর পরও পথে ঘাটে বেশ লোকের দেখা পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা নেই। ঢাকা থেকে চায়না ইষ্টার্ণে দু ঘন্টায় কুন্মিং পৌঁছানো যায়। এটি অনেকটা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটির মত । কিছু সমতল কিছু পাহাড়ী এলাকা। কুন্মিং থেকে প্লেনে জিন্দাও। সেখান থেকে গাড়ীতে শেনডং। শেনডংর কাজ শেষ করে ফেরার কথা। কিন্তু না, চায়না এসে গ্রেট ওয়াল না দেখে যাওয়া তাকি হয়!
শেনডং থেকে বেইজিংএর দুরত্ব প্রায় ৮০০ কিলোমিটার। চমৎকার অত্যাধুনিক হাইওয়ে। দুপাশে বিশাল জনহীন প্রান্তর। লোকালয় দোকানপাট নেই। একশো কিলোমিটার পর পর ফিলিং স্টেশন ও রেস্টুরেন্ট। যানবাহনের সংখ্যাও নিতান্তই কম। গাড়ী চলে ঘন্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগে। দেখলাম আধুনিক বেইজিং মহানগরী। সুবিন্যস্ত সুন্দর আধুনিক মহানগরী। কিন্তু মানুষজন আর যানবাহনের তেমন ভিড় নেই। বিষয় কি! শুনেছিলাম বেইজিংয়ে মানুষ ঠাসাঠাসি বাস করে। বিশ্বাসও করেছিলাম। কেননা দেড়শো কোটি মানুষের দেশে এটা হতেই পারে। কিন্তু এখন বাস্তবে দেখছি অন্যরকম। জানলাম এখানে নাগরিকের কর্মঘন্টাকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে তিন ভাগ করা হয়েছে। মানুষ তিন শিফটে ভাগ হয়ে তাদের কাজ করে। প্রতিষ্ঠানসমুহ তিন শিফটে তাদের ডিউটি অপারেট করে। শুধু তাই নয়, গাড়ীর নম্বর প্লেট পর্যন্ত বিভিন্ন রঙের। শিফট অনুযায়ী গাড়ীর নম্বর প্লেটের রঙ। বিস্মিত হবার মত ঘটানা বৈকি! বিশ্বে বাস্তবতা ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন দেশ নিজেকে কিভাবে সাজাচ্ছে। আর আমরা কি করছি!
কিছুদিন আগে ঢাকা নগরীর যানজট হ্রাসের জন্য মনোরেল স্থাপনের জন্য জাপানী সংস্থা জাইকার সাথে বাংলাদেশের ২.৮ বিলিয়ন ডলারের ঋনচুক্তি স্বক্ষরিত হয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটে মনোরেল নির্মিত হবে। ২০১৬ সালে শুরু হয়ে ২০২১ সালে নির্মান কাজ সমাপ্ত হবার কথা র্য়েছে। দেশের প্রথম মাস ট্রানজিট হিসেবে জনগন এতে আশান্বি্ত হয়েছে সন্দেহ নেই। তবে এটি ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে ২০২১ সাল নাগাদ কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। বলা বাহুল্য জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ ঢাকার জন্য মনোরেল পরিবেশ বান্ধব ও কার্যকর মাস ট্রানজিট হবে বলে আশাবাদী হওয়া যায়না। এটি নিঃসন্দেহে যানজট অনেকটা হ্রাস করবে। কিন্তু ওই একটি রুটের ২০.১ দীর্ঘ মনোরেলের মাস ট্রানজিট ২০২১ সালের ঢাকার জন্য অবশ্যই অকিঞ্চিৎকর হবে। এরই সাথে ভিন্ন এক বা একাধিক রুটে সাবওয়ে স্হাপনের কার্যক্রম গ্রহন করা জরুরী। এই লক্ষে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন দরকার। এর পরিকল্পনা গ্রহন ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসুত্রতায় ২০২১ সালে মনোরেল সমৃদ্ধ ঢাকা মহানগরীর যানজটের অবস্থা ‘যেই লাউ সেই কদু’ হয়ে যাবে ।
এছাড়াও আরেকটি বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিক সক্রিয় বিবেচনার দাবী রাখে। তা হচ্ছে স্থান সংকুলান কৌশল । অত্যন্ত জনবহুল এদেশের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরী। স্বাস্থ সম্মত পরিবেশ বজায় রাখা ও তীব্র যানজট ও জনজট হ্রাসের জন্য আমরা চায়নার কৌশল গ্রহন করতে পারি। মনে হয়, এটি চায়নার চেয়ে বাংলাদেশেরই আগে ভাবার কথা। যাই হোক, আমরা বেইজিংয়ের জনজীবনে শিফট পদ্ধতির কৌশল গ্রহন করতে পারি। তিনটি না হোক প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তত ঢাকায় দুই শিফট চালু করা যেতে পারে। এ বিষয়ে যথেষ্ট পরীক্ষা নিরীক্ষা ও আলাপ আলোচনার প্রয়োজন হবে। তবে বাধা বিপত্তি পেরিয়ে যদি চালু করা যায় তা দেশের জন্য শুভ হবে তাতে সন্দেহ নেই। এক দশক পরে একটি পরিপাটী ও যানজট মুক্ত ঢাকা মহানগরী পেতে একাধিক রুটে সাবওয়ে নির্মানের কার্যক্রম গ্রহন ও জনজীবনে দু শিফট বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। এতে রাজধানীর যানজট হ্রাস পাবে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে ।
Collected by waset shahin
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৩
সামছুল কবির মিলাদ বলেছেন: নীতি নির্ধারকদের সৎইচ্ছা থাকলেই হয়। একটু সৎইচ্ছা ছিলো বলেই আমরা আজ মহাখালী থেকে শ্যামলী ১৫ মিনিটে আসতে পারছি(পুরান এয়ারপোর্ট বাইপাস হয়ে)। যা আগে লাগতো প্রাই এক ঘণ্টা(বিজয় শরণী)। একটু সৎইচ্ছা ছিলো বলেই আমরা আজ বিজয় শরণী থেকে তেজগাঁও যেতে সময় লাগে ৫ মিনিট (র্যাংস ভবন ফ্লাইওভার হয়ে), যা আগে লাগতো প্রাই এক ঘণ্টা মহাখালী ঘুরে। তাই আমি মনে করে নীতি নির্ধারকদের একটু সৎইচ্ছা থাকলেই সভ সম্ভব।
আপনাকে ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্যে।
২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৭
তিক্তভাষী বলেছেন: পপুলেশন গ্রোথ মাইনাসে নেয়া দরকার। নইলে মনোরেল, মেট্রো, সাবওয়ে, ওভারপাস, ফ্লাইওভার, টিউব, এমআরটি যাই করেন না কেনো কিছুতেই কাজ হবে না।
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৬
সামছুল কবির মিলাদ বলেছেন: পপুলেশন গ্রোথ ২০০১ এর আগের ঢাকার ছেয়ে এখন অনেক ভালো বলে আমি মনে করি। আরো উন্নতির দরকার। একেবারে মাইনাসে যাওয়া তো স্বপ্নের ব্যাপার।
আপনাকে ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্যে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪০
শফিক আলম বলেছেন: ভাল লিখেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের সভ্যতা শেখাবে কে? আপনি যাদের কথা লিখেছেন তারা তো সুশৃংখল জাতি। তারা ৫০ বছর আগে থেকেই পরিকল্পনা করে চলছে। এই সুশৃংখলা একদিনে তৈরি হয় নি। আর আমাদের দেশে যদি এটা তৈরি করতে হয় তা'হলে অন্ততঃ একটা যুগতো লাগবেই। ততদিনে দুর্দশার আর বাকি কিছু থাকবে না। এই শেষ মূহুর্তে এসে কি করা যাবে সেটাই প্রশ্ন? এই রকম একটা ঘিন্জি সংকীর্ণ শহরে, যেখানে এখন মানুষ হাঁটাই দায় সেখানে মেট্রো, সাব-স্টেশন, ওভারপাস কি ভাবে করা যাবে ধারনা করা মুস্কিল। একটু বেশিই দেরী হয়ে গেছে বলে মনে হয়। কলকাতাও মোটামুটি পেরেছে, কিন্তু আমরা পারিনি। আমাদের ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট হচ্ছে রাজনীতি। ওটা নিয়ে তুমুল তুরি-বুরি উড়িয়ে একদিন হঠাৎ দেখি আমাদের আর রাস্তা নেই! অনেকেই হয়তো বলবেন আমি হতাশবাদী। দুঃখের বিষয়, যখন এই শহরে প্রতিদিন চলাচল করি, আশা করার মত কিছুই দেখিনা। কেবল ভাঙ্গনের শব্দ শুনতে পাই।