![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজধানী ঢাকা শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ২৭ কিলোমিটার লম্বা একটি নদী। ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যার পানি এক স্রোতে মিশে নতুন একটি স্রোত বয়ে চলে। সেই স্রোতটির নাম হয় বুড়িগঙ্গা নদী। অনেকের মতে বুড়িগঙ্গা নদী আগে গঙ্গা নদীর মুলধারা ছিল। তবে বর্তমানে এটা ধলেশ্বরীর শাখাবিশেষ।
মোঘল আমলে বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা শহরের নগরপত্তন। শহরের পাশ দিয়ে যেসব খাল প্রবাহিত ছিল সেগুলো ব্যবহৃত হতো নদী পথে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে। অপরিকল্পিত নগরায়নের থাবায় এই খালগুলো অনেক আগেই ভরাট করে ফেলা হয়েছে। একমাত্র নদী বুড়িগঙ্গা কোনোক্রমে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছে আজও। অথচ বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে ঢাকার শিল্প বাণিজ্যের বিকাশ।
বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজ করেছিলেন বাংলার সুবাদার মুকাররম খাঁ। তার শাষণামলে শহরের যেসকল অংশ নদীর তীরে অবস্থিত ছিল, সেখানে প্রতি রাতে আলোক সজ্জা করা হতো। এছাড়া নদীর বুকে অংসখ্য নৌকাতে জ্বলতো ফানুস বাতি। তখন বুড়িগঙ্গার তীরে অপরুপ সৌন্দের্য্যের সৃষ্টি হতো।
১৮০০ সালে টেইলর বুড়িগঙ্গা নদী দেখে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন- বর্ষাকালে যখন বুড়িগঙ্গা পানিতে ভরপুর থাকে তখন দুর থেকে ঢাকাকে দেখায় ভেনিসের মতো। তবে বুড়িগঙ্গার আগের ঐতিহ্য এখন আর নেই। কালের বিবর্তনে দখল হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গার নদীতীর আর দূষণে বুড়িগঙ্গা হয়ে উথেছে ময়লা নর্দমার স্তূপ।
ধীরে ধীরে দখল হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গার মাটি। দখলদারদের কবল থেকে বুড়িগঙ্গাকে কোনোমতেই রক্ষা করা যাচ্ছে না। এছাড়া প্রতিনিয়ত যেভাবে বুড়িগঙ্গা দূষিত হচ্ছে তাতে বুড়িগঙ্গার আগামী অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে! ১৯৬৭ সালে বুড়িগঙ্গায় ঢাকা নদীবন্দর স্থাপন করার পর নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের অধীনে পুরো জায়গা নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পড়ে। কিন্তু নৌ-কর্তৃপক্ষ অর্পিত দায়িত্ব পুরোপুরি পালন না করায় নদীতীর এলাকায় অবস্থানরত মানুষ ছাড়াও এলাকার ভূমিদস্যুরা জায়গা দখল ও অবৈধ স্থাপনা তৈরি করছে। মাঝে মাঝে লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও তাতেও খুব বেশি সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হলেও আবার নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। ফলে, স্রোতহীন বুড়িগঙ্গা নদী পরিণত হচ্ছে ধীরে চলা সরু নদীতে। ইতোমধ্যে হাজারিবাগে বুড়িগঙ্গার একটি ধারা পুরোপুরি ভূমিদস্যুদের দখলে চলে গেছে। প্রতিদিনই এখানে কোনো না কোনো অংশ দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে ড্রেজিং এর মাধ্যমে চলে নদী ভরাটের কাজ। অনেক স্থানেই নির্মাণ করা হচ্ছে কাঁচাপাকা, বহুতল ভবন এমনকি কী বুড়িগঙ্গার জায়গা দখল করে প্রভাবশালীরা স্থাপন করেছে কলকারখানা।
অবৈধ দখল ছাড়াও বুড়িগঙ্গার পানিকে প্রতিনিয়ত দূষিত করা হচ্ছে। জানা যায়, হাজারীবাগ ট্যানারির বর্জ্য ১২ ভাগ, ঢাকাবাসীর প্রতিদিনের বর্জ্য, দুই তীরের শিল্প কারখানার বর্জ্য, কাঁচাবাজারের প্রতিদিনের আবর্জনা, স্টিমারসহ অন্যান্য নৌযান থেকে নিঃসৃত বর্জ্য প্রতিনিয়ত বুড়িগঙ্গাকে দূষিত করে তুলছে। এছাড়া ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থায় বিরাজ করছে নানারকম অব্যবস্থাপনা, পাইপ লাইন দিয়ে সুয়ারেজের ময়লা এসে সরাসরি মিশে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গার পানিতে। নদীতে চলাচলকারী নৌযান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার কালো তেল, পোড়া মবিল ফেলে বুড়িগঙ্গার পানিকে আরো বেশি দূষিত করা হচ্ছে। এছাড়া নদী তীরবর্তী লালবাগ, সোয়ারীঘাট, শহীদনগর, চাঁদনিঘাট, লালকুঠি, মালিটোলা, মিলব্যারাক প্রভৃতি এলাকায় অভ্যন্তরীণ পয়ঃলাইনের সংযোগ রয়েছে পুরনো ড্রেনেজ লাইনের। বাদামতলী ও শ্যামবাজারের কাঁচা সবজির বাজার থেকে পরিত্যক্ত সবজি ও ময়লা ফেলা হচ্ছে বুড়িগঙ্গার পানিতে। পাশের শিল্প কারখানার সায়ানাইড, পারদ, ক্লোরিন, নানারকম এসিড, দস্তা নিকেলসহ মোট ৬২ রকমের রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে মিশে যাচ্ছে। এছাড়া টেক্সটাইল, ব্যাটারি, লোহা, রং, রাবার কারখানার বর্জ্য মিশে যাচ্ছে নদীতে। একদিতে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি আরেকদিকে ভরাট হচ্ছে নদীস্তর। দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গার নিচের ছয় ফুট পানি বিষাক্ত হয়েছে ইতোমধ্যে। বিষাক্ত পানির আরো দশফুট নিচে পলিথিন ও আবর্জনার কারণে তৈরি হয়েছে কঠিন স্তর। বুড়িগঙ্গার পচা পানির কারণে আমাশয়, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে ভুগে প্রতিদিনই কোনো না কোনো হাসপাতালে ছুটছে মানুষ। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীপারের মানুষ ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে, থাকছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। তিলে তিলে বিপন্নতার দিকে যাচ্ছে নগরবাসীর জীবন। এমনকি কেউ বুড়িগঙ্গার এপার হতে অপারে যেতে খেয়া নোকা ব্যাবহার করতে গেলেও নাকে রুমাল কিংবা টিস্যু দিয়ে নাক চেপে ধরতে হয় দূষণের গন্ধে। আবার কেউ খেয়া পার হওয়ার সময় বুড়িগঙ্গার পানিতে পরে গেলে তার বাঁচার সম্ভাবনা একেবারেই কম শুধুমাত্র দূষণের কারনে।
বাদামতলী থেকে নবাবগঞ্জ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদীর তিন কিলোমিটার অংশের বেশিরভাগ আবর্জনায় ভরা। পানি ঘন কালো ও দুর্গন্ধময়। এর অন্যতম কারণ সিটি করপোরেশনের আবর্জনাবাহী গাড়ি থেকে সরাসরি নদীতে বর্জ্য ফেলা হয়। অথচ মাত্র দেড় বছর আগে ১৭ কোটি টাকা খরচ করে নদীর এ অংশ থেকেই কয়েক লাখ ঘনমিটার বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছিল। নানা জঞ্জালে ভরপুর বুড়িগঙ্গা দিন দিন পরিণত হয়েছে মেগাসিটির বৃহত্তম ভাগাড়ে। মাত্রাতিরিক্ত দূষণে সদরঘাটে বুড়িগঙ্গার পানি কুচকুচে কালো, হাজারীবাগে রক্তের মতো লাল। গেল্ডারিয়ার অদূরে কালো, কোথাও গাঢ় নীল। কামরাঙ্গীরচরের আশপাশে নদীর পানি ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে। এসিড জাতীয় কেমিকেলের কালো থাবায় হারিয়ে গেছে বুড়িগঙ্গার সব জলজপ্রানীও।
শিল্প এলাকা হিসেবে খ্যাত, শ্যামপুর-কদমতলীর বিসিক নগরীতে বিভিন্ন প্রকারের মিল-ফ্যাক্টরী রয়েছে ৩৪৫ টি। যার কোনটিতেই নেই ইটিপি বা ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। ফলে, বিষাক্ত কেমিকেলের ছোবলে ঐতিহাসিক বুড়িগঙ্গা।
দীর্ঘদিন ধরে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানোর জন্যে পরিবেশবাদীরা আন্দোলন করে আসছে। সরকার নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ও দূষণ প্রতিরোধে প্রতিশ্রুতি দিলেও তেমন কোনো অগ্রগতি নগরবাসীর চোখে পড়েনি।
বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর তলায় অনেক বছরের জমে থাকা পলিথিন ও অন্যান্য বর্জ্য তুলতে ২০১০ সালে একটি পাইলট প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। এ কাজে বুড়িগঙ্গার জন্য ১৭ কোটি টাকা এবং তুরাগের জন্য চার কোটি টাকা দিয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট। মোট প্রায় ২১ কোটি টাকায় ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত বুড়িগঙ্গায় বাবুবাজার-বাদামতলী থেকে নবাবগঞ্জ কামরাঙ্গীচরের দিকে তিন কিলোমিটার ও তুরাগের টঙ্গী বাজার এলাকায় এক কিলোমিটার অংশের বর্জ্য সরানো হয়। অপসারণ করা মোট বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ০৮৭ লাখ ঘনমিটার। নদীর তলা থেকে এ সময় পলিথিনের অসংখ্য ব্যাগ ছাড়াও উঠে আসে প্লাস্টিকের বোতল, নারকেলের খোসা, কাঠ ও লোহার টুকরা, কাদামাটি বালু অন্য বর্জ্য।
কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুড়িগঙ্গা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলেছেন বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে হবে প্রয়োজনে একটি কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার করা হবে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ উনার এই উদ্বেগ প্রকাশ ও বুড়িগঙ্গাকে নিয়ে চিন্তা করার জন্যে। আমার মতে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে নতুন একটি কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। বুড়িগঙ্গার পানিকে দূষিত করে কিছু বর্জ্য শোধনাগার বিহীন কল কারখানার বর্জ্য, হাজারিবাগের ট্যানারির, ঢাকাবাসীর প্রতিদিনের বর্জ্য অন্যতম। প্রথমে আমাদের বন্ধ করতে বর্জ্য শোধনাগার বিহীন কল কারখানা। হাজারিবাগের ট্যানারিতেও থাকতে হবে বর্জ্য শোধনাগার। ঢাকাবাসীর প্রতিদিনের কোন বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলা যাবেনা। পাইপ লাইন দিয়ে সুয়ারেজের ময়লা যেন বুড়িগঙ্গায় না পরে সেই দিকে নজর রাখতে হবে। এখানে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি নতুন কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি, সুয়ারেজের ময়লা পানি বিশুদ্ধ করার জন্যে। কিন্তু আমরা চাইলে একটি নতুন কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের খরচের হাত থেকেও বাচতে পারি। যেমন আমাদের আছে সায়দাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। আমরা চাইলেই সেটা ব্যাবহার করতে পারি, যেমন সায়দাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পানি আনি বুড়িগঙ্গা কিংবা থেকে, এই পানি আমরা বুড়িগঙ্গা থেকে না এনে সিটি কর্পোরেশনের সুয়ারেজ লাইন থেকে নিতে পারি যা আবার বিশুদ্ধ করে ঢাকাবাসীদেরকেই দেওয়া যাবে।
আমরা কি পারিনা বুড়িগঙ্গাকে ব্যাংককের এক্সোটিক রিভার ও আমেরিকার শিকাগো শহরের চার পাশের নদীর মত সাজাতে। বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্য বাড়াতে বাংলার সুবাদার মুকাররম খাঁ যদি পারে, তাহলে এই তথ্য প্রযুক্তির ডিজিটাল যুগে আমরা কেন পারব না। অবশ্যয় পারবো লাগবে শুধু সঠিক উদ্যোগ আর স্বদেশ প্রেমের মনমানসিকতা।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১১
সামছুল কবির মিলাদ বলেছেন: সবার মধ্যে স্বদেশ প্রেম আছে কিন্তু সেটা মুখে, যতদিন স্বদেশ প্রেম অন্তরে আর হাতে কাগজে না আসবে ততদিন ব্যবস্থাও নেওয়া হবে না।
২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২২
ভানু ভাস্কর বলেছেন: দারুন লেখা। খুব ভালো লাগলো। আমার একটা প্রশ্ন আছে। শীতলক্ষা ও ব্রহ্মপুত্র এর মিলিত স্রোত কোথা থেকে এক হয়ে বুড়িগঙ্গা হলো আমাকে জানাবেন? এখন তো ব্রহ্মপুত্রকে ধলেশ্বরীর শাখা বলা হয়। (আমার একটা লেখার মধ্যে বুড়িগঙ্গা প্রসঙ্গ এসেছে। তথ্যটা জানতে পারলে সুবিধে হয়।)
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৮
সামছুল কবির মিলাদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভানু ভাস্কর ভাই লেখাটি পরে কমেন্টস করার জন্যে। তথ্যটি উইকিপিডিয়া পাওয়া।
লিঙ্কঃ Click This Link
৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:১৯
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: পোস্টে ব্যবহৃত বিভিন্ন তথ্য যদি অন্য কোন বই, ওয়েবসাইট, ব্লগ থেকে সংগ্রহ করে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে সেই সূত্রের নামটি পোস্টেই উল্লেখ করে দিন।
৪| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:১২
ভানু ভাস্কর বলেছেন: এখন তো ব্রহ্মপুত্রকে নয় বুড়িগঙ্গাকে ধলেশ্বরীর... ... ... হবে। দুঃখিত টাইপোফল্ট-এর জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২০
প্লাবন২০০৩ বলেছেন: "কালের বিবর্তনে দখল হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গার নদীতীর আর দূষণে বুড়িগঙ্গা হয়ে উথেছে ময়লা নর্দমার স্তূপ" - এখনও সময় আছে ব্যবস্থা নেবার, পরে হয়ত তাও আর থাকবে না । লেখককে ধন্যবাদ ।