নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলতে চাই

সামছুল কবির মিলাদ

আমি মুক্ত আমি স্বাধীন

সামছুল কবির মিলাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারাবীহ নামাজ নিয়ে একটি পর্যালোচনা...

২২ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:২৬

তারাবীহ নামাজ ২০ রাকআত। যারা বলে ৮ রাকাআত তাদের বক্তব্য সঠিক নয়।
মুলত ধর্মপ্রান সাধারন মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষে আহলে হাদীস বা লামাজহাবী সম্প্রদায় ৮ রাকাআত তারাবীহ এই মতামতের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে ।

* সংশয় নিরসনের জন্য ৮ রাকআত বা এসংক্রান্ত বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্নিত হাদীস ও তার সঠিক মর্ম নিম্নে তুলে ধরা হল।

প্রথম হাদীসঃ-
আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন , রমজানে রাসুল (সাঃ) এর নামাজ কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন , রাসুল (সাঃ) "রমজানে ও অন্যান্য মাসে" বিতির সহ এগার রাকআতের বশী পড়তেন না।

(বুখরী শরীফ হাঃ নং ১১৪৭)

দ্বিতীয় হাদীসঃ-
ইয়াহইয়া ইবনে আবু সালামা (রঃ) বলেন আমি রাসুল (সঃ) এর "রাত্রী কালীন নামাজ" সম্পর্কে আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম । উত্তরে তিনি বললেন, রাসুল(সঃ) রাত্রে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন । প্রথমে আট রাকাত পড়তেন , এর পর বিতির পড়তেন, তার পর দুই রাকত নামাজ বসে আদায় করতেন ।

( মুসলিম শরীফ- হাঃ নং ১৭২৪)

এজাতীয় হাদীস দ্বারা লা মাজহাবী সম্প্রদায়- তারাবীহ ৮ রাকাত এর উপর দলীল পেশ করে থাকে।

উপরোক্ত হাদীস সমূহের উত্তরঃ-

প্রথম উত্তর: আয়েশা (রাঃ) থেকে উপরোক্ত হাদীস দুটি যেমনি ভাবে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে ঠিক তেমনি মুসলিম শরীফেই আয়েশা (রাঃ) থেকে দশ রাকাতের হাদীস ও বর্ণিত আছে। যেমন:

হাদীসঃ-
কাসেম ইবনে মুহাম্মদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , আমি আয়েশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুল (সাঃ) রাত্রিতে দশ রাকাত নামাজ, এক রাকাত বিতির ,ও ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সহ মোট ১৩ রাকাত পড়তেন।

( মুসলিম শরীফ- হাঃ নং ১৭২৭)

এমন কি আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হদীস গুলোর প্রতি লক্ষ করলে বোঝা যায় রাসুল (সাঃ) রাত্রীকালীন নামাজ- কোন রাত্রীতে ১১ রাকাত ,কখনো ১৩ রাকাত কখনো ৯ রাকাত, আবার কখনো ৭ রাকাত ও, আদায় করতেন । সুতরাং আয়েশা (রাঃ) এর হাদীস দ্বারা কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করা সম্পুর্ন অযৌক্তিক। (রাত্রীকালীন নামাজ বলতে হয়তো তাহাজ্জদ উল্লেখ করেছেন)

দ্বিতীয় উত্তরঃ-

প্রকৃত পক্ষে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস গুলো তাহাজ্জুদ সম্পর্কিত , তারাবীহ সম্পর্কিত নয় । একারনেই হাদীস গ্রন্থাকারগন এজাতীয় হাদীসকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন , তারাবীর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি।

তৃতীয় উত্তরঃ-

আহলে হাদীসগন তারাবী ৮ রাকাত হওয়ার স্বপক্ষে যে হাদীসগুলো পেশ করে থাকেন, সে অনুযায়ী তারা নিজেরাই আমল করেন না। কেননা হাদীসে রমজান ও অন্যান্য মাসের কথাও উল্লেখ রয়েছে , অথচ তারা তাদের হাদীস অনুযায়ী অন্যান্য মাসে তারাবীহ পড়ে না।
উল্লেক্ষঃ আয়েশা (রাঃ) রমজানে ও অন্যান্য মাসের কথা উল্লেখ করেছেন, তারাবি সুধুই রমজান মাসে পড়ে অন্যান্য মাসে নয়। অতঃএব আয়েশা (রাঃ) এখানে তারাবিকে বুঝিয়েছেন বললে ভুল হবে।

বিশ রাকাত তারাবীর দলীল সমুহ:

১ নং হাদীসঃ-

সায়ের ইবনে ইয়াজিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন সাহাবা গন উমর (রাঃ) এর খেলাফত কালে রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন ।

(বাইহাকী শরীফ-খঃ ২/৪৯৬ হাঃ নং ৪৬১৭)

২ নং হাদীসঃ-

ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ- হযরত উমর (রাঃ) এর যুগে সাহাবারা বিতির সহ তেইশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন । (মুয়াত্তা মালেক খঃ ১পৃঃ ১১৫)

৩ নং হাদীসঃ-

আতা ইবনে আবী রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি সাহাবাদেরকে বিতির সহ তেইশ রাকাত তারাবী পড়তে দেখেছি ( মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা – ৫/২২৪)

নবী করিম (সা.) বিশেষ কারণবশত নিয়মিত জামাতে ২০ রাকাত তারাবি পড়তেন না। কেননা নবী করিম (সা.) কোনো কাজ নিয়মিত করলে তা উম্মতের জন্য ওয়াজিব তথা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়। যার দরুন সালাতুত তারাবিহ সুন্নত, ওয়াজিব নয়; তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা জরুরি সুন্নত। ২০ রাকাত তারাবি নামাজ হওয়ার সপক্ষে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে ‘নবী করিম (সা.) রমজান মাসে বিনা জামাতে (একাকী) ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করতেন, অতঃপর বিতর নামাজ পড়তেন।’ (বায়হাকি)

(উল্লেখিত সবগুলো হাদীস সহীহ)

রাসুলুল্লাহ (সা.), সাহাবা এবং তাবেঈনের যুগ থেকে পবিত্র মক্কা শরিফে ২০ রাকাত তারাবিহ আজ পর্যন্ত নিয়মিত চলে আসছে। কোনো যুগেই এর কম বা বেশি পড়া হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ ইতিহাসের পাতায় নেই।

প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হজরত আব্দুল আযীয বিন রুফাই (রহ.) বর্ণনা করেন, হজরত উবাই বিন কা’ব (রা.) রমজান মাসে লোকদের নিয়ে মদিনায় ২০ রাকাত তারাবিহ এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৩৯৩, ৭৭৬৬) মোটকথা, ১৫০০ বছরের ইতিহাসে মদিনা শরিফে ২০ রাকাতের কম তারাবিহর নামাজ কেউ পড়েননি।

এছাড়াও অসংখ্য হাদীস দ্বারা একথা সুস্পষ্ট রুপে প্রমানিত হয় যে, তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাত যার উপর খোলাফয়ে রাশেদীন ,সমস্ত সাহাবা , তাবেই, তাবে তাবেই, সালফে সালেহীন গন, ঐক্যমতে আমল করেছেন। এবং চার মাজহাবের ইমাম গনও এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষন করেছেন ।

সুতরাং যারা ৮ রাকাত তারাবীর কথা বলেন ,তারা মুলত সরলমনা মুসলমানদের অন্তরে বিভ্রান্তির বিষ ঢেলে ইসলামকে বিতর্কিত করতে চান।

আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.